কাওড়ামঙ্গল (পর্ব ৯) II রোমেল রহমান

৪০

কার ঘুঙ্গুরে কে নাচে
ফেউ যদি লাগে পাছে!

কাওড়া পাড়ায় নারায়ণী আর নীলের ঝগড়া লাগে। অন্যরা তাদের উঠোন, বারান্দা, রান্নাঘর থেকে তাকিয়ে দেখে।

নারায়ণী : ক্যান কবো না ক্যান?  নিজে পাপ কাজ করবা পাড়ায় থাইকে আর তার কথা কলিই দোষ?

কালি : মুখ সামলা নারায়ণী। বেশি হয়ে যাচ্ছে কলাম।

নারায়ণী : কি বেশি হচ্ছে? ক দিনি? তুই অইসব কইরে বেড়াইস নে? ঘরের মদ্দি কি করিস তাও আমাগের সবার জানা আছে।

নীলে : নিজের শ্যাটায় শান্তি নেই তাই পরের শ্যাটা দেখতি বেড়ার ফুটো খুইজে বেরাইস তোরা?

নারায়ণী : আমাগে খোঁজা লাগে না। লোকেই কয়।

নীলে : বানায় বানায় কথা ছড়াইস নে।

নারায়ণী : কথা আর বানাবো কি।  কেচ্ছা-কাহিনী যা শুনি তাতেই মাথাডা ঘোরে।  এহন তো পাড়ার ছুয়াল মাইয়ে গুলনের মাথা নষ্ট হবে তোর জন্যি।

নীলে : চুপ মাগী।

নারায়ণী : মাগী কারে কচ্ছিস? হেঁই। তুই নিজে কি? মহাজনের ছুয়াল সুমিতের কাছে যায় খিডা?

নীলে : বানায় বানায় কথা কইস নে।

নারায়ণী : বিধবা মানুষ তুই থাকপি ভালো মতন। এতো নক্সা আসে কুহান থে তোর?

নীলে : তোর কাছে কি নক্সা করতি গেইছি না দুইডে ভাত চাইছি?

নারায়ণী : তা চালিও ভালো হতো। বাজারের লোকগের কাছে যাওয়া লাগতো না।

এক ধোনে যার শান্তি নেই বারো ধোনে তার সুখ,

পাউডারে মাইখে নটী ঢাকে কালো মুখ!

নীলে : কি কলি খানকি?

একটা ঘটি ছুঁড়ে মারে।

৪১

আমার হাতে তেনার হাত
দেলেন তিনি কোন বরাত?

স্বপন কাকাকে খুঁজে আনা হয়।

মঙ্গল : আইছ কাকা।

স্বপন : হয়। তুমি ডাক পাঠালা না আইসে পারা যায়।

মঙ্গল : তা ব্যবসা যে কত্তি গেইলে তার কি খবর? লক্ষ্মী ধরা দেছে?

স্বপন : হে হে। ভালো কইছ। আর খুঁচাইয়ে না। ও কারবার আমাগের রক্তে নেই। বুইঝলে? টাহা পয়সা যা ছেলো সব খোয়ায়ে আইছি।

মঙ্গল : শুনিছি।

স্বপন : তুমি জানলা কেম্নে? তুমি তো পাড়ায় ছিলা না।

মঙ্গল সামান্য মুচকি হাসে।

মঙ্গল : নাইমে যাও মাঠে।  আর শোন, তুমি কাওড়া, ভালো কাওড়া, অন্য কাজে আর যাইয়ে না মাথাডা এট্টু শীতল রাহো।

পোটলার মধ্য থেকে একটা পলিথিন বের করে এগিয়ে দেয় স্বপন।

মঙ্গল : কি এডা?

