ত্রিপুরার লোকগল্প // সুকন্যা দত্ত

বৃদ্ধা ও বড় গিরগিটি, মূল গল্প The Old Lady And Her Iguana

বহুকাল আগের কথা। ত্রিপুরার পাহাড়ের কোলে একটি ছোট গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ী নদী। সেই গাঁয়ে সব সময় সুখ শান্তি বিরাজ করতো। গ্রামের প্রতিটি মানুষের ঠোঁটের কোণায় হাসি লেগেই থাকতো। গ্রামবাসীদের সকলের কম বেশী জমিজমা থাকায় চাষআবাদ করে স্বছন্দে জীবন কেটে যেত। এমনকি যাদের জমি ছিলো না, তারা ও অপরের জমিতে উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে দিনযাপন করতো।

ওই গ্রামের নির্জন প্রান্তে একজন দরিদ্র বৃদ্ধা রমনীর বাস ছিলো। পাহাড়ী টিলার উপরে একটি ছোট্ট কুটীরে সে একা একা থাকতো। প্রতিদিন গ্রামের তিনটি বাড়ী থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে যা জুটতো তাতেই কোনো মতে তার দিন গুজরান হতো। রমনীর গৃহ প্রাঙ্গনের এক কোণের একটি বড়ো গর্তের ভিতর বাস করতো একটি ইগুয়ানা (বড় গিরগিটি)। বৃদ্ধা তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতো। প্রতিদিন ভিক্ষা শেষে উঠোনে ইগুয়ানার জন্য কিছু চাল ছড়িয়ে তাকে খেতো দিতো। ইগুয়ানার খাওয়া শেষ হলে তবেই সে নিজের জন্য হাঁড়িতে সামান্য ভাত বসাতো।

একদিন সে গাঁয়ের এক বিরাট সম্ভ্রান্ত, ধনী ব্যক্তির মেয়ের বিয়ে ঠিক হলো। সুসংবাদ শুনে গ্রামের সকলে খুশীতে মেতে উঠলো। ধনী ব্যক্তিটি সকল গ্রামবাসীকে মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানালেন এমনকি সেই বৃদ্ধাকে স্বয়ং নিজে গিয়ে নিমন্ত্রণ করে আসলেন। গ্রামের সকল যুবককে ব্যক্তিটি বিবাহ অনুষ্ঠানের কাজের জন্য নিয়োজিত করলেন। নির্ধারিত দিনের পূর্বেই হইহই করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল যুবক ব্যক্তির গৃহাঙ্গনে একত্রিত হলো। বিয়ে বাড়ী সাজানো, রান্নাবান্না, অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। কত যে কাজ তার হিসেব নেই।

এদিকে সেইদিনই বৃদ্ধা নিজের ঘরের দাওয়ায় বসে চিন্তায় ডুবে রইলো। এমন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়ীতে তার নিমন্ত্রণ অথচ অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার উপযুক্ত পোশাক যে তার নেই। ঘরের বাক্সে যে দুটি রিগনাই( কাপড়) রয়েছে, সেগুলো ভদ্র সমাজে পড়ে যাওয়ার পক্ষে অনুপযুক্ত । কোনোটা ময়লা কোনোটা আবার হত ছিদ্র, জীর্ণ পরিধানের অযোগ্য। সারাদিন রিগনাই এর কথা ভেবে বৃদ্ধার ভিক্ষা করতে যাওয়া হলো না । বহু ভেবে সে একটা উপায় বের করলো। টিলার নীচেই এক প্রতিবেশীর ঘর। তার থেকে একটি রিগনাই ধার করতে পারলে এ বারের মতো তার মান রক্ষা হতে পারে। এ সব ভাবতে ভাবতে বেলা পড়ে এলো। ইগুয়ানার কথা তো সে ভুলেই গিয়েছিলো। এদিকে গুটি গুটি পায়ে ইগুয়ানা গর্ত থেকে বেরিয়ে যখন উঠোনে খাবার পেলো না তখন আবার সে বিষন্ন মনে ফিরে চলে গেল। যে মুহূর্তে ইগুয়ানা গর্তে মাথা ঢুকিয়ে ফেলেছে, সে সময় বৃদ্ধার নজর পড়লো গর্তের দিকে।

” এ আমি কী করলাম? ইগুয়ানা কে আজ খাওয়ার দিতেই ভুলে গেলাম?”

