গ্রন্থালোচনা: মোহাম্মদ আজমের হুমায়ূন আহমেদ ভাবনা//রাকিবুল রাকিব

এতদিন হুমায়ূনসাহিত্য বিচার হত মাথা মাটির দিকে রেখে, মোহাম্মদ আজম সে মাথাকে আকাশের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। হুমায়ূন যেখানে পশ্চিমা তত্ত্বের আলোকে বিবেচ্য হতেন, লেখক হুমায়ূন বিচারে পশ্চিমা তত্ত্ব নয় বরং স্থানীয়তাকে জায়গা দেন। যেখানে হুমায়ূনসাহিত্য গণ্য হতো সস্তা আর উদ্ভট হিসেবে, লেখক সেখানে হুমায়ূন সাহিত্যের মহিমা আবিষ্কার করেন। অন্যরা যেখানে হুমায়ূনসাহিত্যে কিছুই খুঁজে পান না, এই লেখক সেখানে হুমায়ূনসাহিত্যে মুক্তা খুঁজে পান। হুমায়ূন যেখানে সাহিত্যের মূলধারার আলোচনা-সমালোচনায় নির্বাসিত আর অপাঙক্তেয়, লেখক সেখানে হুমায়ূনসাহিত্যকে অকপটে স্থান দিতে উৎসাহী। হুমায়ূনসাহিত্য সম্পর্কে একঘেয়েমি আর অবিপ্লবি চরিত্রের বিস্তর অভিযোগ, আমাদের এই সমালোচক সেখানে বৈচিত্র্যের নানান দিক আবিষ্কার করেন। এর মানে এ নয় যে, লেখক হুমায়ূনকে মহান সাহিত্যিক হোমার আর বাল্মীকির জায়গায় স্থান দিয়েছেন, হুমায়ূনকে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণ করেছেন। লেখকের আছে হুমায়ূন বিষয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ অবস্থান। সে অবস্থানের নানান চিত্র মোহাম্মদ আজমের ‘হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য’ বইয়ে আমরা দেখতে পাই।

এ বইয়ে আমরা মোটাদাগে তিনটি আলোচনা দেখতে পাই। ক. হুমায়ূন পাঠের একটি শক্তিশালী কাঠামো, খ. হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা অনুসন্ধান, গ. হুমায়ূনের ছোটগল্প, ছোট উপন্যাস আর চলচ্চিত্রের মহিমা। তৃতীয় দিকটি দিয়ে লেখক হুমায়ূনকে বৈচিত্র্যময়, সার্থক আর উর্বর প্রমাণ করেছেন। এ প্রবন্ধে আমরা লেখকের হুমায়ূন-পাঠের উপরোক্ত তিন দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

ক. হুমায়ূন-পাঠের কাঠামো
মোহাম্মদ আজমের কাঠামোটি আমরা প্রধানত ‘হুমায়ূন পাঠের সমস্যা’ নামক অধ্যায়ে পাই। এ কাঠামো পেশ করার মাধ্যমে তিনি হুমায়ূনসাহিত্য পাঠের নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। কাঠামোটি ‘ভদ্রলোক সমাজ’ এবং বামপন্থীমহলে প্রচলিত হুমায়ূনবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাপক বেকায়দায় ফেলে দেয়ার সামর্থ্য রাখে।

লেখক ‘ভদ্রলোক সমাজে’ হুমায়ূন পাঠের কতগুলো ছাঁচের কথা বলেছেন। যেমন, বহু বছর ধরে সাহিত্যকে আলাদা করে মনে রাখার যে কাঠামো; ভাষার কারসাজি, লেখার ফর্ম, লেখকের বিবর্তন, সাহিত্যের বিশিষ্টতা আর সামগ্রিকতা। এগুলো হুমায়ূনসাহিত্যের খুব উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নয়। যে কারণে হুমায়ূনসাহিত্যকে `ভদ্রলোকেরা’ বাতিল করেছে, সস্তা ভেবে ছুঁড়ে ফেলেছে।

লেখক দেখিয়েছেন, ‘নারীবাদ, জাতীয়তাবাদ, আধুনিকতাবাদ, মার্ক্সবাদ, গরীব মানুষের উন্নয়নের ম্যানুয়েল ইত্যাদি আগে থেকেই বা নিজেই গুরুত্বপূর্ণ ভাবের কারবার হুমায়ূন কখনোই করেননি।’ হুমায়ূনের মধ্যে জীবনকে সহজ করে দেখার প্রবণতা ছিল। দূর নয়, নিকট নিয়ে হুমায়ুন কারবার করতেন, যেন রবীন্দ্রনাথের একটি শিশির বিন্দু কবিতার মর্ম হুমায়ূন পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এর প্রমাণ পাওয়া যাবে, আমার ছেলেবেলা, অনন্ত অম্বরে, হোটেল গ্রেভার ইন প্রভৃতি স্মৃতিকথামূলক রচনায়। হুমায়ূন-যে নিজ জনগোষ্ঠীকে গভীরভাবে পাঠ করতে পেরেছিলেন, এই সংবাদ আমাদের সাহিত্যিকমহলে বিশেষভাবে প্রচারিত হয়নি। লেখক বলছেন, তাকে নিজ সমাজের আঙ্গিকে বিচার করতে হবে। আবার বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে পশ্চিমা অর্থে সুররিয়ালিজম, ইদিপাস কমপ্লেক্স, চেতনাপ্রবাহরীতি, অ্যাবসার্ডিটি, জাদুবাস্তবতা, অস্তিত্ববাদ ইত্যাদি বর্গ কারণে-অকারণে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ভাবখানা এমন কোনোভাবে ওই বর্গগুলোর সাথে সম্পর্কিত করে দিতে পারলেই আলোচ্য টেক্সটের মহিমা সম্পর্কে সব সংশয়ের অবসান ঘটবে। এসব তত্ত্বকে ভাবা হয় সাহিত্যের নান্দনিক সৌন্দর্যের একমাত্র উপাদান আর প্রগতির মূল হাতিয়ার। এগুলো হুমায়ূনে নেই। ফলে তাঁর সাহিত্যমূল্য ‘ভদ্রলোকসমাজে’ গৌণ হয়ে পড়ে। লেখক প্রস্তাব করেছেন, এভাবে হুমায়ূনকে পাঠ করা যাবে না। তিনি বরং স্থানীয়তাকে, জনগোষ্ঠীর বাস্তবকে আমলে নিয়ে হুমায়ূনসাহিত্য বিচারের পরামর্শ দিয়েছেন।