স্বপন : তোমার মাইয়ে শিখা পাঠাইছে। আমি আসবো শুইনে দিয়ে গেইলো।  কলো যে, বাবার তো আর আমাগেরে দেখতি ইচ্ছে করে না। তারে দিয়েনে। বছর না ঘুরলি তো আর সে ফেরবে না।

মঙ্গল শিশুদের মতো লজ্জায় মাথা গোটায় সামান্য।

মঙ্গল : পাগল এট্টা বুইচো? আমার মার  মতো হইছে কথাবার্তা। খালি কপালডা খারাপ মাইয়েডার। যাও কাকা চাইড্ডে খাইয়ে লাইগে যাও কাজে।

মঙ্গল পলিথিন আলগা করে দেখে কয়টা নাড়ু আর লুচি।মঙ্গল গন্ধ নেয়। তারপর বিলি করে কাওড়াদের মধ্যে।

সেদিন মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে কিছু একটা তাড়া করতে থাকে মঙ্গল।  তারপর ধড়মড় করে উঠে বসে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

ধড়মড় করে ঘুম ভেঙে ওঠে স্বপন।

স্বপন : সর্দার কি হল তোমার? স্বপ্ন দেহিছো?

মঙ্গল চোখ বুজে বসে থাকে মাথা গুঁজে।চোখ মেলে বলে,

মঙ্গল : নেলো না আমারে।দিয়ে গেলো শুধু।আর সব নিয়ে নেলো।

দিপেন : খিডা কাকা?

মঙ্গল : জানি না। ঘুমোতি দেচ্ছে না কয়দিন। আজকেরে এক্কেবার সামনে আইসে দাঁড়ালো। ঠাকুর আমারে নিয়ে ক্যান এরম করতিছো?

স্বপন : বাড়ি ঘুইরে আসবা একবার?

মঙ্গল : নাহ। উপায় নেই যাবার।

স্বপন : দিপেন জল দে সর্দাররে।

মঙ্গলের দৃঢ় মুখটা ঘোলা ঘোলা লাগে। দুই চোখ বেয়ে জল নামে।

৪২

কতো রঙ্গ নটীপনা
খুজলি পাবা বিটা সোনা!
আড়েবাড়ে মাই ফোলা
জুয়োর কোটে ঘাগরা খোলা!
ম্যান্দা মাইরে গেলি মাইর
টাকা পয়সা সুদ্ধ গাইড়!

স্বপন কাকা আর দিনেশকে হাটে পাঠানো হয়েছে কয়েকটা শুয়োর বিক্রি করতে। বেচাকেনা ভালো। বাকি আছে শুয়োর একটা।

দিনেশ : বেচা বিক্কির তো ভালো ঠেকতছে কাকা? এ হাটের লোকগের হাতে টাহা আছে।

স্বপন : হয় সকাল সকাল ছয়ডা মাল বিক্কির হয়ে গেইছে বাকি আছে এট্টা তাও চইলে যাবেনে। মঙ্গলের কপাল্ডা আসলে ভালো বুইছির? প্রথম প্রথম এট্টু ঝামেলায় থাকলিও শেষমেশ উঠোয় নেয়।

দিনেশ : সেরামই।

স্বপন : দেহিস পাল ভইরে ওঠপে ছাউতে।  বাড়ি ফিরতি ফিরতি পাল কিরাম হয় দেহিস।

দিনেশ : তুমি তালি কাকা বেচতি লাগো আমি এট্টু ঘুইরে আসি হাট।

স্বপন : যা।

দিনেশ ঘুরে ঘুরে হাট দেখছে।একটা ঘরের সামনে লেখা ‘রঙ্গিন টকিঘর’ বাইরে নায়ক জসিমের মারদাঙ্গা পোস্টার।দিনেশ আগায়।

দিনেশ : এট্টা টিকিট দিয়েনে দিনি টকির।চলতেছে কি জসিম?

টিকিটওয়ালা : পরের শোর টিকিট হবেনে।এডায় আর লোক ধরতেছে না।

দিনেশ : নিচে পাটিতে বসার টিকিট হবে না?

টিকিটওয়ালা : নাহ। ঘণ্টাখানেক পর শুরু হবে পরের শো।  আর শোন, সন্ধ্যা বেলায় কলাম গরম জিনিস আছে।দেখলি আইসেনে।

দিনেশের খুব ইচ্ছে হয় সন্ধ্যায় আসার, কিন্তু সম্ভব না। একটা ডবকা নায়িকার পোস্টারের বুকের দিকে তাকায়। এই জিনিস যদি মঞ্চে নাচে, তাইলে তো রাত দিন উথাল-পাথাল হয়ে যাবার কারবার ঘটবে!