নিজের ভুল বুঝতে পেরে ছুটে ঘরে গিয়ে এক মুঠো চাল এনে উঠোনে ছড়িয়ে দিয়ে ইগুয়ানা কে ডাকাডাকি করতে লাগলো।

” বেরিয়ে এসো ইগুয়ানা, দেখো আমি তোমার জন্য খাবার রেখেছি।”

কিন্তু ইগুয়ানা আর গর্তের বাইরে এলো না। বুড়ি অনেক কাঁদলো, কিন্তু গর্তের ভিতর থেকে কোনো সারাশব্দ পাওয়া গেলো না। ইগুয়ানা না খাওয়ায় বৃদ্ধা ও সেদিন হাঁড়িতে চাল বসালো না, মুখে খাবার তুললো না। রাতে কিছু না খেয়েই সে ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে রাত পেরোলেই পরদিন গ্রামে বিয়ে। আজ সারারাত পালা করে যুবকরা কাজ করতে লাগলো। ভোরের কিছু আগে যখন কাজ শেষ হলে তখন ধনী ব্যক্তি সকলের জন্য শূকরের মাংস ও পানীয়ের ব্যবস্থা করলেন। যুবকের দল তখন উল্লাসে মাতোয়ারা। দলের একজন যুবক বলে উঠলো, ” আজ বড়ো আনন্দের দিন। রাত পোহালেই গ্রামের মেয়ের বিয়ে। সামান্য শূকরের মাংসে কী সাধ মেটে? আজ অন্য কিছু খাওয়া যাক। কী বল? ”

সকলে সমস্বরে যুবকের কথায় সমর্থন জানালো।

অপরজন বললো, ” নিশ্চয়ই। বহুদিন ইগুয়ানার মাংস খাওয়া হয় না। আজ ইগুয়ানার মাংস খেতে মন চাইছে।”

কথাটা শেষ হতেই একজন বললো, ” কিন্তু সে মাংস পাবে কোথায়? তুমি কী ইগুয়ানার মাংস জোগাড় করতে পারবে?”

সাথে সাথে সে যুবক বললো, ” বিলক্ষণ। গ্রামের ধারে টিলার উপর যে বুড়ি থাকে, তার উঠোনের পাশে গর্তের ভিতর একটা বিরাট ইগুয়ানা বাস করে। মাংসল সেই ইগুয়ানা কে শিকার করতে পারলেই আমাদের আজকের ভোজন উৎসব জমে যাবে।”

সকলেই এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলো। দলের একজন যুবক বললো, ” খুব সাবধান। ওই বুড়ি “যখের ধন” এর মতো ইগুয়ানা কে পাহারা দেয়, সে তার চোখের মণি। তাই অতি সন্তর্পণে আমাদের কাজ হাসিল করতে হবে।”

অবশেষে সকলে মিলে বৃদ্ধার বাড়ীর দিকে রওনা দিলো।

শেষ রাতের কালো অন্ধকার তখন ও পাহাড়ের গায়ে মিশে আছে। ঝোপের ভিতর থেকে দু একটা শিয়াল হুক্কা হুয়া করে ডেকে উঠছে। পথ ঘাট শুনশান। আঁধার চারিপাশ কে রহস্যময় করে তুলছে। দূর থেকে নদীর স্রোতের কলকল ধ্বনি ক্ষীণ সুরে কানে আসছে। বৃদ্ধার বাড়ীর উঠোনে কয়েকজন যুবক ধীরে ধীরে প্রবেশ করলো। একজনের হাতে বাঁশের তৈরি জ্বলন্ত মশাল। সকলের দৃষ্টিতে ক্রুরতা। ইগুয়ানা শিকারের লোভ তাদের গ্রাস করেছে। যুবকের দল বৃদ্ধার বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করতেই মুহূর্তে গাছের ডালে বসা একটা পেঁচা চারদিকের নিস্তব্ধতা কাঁপিয়ে কর্কশ স্বরে ডেকে উঠলো। চুপিসারে যুবকরা ইগুয়ানার গর্তের সামনে দাঁড়ালো। একজন একটা মোটা বাঁশ গর্তের ভিতর ঢুকিয়ে ইগুয়ানা কে বাইরে বের করার প্রচেষ্টা করতে লাগলো। বহুক্ষণ পর ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত ইগুয়ানা গর্তের ভিতর অসহায় অবস্থায় বের হতেই একজন যুবক দা দিয়ে তার মাথায় একটা কোপ বসালো। একটু ছটফট করেই ইগুয়ানা নিথর হয়ে গেলো। মুহূর্ত মধ্যে সেই পেঁচাটা আবার দিকবিদিক কাঁপিয়ে ভয়াবহ স্বরে চিৎকার করে উঠলো। আকস্মিক শব্দে বৃদ্ধা ধরফরিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলো। হঠাৎ এক অজানা ভয় তাকে ঘিরে ফেলেছে। পরক্ষণেই অযথা ভয় ভেবে বৃদ্ধা আবার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লো। বাইরের বিপদ সে ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না।

