স্পর্শ।। হাবিবা নওরোজ

তিন জাতের নেশায় আসক্ত আমি। চা, কফি আর ফটোগ্রাফি। বই নিয়ে বসলে মরিয়ম বুয়ার লাল চায়ের তৃষ্ণা পায়। আমার কমলা রঙের ঢাউস চায়ের কাপে মরিয়ম বুয়া একেবারে নিখুঁত লাল চা বানিয়ে দেন। আমার জন্য সকাল বিকাল চা বানাতে বানাতে উনি এক অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছেন। যত মানুষের হাতের চা খেয়েছি তাদের মধ্যে উনি সবচে’ ভালো বোঝেন পানি কোন সময়টা বল্কে উঠলে, কয় চামচ, কি পাতা দিয়ে, কয় মিনিট জ্বাল দিলে অতি সাধারণ চা পাতার সবচে’ ভালো লিকারটা পানির সাথে সুষম মাত্রায় মিশে যাবে। প্রতিবার চায়ের তৃষ্ণা পেলে আমি চোখের সামনে আমার কমলা রঙের ঢাউস ঐ সিরামিকের কাপটা দেখতে পাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার চায়ের তৃষ্ণার সাথে মরিয়ম বুয়ার কাজের একটা যোগ আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমবার চায়ের তৃষ্ণা পাবার সাথে সাথে মরিয়ম বুয়া দ্রুত পায়ে আমার ঘরে ঢোকেন। কাঠের টেবিলে সিরামিকের ভারী কাপ রাখার খট একটা শব্দ করে কাপ নামিয়ে রাখেন। এখনো বল্কে ওঠা পানির মত ধোঁয়া উঠছে কাপ থেকে। কাজ গুছিয়ে কাপে চুমুক দিতে দিতে কিছুটা সময় পার হয়। মরিয়ম বুয়া চা টা একেবারে ঠিকঠাক সেই তাপমাত্রায় দেন যেটা কাপে চুমুক দেয়া পর্যন্ত সময়টুকু নেয় সহনীয় তাপমাত্রায় আসতে। কাপের দিকে তাকিয়ে, চুমুক দিতে দিতে আমার মরিয়ম বুয়ার বানানো চা শ্যাম্পেইন বলে ভুল হয়। আমি কিন্তু শ্যাম্পেইন চেখে দেখিনি তখনো। মরিয়ম বুয়ার নিখুঁত চায়ে চুমুক দিয়ে অজানা কোন ভাবনায় ডুবে যাওয়া আমার সারাদিনের সবচাইতে উঁচু দরের বিলাসিতা।

বিছানায় শুয়ে বসে পড়তে পড়তে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়। গোসল সেরে খেয়ে আবার ভাইয়ের ঘরে। সকালের বুয়া বিদায় নিয়েছে অনেক আগে। আম্মা তার ঘরে ঘুম। অলসভাবে, খানিকটা বুঝে, খানিকটা না বুঝে সাদা কাগজের কালো কালো আঁকিবুঁকিগুলোকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। চোখ লেগে আসে। বড়সড় ঘরটার সব দরজা জানালা হাট খোলা। সৌভাগ্যবশত এখনো আমাদের বাড়ির চারদিকে হিজিবিজি দালান গজিয়ে আলো হাওয়া বন্ধ করে দেয়নি। বিছানার সামনের জানালা দিয়ে একটা চমৎকার আলো এসে পড়ে। মাথার উপরে ধীরে ধীরে ঘুরছে পাখাটা। এই আলো হাওয়া ভেজা চুল শুকানোর জন্য চমৎকার। কতটা সময় পার হয় এভাবে? পাখার সাথে ঘুরতে ঘুরতে আমার সময়ের বোধটা ঘুলিয়ে ওঠে। আধো ঘুম জাগরণ অবস্থায় আমি মরিয়ম বুয়ার চায়ের অপেক্ষা করতে থাকি। ঝিম ধরা দুপুর, ফাঁকা ফাঁকা কামরার শুন-শান বাসা। বাসার সামনের ভাঙ্গা রাস্তাটায় থেকে থেকে রিকশার টুং টাং আর মোটরসাইকেলের