লেখক বলেন, ‘হুমায়ূন কোনো আর্কিটাইপের ধার ধারেননি। ভিক্টোরীয় জমানার উপন্যাসে ড্রয়িংরুমে বা বল নাচের আসরে প্রেম-সম্পর্ক রচনার যে কার্যকর ছাঁচ তৈরি হয়েছিল, যার অনুসরণ দেখি তুর্গেনেভ বা টলস্টয়সহ অনেক রুশ উপন্যাসে, এমনকি রবীন্দ্রনাথের রচনায়ও, হুমায়ূনের প্রেমের উপন্যাস-গল্পে সে রকম কোনো ছাঁচ দেখা যায় না।’ আমরা বরং দেখি, হুমায়ূনসাহিত্যে প্রেম বহুমাত্রিক। এবং তা নিজেই নিজের ছাঁচ তৈরি করে। লেখক এ মর্মে আমার আছে জল উপন্যাসের উদাহরণ টেনেছেন।

হুমায়ূন মুক্তিযুদ্ধ উপস্থাপনের বেলায়ও ব্যতিক্রম। ‘ভদ্রলোক সমাজে’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যে মহাবয়ান চালু আছে, যেখানে একজন টুপি-পাঞ্জাবি পরা লোক সাধারণভাবে চিত্রিত হয় রাজাকার হিসাবে, সে মহাবয়ানে হুমায়ূন নিজেকে জড়িত না রেখে, বরং মুক্তিযুদ্ধের ক্ষুদ্র বয়ানগুলোকে বারবার তুলে এনেছেন।

লেখক বলেছেন, সত্যিকার অর্থেই হুমায়ূন বাজারি লেখক, বাজার মাথায় রেখে লিখতেন, বাজারকে প্রভাবিত করতেন আর জনপ্রিয় সংস্কৃতির সম্পদ ব্যবহার করে সমাজের বৃহৎ অংশের পাঠকের দুয়ারে পৌঁছে যেতেন। হুমায়ূন শরৎচন্দ্রের মতোই একটা ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু শরৎচন্দ্রের সাথে তৎকালীন কলকাতার জাতীয়তাবাদী গ্রান্ড ন্যারেটিভ যুক্ত হয়ে যাওয়ায় তাঁর সাহিত্যিক পাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ জনপ্রিয়তার ব্যাপারে বাংলাদেশের ‘ভদ্রলোক সমাজে’ কুসংস্কার বিদ্যমান থাকায় হুমায়ূনের অনেক ভালো লেখা অপঠিত থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিসের পাঠ্যতালিকায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসের জায়গা হয় না। লেখকের ভাবনায়, জনপ্রিয় সংস্কৃতি বোঝার ক্ষেত্রে হুমায়ূনসাহিত্য সত্যিই দারুণ কাজে আসবে।

লেখক এক জায়গায় বলেছেন, ‘ফর্ম বা ভাষার কারসাজি যা রচনার দিকে আলাদা করে নজর ফেরাতে সাহায্য করে, তা হুমায়ূনের রচনায় নাই বললেই চলে।’ হুমায়ূনের ভাষা সহজ সরল, শব্দের ভারিক্কি নাই, কোনো প্রকার চাপ ছাড়াই পড়া যায়। এগুলোও তাঁর প্রতি ‘সিরিয়াস’ পাঠকের অমনোযোগের কারণ।

মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনপাঠের কাঠামো প্রস্তাব করে প্রচলিত ‘ভদ্রলোক সমাজের’ হুমায়ূন পাঠকে শুধু চ্যালেঞ্জই করেননি, ‘ভদ্রলোক সমাজের’ হুমায়ূনফোবিয়া রোগের কারণও উদঘাটন করেছেন। আর জায়গা মতো দাওয়াইও দিয়েছেন। ঘৃণা পোষণ না করে বরং সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে মানুষকে বিবেচনা করার যে কার্যকর উপাদান হুমায়ূনে ছিল, তা অবশ্যই গুরুত্ববহ। হয়তো এভাবেও সমাজ পরিবর্তনের মশলা হুমায়ূনে উপস্থিত থাকে – এ বইয়ের লেখক যা খেয়াল করেননি। এমন অনেক তরুণ-তরুণী আছেন, যারা জীবনদর্শনের নানান বৈচিত্র্য হুমায়ূন সাহিত্যে পান, জীবনকে দেখার, সৌন্দর্যকে উপভোগ করার, প্রেমকে বোঝার নান্দনিক উপাদানের সন্ধান পান। ঘরের কাজের লোকের প্রতি মালিকের সহানুভূতি, ডাকাতের প্রতি বিশেষ সহমর্মিতা, প্রাণির প্রতি বিশেষ ভালবাসার নজির, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক দুর্বলতা উন্মোচন, আর এমনকি যেকোনো চরিত্রকে ইতিবাচকভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি – হুমায়ূনসাহিত্যের এ গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোকে লেখক যথেষ্ট আমলে নেননি। তাঁর আলোচনা থেকে মনে হতে পারে, সাহিত্য-বিচারের কাজ শুধু ভদ্রলোকসমাজ আর বামপন্থীদের। অবশ্য লেখক শুরুতেই বলে নিয়েছেন, ‘এ বইয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের ও বাংলা সাহিত্যের ‘মূলধারা’র পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে হুমায়ূনের অবস্থান নির্দেশ করা।’

খ. জনপ্রিয় হুমায়ূন
‘জনপ্রিয় হুমায়ূন’ অধ্যায়ে মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের জনপ্রিয়তার কারণ অনুসন্ধান করেছেন। হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা ব্যাপারটি খুবই গোলমেলে। অধিকাংশ পাঠক হুমায়ূনকে গুরুত্ব দিতে চান পাঠকসৃষ্টি, প্রকাশনাশিল্প দাঁড় করানো, পাঠকের নজর কলকাতা থেকে ঢাকার দিকে নিয়ে আসা – এ তিন দায়িত্ব পালনের নিরিখে। অথচ এ সব ভূমিকা কেবল গৌণভাবে উল্লেখিত হওয়ার যোগ্য।

