নির্বাচিত বই ।। সূর্যোদয়ের দৃশ্যাবলি ।। মাসুম মুনাওয়ার

সূর্যোদয়ের দৃশ্যাবলি
বইয়ের ধরনঃ কবিতা
লেখকঃ মাসুম মুনাওয়ার
প্রচ্ছদঃ রাজিব দত্ত
প্রকাশকঃ তিউরি
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৩৫ টাকা

বই থেকে পাঁচটি কবিতা

এশিয়া
একটা ছায়া আরেকটা ছায়ার ভিতরে হাঁটছিলো। প্রথম ছায়াটা দ্বিতীয় ছায়াটা থেকে বেরুতেই দেখে একজন মানুষ। মানুষটা ঠিক আমার মত। আমি মানুষটার দিকে তাকালাম। মানুষটা মুচকি হাসছে। আমি চোখ লাল করে তাকিয়ে আছি। তখনই ছায়াটা মিলিয়ে গেলো। দেখলাম একাই হাঁটছি। ছায়াগুলো আমি এবং আমিই ছায়া।

ইউরোপ
আমার দেহ ও আমি ডুবে যাচ্ছি। ডুবে যাচ্ছি দেহের ভেতর। ভেতরটাও ডুবছে নীরবে। তলিয়ে যেতে যেতে আমাকে টেনে তুলছিলাম। একটা দৃশ্যমান ছায়া চিকন সুরো অন্ধকারের ভেতরে আমাকে নিক্ষেপ করছে প্রতিনিয়ত। অন্ধকার থেকে, সরু ছায়াবাজির ভেতর থেকে বেরুতে গিয়ে নিজেই ছায়া বনে গেলাম। হারিয়ে গেলাম। হারিয়ে গেছে দেহ ও ছায়া। দৃশ্যত জীবন আমাদের যন্ত্রণাগুলোর সাক্ষী হয়ে মৃত বৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে আছে। রঙের দুনিয়ায় ছাতিমের নেশায় তলিয়ে গেছে হরিৎ পাখি ও তলিয়ে গেছি আমি। আমাকে খুঁজে লাভ নেই, ছায়ার ভেতর থাকা যন্ত্রণার নাম মানুষ।

উত্তর আমেরিকা
কোথায় গিয়েছিলাম ঠিক মনে পড়ছে না, যেখানে হারিয়ে এসেছি সব, কোথায় আছি তাও মনে পড়ছে না, জায়গাটা বিদ্যমান থাকলেও নেই আমি, কেমন যেন গুমোট একটা বাতাস এসে লেগেছে গায়ে, আমাকে ভাসিয়ে চলেছে, আমি ভাসিয়ে চলেছি কিনা তাও নিশ্চিত নই, কে কাকে ভাসাচ্ছে কেউ বলতে পারছি না, একটা ফুলের ঘ্রাণে ধাক্কা লেগে হারিয়ে গেছে চৈতন্য নাকি চৈতন্যই আমাকে হারিয়েছে ঠিক বুঝে উঠতে উঠতে তলিয়ে যাচ্ছি কোথায় যেন, যেখানে আমি যেতে চাইনি কখনো, স্থানই আমাকে টানছে হয়তো, কোথায় যে চলেছি জানি কি আদৌ, কেউ কি জানে!

দক্ষিণ আমেরিকা
‘কত দিন মন খুলে কথা বলি না, খুলে কথা বলা যায়?’নিজেকে প্রশ্ন করি। যায় বা যায় না নিশ্চিত নই। দোদুল্যমান সারস জীবনের পথে খুলে কথা কয়জন বলে, বলতে পারে কেউ? জমেছে কথার পাহাড়। কথার বরফ জমে জমে শীত নেমেছে মনে। মন আসলে কী? মন বলতে কি কিছু আছে বা এই যে বলছি কথা, কথার কী রুপ? কেমন যেন যাচ্ছে না জীবন। আমি কথার মাঝে, কথা আমার মাঝে লীন হতে হতে হারিয়ে ফেলছি উভয়ই। যেন কেউ নই আমরা, আমরা নই কেউ যেন। কথা নেই কোনো আমাদের, আমাদের নেই কোনো কথা। দুলছি কেবল বৈশ্বিক হাওয়ায়, কথার ফুল ফুঠছে অন্য কোথাও, অন্য কোনো ঝুলবারান্দায়।

আফ্রিকা
পিছন ফিরতেই দেখি আমার মত একটা লোক দৌড়ে আসছে। দেখতে দেখতে লোকটা আমার ভেতরে ঢুকে গেলো নাকি আমি লোকটার ভেতর ঢুকে গেলাম ঠিক বোঝা গেলো না। কানকে জিজ্ঞেস করলাম- লোকটাকে তুমি চেনো? কানটা আমার চক্ষুদ্বয়কে, চক্ষুদ্বয় নাকটাকে, নাকটা দীর্ঘ চুলগুলোকে, চুলগুলো থুতনিকে, থুতনি হাতকে, হাত পাকে, পা মুখকে, মুখ আমাকে জিজ্ঞেস করলো- মানুষটাকে আপনি চিনেন? অন্য দিকে মনোযোগী ছিলাম। বললাম- কার কথা বলছো? কোন মানুষটা? না তো, চিনি না। যে নিজেকেই চিনে না, সে অন্যকে কিভাবে চিনবে বলতে পারো? মানুষটাকে কেউ চিনতে পারলো না। না আমি, না মানুষটা নিজে, না অন্য কেউ। এইভাবেই একটা মানুষ গত হলো। কথাটা ভাবতে ভাবতে পিছনে ফিরে দেখি মানুষটা আমাকে নিতে এসেছে। আমি অনুকরণ করছি নাকি সেই আমাকে অনুকরণ করছে ঠিক বোঝা গেলো না। আমি চলছি মানুষটার দিকে, নাকি অবিরত মানুষটাই আমার দিকে আসছে ঠাহর করা গেলো না। আমরা উভয়ই মিলিয়ে গেলাম।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top