সে রাতে যুবকের দল ইগুয়ানার শিকার শেষে বিবাহ প্রাঙ্গনে মহোল্লাসে ফিরে এলো। এক জায়গায় জমায়েত হয়ে প্রথমে ইগুয়ানাকে টুকরো করে কাটলো তারপর আগুনে ঝলসে মাংস রান্না শুরু করলো। শুরু হলো মাংস ও পানীয় সহযোগে চড়ুইভাতি। খাওয়া দাওয়া শেষে তারা নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়লো। কারোর আর ওঠার শক্তিটুকু নেই।

ইগুয়ানাকে হত্যা করার সময় বৃদ্ধা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। অকস্মাৎ অচেনা কন্ঠস্বরে তার ঘুম ভেঙে গেলো। অশরীরী কেউ যেন তাকে বলছে- “বুড়ি, বুড়ি, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠো। এখান থেকে পালিয়ে যাও”।

বৃদ্ধা ভীত হয়ে ঘুম থেকে উঠে চারপাশে তাকালো কিন্তু কাউকেই সে দেখতে পেলো না। রমনী ভাবলো, এসব তার গভীর ঘুমে স্বপ্নের ঘোর মাত্র।

কিন্তু আবার ও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো।

অদৃশ্য কেউ তাকে বললো, ” বুড়ি যদি তুমি প্রাণে বাঁচতে চাও ‘এই মুহুর্তে পালিয়ে যাও “। এবার বৃদ্ধা ভীষণ ভয় পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ভোর রাতের অন্ধকারে কন্ঠস্বর ছাড়া কিছুই তার চোখে পড়লো না।

অশরীরী আবার বলে উঠলো, “বুড়ি, ও বুড়ি৷ তুমি এখন ও বসে আছো? তোমার কি জীবনের প্রতি ভালোবাসা নেই? তুমি কি মরতে চাও? পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তোমার ঘরও ভেসে যাবে। নিজের প্রাণের মায়া থাকলে এই মুহুর্তে এখান থেকে পালিয়ে যাও।”

বুড়ির শরীরে তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ভয়ে সে থরথর করে কাঁপছে। সেই কন্ঠস্বর বলে চললো, “তুমি কি গর্জন শুনতে পাচ্ছো? দ্রুত এদিকে আসছে। শীঘ্রই পালাও “।

বুড়ি তখন ভয়ে চিৎকার করে বললো, ” আমাকে এভাবে ভয় দেখাচ্ছো কেন? তুমি কি মানুষ, নাকি ভূত নাকি দেবতা? কে তুমি?”

অশরীরী বলে উঠলো, “আমি মানুষ, দেবতা কিংবা ভূত কেউ নই। আমি তোমার সেই ইগুয়ানা। বিবাহ বাড়ির ছেলেরা আজ রাতে আমাকে মেরে ফেলে আনন্দের সাথে পানীয় সহযোগে আমার মাংস খেয়েছে। ”

কথাগুলো শুনে বৃদ্ধা বিস্ময়ে চমকে উঠলো। তার প্রিয় ইগুয়ানা আর নেই একথা ভাবতেই তার বুক ছিঁড়ে যাচ্ছিলো।

ইগুয়ানা বলে চলল, ” আমার অভিশাপে আজ রাতের মধ্যে পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে যাবে। সমগ্র গ্রামকে আমি জলের তলায় ডুবিয়ে দেব। গ্রামের পরিবর্তে এখানে একটি বড় হ্রদ জন্ম নেবে।”

বৃদ্ধা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

” শুধুমাত্র বিয়ে বাড়ির একটি দন্ড জলের উপরে দাঁড়িয়ে থাকবে। অন্যরা সেই দন্ড চিহ্নিত করে এই স্থানটির অস্তিত্বের বিষয়ে জানতে পারবে।,”

তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধা দিকবির্দীণ একটি গর্জন শুনতে পেল। মনে হলো, সমুদ্র যেন তার দিকে ধেয়ে আসছে।

কাল বিলম্ব না করে বৃদ্ধা বাড়ির পিছনের পথ দিয়ে পালিয়ে গেলো। ছুটতে ছুটতে তার মনে হলো, যেন একটি বিশাল কোবরা তার শত বা হাজার মাথা উঁচু করে বৃদ্ধাকে ধাওয়া করেছে।

