পথনাটক।। টুর্নামেন্ট ।। রচনা: শহিদুল হক খান শ্যানন

অভিনয়স্থলে এসে একজন লোক আকাশ, বাতাস, মাটিকে ভালোবেসে গান গায়-

ভালোবাসি এই মাটির বুকেতে
সবুজ ফসল ফলাতে,
ভালোবাসি এই ধূলিকণা মাখা
জীবন সাজাতে মালাতে।
আমি ভালোবাসি হাতুড়ী-কাস্তে
ধরিতে বজ্র মুঠিতে,
আর ভালোবাসি সংগ্রামী ঘাম
শীতল বাতাসে জুড়াতে।
কর্মমুখর জীবন ক্লান্তি
ভালোবাসি রাতে কুড়াতে,
স্বপ্নঘুমে চোখের পাতায়
রঙ ভালোবাসি ছড়াতে।
মায়ের কোলে শান্তিতে শুয়ে
যে শিশু আজ হাসিছে,
তার তরে আজ সাজাই আবাস
ঐযে আলো আসিছে.. .. ..

বেনী দোলানো ও খোপা বাঁধা দুইজন তরুণী এসে তাকে দুলে দুলে গাইতে দেখে বিরক্ত হয়। বেনী বাঁধা তরুণীর নাম বেনী আর যার খোপা করা তার নাম খোপা। যে তরুণ গান গাইছিলো তার নাম শুভ।

বেনী: এই এইখানে কি?
শুভ: কৈ কিছু না তো।
খোপা: কি করো?
শুভ: গান।
বেনী: গান আবার করে কীভাবে? গানতো গাওয়ার জিনিষ।
শুভ: ও হ্যাঁ। গান গাই।
খোপা: গান গাও ভালো কথা। তা এইখানে কি? যাও সরো।
শুভ: জ্বি!
বেনী: হ্যাঁ ভাগো এখান থেকে। যতসব ঝামেলা।
শুভ: এখান থেকে যাব কেন?
খোপা: দেখেছিস আবার মুখে মুখে কথা বলে! কত বড় সাহস! এই নাম কি তোমার?
বেনী: হ্যাঁ নাম কি?
শুভ: শুভ।
খোপা: শুভ!
বেনী: হুম। তা শুভ চক্রবর্তী, না শুভ ইসলাম?
খোপা: নাকি শুভ বড়ুয়া? মাইকেল শুভও হতে পার।
বেনী: দাঁড়াও দাঁড়াও- জলদাস, তলদাস নওতো? কিংবা কোন পাহাড়ী শুভ?
শুভ: না না ওসব কিছু নেই। আমি শুধুই শুভ।
খোপা: পরিচয়টা পরিষ্কার হলো না। তোমার ধর্ম কি?
শুভ: ধর্ম? মানুষের যেমন হয়।
বেনী: এ মানুষের যেমন হয়… নিজেকে খুব মানুষ ভাবা হচ্ছে না? থাক কোথায় তুমি?
শুভ: এই যে এখানে, এই মাটিতে।
খোপা: এইখানে মানে?
বেনী: এই মাঠে? ইয়ার্কি!
শুভ: হ্যাঁ সত্যি বলছি। এইখানে থাকি আমি। এই আমার মাঠ।
খোপা: এ এই আমার মাঠ… কতবড় সাহস দেখেছিস!
বেনী: তাই তো দেখছি। এই তুমি ভেক ধরোনি তো? ভেকই ধরেছো।
শুভ: ভেক!
খোপা: ভেক মানে এই ধর তুমি আসলে অন্য কোথাও থাক। এটা তোমার জায়গা না..
বেনী: ধর অন্য কোন জায়গার কেউ তোমাকে এখানে পাঠিয়েছে..
খোপা: মানে গুপ্তচরটর..
বেনী: হয়তো তুমি এই মাঠের দখল নিতে চাও..
