✿
সম্ভ্রান্ত রাত্রির দীর্ঘশ্বাস
যখন দ্বিতীয়বার মৃত্যুর স্বাদ পেয়েছি, পুনর্জন্মে সন্দেহ কী!
ধানের গোঁছার ফাঁকে মাথা গুঁজে কামুকবোয়াল
লেজ নাড়ে শিকারের ঘ্রাণে—
তখন বিকেল নামে—সূর্যের আন্ধারে লাল মেঘ।
মৃত্যুর আগে দেখেছি—
ঝাঁক ঝাঁক লাল মেঘ রঙ মাখে দিগন্তের স্লেটে।
সন্ধ্যার অঙ্গারে ডুব দেয় চাঁদ দিগন্তের পিঙ্গল আঁচলে
তখন সম্ভ্রান্তরাত্রি নামে দীর্ঘশ্বাসে
মাইল মাইল রাত পাড়ি দিয়ে কবে কোন বঞ্চিত পেয়েছে—
কাঙ্ক্ষার আকাশ?
সতৃষ্ণ আন্ধারে পুড়ে দীক্ষিত রাতের ডাকঘর
এই রাতে লালন কোথায়?
কতকাল একতারা বাজেনি প্রান্তরে!
সম্পর্ক গড়িনি।
ভাঙবো কোন হিম্মতে?
একরাত ক্লান্তি জমে—একরাত বাড়ে অবসাদ
একমুঠো প্রেমে বাড়ে দীর্ঘতম নদী
এক নদী জলে ডোবে বোকা চণ্ডীদাস
ধর্ষিতা চান্দের স্বেদ ডেকে আনে কামান্ধআন্ধার।
চিরকাল রিক্ত হাতে ফিরে যায় দেবতার কামুকনিশ্বাস?
শরীরের ক্ষুধা যত বাড়ে, তত কমে পাপ-পুণ্য ভয়।
———–
✿
সময়
উড়ছে দেখে মেঘরমণী বাতাসে নির্ভয়ে
আমার দু‘চোখ থমকে গ্যাছে অনন্ত বিস্ময়ে।
মেঘরমণী মেঘ নয় যেন নারীর কোমল মন
শহর ছেড়ে উড়ছে বুঝি হাওয়ায় অনুক্ষণ?
ও রমণীর নিরীহমন—নিবিড় চুলের ভাঁজ
তোমার সঙ্গে পালিয়ে যাব শহর ছেড়ে আজ
এই শহরে আবর্জনাই বেশি মূল্যবান
হট্টগোলে কেউ শোনে না কালান্তরের গান।
আবর্জনার গন্ধে এখন বাতাস ভীষণ ভারী
ও সখী মেঘ দাও পাঠিয়ে তোমার সুনীল শাড়ি
তোমার শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে নেব আমি খুঁজে
প্রিয় নারীর চোখের ভাষা অবাধ্য চোখ বুজে।
ও সখী মেঘ—রমণীর মন পুড়ছি ভীষণ জ্বরে
তোমার সঙ্গে উড়তে যে চাই—অনন্তপথ ধরে।
———–
✿
রোদের আঁচড়
চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা মানুষের চোখ আঁকে ছাদের আকাশ
তারাগুলো মরে গেলে গলে যাওয়া রাতগুলো ঠিক জেনে যায়—
একবার নদীদের ধর্মঘটে কবিতারা ঢেউ এনেছিল।
সেবার শিখেছিলাম—চূড়ায় উঠতে নেই; চূড়া খুব ছোট
আমি জানি মুঠোভর্তি নদীগুলো কোনোদিন চূড়ায় ওঠেনি।
সম্পর্কের বেণী ধরে পতনের পাণ্ডুলিপি পাঠ করো যদি
ইতিহাসে ধূলো জমে, বাতাসেও লাগে সেই রোদের আঁচড়
একঝাঁক অন্ধকার খুঁটে খায় চূড়োর উত্থান—
পতনের নীতি আছে—ঘৃণারও ইতিহাস।
হয়তো নিখিল নীলে ছবি আঁকে চিরঅন্ধ আলোর সন্ত্রাস;
আমাকে উন্মাদ ভেবে মাইল-মাইল রাত গিলে গিলে খায়।
প্রতারক চিত্রকর;
আমাকে পায় না খুঁজে মিছিলের আগে-পরে গোয়েন্দা বায়স!