দ্রুত গতিতে দৌড়ে সে রাতের বেলায় পাশের গ্রামে পৌঁছে গেলো এবং একটি বাড়ির বারান্দায় প্রবেশ করে অচেতন হয়ে গেলো।

ভোরের দিকে গৃহকর্তা দরজা খুললে দেখলো, তার ঘরের সামনে একজন শীর্ণ কায়া বৃদ্ধা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। গৃহস্থ তাকে ভিতরে নিয়ে সেবা শুশ্রূষা করতে লাগলো।

সময় অতিক্রান্ত হলে গৃহকর্তার নীবিঢ় পরিচর্যায় বৃদ্ধা জ্ঞান ফিরে পেলো।

গৃহস্থ ব্যক্তি তার অযাচিত আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করতে বৃদ্ধা গত রাতের সব ঘটনা বলে ফেললো।

কাহিনীর সত্যতা যাচাই করার জন্য পাশের গ্রামের সকলে ছুটে গিয়ে দেখলো, বৃদ্ধা বর্ণিত একটি কথা ও মিথ্যা নয়। সেই স্থানে গ্রামের কোনো অস্তিত্ব নেই। পরিবর্তে জায়গা জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ জলরাশি। বিকট গর্জনে ঢেউগুলো একে অপরের বুকে আছড়ে পড়ছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, জলের স্তরের মাঝে দন্ডায়মান রয়েছে একটি স্তম্ভ। ইগুয়ানা বর্ণিত সেই স্তম্ভ জলরাশির ভিতর থেকে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই সেই স্থান যেখানে আজ বিবাহ আসর বসার কথা ছিলো।

বৃদ্ধা সহ সকল গ্রামবাসী হতভম্ব হয়ে অতল জলরাশির দিকে হাঁ করে চেয়ে রইলো। তাদের সামনে তখন বিরাট একটি হ্রদ।

গল্প ২ ফুরাই (মূল গল্প- Furai)

অনেককাল আগে ত্রিপুরার ওয়ামলাং গ্রামে বাস করতো ছিয়ারি । তার সৌন্দর্য ছিলো যৌবনচ্ছ্বল জ্যোৎস্নার চাঁদের মতো। সকলে তার রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ছিয়ারির যখন বিয়ের বয়স হলো তখন তার বাবা কন্যার জন্য সুপাত্রের সন্ধান করতে লাগলেন। সে গাঁয়ে তো যুবকের অভাব নেই কিন্তু ছিয়ারির সাথে মানাসই পাত্র প্রয়োজন।ওয়ামলাং গ্রামেই বাস করতো এক যুবক । দেশে তার মতো বলশালী, সুপুরুষ দ্বিতীয় কেউ ছিলে না। যুবকের নাম দিয়ারি। উভয় পরিবারের মধ্যস্থতায় অবশেষে বিবাহের দিন ঠিক হলো। সারা গ্রাম বিয়ের জন্য সেজে উঠলো। ছাদনাতলা ফুল দিয়ে সেজে উঠলো, সকলে নতুন রিসা( মাথার কাপড়) মাথায় দিলো, রিগনাই ( পোশাক) পড়লো। বর বউ কে চন্দনের তিলক দিয়ে সাজানো হলো। ভোজ, নৃত্য, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনে বিয়ে বাড়ী জমে উঠলো। নতুন পোশাক পরিহিত যুবতী মেয়েরা বাঁকা চোখে যুবকদের দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে চলে গেলো। পরিজন, বন্ধুবান্ধবের সমাগমে আনন্দ উৎসবে সে গাঁয়ে খুশীর জোয়ার এসেছে।

সবাই যখন বিবাহ অনুষ্ঠানের উল্লাসে মাতোয়ারা তখনই দূর থেকে ভেসে এলো ফুরাই (রন দামামা) এর ক্ষীণ শব্দ ।

দিয়ারি বলে উঠলো, ” এতো কুকি সৈনিকদের যুদ্ধ ঘোষণা ইঙ্গিত। ”

কুকি শক্রুরা ওয়ামলাং আক্রমনে ধেয়ে আসছে।

দিয়ারি উঠে দাঁড়ালো। তার পরণের বিয়ের রিগনাই সজোরে টান মেরে খুলে ফেললো, ললাটের চন্দন তিলক মুছে ফেললো। গ্রামের এই বিপদকালে বিবাহ আসরে বসে থাকা তার শোভা পায় না। বীরের ধর্ম দেশ কে সুরক্ষিত রাখা। একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবে দিয়ারি দেশ রক্ষায় এগিয়ে এলো। যোদ্ধা পোশাক পড়ে হাতে তুলে নিলো অস্ত্র। কুকিরা তখন আর ও কিছুটা কাছে চলে এসেছে। ফুরাই এর ধ্বনি স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে লাগলো। ওয়ামলাং গাঁয়ের সকল যোদ্ধা ফুরাই বাজিয়ে যুদ্ধে যোগদানে অগ্রসর হলো।

