গারো ভাষার তিনটি কবিতা ।। দেবাশীষ ইম্মানূয়েল রেমা

[গারো ভাষায় প্রায় বারোটির মত ডায়ালেক্ট রয়েছে। এই বারো ভাষাভাষী গোষ্ঠীই গারোদের বারোটি দল। যেমন আ•চিক, আ•বেং, আকাওয়ে, আত্তং, চিবক, দোয়াল, মাচ্চি, মিগাম, গারাগানচিং প্রভৃতি। তন্মধ্যে ভারতীয় গারোদের মধ্যে আ•চিক, এবং বাংলাদেশি গারোদের মধ্যে আ•বেং সাধারণভাবে প্রচলিত।

উচ্চারণ প্রসঙ্গে-আচিক ভাষার নিজস্ব কোনো বর্ণমালা না থাকার কারণে বাংলায় লিখিত অনেক আচিক শব্দ উচ্চারণে বিভ্রম ঘটাতে পারে তাই মূল উচ্চারণটি বুঝাতে কোনো বর্ণের আগে একটি ডট [•] বসানো হয় যেটিকে গারো ভাষায় বলে ‘রাক্কা’ বা Rakka। মূলত এই চিহ্নটি দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট ধ্বনিতে জোরারোপ করতে বা শ্বাসাঘাত করে উচ্চারণ করাকে বুঝানো হয়। যেমন Man•a > manna হবে ]

——————–

♦♦♦ সিয়ানিকো চা•থোত্তে উইয়ানি ♦♦♦

চা•থোত্তা আংনি সিয়ানিকো দা•আলো আংআ!
থেং•আ, থেংসুয়াতা!

আংআ উয়িজা রংথালা ইনে আগানা মাইখো।
রে•বা রাংসিতানি রামা অং•এ
দংথুয়া, সাকনা গ্রি, চিং•আতা।

অং•জা জাজ্রেঙানি, অং•জা খেনানি
অং•জা সাআনি, গ্রাপা-চ্রিকা, ইনওয়াতানি।
ওয়াত•এ, জক্না, অং•ওন্না আম•আ জ্রং জ্রং
আংনি বালজাংগি স্রক স্রক।
থেং•আ, থেং•সুয়াতা!

অনুবাদ-

♦♦♦
মৃত্যুর স্বাদ

এদিনে পেলাম আমি মৃত্যুর স্বাদ!
আলোকময়, দ্যুতি!

আমার পূণ্যের সংজ্ঞা অজানা।
নাসারন্ধ্র হয়ে আসে।
প্রাণে আরাম আরাম, ব্যথাশূন্য, দীপ্তিময়।

না তো ভয়ের, না শঙ্কার
দুঃখ-কান্না, ব্যথাবিহীন।
হতে চায় কোমলতায় অপসৃত
নীরবে আমার প্রাণবায়ু।
আলোকময়, দ্যুতি!

০০০০০০০০০০০০ 

♦♦♦ ছামে ♦♦♦
অংআ চিবিমা সংদুনিন চি নাআ,
আব্রি চুমাওনি রিবাগিপ্পা নাআ।
নাঙোনা ইয়াঙি গ্রংদিক্কা ছাদাত্তা
আংছামেমিং, মিকখাং বিনি
মিদ্দিমিচিক গিত্তা।

সাল্লারামনি জাদ্রিরাংবা নিক্কিমিংনা নাংখো
খাদিংস্মিতি খাদিংস্মিতি সকবা নিনা নাংখো।
আনসেংছ্রোকি সকবাজকহা ইয়া সামবাও
নিনা নাংনি বিমাংখো।

আংনি নিয়াও অংআ নাআন আগিলসাক্কো
সিলবাতগিপ্পা মিচিক, জাসেঙানি গিসিকনক্কো।
খুমুচ্ছেদাহা চিঙা আচ্ছোঙি রংথিও,
মিকখাংগ্রিক্কি আগানজক দংনো জ্রিংজত
গিসিক আপসানো।

আংনি জুমাং, আংনি রাসং, নাআ ছামে আংনি।
জাংগি আংনি, অংআ নাআন, আনসেংআনি আংনি।

অনুবাদ-

♦♦♦
প্রেয়সী

রূপ ধারণে তুমি সংদু নদীজল,
হিমালয় হতে প্রবাহিত অবিরল।
সংদু বিহারে সঙ্ঘাতে দরশন
প্রেয়সী আমার অবয়ব তার
যেনো দেবী সন্দর্শন।

পূর্বাঞ্চল হতে প্রভাদল সন্ধানলাভে তোমার,
মৃদু হাস্য হাসিতে আগমন সাক্ষাতলাভে তোমার।
মৃদু সমীরণ করে ভ্রমণ দেখে তোমার স্বরূপ,
নৃত্যে-ছন্দে অভ্যাগমন এধারে তারই
দেখবে তোমার রূপ।

আমার দেখায় শুধু তুমিই যে জগৎ-সংসারে
সে তিলোত্তমা অপ্সরা প্রভা হৃদয়-মন্দিরে।
পণ আমাদের উপবেশনে সে খণ্ডশৈলে,
রবো চিরকাল দৃষ্টি মিলনে অঙ্গীকার সে
এক হৃদয় পরে।

স্বপ্ন আমার, অহংকার আমার তুমি প্রিয়া আমার,
জীবন আমার হলে গো তুমিই পুলকনৃত্য আমার।

০০০০০০০০০০০০ 

♦♦♦ নামনিকানি ওয়ানগালা ♦♦♦

প্রাপ সালাকিমো নিক্কা আঙা নাংখো
স্মিত স্মিত নাংনি খাদিঙাও
বাল্লুয়া বা খাসি রিক রিক
বালগাওয়া বিবালনি স্মিলাখো রাবায়েঙা।

বল কক্কিমাও আসোঙি নাআ নেংথাকঙা
বল বিফাঙো দঅরাং নিথুরিরি রিঙেঙা।

ওয়ানগালানি সাল্লো রিবাইহা
গ্রংদিক্কা নাংখো
সিল্গিপ্পা মিচিক নাআ
নাঙোনা আংনি গিসিকখো ওয়ান্না
আংনি নামনিকা নাআ
নাঙোনা আংনি গিসিকখো গালা।

আংনি ওয়ানগালা
নামনিকানি ওয়ানগালা।

অনুবাদ-

♦♦♦
ভালোবাসার ওয়ানগালা

বটবৃক্ষের ছায়ায় দেখেছি আমি তোমাকে।
মৃদু মৃদু হাসি দেখে তোমার,
বাতাস বইছে মৃদু মৃদু
ফুলের গন্ধ নিয়ে আসে তার।

বসেছো আয়াসে বৃক্ষতলে
পাখির সুরেলা গীত শাখীমাঝে।

ওয়ানগালা দিনে এসে
সহসা তোমার সাথে দেখা
রূপসী তুমি অনন্যা
অর্পণ মন আমার তোমার মাঝে
আমার প্রেম তুমি
তোমাতে ঢেলেছি হৃদয় আমার।
ওয়ানগালা আমার
প্রেম-ওয়ানগালা।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top