লেখক বলেন, ‘জনপ্রিয়তা নিশ্চয় কোনো হাওয়াই বিষয় নয়, যা আসমান থেকে টুপ করে মাটিতে পড়ে। তার বিশিষ্ট কলাকৌশল আছে, ভঙ্গি এবং লিপ্ততা আছে।’ কথা সত্য। আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে টিউটিরিয়াল বানিয়ে, নানান ভণিতা করে, স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে সহজেই জনপ্রিয় হওয়া যায়; হুমায়ূনের যুগে সে সুযোগ ছিল না। তবে হুমায়ূন যেসব সুযোগ পেয়েছিলেন তার দুর্দান্ত ব্যবহার করেছেন। অনেকে একমত হবেন, নাটক বানানোর আগে-পরের হুমায়ূনের জনপ্রিয়তার ব্যাপক তফাৎ ছিল। যেহেতু তখনও স্যাটেলাইটের যুগ পুরোদমে শুরু হয়নি, পশ্চিমা ভিজ্যুয়াল মাধ্যম ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, সে সময় হুমায়ূন নাটক বানিয়ে গোটা বাংলা মাত করেছেন। লেখক এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

হুমায়ূন আহমেদের মধ্যবিত্তীয় আবেগ আর মায়ার জগত পাঠককে সহজে আকৃষ্ট করে। বাসর, নি, নবনী, দিঘীর জলে কার ছায়া গো নামের উপন্যাসগুলোতে ছড়িয়ে থাকা মায়া বাংলা অঞ্চলের পাঠককে নাড়িয়ে দেয়। এখানে হিমু বা শুভ্র সিরিজের কথাও বলা যাবে। লেখকের মতে, ‘এই মায়াময় জগৎ হুমায়ূন উপস্থাপন করেছেন সরল কিন্তু গভীর এক গদ্যে।’

মোহাম্মদ আজমের মতে, হুমায়ূনের ‘বহু গল্প-উপন্যাসে চরিত্ররাই কথা বলে। যেখানে লেখক নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা দেন সেখানেও।’ হুমায়ূনের উপন্যাসে আমরা জোরজবরদস্তির উদাহরণ কম পাই, তার চরিত্রগুলোতে টেনে এনে জুড়ে দেয়ার ঘটনা কম ঘটে। হুমায়ূন সাধারণত স্থান ও সময়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেন। তাঁর শহর আর গ্রামকে সহজেই আলাদা করে চেনা যায়। এমনকি হুমায়ূন যেগুলোকে ফ্যান্টাসি বলে চিহ্নিত করেছেন, সেখানেও বাস্তবের সাথেই কাহিনি ও চরিত্রের নাড়ির যোগ থাকে। যা পাঠককে হুমায়ূনসাহিত্যে প্রবেশে উৎসাহী করে, আর পড়ার সময় ঘোর লাগিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে হয়তো সেকারণেই শোনা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোনো তরুণী চোখে কাজল লাগিয়ে হুমায়ূন পড়ে, রূপা সাজতে চায় আর তরুণেরা ফাল্গুনে বা বৈশাখের অনুষ্ঠানে হলুদ পাঞ্জাবি পরে হিমু সাজে।

হুমায়ূন বাঙালির বিশেষত বাংলাদেশি বাঙালির মানসিক অবস্থা আর নাড়ির খোঁজ ভালো জানতেন। সেন্স অব হিউমার নামক বস্তুটি তাঁর মধ্যে প্রবল আকারে ছিল। লেখক বলছেন, ‘হুমায়ূন মনোচর লেখক। মন তার জন্য একাধারে বিষয় ও টেকনিক। তার কথাসাহিত্য ঘটনাবহুল নয় ততটা, যতটা ব্যক্তির মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খবরে উদগ্রীব।’ ব্যক্তির অভ্যাস, ব্যক্তির ভাষা, ব্যক্তির প্রবণতা নিয়ে যত কারবার আমরা হুমায়ূনে দেখি, সেগুলো ব্যক্তির সেল্ফকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে। যেমন দারুচিনি দ্বীপ-এর কথাই ধরা যাক – এখানে একেক ব্যক্তির একেক রকম বাস্তবতা হাজির থাকে, যার দরুণ আমরা প্রত্যেক চরিত্র সম্পর্কে আলাদাভাবে জানতে পারি, প্রত্যেকের মনস্তত্ত্বের আলাদা খোঁজ পেতে পারি। এ বাস্তবতা পাঠককে নিজের জগৎ সম্পর্কে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে।

হুমায়ূন গল্প বলাতে পারদর্শী ছিলেন। এক সাথে অনেকগুলো গল্প বলতেন আর অনেকগুলো চরিত্র নিয়ে কারবার করতেন। চার্লস ডিকেন্সের বেলায়ও আমরা তা দেখেছি। ডিকেন্সের উপন্যাসে আমরা দেখি গল্প আর চরিত্রগুলো ঘুরতে থাকে, ঘুরতে ঘুরতে এমন জায়গায় গিয়ে উপনীত হয়, পাঠক আগে থেকে তা কল্পনাই করতে পারে না। হুমায়ূন সম্পর্কেও আমাদের গ্রন্থকারের প্রায় একই মত, ‘হুমায়ূনসাহিত্যে পাঠকের কৌতূহল জিইয়ে রাখে স্তরবিনস্ত অথচ মসৃণ কাহিনী।’ পাপ, একজন ক্রীতদাস, একটি নীল বোতাম, অয়োময় গল্পগুলোর কথা ধরা যাক। গল্পগুলো ঘুরতে ঘুরতে এমন এক জায়গায় শেষ হয়েছে, যা পাঠক হয়তো আগে থেকে কল্পনাই করেনি। এমন ছাঁচ হুমায়ূনের বেশিরভাগ গল্প আর উপন্যাসে দেখা যায়। সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ভূমিকা যে বিনোদন, তা ডিকেন্সের মতো হুমায়ূনও দারুণভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।

হুমায়ূনের পরিবারকেন্দ্রিক গল্প বলার ধরন তার জনপ্রিয়তায় ভূমিকা রেখেছে। হুমায়ূন সব সময় আদর্শ পরিবার আঁকতে চেয়েছেন। হুমায়ূনের পরিবারে বেশিরভাগ সময় মা-বাবা, ভাই-বোন আর কখনো কখনো মামার জায়গা হয়েছে। তার আঁকা পরিবারের মানুষগুলোর আচরণ সংযত, মানবিক আর রোমান্টিক। মধ্যবিত্তীয় নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে পরিবারের কাহিনি এগিয়ে চলে। সেখানে আমরা যৌনতার খবর পাই না, হিংস্রতা বা সহিংসতার খবরও খুব একটা থাকে না। এ বৈশিষ্ট্যগুলো মধ্যবিত্ত পাঠককে আকৃষ্ট করতে দারুণ ভূমিকা রেখেছে।