খোপা: সেটি কিন্তু হচ্ছে না বাপু..
বেনী: পরিষ্কার বলে দিচ্ছি কোন বহিরাগতের আস্ফালন আমরা সহ্য করবো না..
খোপা: হ্যাঁ। আমরাও না।
শুভ: আমি তো স্পষ্ট করেই বলছি- আমার নাম শুভ, ঠিকানা এই মাটি।
বেনী: এ যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা!
খোপা: বললেই হলো এটা তোমার ঠিকানা?
বেনী: আর হলেই বা আমার তাতে কি?
খোপা: ঠিক। আমারও তাতে কিছু যায় আসে না।
বেনী: এই শোন প্যাঁচাল পাড়বে না বলে দিচ্ছি। মোট কথা এই জায়গা তোমাকে ছাড়তে হবে।
শুভ: জ্বি! কি বলছেন এসব!
খোপা: কেন বাংলায় বলছি বুঝতে পারছ না, নাকি কথা কানে যায় না? সরো বলছি।
শুভ: সরবো?
বেনী: হ্যাঁ সরো। এই মাঠ আমাদের।
খোপা: এই মাঠে আমাদের যা খুশী তাই করবো।
শুভ: কি করবেন?
বেনী: খেলবো।
শুভ: এই মাঠে.. এইখানে আপনারা খেলবেন!
খোপা: হ্যাঁ খেলবো। ইচ্ছে হলে খাবো। ইচ্ছে হলে খুড়বো। আবার ভরাট করবো।
বেনী: ইচ্ছে হলে ওড়াবো, পোড়াবো। ইচ্ছে হলে.. ইচ্ছে হলে যা ইচ্ছে তাই করবো।
খোপা: এই বেনী তুই দেখি আবার ফালতু প্যাঁচাল শুরু করলি। চলে আয়। এই তুমি যাও তো।
বেনী: চল আমরা কোট কাটি।
শুভ মন খারাপ করে এক পাশে সরে দাড়ায়। খোপা আর বেনী দু’জন মিলে মাটিতে গভীর দাগ দিয়ে কোট কাটে তালে তালে-

কুত কুত কুত কুত কুত কুত কুত
তুক তুক তুক তুক তুক তুক তুক
তুক তাক তুক তাক তুক তাক তা
খোকা বাবু সরে যা
খোকা বাবু সরে যা
খুকীরা সব তেতুল খা
কুত কুত কুত কুত কুত কুত কু
তুক তুক তুক তুক তুক তুক তু
খোকা খুকু সরে দাঁড়া
সরে দাঁড়া সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া
পাগলা ঘোড়া পাগলা ঘোড়া
কুত কুত কুত কুত কুত কুত কুত
তুক তুক তুক তুক তুক তুক তুক

শুভ: এটা কি খেলা?
বেনী ও খোপা: আমাদের জাতীয় খেলা-কুতকুত।
শুভ: আমিও খেলব। আমাকে নিবেন?
বেনী: না না না। প্রশ্নই উঠে না। আমি শুধু খোপার সাথেই খেলব।
খোপা: তাছাড়া তোমাকে আমরা চিনি না জানি না..
বেনী: হ্যাঁ তাই তো। তোমার পরিচয়ই এখনও স্পষ্ট না..
খোপা: না না। তোমাকে আমরা খেলায় নিতে পারি না।
বেনী: এটা আমাদের খেলা। আমরাই খেলব।
খোপা: হ্যাঁ তুমি বাদ। তুমি সরোতো বাপু।
বেনী: তাছাড়া টুর্নামেন্ট বলে কথা..
খোপা: আমাদের হারজিতের ব্যাপার..
বেনী: এই খেলায় তোমাকে নেয়া যাবে না। যাও সরো..
খোপা: ওইখানে চুপটি করে বসে থাক।
শুভ: তা না হয় বসলাম। কিন্তু একটা টুর্নামেন্ট হবে। তার ওপর জাতীয় খেলা বলে কথা। মাঠে কোন দর্শক থাকবে না! আপনাদের সাপোর্টার থাকবে না?
