✿ যুদ্ধ একটি অনিবার্য ঘটনা
এই পৃথিবীতে যুদ্ধ একটি অনিবার্য ঘটনা।
জলে’ তো সারাক্ষণই যুদ্ধ চলে,
বৃহৎ হা করে থাকা নীল তিমি ছোট বড় সব মাছ গিলে
ফেলে। হাঙর হাঙরের লেজ খায়।
জঙ্গলেও মঙ্গল নেই-
ইগল থেকে ইদুর কখনো শিকার তো কখনো শিকারী।
হরিণকে চক্রে ফেলে বাঘে- সিংহে করে বূহ্য রচনা।
সভ্য বা অসভ্য সকল সভ্যতার বুক থেকে মস্তকে যুদ্ধ
রক্ত হয়ে দৌড়ায়ঃ
আসলে যুদ্ধের জটিল সূত্র এ পৃথিবীর খাদ্য শৃঙ্খলে
এবং মানুষ সর্বভুক-
মাছ-মাংস থেকে ঘাস সব’ই খায়,
ক্ষুধার অধিক সে কখনো কখনো মানুষের প্রাণও খেয়ে
ফেলে।।
—–☘︎—–
✿ সুগন্ধের মুক্তিপন
অরণ্য , আমি ধ্যান মগ্ন হবই
তোমার সবুজ জমিনে
অনন্ত কালের তরে নতজানু হয়ে বসে শুনবই
তোমার নিঃশব্দের সিম্ফোনি;
নেব হাতের আঙুলে বসা প্রজাপতির কাছে
সুগন্ধের মুক্তিপন।
অরণ্য,
আমায় গ্রহণ করো তোমার গভীরে;
আদিম উদার করে
বৃক্ষদের মত শেকড় গজিয়ে দাও পায়ে,
যেন তোমার থেকে আমার আর দূরত্ব না বাড়ে।
—–☘︎—–
✿ ফ্রানৎস কাফকা’র চোখ
ডাস্টবিন থেকে খাবার উঠে আসে। বৃষ্টি নামলেই কেবল স্নান হয়।
বিছানা বিরল ফুটপাত।
একমাত্র শয্যাসঙ্গী কুকুর; সেগুলোও একে একে এলিটদের বুকে
এবং কোলে গিয়ে উঠছে।
হে ইশ্বর, পত্রপাঠ ওদের বরং
রূপান্তর করে দিন একেক’টি লোমশ ধবধবে সাদা কুত্তায়।
—–☘︎—–
✿ শাখায় নয়, খোঁপায় ফুটবে ফুল
সুগন্ধী বাতাসে উড়ছে পাখিদের এলোমেলো চুল
মায়বতী তরু’র শাখায় ফুটে আছে পিকাসোর হাতে
আঁকা ফুল –
দ্যাখো হে সুদূরতমা, এই’ তো বসন্ত!
এলো,
এই দোলা-পূর্নিমায় মাটির ডানায় ভর করে; এলো
প্রকৃতির দেহ ও দুয়ারেঃ
দুঃখ করো না হৃদয়েও বসন্ত আসবে একদিন
তখন শাখায় নয়, তোমার খোঁপায় ফুটবে ফুল।।
—–☘︎—–
✿ হাত রেখে সমুদ্রের গায়ে
হে প্রাচীন কচ্ছপ, আমাকে শেখাও ধীর পদক্ষেপঃ
পৃথিবীর ম্যারাথনে অংশ নিয়েই আমার দু’পায়ে এখন
ভীষণ আক্ষেপ,
ক্ষিপ্র চিতাবাঘ শিকারী বাজপাখি-
এমন’তো চাইনি হতে আমি!
