সুর ভুলে যেই ঘুরে বেড়াই: পর্ব ১৫ (রবিকবির দু’টি গানের অনুবাদ ) I I চয়ন মল্লিক

এ পর্বে নিয়ে এলাম আমার নিজের অনুবাদ করা রবিকবির দু’টি গান। ভাবানুবাদ বলাটাই শ্রেয়, কারণ যতটুকু ভাষায় রূপ দেওয়া সম্ভব, তাতে হয়ত গানগুলো এই দাঁড়ায়, কিন্তু এদের সুর আর ভাবের কি কোনো অনুবাদ হয়?

দু’টি গানই প্রেম পর্যায়ের। প্রথমটিতে– সেই ভালো সেই ভালো—যেভাবে নিজেকে আড়ালে রেখে ভালোবাসছেন কবি, পরের গানটিতে তার বিপরীত—শতবন্ধন ছিঁড়ে ফেলে তাঁর অন্তর ছুটে যায় তাঁর প্রাণের মানুষটির কাছে। গান দু’টোর সুরেও পাই সেই বৈপরিত্য—যদিও দুটি গানই কবি বেঁধেছেন সন্ধ্যারাগে। প্রথমটি রচনা কবির ৬৫ বছর বয়সে, যা কিনা “সুন্দর হৃদি” লেখার ২২ বছর পরের সৃষ্টি। লেখা যখনই হোক, ৩৩ কিংবা ৬৫, দু’টো গানেই প্রেমের গভীরতা শ্রোতা উপলব্ধি করে সমান তীব্রতায়।

“সেই ভালো সেই ভালো” যেন বসন্তের মৃদুবায়—আসবে কি আসবে না, ফুল জাগবে কি জাগবে না—এমনি দ্বিধাজড়িত। এ গানের মূলভাবটিও ঠিক তাই। প্রিয়র সামনে যাব কি যাব না, তাকে মনের কথা বলব কি বলব না—এই নিয়েই এর শুরু, এতেই এর শেষ।

না-জানাতে যার শুরু, তার শেষ হয় “না-বলা বাণীর” আকুলতা নিয়েই।
সেই ভালো সেই ভালো,   আমারে নাহয় না জানো।
দূরে গিয়ে নয় দুঃখ দেবে,   কাছে কেন লাজে লাজানো॥
মোর বসন্তে লেগেছে তো সুর,    বেণুবনছায়া হয়েছে মধুর–
থাক-না এমনি গন্ধে-বিধুর মিলনকুঞ্জ সাজানো॥
গোপনে দেখেছি তোমার ব্যাকুল   নয়নে ভাবের খেলা।
উতল আঁচল, এলোথেলো চুল,   দেখেছি ঝড়ের বেলা।
তোমাতে আমাতে হয় নি যে কথা   মর্মে আমার আছে সে বারতা–
না-বলা বাণীর নিয়ে আকুলতা   আমার বাঁশিটি বাজানো॥

অনুবাদ:

I like it better this way—you not knowing me.
I don’t want to get hurt when you leave me—it’s better this way.
I am in love with you, like the nature is in love with the spring season.
My heart is ready for you, and so am I,
But I don’t expect you to come closer.
I can love you even if you don’t know me ever.
I see you from afar; I see your mesmerizing eyes;
I see you enjoying the stormy nights alone.
I want to express my love to you, but the words are hidden beneath my soul.
My heart plays the tune of those unsung songs.
 

গানের লিঙ্কঃ শিল্পী পিনু সাত্তার: https://www.youtube.com/watch?v=n8SKZ0GKcWM

দ্বিতীয় গানটির চলন অনেকটাই আলাদা, অনেক দ্রুত। সুরে আর ছন্দে যেন পাই “অনন্ত নববসন্তের”ই তান। যে নৃত্যছন্দের “চরণভঙ্গে” কবিপ্রিয়া সচকিত করে চারিদিক, সেই একই ছন্দ যেন এই গানের প্রতিটি ছত্রে “গুঞ্জরে শতবার”। সেই চিরবাঞ্ছিতকে পাবার জন্য, তার চরণে হৃদয়ের সকল না-বলা কথার “ফুলচন্দন” দিয়ে বন্দনা করে তার আরাধ্য ভালোবাসাটুকু নিজের করে নেবার জন্য গানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাই কবির অন্তরের ব্যাকুলতার, তাঁর চঞ্চলতার বিমূর্ত প্রকাশ।

সুন্দর হৃদিরঞ্জন তুমি   নন্দনফুলহার,
তুমি অনন্ত নববসন্ত   অন্তরে আমার॥
নীল অম্বর চুম্বননত,   চরণে ধরণী মুগ্ধ নিয়ত,
অঞ্চল ঘেরি সঙ্গীত যত   গুঞ্জরে শতবার॥
ঝলকিছে কত ইন্দুকিরণ,   পুলকিছে ফুলগন্ধ–
চরণভঙ্গে ললিত অঙ্গে   চমকে চকিত ছন্দ।
ছিঁড়ি মর্মের শত বন্ধন   তোমা-পানে ধায় যত ক্রন্দন–
লহো হৃদয়ের ফুলচন্দন   বন্দন-উপহার॥

অনুবাদ:

You bring colours to my heart like the garland of paradise;
You are the eternal springtime of my soul, O my beloved.
The infinite blue sky wants to kiss you; the earth is at your feet–mesmerized;
Music drapes you, and hums in your ears all day long.
Moonlight sparkles, flowers allure–
When you dance gracefully.
My heart can’t hold my love for you anymore,
I offer you my soul, my aches, O my love!

গানের লিঙ্কঃ শিল্পী পিনু সাত্তার: https://www.youtube.com/watch?v=RIMLgAfGoFs

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top