বেনী ও খোপা: সাপোর্টার? আছে তো। ওইযে-
কোরাস ১: বেনী আপা.. বেনী আপা..
কোরাস ২: খোপা ম্যাডাম.. খোপা ম্যাডাম..
বেনী ও খোপা: কি চলবে না?
শুভ: খুব চলবে।
খোপা: ম্যালা প্যাঁচাল পেড়েছো। এবার চুপ করে বসো..
বেনী: আমাদের খেলতে দাও।
বেনী আর খোপা খেলা শুরুর প্রস্তুতি নেয়। নেপথ্যে পল্টি কোকিলের ডাক দেয়-
পল্টি: টু..
বেনী: এই অসময়ে কোকিল ডাকে কেন?
খোপা: কোকিল না পল্টি ডাকে। তোকে।
বেনী: আমাকে? যাহ। তোকে ডাকে।
খোপা: সত্যি? যাহ।
শুভ: অসময়ের ডাক তো সে কোকিলই হোক আর কাকই হোক- মনে হয় আপনাদের দু’জনকেই ডাকে।
বেনী ও খোপা: দু’জনকেই! যাহ!
পল্টি গাইতে গাইতে নাচতে নাচতে ঢোকে। পরনে জোকারের পোশাক।
পল্টি: ইনহি লোগোনে, ইনহি লোগোনে, ইনহি লোগোনে লেলোনা.. .. ..
বেনী ও খোপা: পল্টি-
পল্টি: হায় মেরে দিল কি টুকরে, আখোকো তারা, মেরে জান..
বেনী: কি গান গাইলে গো তুমি?
খোপা: দোপাট্টা?
পল্টি: ইশ। মেয়েদের গান গেয়ে ফেলেছি না? সরি সরি। ভুল হয়ে গেছে।
বেনী: বয়স হচ্ছে তো..
খোপা: মাথার ঠিক নেই।
পল্টি: বয়স! কোথায়? এটা একটা বয়স হলো? জানো আমার লেটেস্ট শ্বশুরের বয়স কত?
শুভ: কত?
পল্টি: খুব বেশি হলে চল্লিশ।
শুভ: আপনার শ্বশুরের বয়স দেখি আপনার বয়সের অর্ধেক..
পল্টি: শাট আপ। এ্যাটেনশন। এ ব্যাটা দেখি আমাকে ডোবাবে। ও ডার্লিংস এটা কে?
বেনী: তার আগে বল তোমার লেটেস্ট শ্বশুর মানে.. তুমি.. তুমি..(কান্না)
খোপা: আমাদেরকে রেখে তুমি.. তুমি আরেকটা মেয়ের সাথে.. (কান্না)
পল্টি: দেখ খোপা, বেনী কবির সফ্ট হৃদয়ে তোমরা কিন্তু পাষাণের মতো আঘাত করছো। মেয়েদের কান্না দেখলে আমারও কিন্তু কান্না পেয়ে যায়.. (কান্না)
বেনী ও খোপা (গান): এত জল ও কাজল চোখে ও জানুরে আনলে বল কে..
পল্টি: তুমি, তুমি..
বেনী ও খোপা (গান): টলমল জলমতির মালা.. ..
পল্টি: কি ভালো তোমরা। একটি বৃন্তে দু’টি কুসুম, ইচ্ছে করে একসাথে রাখি..
বেনী: ঠিক আছে আমি রাজি। চলো একসাথে থাকি..
খোপা: না না সেটি হচ্ছে না। ও আমার সাথে থাকবে।
পল্টিকে নিয়ে বেনী আর খোপা টানাটানি করে। পল্টির সুড়সুড়ি লাগে।
বেনী: আমার সাথে..
খোপা: না আমার সাথে..
কোরাস ১: বেনী আপা.. বেনী আপা..