সাতদিনের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে কুকিরা ওয়ামলাং গাঁয়ের সৈন্যদের কাছে পরাজিত হলো। তারা ফুরাই বাজিয়ে দিয়ারি এবং তার সৈন্যদের কাছে আত্মসমপর্ণ করলো। বিজয়ী সকল যোদ্ধা জয়ের আনন্দ উৎযাপন করতে লাগলো। দিয়ারি ওয়ামলাং গাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। গ্রামবাসী অধীর আগ্রহে তাদের জন্য বরণডালা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছিয়ারি ভাবী স্বামীকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে পথ পানে চেয়ে আছে। আজ যে তার ভালোবাসার মানুষ ঘরে ফিরছে। কিন্তু দিয়ারি ছিয়ারির কথা বিস্মৃত হয়ে গ্রামের অপর এক সুন্দরী রমনীর কাছে গিয়ে আশ্রয় নিলো। ছিয়ারির ভগ্ন হৃদয় তখন দিয়ারির ভালোবাসায় পাগল । এতদিনের অপেক্ষা কী এভাবে শেষ হয়ে যাবে? সে দেশের এক রাজপুত্র ছিয়ারিকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো। কিন্তু ছিয়ারির মনের সমস্তটা জুড়ে কেবল দিয়ারি। সে রাগে বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিলো। রাজপুত্র বলপূর্বক ছিয়ারিকে বিয়ে করতে চাইলে এক গভীর রাতে সে কাউকে কিছু না জানিয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে গেলো।

রাতের আঁধারে পাহাড়ি পথ পেরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছিয়ারি পাহাড়ের মাথায় গিয়ে উঠলো। দিয়ারি কে এ জীবনে না পেলে জীবনের কোনো মূল্য নেই। এসব ভেবে সে পাহাড়ের শিখর থেকে আত্মহত্যা করার জন্য নীচে ঝাঁপ দিলো। সে সময় নীল আকাশের গায়ে একটি বড়ো দাঁড়কাক উড়ে যাচ্ছিলো। পড়ন্ত ছিয়ারিকে সে নিজের ঠোঁটে আঁকড়ে দিয়ারির কাছে পৌঁছে দিলো। ছিয়ারিকে পেয়ে যুবক দিয়ারি নিজের ভুল বুঝতে পারলো। ছিয়ারের দুঃখের কথা শুনে দিয়ারি রাজপুত্রের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো। দেশের রাজার পুত্রকে হারিয়ে দিয়ারি ছিয়ারিকে বিয়ে করলো। সকলে দুজনকে দু হাত ভরে আর্শীবাদ করে গেলো।

( বিশ্লেষণ)…..

ত্রিপুরার একটি বিজয় কাহিনী ফুরাই। ফুরাই একটি বাদ্যযন্ত্র। এটি বাজিয়ে যুদ্ধ ঘোষনা করা হয়। এই গল্পে দিয়ারি একজন বীর যোদ্ধা। জাতির বীরত্ব, শৌর্য- বীর্যের কাহিনী প্রতিফলিত হয়েছে এ গল্পে। দেশের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় পাওয়া যায় দিয়ারির চরিত্রে। অপরদিকে ছিয়ারির চরিত্রে রয়েছে প্রকৃত ভালোবাসার ছোঁয়া। অপেক্ষারত এক নারী ছিয়ারি যে দিয়ারীর জন্য যে কোনো প্রলোভন করে অবজ্ঞা করতে পারে। নিজের ভালোবাসায় আত্নাহুতি দিতে ও সে কুন্ঠাবোধ করে না। কাক এ গল্পে একটি বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ। পুরাণে দেখা যায়, কাক ইহলোক ও পরলোকের বার্তাবাহক হয়ে কাজ করে। এ গল্পে কাক ছিয়ারির প্রাণরক্ষা করে দিয়ারির কাছে পৌঁছে দিয়েছে।

গল্প ৩: ভালবাসা (মূল গল্প- Love And Lightening)

