জালালুদ্দিন রুমির কবিতা // অনুবাদ: সুজন শান্তনু ও সায়্যিদ লুমরান

তরিকা

আহাম্মক তর্কে না পেরে বিবাদে জড়ায়- এটাই তো জানা কথা।
সে হিসেবে প্রেমিকও আহাম্মকি করে,
ইশকের আগুনে পুড়ে সে অঙ্গার হয়।
পুড়তে পুড়তে সে অঙ্গার সোনা হয়ে যায়,
যার মূল্য অর্থ কিংবা ক্ষমতার পাল্লায় মাপা অসম্ভব।
দরবেশের আহাম্মকি দ্যাখো,
আলখাল্লার অন্দরে লুকিয়ে রেখে এলাহি মোহর
সে দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে বেড়ায়!
গতরাতে চাঁদও আহাম্মকি করেছিল,
রূপালি কামিজ পরে নেমেছিল নগরীর পথে,
আমার কলব ইশকের সুরে নেচে ওঠে,
বেহেস্তের বাগিচায় হুরের মজলিসে যেন
পবিত্র মদের নেশায় তাকে আসক্ত করেছে।
জোছনার নহরে সে ভেসে যেতে থাকে
এবং স্রোতের বিপরীতে গিয়ে
আরশের তক্তে টোকা মারে।

 
নয়া তরিকায় এও কলবের আহাম্মকি!
ইশকের জিম্মায় নিজেকে নিঃশেষ করে
আশেক মাশুকের সাথে মিশে যায়।

পানকৌড়ির পেখমে শূন্যতা

হে পানকৌড়ি, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তুমি বসে আছো এপারে,
ঘুরছো সবুজ মাঠের শস্যের সংসারে
বিহানে।
শিকার ধরতে গিয়ে আমাদের পাতানো ফাঁদে পড়ে নিজেই শিকার হও,
অথচ তোমার রক্তে সালোকসংশ্লেষ ক্রিয়া করে, পায়ে শিকড় গজায়।
তুমি বাতাসে ভাসো,  পেখমে লুকাও সৈকতের শূন্যতা। মাছ হয়ে ঘাই মারো জলে।
অনেক তীরের এই সাগরে শিরার মত ছড়ানো শাখা,
তোমার ভেতরও ঠিক এমন রক্তের গোপন নদী শাখা-প্রশাখায় প্রবাহিত, যার সুর হৃদয়ে বাজে
শ্রান্ত ফেনার নয়- উদ্দাম তটের বন্দনায়।

বিসমিল্লাহ

ধীর পদক্ষেপ,  এই তোমার স্বভাব।
তোমার ভেতর তুমি জিইয়ে রাখো বছর কে বছরের আড়ি।
এমন গাম্ভীর্য নিয়ে কী করে তুমি বিনীত হবে?
এমন রসদ নিয়ে কী করে তুমি তোমার মোকামে পৌঁছার আশা করো?

 
অদৃশ্যের হাকিকত জানতে চাও তো তুমি বাতাসের মত মুক্ত হও;
ঠিক তখনই জানতে পারবে, কাদাজলের সমানুপাতে তোমাকে গড়া।

 
এই তরিকতে ইব্রাহিম চন্দ্র- সূর্য- তারকারাজির হাকিকত জানলেন।
ফলে তিনি বললেন, কখনোই আর মাবুদের
জন্য কোন প্রতিমাকে নিরীক্ষার নিক্তিতে নিবোনা।

 
নিদারুণ দূর্বল হে তুমি,  খুলে ফেলো বিভূষণ,
তীরের আলিঙ্গন অবধি সমুদ্র প্রতিটা ঢেউকে
পরম যত্নে লালন করে,
এমন যত্ন, এমন লালন তোমার খুব বেশি প্রয়োজন।
যেহেতু তুমি নশ্বর দালানের ক্ষণস্থায়ী
মাচানে বসে তোমার জীবনযাপনের
খায়েশ করছো।
 

মাবুদের স্মরনেই বলো “বিসমিল্লাহ”।
কুরবানির পশুর গলায় ছুরি বসিয়ে যেমনটি বলেন মৌলভি।
মূলত ” বিসমিল্লাহ ” হলো তোমার আদিম স্বত্বা।
যা তোমাকে তোমার নামের আছলিয়াতের দিকে
পথ বাতলে দেয়।

সাওম

আমাদের শূন্য জঠরের জলসায় বেজে ওঠে রূহানী সঙ্গীত-
বন্ধু হে, কান পেতে শোনো। এই দেহখানা আসমানী গজল গাওয়ার একতারা
এর খালি প্রকোষ্ঠ অখাদ্যে যদি ফুলে ফেঁপে ওঠে
তবে ত্রিতাল তলিয়ে যায়
রবং সংযমে শূন্য রাখলেই শব্দ ফোটে কোমল নিনাদে।
.
সুতরাং সংযমী হও যাতে তোমার মরমের মর্মর ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়
তা না হয়ে যদি তুমি গ্রোগাসে গিলতে থাকো, তো তোমার অন্তর হবে নীলকন্ঠী পাথরের পাখি।
.
বন্ধু, মনে রেখো সাওম তোমার আঙুলে পড়াবে কিং সোলায়মানের অদৃশ্য অঙ্গুরীয়
যার মধ্যে শিকলবন্দী হবে তোমার একান্ত শয়তান
আর তোমার হা-ভাত কুঠিরে পৌছে যাবে ঈশায়ী ডিনার।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top