কোরাস ২: খোপা ম্যাডাম.. খোপা ম্যাডাম..
পল্টি: এটা কি হাডুডু?
বেনী: না তো!
খোপা: কুতকুত।
পল্টি: বেশ তো। কুতকুত। তা কাতুকুতু দিচ্ছো কেন?
বেনী: তাহলে বল তুমি আমার পক্ষে খেলবে।
পল্টি: হ্যা। (গান) আমি তোমারই বাধনে বেধেছি আমার প্রাণ.. ..
খোপা: ও তলে তলে এইসব হচ্ছে? তাহলে তুমি যে আমাকে ঝালমুড়ির ঠোঙায় চিঠি দিলে সেসব মিথ্যে?
পল্টি: মিথ্যে কেন হবে? আমি তো তোমার বি টিম গো..
বেনী: কি! তোমার বি টিমগিরি আমি ছোটাচ্ছি। এই ঘুড়ির মধ্যে লিপিস্টিক দিয়ে যাব না ছেড়ে লিখে আমার ছাদে যে গোত্তা মেরে ফেললে সেটা তবে কি?
খোপা: লিপিস্টিক দিয়ে! কই দেখি..
বেনী: এই যে দেখ (খোপাকে)। এটা কার লিপিস্টিক (পল্টিকে)?
খোপা: বানান তো দেখি ভুল।
বেনী: তাই তো। তোকে যে চিঠিটা দিয়েছে সেটা দেখি। (চিঠি দেখে) এখানেও একই ভুল দেখ। জান লিখেছে য দিয়ে- এতো বানান ভুল করা লোকের সাথে আর যাই হোক আমার সম্পর্ক হতে পারে না। (পল্টিকে) তোমার সাথে আড়ি।
খোপা: আমারও। এক আড়ি, দুই আড়ি, তিন আড়ি, বাইন আড়ি..
পল্টি: (গান) মেঘ থমথম করে..
বেনী:(খোপাকে) আয় তো ভাই। খেলা শুরু করি আমরা..
খোপা: চল।
কোরাস ১: বেনী আপা.. বেনী আপা..
কোরাস ২: খোপা ম্যাডাম.. খোপা ম্যাডাম..
পল্টি: এই হারামখোরের দল, বস্তা বস্তা টাকা যে দিলাম চুইংগাম চিবানোর জন্য তার এই প্রতিদান? সাপোর্টারস। শ্লোগান..
কোরাস ১ ও ২: পল্টি ভাইয়া.. পল্টি ভাইয়া..
খোপা ও বেনী: অসভ্য..
পল্টি: দেয়ার ইজ নাথিং রং ইন লাভ এ্যান্ড পলিটিকস। সাপোর্টারস শ্লোগান..
কোরাস ১ ও ২: আমার ভাইয়া তোমার ভাইয়া.. পল্টি ভাইয়া পল্টি ভাইয়া..
কোরাস ১: বেনী আপা.. বেনী আপা..
কোরাস ২: খোপা ম্যাডাম.. খোপা ম্যাডাম..
শুভ: টুর্নামেন্টের আগেই যদি এত হট্টগোল, তবে পরে কি করবেন? আমি বলি কি তিনজনই মিলেমিশে খেলেন। (বেনীকে) আপনি টিম এ। (খোপাকে) আপনি টিম বি। (পল্টিকে) আর আপনি সি টিম..
কোরাস ১ ও ২: ছাগলের তিন নাম্বার..
পল্টি: শাট আপ ইউ হারামখোর
শুভ: আপনারা রাজি?
বেনী, খোপা ও পল্টি: রাজী।
শুভ: তাহলে শুরু করুন।
কোরাস ১: বেনী আপা.. বেনী আপা..
কোরাস ২: খোপা ম্যাডাম.. খোপা ম্যাডাম..
কোরাস ৩: পল্টি ভাইয়া.. পল্টি ভাইয়া..