দিনেশ ঘুরতে থাকে।  হাটের চারদিকে তাকায়। নানান পণ্যের কেনাবেচা।  হাউকাউ লোকের। একটা তাবুর সামনে লেখা ‘জ্যান্ত পরির নাচ’  দিনেশ এগিয়ে যায়। এখানে সুযোগ হয়।

দিনেশ : এট্টা টিকিট দিয়েনে দিনি।

টিকিটওয়ালা : বইসে দেখপা না দাঁড়ায়ে?

দিনেশ : বস্লি কত আর দাঁড়ালি কত?

টিকিটওয়ালা : বস্লি বিশ আর দাঁড়ালি দশ।

দিনেশ : দশ দেও এট্টা।

ভিতরে ঢুকেই দিনেশ ধাক্কা খায়।  লোকের গাদাগাদি সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে ফুর্তি চলছে। দাঁড়ানো বা বসা বলে আলাদা কিছু নেই; পুরোটাই হল্লা! একটু উঁচু মঞ্চে মধু হিজড়ে নাচছে তার দিকে টাকা উড়িয়ে দিচ্ছে মত্ত পুরুষেরা।  তার বুকে রঙিন ব্রার মধ্যে নারকেলের বড় মালা বসানো।  কোমরে স্কার্ট।  মাথায় ঝালর। মুখে কড়া মেকাপ।  গান বাজছে ধুন্ধুমার আর চলছে নাচের ঠমক,

ঝিল্কি মারা ইলিশ আমি বুকে তুলে নাও
বৃষ্টি এলে গরম তেলে ভেজে আমায় খাও।

অল্প টাকায় পাবে নাতো প্লেটে প্লেটে হায়
যার কাছেতে টাকার তোড়া সেই তো ইলিশ খায়।

খুব্লে খেলে কাছে এসো নগদ ফেলে খাও
নগদ ছাড়া দূরে থাকো শুধু(ই) দেখে যাও।

দিনেশ গরম নাচ দেখে বেরিয়ে এসে দেখে স্বপন কিংবা শুয়োর দুটোর কেউ নেই। তার চোখেমুখে ভাঁজ পড়ে। চারপাশে খুঁজতে লাগে সে উদ্বেগ নিয়ে। পুরো হাট খোঁজে। কিন্তু পায় না।টের পায় সর্বনাশ হয়ে গেছে। দিনেশ হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসে পালে। মঙ্গল সর্দারের কাছে খোঁজ করেছে স্বপন কাকার।

মঙ্গল : তুই ছিলি কুয়ানে?

দিনেশ : আমি এট্টু হাগতি গেইলাম।

মঙ্গল তাকিয়ে পড়ে দিনেশের চোখে। বুঝতে পারে সে মিথ্যে বলছে।

মঙ্গল : জুয়োর কোটে দেখিছির?

দিনেশ : পুরো বাজার খুঁইজে দেহিছি,  কিন্তু কুথাও নেই।

মঙ্গল : হাটের আশপাশে কি কোন মাগী পাড়া আছে?

দিনেশ : না। নেই।

মঙ্গল : তালি তুইও খোঁজ করিছিস?

দিনেশ : কি আশ্চর্য আমি ওসব খুঁজতি যাবো ক্যান?

মঙ্গল : তালি কি টাকাপয়সা নিয়ে পলায় গেলো?

দিপেন ব্যস্ত দৌড়ে এসে সব কটা দাঁত বের করে দিয়ে বলে,

দিপেন : কাকা দুইডে ধাড়ি বাচ্চা দেচ্ছে।

মঙ্গল : তুইও দে বাড়া।

হরিপদ ফিক করে হেসে সরে যায়। দিপেন বোকার মতন তাকিয়ে থাকে।  দিনেশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

৪৩

তোমারে দেখিলে আমার বুক ভার হয়
তোমার রূপের মতো হই মনে লয়।

কাওড়া পাড়ায় নীলের শালিস বসেছে। সন্ধ্যায় সুমিতের বাপ মনোরঞ্জন মহাজন এসেছে শালিস করতে। একটা চেয়ারে সে বসে আছে। ধোয়া ধুতির উপর ফতুয়া পরা। ভারি শরীর। একপাশে পাড়ার মহিলারা তাদের সবার পিছনে কালি। কিছু বুড়ো- বুড়ি। অন্য পাশে নীলে একা।