স্তিমিত আওয়াজ শোনা যায়। আশ্চর্য! এই যান্ত্রিক আওয়াজগুলোর মধ্যে থেকেও আমি দুপুরের ব্যাকুল একটা ছটফটানি শুনতে পাই। কোত্থেকে যেন একটা কবুতর উড়ে এসে সামনের জানালার কার্নিশে বসল। মা পড়ার টেবিলে রাখা বইগুলোর ধুলো ঝাড়তে থাকেন। আমি বিছানা গুছাতে লাগলাম। ঘরের ভিতরে আমাদের এই অস্থির বিচরণ কবুতরটাকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করলো না। সে রাজকীয় কায়দায় চরে বেড়াতে লাগলো। কোত্থেকে আরও একটা এসে জুটল। এখন দুইজন মিলে আমাদের অগ্রাহ্য করে দিব্যি রোদ পোহাতে লাগলো। বিকাল তিনটার পর থেকে ঘন হয়ে আসা আলোটার সাথে আমার আদিম, গভীর একটা সম্পর্ক আছে। আমি স্বপ্নও দেখি এই ঝকঝকে, কমলারঙ ধরতে থাকা রোমাঞ্চকর আলোতে। আমার তোলা ছবিগুলো কিন্তু মোটেও এই আলোর রোমাঞ্চে ভরপুর কাজ না। তবুও কেন যেন এই আলোটা আমাকে ভীষণ রকম স্মৃতিকাতর করে তোলে। তো কবুতরগুলোর এই কাছাকাছি নীবিড় হয়ে আসা, কমলাটে আলো তাপানো দেখতে দেখতে মনে হল আমি এই দৃশ্যটা কোথায় যেন দেখেছি। ভারমন্টে এলিজাবেথ যখন আমেরিকান নাশপাতির সাথে চায়নিজ নাশপাতির তুলনা করছিল সেগুলো কী নিজের খামারের গাছ থেকে পাড়া ছিল? স্পষ্ট মনে নেই। বসন্তের কোন এক একলা দুপুরে এলিজাবেথ তার ফার্ম হাউজের ক্ষেতে আখ তুলতে যান। এই মহিলা অ্যামেরিকার এক নির্জন গ্রামে গায়ে গতরে হাজির থেকেও কীভাবে যেন বাস করছিলেন পিকিং-এ ফেলে আসা তার জীবন সঙ্গীর সাথে। মাসে দুইবার জিরাল্ডের চিঠি আসতো। আমার মনে হত এলিজাবেথ পিকিং-এ না, ভারমন্টের সেই ফার্ম হাউজে তো অবশ্যই না; মূলত বেঁচে ছিলেন ঐ চিঠিগুলোর মধ্যে। আসলেও তো তাই। মানুষ তো বাঁচে কল্পনায়! চোখে দেখা, হাতে ছোঁয়া জীবনের বাইরে মানুষের যে এক সমৃদ্ধ, শক্তিশালী কল্পনার জগত আছে ওইখানেই তো তার সত্যিকার, অবাধ বাঁচা। আমিও কি এলিজাবেথের মত কোন চিঠির মধ্যে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম? যে চিঠিগুলো আদতে কেউ কোনদিন আমাকে লেখেনি? চোখের সামনে কমলা সিরামিকের কাপ থেকে চা ঢালতে থাকে আরেক কাপে। আবার সেই কাপ থেকে চা ঢালতে থাকে কমলা সিরামিকের কাপে। বাদামী রঙের স্বচ্ছ তরল। মাঝে মাঝে চা ছলকে ওঠে! এতো ভীষণ উত্তর ভারতীয় কায়দায় চা বানানো! লিকারটা যাতে সুন্দরভাবে দুধের সাথে মিশে যায় তাই এই কায়দা। মরিয়ম বুয়া কখনোই এভাবে চা বানাতেন না। দুধ চাও না। আমার চায়ের তৃষ্ণা বাড়ে। চমকে ঘুম থেকে জেগে উঠি। সাথে সাথেই আমাদের বিকালের বুয়া বেল দেয়।

আশ্চর্য বিষয় হল বিকালের বুয়া আসার এই সময়টা আমার অবধারিতভাবে মরিয়ম বুয়ার চায়ের কথা মনে পড়ত। ততদিনে কিন্তু মরিয়ম বুয়া আমাদের বাসায় কাজ বন্ধ করেছেন। আমার সকাল বিকালের চায়ের নেশার সাথে এই দুঃখী মহিলার স্মৃতি এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে লাল চায়ের তৃষ্ণা পেলে অবধারিতভাবে মরিয়ম বুয়ার করুন স্মৃতি আমার শ্বাস চেপে ধরতে চায়।