শ্লোগানের মধ্যে লম্বা হ্যাট পড়া এক লোক আসে। ম্যাজিসিয়ানদের মতো লাঠি তার হাতে। তার নাম ম্যাজিসিয়ান।
ম্যাজিসিয়ান: ইট্স হরিবল।
পল্টি: হরি বোল!
ম্যাজিসিয়ান: নট হরি বোল। হরিবল। হোয়াট আ ক্যায়োস! এখানে কি হইয়াছে? কি লইয়া টুমরা বিবাড করিটেছো?
শুভ: আপনি কে ব্রাদার?
ম্যাজিসিয়ান: এ্যাবরা কা ড্যাবরা..
শুভ: এটা আবার কেমন নাম?
ম্যাজিসিয়ান: ও নো। ইহা আমার নাম নয়। ইহা একটা মন্ত্র। দেখ উহাদেরকে কেমন চুপ করাইয়া দিলাম। (শুভ দেখে মন্ত্র উচ্চারণে বেনী, খোপা, আর পল্টি স্তব্ধ হয়ে গেছে)। দেখ কেমন শান্তির সুবাতাস বহিটেছে। ওয়েল মাই নেম ইজ.. একচুয়ালি হামার কোন নাম নাই। লোকে আডর করিয়া আমাকে সমরাজ্যবাড বলিয়া ডাকে। টুমার নাম কি আছে?
শুভ: আমি শুভ।
ম্যাজিসিয়ান: শুভ..শুভ.. ইয়েস টুমি আই মিন আপনি, আই মিন আপনার নাম আমি বহুট শুনিয়াছি। ইন ফ্যাক্ট ইটিহাস বইটে পড়িয়াছি। আমাদের অনারেবল গবেষকরা সেখানে লিখিয়াছিলেন যে, আপনি বাস্তবে এগজিস্টই করেন না। মানে আপনি একটা ধারণা মাত্র, কোন বাস্তব ভিত্তি নাই। আর থাকিলেও উহা অটীট। ডায়নোসরের মতো বিলুপ্ত, ইতিহাস। বাট দেখিটেছি আপনি এখনও আছেন। আই এ্যাম ভেরী গ্ল্যাড টু সি ইউ। এ্যান্ড নাইস টু মিট ইউ।
শুভ: নাইস টু মিট ইউ টু..
ম্যাজিসিয়ান: ইউ নো আপনার খোঁজে আমি কত বন-জঙ্গল, পাহাড় পর্বত ঘুরিয়াছি; কত দিন-রাত ধরিয়া পথ হাঁটিটেছি আমি পৃথিবীর পথে; সাত সমুন্দর তের নদী পেরিয়েছি; ফেরিঘাটে দিনের পর দিন বসিয়া থাকিয়াছি; পদ্মাব্রিজের আশায় আশায় বুক বাধিয়াছি পার হইতে পারি নাই; অবশেষে ক্ষুধার জ্বালায় ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল দিয়া ভাত খাইয়াছি। আমার এত কষ্ট অবশেষে সার্থক হইলো। আমি আপনাকে মীট করিতে পারিলাম, আমি আপনার দেখা পাইলাম। খুঁজিতে খুঁজিতে আপনাকে না পাইয়া এক সময় ভাবিলাম আমাদের অনারেবল গবেষকের কথাই ঠিক-আপনি বিলুপ্ত হইয়া গেছেন। কিন্তু কামরূপ কামাখ্যার আমার উস্তাড বলিলেন ওরে সবুরে মেওয়া ফলে পাগল, তুই খুঁজিয়া যা। এটলাস্ট আমি আপনাকে সত্যি সত্যি পাইলাম। আমার স্যালুট গ্রহণ করুন জনাব।
শুভ: কামরূপ কামাখ্যায় আপনার ওস্তাদ থাকে নাকি?