নারায়ণী : মহাজন কাকা, সব তো বলিছি আপনারে। এহন আপনি এট্টা বিহিত করবেন। এই মাগীর জন্যি পাড়ার মদ্দি থাকার যো নেই।

একজন বুড়ি : বিধবা মেয়ে মানুষ রঙিন শারি পইরে ছেনালি কইরে বেড়ায়। আমরা সব জানি। বেড়ার ফুটো ফিয়ে সব দেহা যায়।

পিছন থেকে দুয়েকজন বালিকা হেসে ওঠে।

নারায়ণী : পিচেশ এট্টা শুয়োর দিয়ে নিজের ওলান চাটায়। কওয়া যায় না সমাজে। শুনলি কিরাম গা ঘিন ঘিন করে। না কইয়েও পাল্লাম না।

এক বুড়ো : ওর স্বামীডা মরাই হইছে কাল। এট্টা বিয়ে দিলি হতো।

ফাজিল কেউ একজন বলে ওঠে,

তুমি করবা?

সবাই হেসে ওঠে। মনোরঞ্জন মহাজন অস্বস্তি বোধ করে।

নারায়ণী : এহন আপনি তারে জিজ্ঞেস করেন সে কি চায়? সে এই পাড়ায় থাকলি ছাওয়াল মাইয়ে নিয়ে আমাগের থাহা সম্ভব না। সব নষ্ট কইরে ছাড়বে।

মনোরঞ্জন :  নীলে, এরা যা কচ্ছে তা কি সত্যি?

নীলে : আপনি এর মদ্দি আইছেন কি জন্যি মহাজন কাকা? এরা আপনারে প্যাঁচায় নিইছে।

নারায়ণী : উনি আমাগের মুরুব্বী না? মাথা আমাগের। উনারডা খাই উনি আমাগের দেখপে না ভালোমন্দ।

নীলে : আমার কথা কলাম শেষ হই নি নারায়ণী। মধ্যিখানে আইসে লাফাইস নে।

মনোরঞ্জন : হেঁই নারায়ণী চুপ। এট্টা কথা না। তুই ক নীলে তোর নামে যেসব অভিযোগ তা কি সত্যি?

নারায়ণী : আমার কাছে সাক্ষী আছে।

মনোরঞ্জন : আর এট্টা কথা না।

নীলে : আমি থাহি আমার মতন। কাউরে ঘাটাই না। নিজে চালাই নিজের পেট। এগের কাছে এট্টা টাকা ধারও নিই না। তাতে এগের জ্বালা। আমি ক্যান ভালো আছি। আমি ক্যান আমার মতন থাহি?  সমাজের যদি এতো জ্বালা থাহে কাকা, তালি সেই সমাজের মুহে আমি মুতি। আমি কার সাথে কি করবো না করবো তাতে এগের এতো জ্বলে ক্যান?  ওগের ভাতার তো আমি খাই না? আর ঘরের মদ্দি আমি কি করি না করি তা এরা দেহে কিরাম কইরে? সেইডে কন দিনি মহাজন কাকা? বেড়ার ফুটোয় চোখ না লাগালি তো জানার কথা না।  তা অন্যের ফুটোয় যদি চোখ লাগায়ে থাকতি হয় সারাদিন তালি তার বিচার কি মহাজন কাকা?

মনোরঞ্জন : বুঝিছি। কিন্তু তুই যা করতিছিস তা কলাম ভালো না।  সমাজের জন্যি খারাপ। সমাজটা তো বাঁচাতি হবে। তার জন্যি মানতি হবে সমাজ কি কয়।

নীলে : সমাজ তো কয় আমি আপনার ছাওয়াল সুমিতের সাথে শুই। এহন এর বিচার কি করবেন সেইটে আগে করেন। সুমিতরে ত্যাজ্য করবেন?

 

পুরো শালিস মুহূর্তে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। মনোরঞ্জন নীলের দিকে তাকিয়ে পড়ে ক্রূর চোখে। চরম অপমানিত হয়ে যায় সে।

নারায়ণী : কাকা আমার কাছে সাক্ষী আছে। ঐ নীলে যে শুয়োর দিয়ে নানা ভেল্কি দেহায় ছাওয়াল মাইয়েগেরে তার সাক্ষী আছে। হেঁই কালি ইদিক আয়। মহাজন কাকারে ক।

সবাই সরে যায়। কালি জড়সড় হয়ে এগিয়ে আসে। নীলে ভড়কে যায় কিছুটা। মহাজন বলে,

মনোরঞ্জন : দিপেনের বউ না?