হুমায়ূন বাংলা সিনেমার মতো গরিব ছেলের সাথে বড়োলোক বাপের মেয়ের প্রেমের একটি ফ্যান্টাস্টিক বিষয় তুলে ধরতেন। তার সাহিত্যে এ বিষয়টি বহুবার বিচিত্রভাবে ঘটেছে। তার নায়িকারা গরিব মাস্টার আর শিক্ষিত বেকার ছেলের প্রতি দুর্বল থাকে। এমনকি কখনো কখনো দূর-সম্পর্কের গরিব বা প্রতিবেশী ভাইয়ের প্রতিও রূপসী তরুণীদের দুর্বলতা দেখা যায়। মোহাম্মদ আজম এটাকে মায়া বলেছেন। হয়তো মায়া বলাই সঙ্গত। এ মায়া সম্ভবত বাস্তবে নেই, আছে কল্পনায় আর আকাঙ্ক্ষায়। এ মায়া শ্রেণি বোঝে না, শ্রেণির খবরও রাখতে চায় না। বোঝা যায়, এ দিয়ে হুমায়ূনের পাঠক টানার ধান্দা ছিল।

লেখক বলেছেন, গদ্যে সরলতার কারণে হুমায়ূন পাঠকপ্রিয়, এই কথাটা অর্থহীন। হুমায়ূনের সরল গদ্যের মধ্যেও বিশিষ্টতা আছে, বাক্য আর শব্দ বাছাইয়ে মনোযোগ আছে। তাই সরল গদ্য বলে উড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারটা হুমায়ূনে খাটে না। অন্যদিকে গদ্যে সরলতার কারণে অনেক পাঠক হুমায়ূনে আকৃষ্ট হবে সেটাই স্বাভাবিক।

পাঠক টানার কৌশল হুমায়ূনের স্বভাবজাত। হুমায়ূন প্রথম থেকে একই ফর্মে হাজির থেকেছেন, একই মসলা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছেন। তার আবেগ আর রোমান্টিকতা, তার বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি আর গদ্যের ধরন, তার কাহিনি বলার পারদর্শিতা, চরিত্রায়ণ আর বিষয়বস্তু তাকে জনপ্রিয় করেছে। টিভি নাটক সে জনপ্রিয়তাকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। লেখকের সাথে সুর মিলিয়ে বলা যায়, হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা আকাশ থেকে পড়েনি, আর কোনো একক কারণে তিনি জনপ্রিয় নন। তাঁর জনপ্রিয়তার কারণ বহুমাত্রিক।

গ. হুমায়ূনের ছোটগল্প, ছোট উপন্যাস আর চলচ্চিত্র
আমরা দেখবো, মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের এ দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ছোটগল্পকে তিনি হুমায়ূনসাহিত্যের বিশেষ সম্পদ গণ্য করেছেন, ছোট উপন্যাসের বেলায়ও তাই। চলচ্চিত্রের বেলায় তিনি কতকটা উদার থেকে হুমায়ূন চলচ্চিত্রকে পাশ নম্বর দিয়েছেন। আমরা বলবো, এটা পুরোপুরি চলচ্চিত্রের আলোচনা হয়ে ওঠেনি।

ছোটগল্প
পাপ, অসুখ, শীত, জলিল সাহেবের পিটিশন গল্পগুলো বিভিন্ন অধ্যায়ে লেখক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আলোচনায় এনেছেন। এ গল্পগুলো মুক্তিযুদ্ধের নানান বাস্তবতা হাজির করে, মুক্তিযুদ্ধের ভেতর-বাহির দুই দিকেই নজর দেয়। হুমায়ূন সে কাজ ব্যক্তির অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেশি করতে চেয়েছেন। ধরা যাক পাপ গল্পটির কথা। এখানে একজন ব্যক্তি তার মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি রোমন্থন করেছেন, খোদ নিজ স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বিশাল এক পরিসরে প্রবেশ করেন। সে প্রেক্ষাপট আবেগ সৃষ্টি করে, সাথে এক রাজনৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করে। আমরা অসুখ গল্পটিতে কাছাকাছি ঘটনা দেখি। এখানে এক মুক্তিযুদ্ধ-ফেরত যুবক একটি চাকরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে ছুটছে, কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, একটি চাকরি পেতে সে যে কারও পা ধরতে রাজি। বোঝা যাচ্ছে, দেশের সামগ্রিক অবস্থা তেমন ভালো না। অন্যদিকে যুবক তার মুক্তিযুদ্ধে নিহত বন্ধুর পরিবারের সাথে সামাজিক বন্ধনে জড়িয়ে থাকে; যে সামাজিক বন্ধনটা কষ্ট আর বেদনার। বাস্তবতাকে আরেকটু বড় করে দেখার জন্য ওই পরিবারের মেয়ের সাথে যুবকের একটি পুরনো প্রেমের সম্পর্ক হুমায়ূন আঁকতে চেয়েছেন। হুমায়ূনের এ প্রবণতা তার গল্পের বিশালতা সৃষ্টি করে। নিছক একটি ছোটগল্পের পরিসরে তিনি বৃহৎ পরিসর সৃষ্টি করেন। হুমায়ূন এ জায়গায় চিন্তাপ্রবণ আর সৃষ্টিশীল; এটা হুমায়ূনের গল্পের বড় কাজ।

হুমায়ূনের গল্পে মানুষের জীবনযাপনের দুর্দান্ত বৈচিত্র্য আছে। তা একই মানুষের নানান বৈশিষ্ট্য হাজির করে, নানান দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় উন্মোচন করে। যেমন একজন ক্রীতদাস গল্পটিতে একজন নারীর বহু চরিত্র ফুটে ওঠে, বা পাপ গল্পটির কথকের। আবার হুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধ সম্পূ্র্ণ আলাদা, অন্যদের সাথে তার মুক্তিযুদ্ধ-চিত্রায়ণে ফারাক আছে। হুমায়ূন মুক্তিযুদ্ধকে একচোখে দেখেননি, বহুচোখে দেখেছেন।