ম্যাজিসিয়ান: ইয়েস। কাপড় ছাড়িয়া চুলে জটা লাগাইয়া উনি ঘুরিয়া বেড়ান। এক সপ্তাহ পরপর আমরা হট ডগ সাপ্লাই দেই। এছাড়া উনি অন্য কিছুই খান না। বহুত বড় ম্যাজিসিয়ান।
শুভ: ম্যাজিসিয়ান? যাদুকর?
ম্যাজিসিয়ান: ইয়েস। আমি তাহার শিষ্য-ম্যাজিসিয়ান দ্য জুনিয়র।
শুভ: তা তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি যে এদেরকে বরফ-পানি খেলার মতো বরফ করে রাখলেন..
ম্যাজিসিয়ান: আপনি বলিলেই উহাদের আবার পানি করিয়া দিতে পারি।
শুভ: তাই দিন।
ম্যাজিসিয়ান: কিন্তু তাহলে তো আবার উহারা বিবাড করিবে। বাই দ্য ওয়ে উহারা কি লইয়া বিবাড করিতেছিল?
শুভ: ওরা জাতীয় খেলা খেলছিল, কুতকুত। টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি চলছিল। বোঝেন তো হারজিতের ব্যাপার।
ম্যাজিসিয়ান: আই সি। হারজিত। মিন্স লাভ-লোকসান, প্রফিট এ্যান্ড লস। এনিওয়ে আপনার কথা মতো উহাদের পানি করিয়া দিলাম। সরি ফ্রেন্ড আপনাকে বরফ হইতে হইতেছে। এ্যাবরা কা ড্যাবরা। (শুভ জমে যায়। বাকীদের মন্ত্র দিয়ে ম্যাজিসিয়ান স্বাভাবিক করে) ড্যাবরা কা এ্যাবরা, সব পানি হয়ে যা, ফু..
বেনী: আমি কোথায়?
খোপা: আমার এমন লাগছে কেন?
পল্টি: আমার কি হয়েছে?
ম্যাজিসিয়ান: লেডিস এ্যান্ড জেন্টলম্যান।
বেনী: মোটেই ও জেন্টলম্যান নয়। এদিক সেদিক সুযোগ পেলেই প্রেম করা আর পল্টি খাওয়া ওর স্বভাব। এজন্যই তো ওর নামই পল্টি।
ম্যাজিসিয়ান: আই সি। আপনার সাথে কি ও প্রেম করিয়াছে?
বেনী: যাহ্ কি যে বলেন।
খোপা: ওকে রীতিমতো চিঠি লিখেছে।
ম্যাজিসিয়ান: আপনার সাথে উহার সম্পর্ক কি?
খোপা: ও আমার অপোনেন্ট।
ম্যাজিসিয়ান: আর উনার সাথে?
বেনী: পল্টি ওকেও চিঠি দিয়েছে, ঝালমুড়ির ঠোঙায়।
পল্টি: এক্সকিউজ মি ব্রাদার একটু এদিকে আসবেন? আসলে চিঠি আমি দু’জনকেই দিয়েছি। বোঝেন তো অস্তিত্বের ব্যাপার।
ম্যাজিসিয়ান: ওয়েল এ ব্যাপারে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি।
পল্টি: তবে আমি আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকব।
ম্যাজিসিয়ান: গোলাম হওয়ার ব্যাপারে আপনার দেখিটেছি আগ্রহের কমতি নাই। আপনাকে আমার সব কথা শুনিতে হবে।
পল্টি: শুনবো।
বেনী ও খোপা: আমরা শুনবো না।
ম্যাজিসিয়ান: দেখুন আমি একজন ম্যাজিসিয়ান। যাদু দিয়া আমি সব করিতে পারি।
বেনী ও খোপা: তাহলেও শুনব না।
ম্যাজিসিয়ান: সেই ক্ষেত্রে আবার আপনাদের ফ্রিজ করিয়া দিচ্ছি..