কালি মাথার কাপড় টেনে মাথা নাড়ে।

মনোরঞ্জন : ক দিনি মা কি দেহাইছে তোরে ঐ শয়তান মেয়েছেল?

নীলে মাথা নিচু করে থাকে,

নারায়ণী : ক কালি। শুয়োর দ্যে কি দেহাইছে?

মনোরঞ্জন : আমার কাছে আয়। আস্তে কইরে ক।

কালি :  আমি কিছু দেহিনি কাকা।

নারায়ণী : কিহ? মিথ্যে কচ্ছিস মাগী? তোরে কি নাঙ জুটোয় দিছে?

মনোরঞ্জন : চুপ কর নারায়ণী। ঠিক কইরে ক মা কালি সত্যি সত্যি তুই কি দেখিছির। ভয় নেই তোর। কেউ কোন ক্ষতি করবে নানে তোর, আমি অভয় দিচ্ছি।

কালি : আমি কিচ্ছু দেখিনি কাকা।

মনোরঞ্জন : ভয়ে কচ্ছিস?

কালি : না। নীলে দিদি আমারে কলা খাতি দিইলো  আর গল্প করিলো।  আর কিছু না।

নারায়ণী : মিথ্যে কচ্ছে কাকা।

মনোরঞ্জন : আচ্ছা থাক আমার বুঝা হয়ে গেইছে তোগেরে।

মনোরঞ্জন উঠে যেতে যেতে নীলের দিকে তাকায় ক্রূর চোখে।

নীলে কালির দিকে তাকায় একটা ভীষণ বিস্ময় নিয়ে।

৪৪

ঘুম ঘুম ঢোলে তারা
আমি একা দিশাহারা।

মাঝরাতে স্বপন কাকা ফিরে আসে।মদ খেয়ে ফিরেছে।কান্নাকাটি করতে থাকে মঙ্গলের কাছে।

স্বপন : সর্দার। সর্দার। মঙ্গল সর্দার।

মঙ্গল : খিডা? স্বপন? আয়। ফিরিছিস?

কাঁদতে কাঁদতে বলে,

স্বপন : টাহা গুলোন হাতে পাইয়ে লোভ সাম্লাতি পারিনি সর্দার। মনে হল ভাইগে যাই। ব্যবসা করি এই টাহায়। এট্টু পর ভাবলাম, এই টাহায় কয়ডা শুয়োর কিনে নিজে চরাবো। পরে মনে হল মহাজন হবার ক্ষমতা তো আমার নেই। সর্দারই হতি পাল্লাম না জীবনে। তহন মনে হল, ফুর্তি করি গে এই টাহায়। কিন্তু মাল খাতি খাতি মনে হল টাহা শেষ হলি আমি ফেরব কার কাছে? সেই কাওড়া পাড়ায়? সেই তোমার কাছে? তালি টাহা মাইরে লাভ কি? টাহা শোধ দেবো কুয়ান থে? কাজ গেলি খাবো কি বউ বাচ্চা ন্যে?

মঙ্গল : বেচা বিক্কির সব টাকা কি সব উড়োয় ফেলায়ছিস কাকা?

স্বপন : নাহ। কয়ডা টাহা কম আছে, আমার পাওনার থে কাইটে দিয়েনে।

মঙ্গল টাকা গুনে দেখে।

মঙ্গল : যাও শুইয়ে পরো। টাকা শোধ দেয়া লাগবে না। সকালে পাল নিয়ে এগোবো।  ইদিক আর থাকপো না।

সবাই উঠে বসে তাকিয়ে দেখতে থাকে। স্বপন একবার ফিরে তাকিয়ে অনুরোধ করে।

স্বপন : মহাজনরে খবরডা দিয়ে না সর্দার।

মঙ্গল চোখের ইশারায় সরে যেতে বলে তাকে।

কাওড়ামঙ্গল (পর্ব ৮) II রোমেল রহমান

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top