কবিতাগুচ্ছ ।। গাছপাথর ।। আতিদ তূর্য


গাছপাথর

সেই যে এক ছিপছিপে হরিণ
বয়স বাড়েনি যার অবয়বে
আঘাটায় রাখে মুখ জলাতঙ্কে—
বাংলা মদ খেতে গিয়ে সেদিন
আমাদেরও এমন হয়েছিলো।
ছায়া নাচলে ভেতরে ঠাণ্ডাস্রোত
তোমার পা দুটো প্রপেলার
কেমন আরামসে গা ভাসাও ঘড়েলের মতো।
ভুলে যাই অনায়াসে—
নদীর বুকে আমাদেরও ঘর ছিলো।
——-

ঈদ

চাঁদরাতে হাতে ঈদ পেলাম আমরা।
শাওয়ালের কাস্তেচাঁদ যেন ঢুকে পড়েছে পথভুলে।
যেমন খুশি তেমন সাজি—
ত্বরায় দৌড়ে লুকাই ইঁদুরের গর্তে।
ঈদ পুরোনো হওয়ার ভয়ে আমরা পেরেশান—
পাপারাজ্জি যে কোনো ছুঁতোয় চালাতে পারে আক্রমণ।
বহুদিন বাদে ঝমঝমিয়ে আনন্দ নামছে টিনশেডে ..
আশুরা সাজে দুজন মানুষ
তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে।
——-

অন্যদিন

অনেকদিন পর আজ বাড়ি ফিরছে আব্বা।
আগে যতোবার ঢাকা থেকে ফিরেছে
মা যেন অন্য এক মা—
ঘরময় অকারণ পায়চারি।
জুম্মাবার ছাড়াই
চুলায় গোরুর মাংসের ঘ্রাণ
বিনা অজুহাতে ইস্কুল কামাই
বায়নাসব লক্ষ্মীবাচ্চার মতো সুটকেসবন্দী।
এবেলা চেনা-অচেনা
অনেক মানুষ এলো বাড়িতে—
ইস্কুল ফেলে স্বয়ং চলে এলো হেডস্যার
মা মূর্ছা গেলো দুইবার।
সাদা গাড়ি আব্বাকে নিয়ে এলো
উঠোনের সফেদাতলায়।
——-

জীবনসঙ্গমে

পুরোনো সকাল ফিরে ফিরে আসে।
ছোটো পাখির কিচিরমিচির, মোরগের পৌরুষ
রোজ রোজ একই কাজ—সকাল কি সিসিফাস?
জাগছে কুকুর, আলোর আঁচে জারুল
মসজিদ থেকে ভেসে আসে প্রাগৈতিহাসিক সেই আওয়াজ—
‘মক্তবের ছাত্রছাত্রীরা ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি মক্তবে চলে আসো’।
মায়ের ঘরে চিরায়ত সাফসুতরা শব্দ
লাঠি সঙ্গী করে দাদাভাই—
এখনই বংশীয় নামে ডেকে উঠবে শ্লাঘায়।
ঘুমের ভান করে পড়ে থাকবো বিছানায়
দেখবো গোপন কোনো প্রিয় দিবাস্বপ্ন—
কাঁচাঘুম একদিন যৌবন পাবে।
——-

যাত্রী

বাস থেকে নামলাম যখন
চারিধারে কন্যাসুন্দর আলো
যেতে হবে দূর অজপাড়াগাঁ
ইঞ্জিন ভ্যান দাঁড়িয়ে অদূরে
চাইছে একজন মাত্র লোক।
খুবলে খাওয়া জংলা পথে
ইটের সলিং পার হয়ে যায় চাকা
পিঠে মৃদু ঠোকর কোমলসারস
সে এক ফরসা মেয়েলোক।
নাকফুল তার পড়ন্ত সূর্যের লাল
মুখে আবছা আবছা শোক
হাতে ধরা বাহারি মালসামান
এই ধানিপথ কতোটা পেরোলে বাপেরবাড়ি?
প্রতি স্পর্শে কেঁপে ওঠার আন্দাজ—
হয়তো পিঠে ছিলো জবার মতো ক্ষত
অথবা বাতেনি কথা জানে শুধু বাৎসায়ন।
——-


আয়ু

নদীর গায়েহলুদে গিয়েছিলাম আমরা।
বাতাসে বাতাসে ভাঁটার তোড়
অদূরে জাল টানছে প্রাকৃতজন।
সূর্য উঠে গেছে ভৈরবের আকাশে
ড্রেজিং মেশিন কেড়ে নিচ্ছে সারি সারি বালিশাবক।
তিনটে শুয়োর চেপেছে ভ্যানে
সরাইখানা বিহারে গন্তব্যমুখ—
জীবন-মৃত্যুর নো ম্যানস ল্যান্ড যখন একটি চাপাতি।
দোকানঝাপি খুলছে পুরোনো দম্পতি
চোখ থেকে মুছে গেছে কাম
কষমিষ্টি চা এই ভোরের দোচোয়ানি
সিগারেট ধোঁয়ায় আরো একটু আয়ুক্ষয়।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top