বেনী ও খোপা: না। প্লিজ।
ম্যাজিসিয়ান: এবার তবে আলোচনা হোক। (পল্টি ও খোপাকে) আপনারা একটু নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া নিন। (বেনীকে) আপনি এদিকে আসুন। আমি আপনার পক্ষে থাকা মানে যাদু আপনার পক্ষে থাকা। আপনি তো টুর্নামেন্টে উইন করতে চান রাইট?
বেনী: হ্যাঁ। যেকোন মূল্যে। খোপার আস্ফালন অসহ্য।
ম্যাজিসিয়ান: ওকে। আমি আপনাকে হেল্প করিবো। কিন্তু তাতে আমার লাভ?
বেনী: মাটির নীচে আমার অনেক কিছু লুকানো আছে।
ম্যাজিসিয়ান: সো।
বেনী: পানির নীচেও আছে। সব কিছুর ভাগ দিব।
ম্যাজিসিয়ান: ওকে দেখি কতটুকু করিতে পারি আপনার জন্য। আপনি মি. পল্টির সাথে মিটমাট করিয়া নিন।
বেনী পল্টির কাছে যায়। খোপা ম্যাজিসিয়ানের কাছে আসে।
খোপা: নিশ্চয়ই প্যাঁচাল পেড়ে ও আপনার মাথা ধরিয়ে দিয়েছে?
ম্যাজিসিয়ান: নেভার মাইন্ড। ও কিছু না।
খোপা: নিশ্চয়ই বলেছে মাটি আর পানির নীচে লুকানো সবকিছুর ভাগ দেবে ও আপনাকে?
ম্যাজিসিয়ান: হাউ ডু ইউ নো দ্যাট!
খোপা: ও সবাইকে তাই বলে। কিন্তু জানেন একই জিনিষের ভাগ আমিও দিতে পারি।
ম্যাজিসিয়ান: তাই নাকি? কিভাবে?
খোপা: টুর্নামেন্টে একবার জিতিয়েই দেখুন না।
ম্যাজিসিয়ান: ইন্টারেস্টিং। ওকে আই উইল হেল্প ইউ।
খোপা: থ্যাংক ইউ। যাই। নাহলে ওদের আবার সন্দেহ হতে পারে।
ম্যাজিসিয়ান: এযে মেঘ না চাইটেই বৃষ্টি। সবাই ওদের এ্যাসেট, ওদের গুপ্তধন তুলিয়া দিতে চায় আমার হাতে। ও সিনিয়র ম্যাজিসিয়ান অব কামরূপ কামাখ্যা, মাই ন্যাঙটা বাবা, ইউ আর গ্রেট। যাই দেখি কাকে কিভাবে ম্যানেজ করা যায়। লেডিজ এ্যান্ড মি. পল্টি আসুন আমরা টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি নেই।
পল্টি: প্রস্তুতি আমরা নিয়েই ফেলেছি ম্যাজিসিয়ান স্যার।
বেনী: ম্যাজিসিয়ান ভাইয়া, মনে আছে তো?
খোপা: এহ। ভাইয়া! ঢং। ম্যাজিসিয়ান সাহেব আপনি ওই মিথ্যুকটার কোন কথা শুনবেন না।
বেনী: কি? আমি মিথ্যুক! তুই মিথ্যুক।
পল্টি: প্লিজ তোমরা থামো জান। আচ্ছা যাও। তোমরা কেউ মিথ্যুক না। আমি মিথ্যুক।
বেনী ও খোপা: আমরা?
পল্টি: তোমরা সত্যুক।
ম্যাজিসিয়ান: আসুন তবে টুর্নামেন্ট শুরু করি। আপনারা প্রস্তুত?
খোপা: হ্যাঁ।
বেনী: জ্বি ভাইয়া।
পল্টি: ইয়েস স্যার।
ম্যাজিসিয়ান: তবে রেফারিকে ডাকুন।
বেনী ও খোপা: রেফারি?
