কামরুল আহসানের অনুবাদে সদগুরু র ডেথ পড়তেছিলাম, পড়তে পড়তে অসুস্থ বোধ করতেছি। ডেথ পড়ার একটা প্রভাব হয়তো কাজ করে থাকবে এই অসুস্থতার নেপথ্যে। সদগুরু এই বইয়ের বক্তব্য ভারতীয় দর্শনের নিত্য পুরাতন বিষয়, এই বিষয়ে ওশো বলেছেন, নিগুঢ়ানন্দ লিখেছেন তবু এই বই যে কারো মনোলোকে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখে। বইটি এত আন্তরিক ভঙ্গিতে অনূদিত হয়েছে যে মনে হবে এই বইয়ের বক্তব্য কোন আধ্যাত্মিক গুরুর আধিভৌতিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা নয়, এটাই হবে কারো মৃত্যু হলে!
মানুষ কয়েক হাজার বছর ধরে ভয় পেয়ে এসেছে মৃৃত্যুর সাথে সাথে সে চিরতরের জন্য হারিয়ে যাবে কি না! কোনভাবে টিকে থাকার আকাঙ্খা তাঁর চিরকালের, সেই আশাবাদ জিইয়ে রেখে এসেছেন মিষ্টিকরা; তাঁরা বলছেন, আত্মার মৃত্যু নাই, সে একদেহ থেকে অন্যদেহে অনন্তভ্রমণ করে যায় যে পর্যন্ত মহাসমাধি না ঘটে! সাধুরা এত নিশ্চিত যে তাঁরা অপার হয়ে বসে থাকে, কবে তারা জন্ম মৃত্যুর অসহনীয় চক্র থেকে মুক্তি পাবে!
ভূত জীবনের যে ব্যখ্যা দিয়েছেন সদগুরু সেটা প্রমাণিত না হলেও প্রায় বিশ্বাসযোগ্য ও বিবেচনাযোগ্য বিষয় হিসেবে আপনার মগজ কামড়ে ধরবে।
সাধারণ মানুষ তো জীবন প্রলম্বিত করতে চায়, হারিয়ে যাওয়াতেই তাঁর ভয়। সেই ভয় থেকে কিছুটা মুক্তি দেবে এই বই। বইয়ে যে সব বিষয় আলোচিত হয়েছে সেসব আমাকে আতংকিত করেছে অন্য কারণে; যে জীবনের মধ্যে দিয়ে আমি গেছি বা যাচ্ছি সেই জীবন আমার কাছে ক্লান্তিকর আর বিভ্রান্তিকর ও দুঃখময়, সেই জীবন যদি আরও ঘুরতে থাকে তবে এই দুঃখ অসীমভাবে সীমাহীন, আমরা শোচনীয়ভাবে পরাধীন।
কামরুল আহসান একজন কথাশিল্পী হওয়াতে এই বইটিকে এমনভাবে বিন্যস্ত করেছেন যে প্রতি অধ্যায়ে আগ্রহ জেগে থাকে। ঝরঝরে গদ্য আর কাব্যিকতা এই বইয়ের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
বইয়ের কাভারে লেখা আছে, যারা মারা যাবে তাদের সবার জন্য এই বই’
কি মারাত্মক ব্যাপার!
এইটা একটা বিপদজনক বই হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সাহিত্যগুণ সম্পন্ন, আতংকপাঠ্য। না পড়াই ভালো!
নালন্দা প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে। দাম:৮০০ টাকা।
…
রাসেল রহমান