প্রকাশিত হলো আশানুর রহমানের উপন্যাস ‘লেনিন’// অনীক রহমান

লেনিনের মৃত্যুর পরে মাক্সিম গোর্কি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘লেনিনের মনোজগত নিয়ে কেউ যদি একটা ফিকশন লিখতে পারত!’ তাঁকে নিয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক অ্যালান ব্রায়েন ‘লেনিন: দ্য নভেল’ নামে উপন্যাস লিখলেও বাংলাভাষায় এই প্রথম। আশানুর রহমান সেই শূন্যস্থান পূরণের পাশাপাশি গোর্কির প্রত্যাশাও মেটালেন।

বালক ভ্লাদিমিরের লেনিন হয়ে ওঠার গল্প যেন একদিকে রুশ ইতিহাসের আলোড়ন, অন্যদিকে উলিয়ানভ পরিবারের একটানা বিয়োগান্তক কাহিনি। ইতিহাসের কামারশালার আগুনে আর পারিবারিক শোকগাঁথায় গড়ে ওঠে লেনিনের মন। জারের হাতে বিপ্লবী বড় ভাই সাশা-র মৃত্যু কিশোর লেনিনকে দেখিয়ে দেয় জীবনের দিশা। সেই জীবনে প্রেম আসে নাদিয়া ও ইনেসার আকর্ষণ নিয়ে। ভালবাসার আহ্বান ছিল ইয়াসনেভা ও এলিজাবেতের কাছ থেকেও। কিন্তু লেনিন যেন কাছে থেকেও দূরে, দূরে থেকেও অন্তর্গত রক্তের ভেতরে। শুধু প্রেমে নয়, বন্ধুত্বেও লেনিন যেন অধরা থেকে যায় ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের কাছে। শ্রমিকের সঙ্গে তিনি শ্রমিক, অরণ্যে শিকারি, প্যারিসের আড্ডায় তুখোড় বুদ্ধিজীবী আর ব্রিটিশ মিউজিয়মের নির্জনতায় এক আচ্ছন্ন পাঠক। ইউরোপের ভূগোল জুড়ে তাঁর চলাচল। সাইবেরিয়ার বরফজীবনের নির্বাসন থেকে সুইজারল্যান্ড, লন্ডন, প্যারিস, ব্রাসেলস আর পুরো রাশিয়াজুড়ে ছড়ানো তাঁর কক্ষপথ। কখনো মনে হয় তিনি নিষ্ঠুর, কখনো বিষাদময়, নিঃসঙ্গ। ইনেসাকে কবরে শুইয়ে কাঁদছে লেনিন। এই লেনিনই তো পিটার্সবার্গের ক্ষমতা দখলের আগে ও পরে শান্ত–যেন বিপ্লবের রেলগাড়িটার বিজ্ঞ চালক। ইতিহাসের শীতল বরফে মোড়ানো লেনিনের কঠিন ব্যক্তিত্বের তলায় যে উষ্ণ জীবনস্রোত–এই উপন্যাস তারই নিবিড় বয়ান।

আশানুর রহমানের জন্ম ১৯৭২ সালে, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার সীমান্তবর্তী মান্দারতলা গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিআইবিএম ও কানাডার সিকিউরিটিজ ইনস্টিটিউটে। সমাজ বদলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে চলে গিয়েছিলেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বর্তমানে ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত। শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনেও সক্রিয়। মননশীল পত্রিকা ‘মননরেখা’–র সম্পাদনা পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

‘লেনিন’ লেখকের প্রথম উপন্যাস। রচনাটির কিছু অংশ অনলাইন পত্রিকা ‘লেখালেখির উঠান’–এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মেহেদী হাসান।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top