পল্টি: আমাদের তো রেফারি নেই স্যার।
ম্যাজিসিয়ান:কিন্তু রেফারি ছাড়া টুর্নামেন্ট হইবে কিভাবে?
বেনী ও খোপা: তাহলে?
পল্টি: আমি বলি কি ম্যাজিসিয়ান স্যার আপনি রেফারি হন।
বেনী ও খোপা: প্লিজ।
ম্যাজিসিয়ান: আপনারা এত করে যখন বলিটেছেন..
পল্টি: থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
কোরাস: থ্রি চিয়ার্স ফর ম্যাজিসিয়ান.. হিপ হিপ হুররে.. থ্রি চিয়ার্স ফর যাদুকর.. হিপ হিপ হুররে..
শুভ: চোপ..
ম্যাজিসিয়ান: একি আপনাকে না মন্ত্র দিয়া ঘুম পারাইয়া রাখিলাম..
শুভ: আপনার মন্ত্র আমার উপর কাজ করে না। আমি ভান করছিলাম।
ম্যাজিসিয়ান: ভান? বাট হোয়াই।
শুভ: ভান না করলে আপনার, আপনাদের স্বরূপ বুঝতাম কি করে?
বেনী: এই লোকটা প্রথম থেকেই ঝামেলা করছে..
খোপা: এই সরো এখান থেকে..
পল্টি: যাও যাও কথা কানে যাচ্ছে না..স্যার..
শুভ: চোপ। আমার মাটিতে কুতকুত খেল, আমাকে সরিয়ে? আমার গুপ্তধন নিজেরা ভাগাভাগি করো। আর এই যে ম্যাজিসিয়ান সাহেব খুব তো মধু খাওয়া হচ্ছে না? তোমার রেফারিগিরি আমি ছোটাচ্ছি দাঁড়াও।
পল্টি: স্যার একটা কিছু করুন..
বেনী: ভাইয়া..
খোপা: চুপ করে দাঁড়িয়ে আমাদের অপমানিত হতে দেখবেন?
ম্যাজিসিয়ান: আমি হেল্পলেস। আমার মন্ত্র উহার ওপরে কাজ করিতেছেনা..
শুভ: এইসব মন্ত্র ফন্ত্র বহুত দেখছি। এবার দেখ আমার খেল। সমরাজ্যবাদ? শালা যুদ্ধবাজ। তোদের মন্ত্র দিয়ে তোদেরই দেখাচ্ছি মজা। এ্যাবরা কা ড্যাবরা.. (সবাই জমে যায়) টুর্নামেন্ট? আমার মাটিতে আমার জায়গা হয় না, আর ওরা ইচ্ছা মতো কোট কাটে, কুতকুত খেলে, বেইমানের দল। না শুধু বরফ করে রাখলেই হবে না। ওদের শায়েস্তা করতে হবে। কিযে ওদের সঠিক শাস্তি তা ভেবে বের করতে হবে। (দর্শকদের) আপনারা আছেন তো আমার সাথে? তাহলে আপনারাও ভাবেন আমিও ভাবি। আপাতত এই বিদেশী ম্যাজিসিয়ানটার ব্যবস্থা করি কি বলেন? এই মাটিতে ওর অস্তিত্বই রাখব না। একেবারে ভ্যানিশ করে দেই। যাহ্ । (তুড়ি দেয়। ম্যাজিসিয়ান মাটিতে পড়ে যায়) এবার নিশ্চিন্ত। দেশীগুলার ব্যবস্থা পরে করতেছি। আপাতত ওরা বরফ হয়েই থাকুক। আমাদের মাটি আমাদের থাক। আমাদের গুপ্তধন আমাদেরই থাক।
..মায়ের কোলে শান্তিতে শুয়ে
যে শিশু আজ হাসিছে,
তার তরে আজ সাজাই আবাস
ঐ যে আলো আসিছে.. .. ..

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top