৫টি কবিতা ।। তানহিম আহমেদ

অভিজ্ঞতা
ফুল ও ফলের ভেতরে পার্থক্য বুঝতে শিখে গেছি—

কীভাবে এইসব নশ্বর মানুষ দীর্ঘ হয়ে যায়
কোনো এক কর্পূরের ক্ষণস্থায়ী সুগন্ধীর মতন—
গাছের শেকড়ে লিখে রেখে যায় অগ্রন্থিত জীবনী।

এক পৃথিবী সমান বিশ্বাসের অক্ষত বৃক্ষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
ঠিক কোনো পথভ্রষ্ট বাউণ্ডুলে যাযাবরের মত
নীরবে হয়ে যায়, এক অতিলৌকিক পাখি —

বুকের ভেতরে… জমিয়ে রাখে অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস।

সমালোচক
তোমার মস্তিষ্ক জুড়ে— জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ মুকুট
                 অসমাপ্ত প্রেম—
অরক্ষিত শরীরে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা।

আড়ষ্ট জীবনের অবাঞ্চিত যাযাবর— পথভ্রান্ত
আমাদের সংক্ষেপিত সময় — আফিমের তীব্র গন্ধ—

আদিম ফসিল থেকে ক্ষয়ে পড়ে যায়
          অজড় স্বর্গের সুখ।

জাতিস্মর
আমার এই জন্ম শুধু নিছক একটি নাট্যমঞ্চ
কিছু স্বচ্ছ এবং মনোরম বাক্যালাপে
ভরপুর এক ছায়াছবি
যেন সদ্যফোঁটা কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির মতো নশ্বর
আমার এই জন্ম শুধু কিছু মুহূর্তের গাণিতিক অনুপাত।
বরঞ্চ এসো মনোনিবেশ করি ফেলে আসা ক্ষণে
আমি গত জন্মে ছিলাম এক উড়নচণ্ডী বাউণ্ডুলে কিংবা
হোটেলের সস্তা বেয়ারা ;
আমার এই জন্ম ভূমধ্যসাগর থেকে দলচ্যুত এক ঢেউ।
আমাদের এই জীবন আমাকে কিছুই দেয়নি
এমনকি রাত্তিরে মাথা গোঁজার নিশ্চিন্ত একটি ঠাঁই
আমার এ জন্ম কিছুই নয়, গত জন্মের পিছুটান ব্যতীত।

বাংলাদেশ
একটি ভাঙা ছবি— রঙখেলার উৎসব
আলোকচিত্রে সাজানো অধুনা বাংলাদেশ।

সাদাকালো দেওয়ালে মায়াবী এক অবয়ব
চোখের কোঠরে জমিয়ে রাখা ঘুম— মেঘলা ভোর—

রঙখসা চশমার ভাঙাচোরা ঘোলাটে ফ্রেম
বুকের গভীরে এক লালচে জখম— ঘাতকের হাত।

রাত্রির সাজঘরে বিপ্লবীর অসহ্য চিৎকারে—

হঠাৎ, জেগে ওঠে এক নতুন
গর্জমান সংগ্রামী বাংলাদেশ…

উপেক্ষা
একটি রাত ঢুকে যাচ্ছে বরফের রাজ্যে। ভাঙা
কফিন— মেঘ সঙ্কোচ। প্রাচীন হরিৎ মদের পেয়ালা।

টেবিলে সাজানো সাদা কাগজ— নষ্ট হারমোনিয়াম—
সমগ্র শরীরে লেগে রয়েছে টুকরো বেদনা
আক্ষরিক রঙহীন অসম প্রেম।

অথচ— এক বুক স্বচ্ছ হতাশা নিয়ে আমি অনায়াসে
মেনে নিতে পারি তোমার কঠোরতম উপেক্ষা।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top