হুমায়ূন সামাজিক ঘটনা আর উপাদানগুলোর ব্যাখ্যা নিজের মতো করে হাজির করেছেন, তা করেছেন স্বয়ং বাঙালি মনস্তত্ত্ব দিয়ে। তৈরি করা কোনো আদর্শে হুমায়ূনের আস্থা ছিল না – তা টের পাওয়া যায়। হুমায়ূন কোনো প্রোপাগান্ডা-ছড়ানো লেখকও নন। তার দেশপ্রেম বরং ব্যক্তিপ্রেম আর পরিবারপ্রেমের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। এ প্রসঙ্গে লেখকের আরেকটি ভাবনা এরকম: ‘ঢাকার অন্য গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের অনেকের সাথে হুমায়ূনের একটা গোড়ার পার্থক্য এই যে অন্য লেখকেরা প্রভাবশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার মুখ চেয়ে বিস্তর লেখা লিখেছেন, এবং হয়তো সঙ্গতভাবেই প্রশংসিত হয়েছেন; আর হুমায়ূন অনেকক্ষেত্রে মুখ ও মন রক্ষা করতে চেয়েছেন সাধারণ পাঠকদের।’ হুমায়ূন সবসময় ব্যক্তি আর পরিবারের গল্প বলেছেন – তা হয়ে উঠেছে সমাজ আর রাষ্ট্রের গল্প, তা হয়ে উঠেছে জনমানুষের গল্প।

ভাটি-বাংলার সংস্কৃতি তথা আচার-আচরণ, জীবনযাপন, অভ্যাসের নানান বৈশিষ্ট্য আমরা হুমায়ূনের ছোটগল্পে পাই। হুমায়ূন সেক্ষেত্রে একজন এথনোগ্রাফারের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। যেন হুমায়ূনের ছোটগল্পে মানুষের বাস্তবতা আর বিশিষ্টতা গভীরভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে। লেখকের ভাবনায়, ‘অয়োময়, খাদক, কিংবা অচিন বৃক্ষ গল্পগুলোতে মানবচরিত্রের গভীর নিরীক্ষা তিনি করেছেন ভাটির মানুষ ও অবস্থাকে ব্যবহার করে।’ পিঁপড়া বা অপেক্ষা ছোটগল্পে একই কাজ দেখা যায়। হুমায়ূনের গ্রামদর্শন গ্রামের চরিত্রগুলোর নিরিখে উঠে আসে। প্রগতি বা শ্রেণিচরিত্র ইত্যাদি জনপ্রিয় বিষয়ের ব্যবহার তাঁর ছোটগল্পে নেই, আছে বাস্তবের গভীর যোগসাজস। আমরা হুমায়ূনের ফেরা বা একজন ক্রীতদাস গল্পে মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়ন দেখতে পাই। সে টানাপোড়ন জুড়ে দেয়া নয়, বরং তা জীবনের গভীর বাস্তবতা। তাই লেখক হুমায়ূনের ছোটগল্পকে বিশেষ গণ্য করেন; নিশ্চয় আমরাও গণ্য করবো।

হুমায়ূনের গল্পে চমক থাকে, গল্প শেষ করতেই মনে ধাক্কা লাগে। জীবনের নিগূঢ় বাস্তবতা সে ধাক্কায় ফুটে ওঠে। মোপাসা বা ও হেনরি এ কাজে পারদর্শী ছিলেন। হুমায়ূনের একটি গল্পে অনেকগুলো ঘটনা সাজানো থাকে, ঘটনার বিবরণ সময় আর স্থানের সাথে মিলে যায় ফলে মানবজীবনের বৃহৎ একটি ক্যানভাস ফুটে ওঠে। সাহিত্যের কাজই হয়তো বিনোদন দেয়া আর মানবজীবনের বৃহৎ একটা ক্যানভাস আঁকা। মোপাসা আর ও হেনরি যদি ছোটগল্পে হলিউডের টম ক্রুজ হয়, তবে হুমায়ূন হলিউডের টম হ্যাঙ্কস।

উপন্যাস
হুমায়ূনের ছোটগল্পে যা আছে, হুমায়ূনের উপন্যাসে তা আরও ব্যাপকভাবে আছে। হয়তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হুমায়ূনের ছোটগল্পের মতো তার উপন্যাসগুলো ধাক্কা দেয় না। হুমায়ূনের উপন্যাস কোনো বিপ্লবী সিদ্ধান্তে পৌঁছায় না, ইতিহাসের কোনো নতুন ব্যাখ্যা হাজির করে না, মাঝে মাঝে শহরের সাথে গ্রামের সমন্বয় সাধন করে। আমরা মিসির আলি সিরিজে এরকম সমন্বয় পাই। বাদশাহ নামদার ঐতিহাসিক উপন্যাসের বেলায় দেখি হুমায়ূন কোনো নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছান না, বরং ইতিহাস-বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে বাদশাহ হুমায়ুনের প্রতি বিশেষ পক্ষপাত হাজির করেন, আর শেষমেষ আবেগ ঝরিয়ে এর ইতি টানেন। দেয়াল উপন্যাসের বেলায়ও কাছাকাছি ব্যাপার দেখা যায়। বোঝা যায়, ইতিহাসকে নতুনভাবে দেখার চোখ হুমায়ূনে অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু তাঁর সমসাময়িক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা বা শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন-এ ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা হাজির করতে দেখা যায়।

মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের ছোট উপন্যাসগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান। তিনি হয়তো বলতে চান, হুমায়ূনের যদি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু থেকে থাকে, তার মধ্যে এই দিকটি বিশেষ মূল্য রাখে। গৌরীপুর জংশন, নি, বাসর, এই বসন্তে, আমার আছে জল, ফেরা, প্রিয়তমেষু, ১৯৭১, নির্বাসন, আগুনের পরশমণি এ রকম অন্তত বিশের অধিক উপন্যাসের আলাপ লেখকের বইয়ে পাই। আমরা হয়তো তেঁতুল বনে জ্যোৎস্না, আজ চিত্রার বিয়ে, দিঘীর জলে কার ছায়া গো উপন্যাসকে এ তালিকায় জুড়ে দিতে পারবো। এ ছোট উপন্যাসগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য, কোনো একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে গল্প শুরু হয় এবং তা ক্রমে বড় ক্যানভ্যাসে হাজির হতে থাকে, যাতে সমগ্র জীবনটাই নিটোল উঠে আসে। আর প্রত্যেকটি চরিত্রকে আলাদাভাবে চেনা যায়। যেন হুমায়ূনের উপন্যাসে চরিত্ররাই কথা বলে। ধরা যাক নির্বাসন উপন্যাসটির কথা। এখানকার গল্পটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানের। কিন্তু মুহূর্তেই গল্পটিতে অন্যরকম আবেগ রূপায়িত হতে থাকে। হুমায়ূন গল্পটিকে আনিসের দিকে নিয়ে গেছেন। আনিসের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা হাজির করেছেন, যেখানে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। যে কারণে একদিকে সে নিজ জীবন হারাতে বসেছে, অন্যদিকে অন্য পুরুষের সাথে তার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এ আঘাতে আনিস নিজে যেমন আক্রান্ত, সাথে পরিবার আর সমাজও আক্রান্ত। ছোট্ট এই উপন্যাসেও সমাজ সম্পর্কে হুমায়ূনের গভীর আর বৈচিত্র্যময় পাঠের পরিচয় মেলে। আনিসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটে। মেলোড্রামার ছাপ থাকলেও উপন্যাসটি আসলে মেলোড্রামা নয়, বরং ব্যক্তি, সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মিশেলে প্রাণবন্ত আর দুর্দান্ত এক আখ্যান। আমার আছে জল, বাসর, তেঁতুল বনে জ্যোৎস্না, এই বসন্তে, নি উপন্যাসগুলোকে আমরা এ তালিকায় নিদ্বির্ধায় ফেলতে পারবো।

হুমায়ূন মওলানাদের বিষয়ে কোনো গৎবাঁধা অবস্থান নেননি। হুমায়ূন কোনো প্রভাবশালী ডিসকোর্স বা আর্কিটাইপের ধার ধারেন না। অথচ বাঙালি জাতীয়তাবাদী ডিসকোর্সের প্রভাবে অন্যরা যেখানে মওলানাদের সম্পর্কে এক নৃশংস সিদ্ধান্ত নেয় [পড়ুন- রাজাকার], যা আমরা ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক সিনেমাগুলোতে অহরহ দেখি, সেখানে হুমায়ূনের মওলানারা সরল আর স্বাভাবিক গড়নের। হুমায়ূন মওলানা আর শিক্ষককুলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে ভীষণভাবে অবগত ছিলেন। লেখক জানাচ্ছেন, হুমায়ূনের মওলানারা অনেকেই এতিমখানায় বড় হয়েছে। অভিজ্ঞতার কারণেই তেঁতুল বনে জ্যোৎস্না, নি, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প বা নবনী উপন্যাসে আমরা মওলানা গোত্রের স্বাভাবিক ও বাস্তবসম্মত পরিচয় পাই। এটা হুমায়ূনের উপন্যাসের বিশেষ একটা দিক- যেখানে প্রভাবশালী ডিসকোর্স হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।

হুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক লেখাগুলো হুমায়ূনসাহিত্যের সবচেয়ে শ্রমসাধ্য আর দায়িত্বপূর্ণ কাজ, যা একইসাথে সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে। লেখক জানাচ্ছেন, ‘হুমায়ূন বোধ হয় মুক্তিযুদ্ধের লেখকদের মধ্যে একমাত্র, যিনি সাধারণ মানুষের মিশ্র দৈনন্দিনতার কোল ঘেঁষে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন।’ আবার অন্য এক জায়গায় লেখক বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিচিত্রসব সৃজনশীল কাজ যারা করেছেন, তাদের মধ্যে হুমায়ূন সম্ভবত সবচেয়ে সফল।’ লেখক হয়তো বলতে চান, শুধুমাত্র এ কাজের জন্য হুমায়ূনকে বাংলা সাহিত্যে স্থান দেয়া যাবে। এ ব্যাপারে লেখকের সাথে আমরা সহমত পোষণ করবো।

হুমায়ূনের নারী চিত্রায়ণের ব্যাপারে মোহাম্মদ আজম সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে, হুমায়ূনের নারী চরিত্রগুলো পিতৃতান্ত্রিক। এবং এ অবস্থাটা অসহনীয় নয়। তবে লেখকের এ ব্যাপারে দোটানা চোখে পড়ে। যেমন লেখক অন্যত্র বলেছেন, ‘এই বসন্তে একটা বিশুদ্ধ পুরুষতান্ত্রিক জগৎ। এ জগতে নারীর কীভাবে কতটা কর্তসত্তা রক্ষিত হয়, তার একটা কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন প্রস্তাব আছে উপন্যাসটিতে।’ আসলে পুরুষতন্ত্র আর পিতৃতন্ত্র এক জিনিস না হলেও পিতৃতন্ত্রে পুরুষতন্ত্রের ছায়া সবসময় থাকে। আমরা বলবো, হুমায়ূনে পুরুষতন্ত্র ভালোভাবেই ছিল। যেমন আমরা আজ চিত্রার বিয়ে উপন্যাসটিতে কমপক্ষে দুটি পুরুষতান্ত্রিক জগতের উদাহরণ পাবো। হুমায়ূনে এ রকম আরও অনেক উদাহরণ দেখা যাবে। নারীর সৌন্দর্য বর্ণনার বেলায়ও হুমায়ূন প্রবল ভোগবাদী; নারীকে নিছক ভোগের বস্তু হিসেবে দেখার ইঙ্গিত আমরা হুমায়ূনে ব্যাপক পাই। এখানে আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা যাবে যে, ইমদাদুল হক মিলনের প্রিয় হুমায়ূন আহমদ বইয়ে আমরা ব্যক্তি হুমায়ূনের নারী বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিচয় পাই, তার সাথে হুমায়ূনের নারীর চিত্রায়ণ মিলে যায়। যে উদাহরণ আদতে পুরুষতান্ত্রিকতারই।

লেখক মিসির আলি সিরিজের সাথে শার্লক হোমসের একটি তুলনামূলক আলোচনা করে দেখিয়েছেন, ঠিক শার্লক হোমসের ইংল্যান্ড উপস্থাপনের মতো মিসির আলিতেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠমোর চেহারা পুরোদমে হাজির থাকে। এখানে আমরা নিশ্চিত হবো যে, হিমু ও মিসির আলি সিরিজে আর যাহোক, স্থান আর রাষ্ট্রকাঠামো উপস্থাপনের মুনশিয়ানা আছে। অবশ্য এ লেখাগুলোতে গল্পের প্যাটার্ন একইরকম হওয়ার কারণে একঘেয়েমি সৃষ্টি হয়। হিমুর মধ্যে বৌদ্ধ-ঐতিহ্যের যে সামঞ্জস্য লেখক দেখাতে চেয়েছেন, তার সাথে আমরা পুরোপুরি একমত হবো না। হিমুতে বৌদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতীক থাকলেও, দার্শনিক প্রস্তাবে বিশাল ফারাক আছে। আর হুমায়ূনের প্রজেক্ট ছিল মূলত মিসির আলির বিপরীতে হিমুকে মুখোমুখি করে বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা। আসলে হুমায়ূন যে বৈচিত্র্যময়, তুমুল গণতান্ত্রিক আর কোনো মতবাদে বন্দী থাকেনি – এ দুই সিরিজ তার মোক্ষম উদাহরণ।

আমরা গৌরীপুর জংশন উপন্যাসে জয়নাল নামক একজন কুলির একদিনের ঘটনার বিবরণ দেখি। মূলত গল্পটি রেলস্টেশনের, জয়নাল এখানে একটা উপলক্ষ। জয়নালের বরাতে রেলস্টেশনের বাস্তবতা উঠে এসেছে। সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিশেষ আচরণ প্রকাশিত হয়েছে। জয়নালের প্রতি হুমায়ূনের পক্ষপাত ঠিকই ফুটে ওঠে; কিন্তু হুমায়ূন জয়নালের চরিত্র সম্পর্কে ব্যাপক সজাগ – মানে জয়নালকে হুমায়ূন সাধু ধরে নেন না, বরং তার প্রবণতাকে হাজির করেন। আর সাথে রেলস্টেশনের রাজনীতি ফুটে ওঠে। যেন হুমায়ূন এখানে একজন এথনোগ্রাফারের মতো পূর্বানুমান ব্যতিরেকে স্থান আর ব্যক্তির উপস্থাপনা করেছেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিব, হুমায়ূন জনপ্রিয় ঢঙে একজন উৎকৃষ্ট এথনোগ্রাফার।

মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের বড় উপন্যাসগুলোকে তেমন আমলে নিতে চান না। লেখক বলেছেন, বড় উপন্যাসগুলো সামলানোর দক্ষতা হুমায়ূনে কম পরিমাণ উপস্থিত ছিল। পাঠকমহলে জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প উপন্যাসকে মহৎ ভাবার চল আছে, এ ব্যাপারে লেখকের উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। যদিও লেখক মধ্যাহ্ন প্রথম খণ্ডের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

সব মিলিয়ে মোহাম্মদ আজম বলেছেন, হুমায়ূন সংস্কৃতিপাঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হুমায়ূন কোনো বিপ্লবী দায়িত্ব নিতে চাননি। কোনো লেখকের বিপ্লবী হবার দায়ও নেই। লেখক নিজ চিন্তা হাজির করবে আর সমাজে তার ছাপ পড়বে। হুমায়ুন সে জায়গায় সফল – হুমায়ূন সমাজের একজন হয়ে আবেগের কারবার করেন, আবেগকে প্রশ্রয় দেন আর তা ব্যক্তিজীবনের সাথে এমনভাবে জুড়ে দেন যেন তা বড় পরিসরে জীবনকে ক্যাপচার করে। যেন হুমায়ূন নিজে তিনশো ষাট ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলের ক্যামেরার মত, সবকিছু দেখতে পান; এমনকি ক্ষুদ্র কিছুও নজর এড়ায় না। আমরা আরেকটু এগিয়ে সিদ্ধান্ত নিব, হুমায়ূন সাহিত্য বিপ্লবী রাজনীতির টুল হতে পারতো, কিন্তু বিচক্ষণ চোখের অভাবে তা হয়নি।

চলচ্চিত্র
মোহাম্মদ আজম হুমায়ূন-চলচ্চিত্র বিচারে পুরোপুরি উদার। হুমায়ূন চলচ্চিত্রকে বিশেষ গণ্য করার স্বার্থে তিনি চলচ্চিত্রের বিষয়গত উপস্থাপনকে বেশি গুরুত্ব দেন। যেন হুমায়ূনকে একজন ধ্রুপদী চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রমাণ করতেই হবে – যেন হুমায়ূন বাংলাদেশের সত্যজিৎ রায়।

যেসব উপাদানের মিশ্রণে চলচ্চিত্র বিশেষ হয়ে উঠে, হুমায়ূনে তা নেই। চলচ্চিত্র মানুষ যে কারণে মনে রাখে, হুমায়ূনে তা কম উপস্থিত। কেউ হুমায়ূন চলচ্চিত্রকে পাত্তা না দিতে চাইলে তার নিন্দা করা যায় না।

মানুষের আবেগকে ফুটিয়ে তোলার জন্য, গল্পকে আরও দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনের জন্য চলচ্চিত্রের ভাষা রপ্ত বা সৃষ্টি করার দরকার পড়ে। সেট নির্মাণে কৌশলী হয়ে, ক্যামেরার কারসাজি করে, সংগীতের আবহ সৃষ্টি করে একটি ঢিলেঢালা গল্পকেও বিশেষ করে তোলা যায়। বড় পরিচালকেরা এ কাজটি পুরোদস্তুর করেছেন। আইজেনস্টাইন এ কারণেই বিশেষ একজন। এজন্য আমরা জহির রায়হানের ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রকে দীর্ঘদিন মনে রাখবো। এখানে ক্যামেরার কাজ আর বিষয়বস্তু উপস্থাপনের ধরন দুই-ই দুর্দান্ত।

হুমায়ূনসাহিত্যে আমরা বিশেষ ক্যারিশমা দেখি, এটা গল্প বলার ক্যারিশমা। কিন্তু চলচ্চিত্রে একসাথে অনেকগুলো গল্প তুলে আনা ও সেসবের সমন্বয় করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। গভীর মনোযোগ, ব্যাপক বোঝাপড়া আর মেটাফোরিক উপাদানের ব্যবহার ছাড়া এ কাজে সফলতা অসম্ভব। হুমায়ূন সে কাজটিই করতে চেয়েছেন, কিন্তু সফল হয়েছেন কিঞ্চিৎ। হুমায়ূন অনেকগুলো গল্প বলতে যেয়ে ডায়লগের আশ্রয় অনেক বেশি নিয়েছেন। যে কারণে হুমায়ূন-চলচ্চিত্র শুধুই ডায়লগময় হয়ে উঠেছে। দুই দুয়ারি, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত এই তালিকায় পড়বে। শ্যামল ছায়ায় অতিরিক্ত ডায়লগের প্রয়োজন ছিল, যে কারণে চলচ্চিত্রটি পার পেয়ে গেছে।