ত্রিপুরার পাহাড়ী কোলে সুন্দর একটি গ্রাম। ছোটো ছোটো বাড়ী, ঝুম চাষের জমি, পাইন গাছ সারি সারি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সকালে মেঘেরা গাভীর মতো সেখানে চরে বেড়ায়। রাতের আঁধারে গাঁয়ের লোক ঘুমের চাদর মুড়ি দেয়। সেই গ্রামে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ্ব জলে ভরা শান্ত একটা ঝিল আছে । পাহাড়, গাছপালা সকালের আলোয় নিজের মুখ দেখে যায় । বহুকাল আগে সে গাঁয়ে বাস করতো চম্পারাই নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী খলুমতি। ঝুম চাষ করে তাদের মোটামুটি ভালোই উপার্জন হতো। তাদের একমাত্র ছেলে ছিলো নুগরাই। সে যেমন সাহসী তেমন অদম্য শক্তির অধিকারী। নুগরাইও মা বাবার সাথে চাষের জমিতে কাজ করতো।

একদিন সকাল বেলা নুগরাই ঝুম চাষের কাজে ব্যস্ত। মা খলুমতি পাহাড়ী নদীর জলে স্নান করতে নেমেছে। হঠাৎ তার চোখে পড়লো, নদীর খরস্রোতে একটি মেয়ের শবদেহ ভেসে যাচ্ছে। খলুমতি নদীর স্রোতের ভিতর যাওয়ার সাহস পেলো না। ছেলেকে চিৎকার করে ডেকে বললো, ” নুগরাই, ঐ দেখো। নদীর স্রোতে একটি মেয়ের লাশ ভেসে যাচ্ছে। বাছা, তাড়াতাড়ি এসো। ”

কথাটা কানে যেতেই নুগরাই চাষের কাজ ফেলে নদীর তুমুল স্রোতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। নিজের প্রাণের পরোয়া না করে সাঁতার কেটে নুগরাই মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাদের বাড়ী নিয়ে আসলো। গ্রামের সকলে তাদের বাড়ীতে মেয়েটিকে দেখার জন্য ভীড় জমালো। ছেলেটির কাকা চাদরাই ছিলেন একজন ওঝা। নুগারাই তাকে ডেকে আনার পর পরীক্ষা নীরিক্ষার করে চাদরাই জানলো, ” তোমরা ভয় পেয়ো না। ওর দেহে এখন ও প্রাণ অবশিষ্ট আছে।”

কথাটা শুনে সকলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। চাদরাই ওষুধ প্রয়োগ করে মেয়েটির শরীর থেকে জল বের করে দিলো। ধীরে ধীরে মেয়েটি চোখের পাতা খুললো। অসাধারণ তার রূপ। শায়িত মেয়েটির দিকে গ্রামের সকলে চেয়ে রইলো।

এই মেয়েটির নাম নাখাপিলি। যেমন মিষ্টি ব্যবহার, তেমন গুরুজনদের প্রতি সম্মানবোধ। চম্পারাইয়ের বাড়ীতে নাখা আশ্রয় পেলো। অনেক খুঁজেই তারা কোনোভাবেই নাখাপিলির মা, বাবার খোঁজ পেলো না। শেষ পর্যন্ত খলুমতি নাখাকে তার কাছে রেখে দেওয়ার জন্য জোরাজোরি করতে লাগলো। তাদের পরিবারে কোনো কন্যা সন্তান না থাকায় অচিরেই নাখা খলুমতির চোখের মণি হয়ে উঠলো। ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া মমতায় সে উঠলো সকলের হৃদয়ের ধন।

এইভাবে কয়েক মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পর নাখা এবং নুগরাই এর মধ্যে একটি সুন্দর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগলো। গ্রামের মেয়েরা নাখাকে গল্পে গল্পে জানায়, কীভাবে নুগরাই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর দামাল স্রোতের ভিতর থেকে তাকে রক্ষা করছে, কীভাবে যত্ন করে দুহাতে আগলে তাকে ঘরে তুলে এনেছে। কথাগুলো শুনতে শুনতে নাখা উদাস হয়ে যায়। নুগরাই এর জন্য তার মনে ভালোবাসা জন্ম নিতে থাকে। দেখা হলেই নাখা ও নুগরাই পরস্পরের দিকে চেয়ে থাকে। সে দৃষ্টিতে ছিলো গভীর অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসা। গ্রামের অন্যান্য মেয়েরা এসব দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলো। প্রেমের গভীর টানে নুগরাই ঝুম চাষ থেকে নানান অছিলায় ঘরে আসে। নাখার কাছ থেকে পানীয় খেতে চায়, বাঁশের ফানেলে পানীয় নেওয়ার সময় উভয়ের আঙুল স্পর্শ হয়। ভালোবাসার জোয়ারে তারা নিজেদের ভাসিয়ে দেয়।