মরিয়ম বুয়া এপিলেপ্সির রোগী। আমাদের ঘরের কাজ করতে করতে উনি হঠাৎ আক্রান্ত হতেন। সেই সময় তার কোন বাহ্যজ্ঞান থাকতো না। হয়তো উনি এক জায়গায় পড়ে গোঙাতে থাকতেন নয়তোবা কোন এক যান্ত্রিক গতিতে কাজ করে যেতে চাইতেন। এক জায়গায় সংজ্ঞাহীনভাবে পড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা সহ্য করার মত ছিল না। ধবধবে ফর্সা, শক্ত বাঁধুনির শরীরের, মায়াবী চেহারার মানুষটার চোখে মুখে একটা আহত পশুর অসহায়ত্ব ফুটে উঠত। কেউ যদি তার এই অসুখের কথা না জেনে তাকে এই অবস্থায় দেখতেন তাহলে ভয় পেয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক হত না। আমরা সবাই তার এই ভয়ংকর অসুখটার কথা জানতাম। তাও আমি যতবার দেখতাম ভয় পেয়ে যেতাম। আমাদের বাসার সবাই সেই সময় সদা সতর্ক থাকতো বুয়ার এই অবস্থা মোকাবেলার জন্য। আমাদের দীর্ঘদিনের দারোয়ান ছিলেন মন্টু মিয়া। মরিয়ম বুয়া যখন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে কাঁপতে থাকতেন আমি অথবা আম্মার সাধ্য ছিলো না তাকে শক্ত করে ধরে নিয়ন্ত্রণে আনা। তখন মনটু চাচা দৌঁড়ে এসে মরিয়ম বুয়াকে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চেপে ধরে রাখতেন। তখন মনে হত অসুস্থ অবস্থায় একজন “পরপুরুষ” তাকে এভাবে ধরে নিয়ন্ত্রণে আনছেন এতে মরিয়ম বুয়া কিছু মনে করতেন না। আমার মনে হত আমাদের মন্টু চাচাও মমতার একটা জায়গা থেকেই তাকে স্পর্শ করতেন। কিন্তু আজকের এই পরিণত বয়সে এসে বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখতে পাই। মরিয়ম বুয়া একজন খুবই সাধারণ পর্দানশীল মহিলা। কেবলমাত্র শারীরিক অসুস্থতার কারণে একজন অচেনা পুরুষের স্পর্শের কাছে এভাবে নিজেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে তার নিশ্চয় খুব খারাপ লাগতো। কিন্তু তাকে বিষয়টা মেনে নিতে হত।

আমরা ওনার অসুস্থতা বুঝে যথাসাধ্য সহযোগিতার চেষ্টা করতাম। ওষুধের জন্য আলাদা টাকা দিয়ে, অসুস্থতার জন্য নিয়মিত বাসার কাজের সমস্যা উপেক্ষা করে আমরা চেষ্টা করতাম তার জন্য জীবনটা একটু সহজ করতে। কিন্তু তবুও ওনাকে সেই চূড়ান্ত নাজুক অবস্থায় আমি বা আম্মা কেউই স্পর্শ করিনি। কেউই শক্ত করে ধরে রাখিনি। আমার আম্মার শুচিবায়ু আছে। আমার মায়ের কাছ থেকে এই ব্যাপারটা খানিকটা আমার মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে। আজকে খুব অপরাধী লাগে। তখন যেটাকে ভাবতাম শুচিবায়ু আজ সেটাকে সহমর্মিতার অভাব বলে সন্দেহ হয়। আমার