বিষয়বস্তু আর কলাকৌশল চলচ্চিত্রে দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। কলাকৌশল স্বচ্ছ আবহ সৃষ্টি করে; সময়, স্থান আর ব্যক্তির বাস্তবতাকে মূর্ত করে তোলে। আমরা আগুনের পরশমণিতে দেখবো, পরিচালক ব্যাকগ্রাউন্ড সংগীতের বিশেষ ব্যবহার করে চলচ্চিত্রটির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে চেয়েছেন। কোনো চলচ্চিত্রেই হুমায়ূন ক্যামেরার সৃজনশীলতায় হাত দেননি, আবার গানের ব্যবহারে ভারসাম্য আনেননি। অতিরিক্ত গানের ব্যবহার চলচ্চিত্রের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। হয়তো হুমায়ূন বিকল্প জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সৃষ্টির ব্যাপারে ভেবেছিলেন। আমরা মোরশেদুল ইসলামের দূরত্ব চলচ্চিত্রে ভাষা আর বিষয়বস্তু দুইয়ের সমন্বয় পাই। ফলে টুকটাক সমস্যা থাকলেও চলচ্চিত্রটি দারুণ হুমায়ূনীয় হয়ে উঠতে পেরেছে। আবু সাইয়ীদের নিরন্তরও সে জায়গায় সফল। হুমায়ূন শেষমেশ রাবীন্দ্রিক। রোমান্টিকতার চাষবাস করে, রোমান্টিক আবহে গল্প গড়ে তোলেন, যেটা নিরন্তরে নেই।

আমরা শ্যামল ছায়া আর আগুনের পরশমণিতে হুমায়ূনের আদর্শিক পরিচয় দেখতে পাই। যদিও শ্যামল ছায়াতে একটি বিকল্প বয়ান গড়ে উঠতে দেখা যায়। মোটাদাগে তা সার্থকও। হুমায়ূনের শ্যামল ছায়ায় আর সব কলাকৌশলগত ঝামেলা থাকলেও বিষয়বস্তু অসাধারণ ছিল। রাজাকার আর হুজুরের উপস্থাপন বৈপ্লবিক বটে। তবে প্রতীক ব্যবহারের বেলায় একদম প্রথানুগ। লেখকের সাথে শ্যামল ছায়ার ব্যাপারে একমত হওয়া যাবে।

আগুনের পরশমণি আর সব চলচ্চিত্রের মতোই, মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিষ্ঠিত ডিসকোর্স দিয়ে বিবেচনা করে। ইতিহাস বিষয়ে কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেয় না, ক্যামেরা আর সেটের কাজও তেমন চোখে পড়ার মতো না। শ্রাবণ মেঘের দিন বিষয়বস্তুতে চমৎকার হলেও এখানে গানের ব্যবহারে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। যদিও লেখক বলেছেন, গানের ব্যবহার হয়েছে, ‘মাটি আর পানির বিন্যাসে, চরিত্রের মনোলোক আর সংলাপের সীমানায়।’ যৌনতার ব্যাপারে রক্ষণশীলতার ছাপ স্পষ্ট ধরা পড়েছে। চন্দ্রকথায়ও হুমায়ূনের অত্যধিক রক্ষণশীলতা দেখা যায়। যেখানে যৌনতার আবহ আগে থেকে সৃষ্টি ছিল, কিন্তু হুমায়ূন সে জায়গা থেকে সরে আসেন। আবু সাইয়ীদ নিরন্তরে যৌনতার রাখঢাক করেননি, বরং কৌশলগত অবস্থান নিয়েছেন। যৌনতার ব্যাপারে হুমায়ূন ভিক্টোরীয়দের থেকেও বেশি ভিক্টোরীয়। নারী চরিত্র উপস্থাপনের বেলাও একই।

মোহাম্মদ আজম চলচ্চিত্রকে ভাষা বা কৌশলে সীমিত করার পক্ষে নন। অথচ এ সময়ে চলচ্চিত্রই একমাত্র মাধ্যম, যা মানুষের যেকোনো বাস্তবতাকে আরও বেশি উপভোগ্য করে, আরও বেশি নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করে – আর তা শুধু ভাষা বা কৌশলের নানান ব্যবহারের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। তারেক মাসুদের মাটির ময়না বেশি মাত্রায় দর্শক নন্দিত হওয়ার মূল কারণ এর ভাষা বা কৌশল। যদিও এখানে বিষয়বস্তুর সমন্বয় ছিল। তবে মূল কাজটা ভাষাই সম্ভব করেছে। ভাষার ব্যবহার তারেক মাসুদের নরসুন্দরে দুর্দান্তভাবে দেখা যায়। শুধু বিষয়বস্তু দিয়ে নরসুন্দর বানানো সম্ভবই না। যেহেতু বাংলাদেশে চলচ্চিত্র মাধ্যমটি বিশেষ গড়ে ওঠেনি, ফলে হুমায়ূনকে আমাদের বিশেষ মনে হয়। কিন্তু আদতে এ শিল্পে হুমায়ূনের অবদান কিঞ্চিৎ। তবে আমরা যেকোনো চলচ্চিত্র পরিচালককে দুই দিক থেকে বিবেচনায় আনবো। এক. চলচ্চিত্রের ভাষা বা কৌশলের ব্যবহার দিয়ে, দুই. বিষয়বস্তুর উপস্থাপনের দিক থেকে।

অবশেষে আমরা বলতে চাই, মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনপাঠের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, তা মোটাদাগে সফল আর উৎসাহব্যঞ্জক। লেখকের হুমায়ূনপাঠ হুমায়ূনসাহিত্য বুঝতে ভীষণ সাহায্য করেছে আর হুমায়ূন সম্পর্কে নতুনভাবে আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। এতদিন হুমায়ূনের ব্যাপারে যাদের এলার্জি ছিল, এ বই তাদের ঝান্ডুর বাম হিসেবে কাজ করবে। এতদিন যারা হুমায়ূনকে নিছক জনপ্রিয় ভাবতো, এ বই পাঠের পর তাদের ভোরের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে দেখা দিবে। যারা ভাবতো হুমায়ূন সস্তা আর উদ্ভট, এ বই তাদের হৃদয়ে ব্যাপক ঝড় তুলবে; হয়তো সে ঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন, আর সিডরের মতো মারাত্মক হবে অথচ দেখা যাবে না।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top