এখন হয়েছে কি, নুগরাই তো বিবাহযোগ্য যুবক। বহুদিন ধরে তারা ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছিলো। নুগরাই ও নাখাপিলির সম্পর্কের কথা বুঝতে পেরে খুশী মনে উভয়ের বিবাহ দেওয়া মনস্থ করলো। নাখাপিলির পারিবারিক পরিচয় নিয়ে তাদের মনে সংশয় থাকলে ও শেষ পর্যন্ত চম্পারাই ছেলের বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করলো।

বিয়ের দিন গ্রামের চারিদিক সেজে উঠলো। বিয়ের হায়া( ছাদনাতলা) ফুল দিয়ে সাজানো হলো। আছাই( পুরোহিত) আচার অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করলেন। অতিথিদের জন্য মাংস, পানীয়ের ব্যবস্থা করা হলো। নুগরাই ও নাখাপিলিকে বর বধূর নতুন রিগনাই( পোশাক) পড়ানো হলো, কপালে চন্দন দিয়ে তিলক আঁকা হলো। নব বর বধূ কে সকলে দু চোখ ভরে দেখে আর্শীবাদ করতে এলো। সেদিন বিবাহ বাসরে উপস্থিত হলো চম্পারাইয়ের কাকাতো ভাই, তার স্ত্রী এবং তাদের মেয়ে। মেয়েটি নাখার সামনে যেতেই চমকে উঠলো। সকলকে চিৎকার করে বললো, ” আরে, এ তো আমার সৎ বোন নাখাপিলি । নদীতে ঝাঁপ দেওয়ায় আমরা ভেবেছিলাম, ও আত্মহত্যা করে মারা গেছে। ”

কথাগুলো শুনেই চম্পারাই এবং খলুমতির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো। নুগরাই এর সাথে নাখাপিলির রক্তের সম্পর্ক! এ কথা যেন তারা বিশ্বাস করতেই পারছিলো না। সব শুনে চম্পারাই রাগে অন্ধ হয়ে বললো, ” এ বিবাহ অসম্ভব। আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী এক গোত্রে বিবাহ অনুচিত। কে কোথায় আছো? এক্ষুনি সব আয়োজন বন্ধ করো।”

কথাগুলো শুনেই নাখা ও নুগরাই কষ্টে ভেঙে পড়লো। চম্পারাই দুজনের পোশাক ছিঁড়ে দিলো,কপালে আঁকা চন্দনের তিলক মুছে ফেললো। সকলের কাছে অপমানিত হয়ে নাখা ও নুগরাই বিষাদে কাঁদতে লাগলো। উভয়ে মনোস্থির করলো, আজ রাতেই তাদের পালাতে হবে। সেই মতো, রাতের আঁধারে তারা বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো নতুন গ্রামের উদ্দেশ্যে। বিয়ে করে তারা সেখানে নবরূপে জীবন শুরু করবে।

নতুন গাঁয়ে নব দম্পতির কিছু মাস কেটে যাওয়ার পর একদিন চম্পারাই ও খলুমতি নুগরাই এর বাড়ীতে এলো। ছেলের চিন্তায় কিছুতেই ঘরে তাদের মন বসছিলো না। চম্পারাই ছেলে কে ডেকে বললো, ” বাছা, বাড়ী ফিরে চল। এ বিয়ে সমাজ নীতির বিরুদ্ধ। আমি আবার তোর বিয়ে দেবো। তোর জন্য টুকটুকে বউ ঘরে আনবো। তুই নাখাপিলি কে ছেড়ে দে। ”

এই কথায় নুগরাই উত্তর দিলো, ” বাবা, এ সম্ভব নয়। নাখা এখন আমার স্ত্রী। আমি বেঁচে থাকতে অন্য কার ও বিষয়ে চিন্তা করতে পারি না। দয়া করে তোমরা চলে যাও।”

নুগরাই তার পিতার সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো।

ছেলের কথায় খলুমতি অবাক হলো। এতদিন নুগরাই তাদের কথা অমান্য করেনি কিন্তু আজ সে বাপ মা কে অবজ্ঞা করছে। তার সব ক্রোধ গিয়ে পড়লো নাখাপিলির উপর। সে পুত্রবধূকে শাপশাপান্ত করে বললো, ” মর তুই। আমার ছেলেটাকে আমার থেকে দূরে করে দিয়ে তোর হাড়ে বাতাস লেগেছে তো? তুই কোনোদিন শান্তি পাবি না নাখা।”

কথাগুলো নাখার মন কে চুরমার করে দিলো। শোকে দুঃখে তার চোখে জল এলো। ধীর গলায় করজোরে সে খলুমতিকে বললো, ” মা, তুমি আমায় মায়ের মতো ভালোবাসতে। কিন্তু আজ যখন আমি মায়ের ভালোবাসা হারিয়েছি তখন এ জীবন রেখে কী করবো ?”