এই নাও সান্ধ্যনদী; সূর্য মরে গেলে দিয়ো মাতাল চুমুক
আমার পকেটভর্তি তৃষাতুর চৈত্রের আকাশ
মগজে স্লোগান তুলে জেগে থাকে রাতগুলো আলোর কাক্সক্ষায়।
চূড়ায় ওঠে না নদী—যে ওঠে সে পুড়ে মরে তুমুল ঘৃণায়।
———–
✿
ক্রীতদাসের ইতিকথা
বন্ধুরা জানেন—কবির ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ হয় না কখনো।
কবি বলেছেন, মানুষেরা ফিরে যাচ্ছে দাসযুগে।
সঙ্গমে অনীহ তারা, ধর্ষণে তাই সুখ খোঁজে।
মানুষেরা খুন করে মানুষের আশা, খুন করে আশ্বাস-বিশ্বাস।
এইসব মানুষের রমণ-গমণ-ক্রোধ সবই দাসের মতন।
ক্রীতদাসেরা
কে কার আগে খুলবে নিজের মেরুদণ্ড, নামে এই প্রতিযোগিতায়;
কে কত মেরুদণ্ডহীন, কার ঘটে কত তেল, সকলই গরল ভেল
যদি না কাজে আসে, মনিবের চরণমালিশে।
এই তেলমালিশেও আছে নানা কায়দা কানুন।
অকারণেই কারও-কারও মাথা নত হয়।
কারও-কারও মেরুদণ্ড খুলে পড়ে অবিকল কেঁচোর মতোন।
আর তারা গড়াগড়ি খায় অর্থেশ্বরের পায়ে চুমো খেতে-খেতে!
সবচে গোপন সত্য—ক্রীতদাসেরা দাস হতো দ্বৈবচক্রে
আজকাল মানুষেরা ভালোবাসে কৃতদাস হতে।
———-
✿
জংলি কুসুম
যদি ভুল করে কোনো ভুলফুল ফোটে তোমাদের ছাদে
জেনে রেখো সে ভুল আমি;
জেনে রেখো তোমার খোঁপায় ঠাঁই হলো না
তাই ফুটেছি অকালে—হৃদয়ের দাবি নিয়ে জংলি কুসুম!
কাচের দেয়াল ঘেরা তুমি-আমি-আমাদের পৃথিবী
তবু কেন মনে হয়—এই ছুঁই এই ছুঁই?
আহারে মানবস্বপ্ন! দেয়ালের ওপারেই থাক!
আমাদের বিশ্বে শুধু বয়ে যাক প্রেমের জোয়ার।
কোনো রাজকন্যা নয়, না কোনো স্বর্গের দেবী
তোমাকে চেয়েছি শুধু শর্তহীন আঁধারে-আলোয়
অনন্ত পথের শেষে দাঁড়িয়ে থেকেছি বহুকাল
পথ শেষ হয় তবু, দেখা আমি পাই না তোমার
মনে হয় এই ছুঁই এই ছুঁই
জানি তুমি পথের শেষে নেই, আছ পথের ওপারে।
ফুটেছি বুনোফুল পুকুর ঘাটে, ক্ষেতে ও খামারে
পায়ে পায়ে চুমো খাই সকালে-বিকালে
যদি তুমি ভুল করে হাতে তুলে নাও,
যদি ভালোবাসা পাই—
ফুটেছি গোপনে ফুল, টবে নয় ছাদের কিনারে!
———
✿
নিষিদ্ধ করতালি
হঠাৎ কোথাও ভাঙলো কারও ঘুম
আঁকছে ছবি পিকাসো, না দালি?
আলোর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে পথ
উঠলো বেজে নিষিদ্ধ করতালি!
.
কেউ বলেছে, রা করো না আর
কেউ বলেছে সব মেনে নাও আজ
বাঁচতে চাইলে মানিয়ে চলো সব
প্রতিবাদের নেই তো কোনো কাজ।
.
কেউ বলেছে, এবার লড়াই হবে
পথের শত্রু কাটবো ফালি ফালি
বিশ্ব হবে সীমান্তহীন, শুনে
কেউ দিলো ফের নিষিদ্ধ করতালি?
.
আমার কথা বলবো শঙ্কাহীন
কিসের কারা, কিসের শেকল ভয়
জন্মস্বাধীন পাখির মতো আমি
ভালোবাসার আকাশ করবো জয়।
.
নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে মন
কার বুকে আজ ঘুমায় বনমালী?
রাধা খোঁজে বৃন্দাবনে শ্যাম
কৃষ্ণ দিলো নিষিদ্ধ করতালি!