মায়ের স্পর্শ নিয়ে রক্ষণশীলতা আছে। উনি কোন যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া আব্বু কিংবা আমাদের স্পর্শেও ঠিক স্বস্তি বোধ করেন না। আমি এই বিষয়ে আমার মায়ের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। বাংলাদেশের একটা রক্ষণশীল, দমবন্ধকর পরিবেশে বড় হয়েও আমি নারী পুরুষ নির্বিশেষে শ্রদ্ধা, সহমর্মিতার স্পর্শ মাজেজায় বিশ্বাসী। অবশ্যই এগুলো নিপীড়নমূলক হতে পারবে না। আমার পাবলিক বাসে চড়ার একটা স্মৃতি বেশ তাজা। একবার মনে নেই কোথা থেকে ফিরছিলাম। সিটে বসে আছি। এমন সময় এক মাদ্রাসার ছাত্র ভিড় ঠেলে পার হবার সময় কনুই দিয়ে আমার মাথায় প্রচণ্ড এক গুঁতো মারল। ব্যথায় চিৎকার করে উঠলাম। আমাকে চিৎকার করে উঠতে দেখে সে অবলীলায় আমার হাতে খুবই আন্তরিক একটা স্পর্শ করে সরি বলল। আমি ফুঁসতে ফুঁসতে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি এটা ইচ্ছা করে করলেন?! ছেলেটা আবার একই রকম অবলীলায় আমার হাতে হাত ঘষলো “না! না!” আমি নিশ্চিত হলাম। পুরোপুরি। কোনটাই ইচ্ছাকৃত ছিল না। ঘটনাটা আমার জন্য এতটাই অদ্ভুত ছিল যে এটা একটা জীবিত স্মৃতি হয়ে আমার ভেতরে আজও বেঁচে আছে। আমি ভাবতেও পারিনি মাদ্রাসায় পড়া একটা ছেলে স্পর্শকে একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ের সাথে যোগাযোগের বৈধ উপায় বলে মনে করতে পারে। ঐ স্পর্শে আমি বিন্দুমাত্র অপমানিত, নিপীড়িত বোধ করিনি। বরং একটা মানুষের সাথে মানবিক সম্পর্কের একটা সাকো তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়েছে। আশ্চর্য বিষয় হল স্পর্শ বিষয়ে আমার খোলা মন থাকা সত্ত্বেও আমি মরিয়ম বুয়া আর আমার মধ্যেকার দূরত্ব ঘোচাতে এই স্পর্শ ভক্তি কোন কাজে লাগাতে পারিনি।

খিঁচ ধরা অবস্থায় মরিয়ম বুয়া মাঝে মাঝে এক দুর্বোধ্য যান্ত্রিক তালে কাজ করে যেতে চাইতেন। ঐ দৃশ্যটা ছিল আরও মর্মান্তিক। তার ঐ সময়কার স্মৃতিটা আমাকে আজও পীড়া দেয়। খিঁচুনি দশা থেকে স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রতিবারই তার চেহারার মধ্যে অপমানিত, অপরাধীর একটা অভিব্যক্তি দেখতে পেতাম। আমরা তার প্রতি সহযোগীতার মনোভাব রাখলেও রান্নাঘরে আগুন, দা, বটির পাশে তার দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবারই ভীষণ উদবিগ্ন হয়ে উঠতাম। আমার আম্মা মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে খুব একটা সূক্ষ্ম, ইঙ্গিতপুর্ণ ভাষার আশ্রয় নিতে পারেন না। উনি স্পষ্টতই বিরক্ত হতেন মরিয়ম বুয়ার নিয়ম করে খিঁচুনি ধরা নিয়ে। মরিয়ম বুয়ার প্রতি আমার আম্মার যে মায়া ছিল সেটা তিনি প্রকাশ করতেন আমার কাছে। সত্যি করে বলছি সেখানে কোন খাঁদ ছিল না। খিঁচুনি ধরা অবস্থাতেই তিনি যান্ত্রিক তালে হাতের কাজ করে যেতে চাইতেন। মন্টু চাচা ওনাকে হাত ধরে থামাতে চাইলে উনি রীতিমত রেগে যেতেন। অথচ ঐ মুহুর্তে তিনি সম্পূর্ণ বাহ্যজ্ঞান লোপ পাওয়া অবস্থায় থাকতেন। মন্টু চাচা জোর করেও তাকে থামাতে পারতেন না। অবশেষে তাকে বল প্রয়োগ করতে হত। মরিয়ম বুয়াকে ঐ অবস্থায় দেখে ভীষণ কষ্ট হত। মনে হত এরকম অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি কাজ করে যেতে চাইছেন কেন? আমরা কি কাজ নিয়ে তাকে এতটাই মানসিক চাপে রাখি? আমার যুক্তি, বুদ্ধি বলত বিষয়টা হয়তো এমন না। কিন্তু আমার অপরাধবোধ তাতে কিছুমাত্র কমতো না।

আম্মা বলতেন বোকা মানুষরা একগুঁয়ে হয়। মরিয়ম বুয়াকে নিয়ে আম্মার সবচাইতে বড় আপত্তির জায়গা ছিল তার এই একগুঁয়েমি। এই নিরর্থক জেদ আর একগুঁয়েমির কারণেই একবার তিনি আমাদের বাসায় কাজ করা বন্ধ করে দিলেন। কাজ করাই বন্ধ করলেন। আমাদের সাথে ওনার সম্পর্ক ঠিকই রয়ে গেল। উনি প্রায়ই বাসায় আসতেন। আমার সাথে দেখা করতেন। একবার মনে আছে আমার ঘরের দরজার কাছে তিনি অপেক্ষা করছিলেন। আমি হঠাৎ করে ঝড়ের বেগে দৃশ্যে উদয় হলাম। মরিয়ম বুয়া তো প্রায়ই আসেন। এই নির্দয় পৃথিবীতে তিনি তার শর্তহীন ভালোবাসায় আমাদের সময়ে অসময়ে সিক্ত করবেন এটাই তো স্বাভাবিক! আমি, আমার মত মানুষেরা তো পৃথিবীতে আসি কেবল নিতে! একজন মমতাময়ী মহিলা, যার জীবনের সাথে আমার একটাই সংযোগ। যে সামান্য কয়টা টাকার বিনিময়ে আমার বাড়ির কাজ করেন। সেই মহিলা আমাকে ভালোওবাসবেন সেটা আমি আমার পাওনা ভেবেই নেব এটাই তো স্বাভাবিক! তো দ্রুত বেগে, হালকা চালে তার কুশল জিজ্ঞেস করলাম। বিশ্ব সংসার যে আমার মনোযোগের অপেক্ষায় থেমে ছিল! চট জলদি এসব ফালতু আলাপ সারতে হবে! যেতে উদ্যত হব এমন সময় মরিয়ম বুয়াকে অন্যান্য দিনের চাইতে খুব বেশি আবেগপ্রবণ মনে হল। আমি থামলাম। কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সামনে দাঁড়ানো মরিয়ম বুয়া। ওনার সাথে আমার মাত্র দু’ কদমের ব্যবধান। উনি সেই অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব পার করতে পারলেন না। আমি হতচকিত হয়ে জমে গিয়েছিলাম। আমিও পারলাম না মাত্র দু’ পা এগিয়ে মরিয়ম বুয়াকে জড়িয়ে ধরতে। কতক্ষণ সময় পার হয়েছিল ঐ সময়? এক মিনিট? দু মিনিট?! উনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতে আমার মত একজনকে দোয়া দিয়ে বিদায় নিলেন। কিন্তু ঐ কয়েক সেকেন্ডে জানিয়ে দিলেন এই পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে মরিয়ম নামের একজন মানুষ আছেন, এবং তিনি আমাকে ভালবাসেন।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top