নাখার দু চোখ বেয়ে তখন জল ঝরছে। সে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ” শুধু একটু আর্শীবাদ করো মা, পরের জন্মে যেন তোমার ছেলেকেই স্বামীরূপে পাই ।”

কথাগুলো বলেই নাখা ঘর থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সে চূড়ার দিকে রওনা দিতেই নুগরাই তাকে অনুসরণ করলো। গ্রামের সকলে তাদের পিছনে ছুটে চললো। কাছেই ছিলো গভীর একটি গিরিখাত যার কিণারা বেয়ে ছোটো একটি জলধারা নিচের দিকে বয়ে যাচ্ছিলো। নাখাপিলি গিরিখাতের ধার থেকে ঝাঁপ দিতেই নুগরাই স্ত্রী কে অনুসরণ করে লাফ দিলো। কিন্তু এ কী? পাহাড়ের নীচে পড়ে যাওয়ার পরিবর্তে নাখা ক্রমাগত আকাশে উঠতে লাগলো এবং নুগরাই ও তাকে অনুসরণ করলো। হঠাৎ গ্রামের সকলে দেখলো, আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। তারপরই শোনা গেলো গগন বিদারী প্রচন্ড মেঘের গর্জন। নুগরাই ও নাখাপিলি সেই মেঘের ভিতর মিলিয়ে গেলো। গাঁয়ের সকলে এই বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো।

আজ ও যখন ত্রিপুরায় কৃষ্ণ কাজল মেঘের ফাঁকে বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠে, বজ্র ধ্বনি শোনা যায় তখন সকলে নুগরাই এবং নাখাপিলির বিরল প্রেমের কাহিনীর কথা মনে করে।

বিশ্লেষণ- ত্রিপুরার এই লোকগল্পে রয়েছে সামাজিক রীতির কথা। এই রাজ্য নিজ গোত্রের ভিতর বিবাহ কে মান্যতা দেয় না। তাই নুগরাই ও নাখাপিলির বিবাহকে সমাজ বৈধতার ছাড়পত্র দেয়নি। অপরদিকে দেখা যায় উভয়ের প্রেম কাহিনী শত বাঁধা পেরিয়ে নিজেদের সম্পর্ক তৈরি করেছে। তবে সমাজের বিপরীতে গেলে পরিণতি কী হতে পারে তা গল্পের শেষে তুলে ধরা হয়েছে। এই গল্পের সাথে রয়েছে বিদ্যুৎ এবং বজ্রপাতের কথা। নুগরাই ও নাখাপিলি যেন উভয়ের রূপক।

আচ্ছা, বলুন তো? বিদ্যুৎ এবং বজ্রপাতের এই গল্প আমাদের চিরপরিচিত আলোক তরঙ্গ এবং শব্দ তরঙ্গকে মনে করিয়ে দিলো না? প্রথমে আসি, বিদ্যুৎ সৃষ্টির কারণে। ঝড়ের পূর্ববর্তী সময়ে আকাশের ঘন কালো মেঘের মধ্যবর্তী বিভিন্ন শীতল উপাদান যেমন বৃষ্টি, তুষার বা বরফকণা ভূপৃষ্ঠের উষ্ণ তাপমাত্রার সাথে একটি বৈপরীত্য তৈরী করে। এই সময় মেঘের নিম্নতল এ নেতিবাচক শক্তির জন্ম হয়। একই সময় পৃথিবীর উপরিতলের চাষের জমি, মাটির গায়ে ইতিবাচক শক্তি গড়ে ওঠে। উভয়ের তাপমাত্রার ভারসাম্যহীনতা থেকে গড়ে ওঠে বিদ্যুৎ। মেঘের ভিতর হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে পারিপার্শ্বিক বাতাস গরম হয়ে সূর্য অপেক্ষা পাঁচগুণ উত্তপ্ত হয়ে যায়। তার ফলে মেঘের ভিতর কম্পন সৃষ্টি হয়। তারফলেই জন্ম হয় বজ্রপাতের।

এই গল্পে সমাজের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক মতবাদের বৈপরীত্য তৈরী করেছে। কিন্তু পরলোক এসকল কিছুর ধার ধারে না। সেখানে কোনো ব্যবধান নেই। তাই মাটির পৃথিবী থেকে আকাশে গিয়েই তারা ভালোবাসার আলো জ্বালাতে পেরেছে।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top