আমার প্রতিজ্ঞা ছিল হাত রেখে সমুদ্রের গায়ে –
প্রণয়ের পাড় ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে মাথা তুলে দেখব আকাশ,
জল ছোঁবো পায়ে।।
—–☘︎—–
✿ করপুটে দুটি চোখ
প্রিয় হয়ে বেঁচে থাকতে পারিনা,
পালিত পশুর মত প্রতিদিন কেউ না কেউ কুরবানী হয়ে
যাই এই পৃথিবীর শাসক ও বণিক’দের হাতে।
আমাদের পবিত্র রক্তের ঢল গ্রীবা থেকে মাটিকে স্পর্শ
করার পূর্বেই ওরা সাফল্য লাভ করে;
জবেহ হওয়ার মূহুর্তে চোখ হতে নেমে আসা প্রতি ফোটা
বেদনার সমপরিমান আনন্দ শুষে নেয়,
এবং তরতাজা কলিজা,গোস্ত, হাড় নিক্তির ওজনে ভাগ
করে- ওদের সুস্বাদু ডিনারের জন্য।
সমস্ত বন্টন শেষ হয়ে যাওয়ার পর শুধুমাত্র চোখ দুটি
দান করা হয় আমাদের পরিবার’কে
যা দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে হজম করি-
প্রিয়তমা’র, প্রিয় হারানোর শোক।
—–☘︎—–
✿ বৃষ্টি নামলেই
বৃষ্টি নামলেই প্রেমিকাদের মুখ মনে পড়ে যায়
কারণ ওদের দীর্ঘশ্বাস জমে জমে মেঘ হয়
আর সেই মেঘে বৃষ্টি নামে এই আমায় ভেজাতে।
যতোটা চুম্বন ওরা ঠোঁটে দিয়েছিল ভালবেসে
সব বজ্র হয়ে ফেটে যায় ঠিক বুকের ভেতর
আর সব নষ্ট মুহুর্ত যা আমি দিয়েছি ওদের
তড়িৎ আলোকে স্পষ্ট করে তোলে আমার দু’চোখে-
সব স্মৃতি অভিশাপ বারুণ প্রেমের ক্ষত;
তাই বৃষ্টি নামলেই প্রেমিকাদের মুখ মনে পড়ে যায়।
—–☘︎—–
✿ পৃথিবীর আষাঢ়-শ্রাবণ
তুমি জানলে না,
ঠিক যতবার আমি খুঁজেছি তোমায়
ততো ফোঁটা বৃষ্টি পড়ে
এই নীল পৃথিবীর আষাঢ়ে-শ্রাবণে।
—–☘︎—–
✿ মিরাকল
সকল চোখ ফুলের সৌন্দর্য দ্যাখে কিন্তু কতজন ভেদ করে সুগন্ধের রহস্যঃ
জেগে থাকো যখন সবাই নিদ্রামগ্ন। ঠায় বসো অন্যদের হাঁটার সময়।
চুপ করো অজস্র কথার বুদ্বুদে। অতঃপর উলঙ্গ হও সূর্যের মুখোমুখি-
দ্যাখো আলোর সাতটি নদী।
পৃথিবীর পথে পথে’ই মিরাকল থাকে! সময়ের ডায়ালে যারা পা উঠিয়ে রাখে-
তারা এর পায়’না নাগাল।
—–☘︎—–
✿ করপুটে কেবলই রোদ্দুর
এই সব বিভ্রান্ত দুপুর করপুটে কেবলই রোদ্দুর নিয়ে আসেঃ
চেয়ে দ্যাখো-একা একা পুড়ছে আকাশ, মেঘও নেই পাশে।।
—–☘︎—–
✿ প্রেম এখনো হয়’নি ব্লাকহোল
প্রেম এখনো হয়’নি ব্লাকহোল
তোমার গোপন গম্বুজের মতো গোল
পৃথিবী হতে।
চোখ তুলে দ্যাখো হে সুদূরতমা,
এ হৃদয় গঙ্গায় অনন্ত নক্ষত্র ফুল হয়ে
ফুটে আছে।
—–☘︎—–
✿ মেঘদূত
হে ষোড়শী,
বিষন্ন বর্ষায় পা ডুবিয়ে তুমি,মুখ দ্যাখো জলেঃ
আসমান চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে এই আষাঢ়ে – শ্রাবণে,
এর ফলে যুবতী হয় নদী।
আমারও নাভির নিচে মেঘ জড়ো হয়ে আছে,
আষাঢ় বার কয়েক কথা দিয়েও আসলো না
শ্রাবণও যদি না আসে- তবু তুমি এলেই তুমুল
বৃষ্টি হবেঃ
আমিও চুঁয়ে চুঁয়ে গলে তোমার দেহেই ডাকবো বান।
—–☘︎—–
✿ বৃষ্টি ও জাদুবাস্তবতা
মেঘালয় পাহাড়ের সাথে শেষ আলিঙ্গন করে
গর্ভবতী মেঘগুলো দীর্ঘ লালাখালে জন্ম দেয়
ভারতীয় মুদ্রার মতন নিটোল বৃষ্টির ফোঁটা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পাঞ্জাবীর দু’পকেট পুরে
আমি সেই বৃষ্টি নিয়ে এসেছি তোমার জন্য প্রিয়
ভিজে দ্যাখো তুমি, আমাদের প্রেমেও গর্ভবতী হবে।
—–☘︎—–
✿ চাঁদ ডুবে গেলো রবীন্দ্র সরোবরে
তোমার যুগল পা ক্রমাগত রাস্তা ভুল করে হাঁটছে-
শ্বাপদসংকুল অরণ্যানী। আমি
জন-অরণ্যেই রবীন্দ্র সরোবরে ধ্যানস্থ হয়ে শুনতে পাচ্ছি-
আমার বুকের মধ্যে তোমার পদধ্বনি।
নীলাভ ময়ূর, প্রেমের নামে কবরীতে পালক গুজে দিচ্ছে তোমায়;
সম্মোহনে শরীর জুড়েই ছড়িয়ে দিচ্ছে নীলমণি-বিষ।
জেনেছি , নক্ষত্রের পথ ধরে গন্তব্যে ফেরার বিদ্যা
তোমার আয়ত্তে নাই;
ধ্যান ভেঙে তাই বিষন্নতায় ধোঁয়ার সাথে বিষ মেখে খাই।
আহা! বিষন্নতার ভারে
আজ অপরাহ্নেই চাঁদ ডুবে গেলো রবীন্দ্র সরোবরে।