উপসংহার
বেশ কয়েক বছর ধরে আমি এই ধাঁ ধাঁর মধ্যে পরেছিলাম। স্পষ্টতই ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, কি কারণে গেলনারের বাতলে দেওয়া এই পথটি এখনো অনেক শিক্ষাবিদের কাছে আকর্ষণীয়? তা কি এই কারণে যে, তারা একটা স্টাইল দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে আছে? আমরা জানি, অন্যান্য শিক্ষাবিদদের মতন নৃবিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষা ব্যবাহার করতেই শেখে না, বরং সে ভাষাকে ভয় করতে, তাকে শ্রদ্ধা করতে আর সেই ভাষা দ্বারা বিমোহিত হয়ে থাকতেও শেখেন। তবুও আমার প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তর এখানে পাওয়া যায়না, কারণ, এমন একটি পাণ্ডিত্যসুলভ স্টাইল কেন এতোগুলো বুদ্ধিমান মানুষকে আবিষ্ট করে রেখেছে তার উত্তর এখানে নেই। আমি এখানে এখন একটি সম্ভাব্য সমাধানের কথা বলব। এখানে আমরা আসলে এমন একটা স্টাইল পাচ্ছি যা সহজেই শেখান যায়, শেখা যায়, ও নকল করা যায় (পরীক্ষার উত্তরে, মূল্যায়নমূলক রচনায়, এবং অভিসন্ধর্ভে)। এটা এমন একটা স্টাইল যা অন্য সংস্কৃতির টেক্সচুয়ালাইজেসনের ব্যাপারটিকে সহজ করে দেয়, সংস্কৃতি সংক্রান্ত জটিল প্রশ্নের ছকে সাজানো উত্তর তৈরীকে উৎসাহিত করে, যা বিদেশী সংস্কৃতির ধারণাসমূহকে “অর্থপূর্ণ” আর “অর্থহীন” এই দুটি ভাগে সাজানোর জন্য উপযুক্ত করে তোলে। পড়ানো আর অনুকরণে সুবিধা থাকা ছাড়াও এই স্টাইল দৃশ্যমান ফলাফলের প্রতিশ্রুতি দেয় যে ফলাফলকে তাৎক্ষনিকভাবেই মুল্যায়ন করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিক সর্বজনীনতাকামী কোন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতভাবেই এমন একটা স্টাইলই প্রত্যাশা করে। এই স্টাইলের জনপ্রিয়তা কি এই বিষয়টাই প্রতিফলিত করে না যে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আদতে কি ধরণের?
যদিও এখন থেকে বেশ অনেক বছর আগে গেলনারের এই পেপারটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, তবু তা একটি তত্ত্বীয় অবস্থান প্রকাশ করে যা আজও জনপ্রিয়। অন্যান্য ডিসিপ্লিনের ওপর সমাজবিদ্যাগত প্রভাবের বিষয়টি আমার মাথায় রয়েছে, যার নীতি অনুসারেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে ধর্মীয় মতাদর্শসমূহ তাদের আসল অর্থ লাভ করে বলে বলা হয়, আর স্বত প্রতিপাদিত পদ্ধতিগত বিদ্যার বিষয়টিও আমার মাথায় রয়েছে, যার নীতি অনুসারে ভাষার অর্থ সংক্রান্ত এই বিশ্লেষণাত্বক নীতিটি যাদের বিষয়ে লেখা হচ্ছে তাদের কাছে স্পষ্ট না হলেও নৃবিজ্ঞানীদের নিকট স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কাজেই এই সামাজিক অবস্থান ধরেই নেয় যে, একজন নৃবিজ্ঞানীর পক্ষে একই সাথে একজন অনুবাদক ও সমালোচক হিসেবে কাজ করা কেবল সম্ভবই নয় বরং তার জন্য এমন কাজ করা আবশ্যক। এই ধরণের অবস্থান আমার কাছে অসমর্থনযোগ্য, আর আমি মনে করি ক্ষমতার সম্বন্ধ ও চর্চাসমূহই হলো সম্ভাব্যতার পরিমাপক। (এই আলোচনা যেহেতু ইসলামিক ইতিহাসের সাথে মিলে যায় তাই এই অবস্থানের বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য: আসাদ ১৯৮০।)
গেলনারের টেক্সটকে এমন জেরা করতে গিয়ে আমি ভাষা সমূহের অসমতার যে বিষয়টি তুলে ধরেছি তা বেশ পজিটিভ একটি বিষয়। আমার বিশ্লেষণ হলো,অধীনস্থ সমাজ আর প্রভাবশালী সমাজসমূহের ভেতরকার অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবৃত্তি আর চর্চার যে বিষয়টি রয়েছে তা হয়তো নৃবিজ্ঞানমূলক সাংস্কৃতিক-অনুবাদের উদ্যোগটিকে ব্যর্থ করে দেয়। আর আমার সুপারিশ হলো,নৃবিজ্ঞানীদের উচিত এই প্রক্রিয়াসমূহ ঘেটে দেখা, যাতে করে কার্যকরী অনুবাদের সম্ভাবনা আর তার সীমাবদ্ধতাসমূহ নির্ধারণে তারা কতোদূর পর্যন্ত যাবে তা তারা নিশ্চিত করে স্থির করে নিতে পারে।