অণুগল্প ।। রুখসানা কাজল

নাঙ্গেলি

এটা কি ড্রেস রে রুরু ?
দেওয়াল আয়নায় ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখছিল রু। বিমুগ্ধ নার্সিসিজম ওর চোখে মুখে। কখন যে রাহি এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারেনি মোটেও। একটু চমকে ওঠে ঘুমঘুম আচ্ছন্নতায় উত্তর দেয়, নাঙ্গেলি ! অসাম তাই না মা?
বেবি ব্লু রঙের লং গাউন। গাউনের শেষে চিকন রূপালী লেস। মাছের লেজের মত গাউনের পেছন ছড়িয়ে পড়েছে সাদা ফ্লোরে। গাউনের বাম দিকের হাতা আছে, ডান দিকেরটা নেই। ডান বগলের নীচ দিয়ে ডিপ কাট্‌ গলা উঠে গেছে বাম কাঁধের উপর। সবুজ নিমের মত অগভীর ক্লিভেজ নিষ্পাপ নেমে গেছে রুরুর বুকের ভেতর। জ্বলজ্বল করছে সদ্য তরুণ দুটি বুক। চোখ ফেরাতে পারে না রাহি।
আয়নায় নিজেকে আবার দেখে রু, ওয়াও! প্রিটি নাইস ড্রেস! কিছু ত বল মা!
লম্বা শ্যামলা মেয়েটাকে পরির মত লাগছে। কিন্তু এই ড্রেসের নাম নাঙ্গেলি! কেন!
ফ্যাশন ডিজাইনের থার্ড সেমিস্টারের ছাত্রী রুরু। পড়াশুনায় তুখোড়। বাবা মার মত ডাক্তার হবে বলে প্রথমে ডাক্তারিতেই ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ছ মাসের মাথায় ডাক্তারিকে গুড বাই জানিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে ফ্যাশন ডিজাইনে।
এখানেও ভাল রেজাল্ট করছে। দুবারের শো স্টপার। র‍্যাম্পে পারফর্ম করতে দেশ বিদেশের প্রচুর অফার আসে। এই উনিশেই রুরু ইসলামের হট প্রোফাইল হাই ইমেজ পার্সোনলাটি। বেছে বেছে শো নেয়। টার্গেট প্যারিস। স্বপ্নের ভেতরেও প্যারিসের র‍্যাম্পে পার্ফম করে ও। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি রুরুর একটাই দুঃখ, ইসসস মা, ওমা, যদি পাঁচ ফুট আট হতে পারতাম! মিনিমাম এইট ইঞ্চ! ওয়াও্‌ আই উড বি দ্য নেক্সট ফ্যাশন আইকন অফ দ্য ওয়ার্ল্ড!
চা বানিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় রাহি। খুব বই পড়ার নেশা ছিল মেয়ের। প্রতিটা ছুটির দিন বাবা মাকে নিয়ে বই কিনতে যেত। কত রকমের বই। ওদের তো ভয় ছিল এত গল্পের বই পড়ে প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় খারাপ না করে বসে!
ইচ্ছে ছিল মেয়ে তাদের মতই ডাক্তার হোক। বোর্ডের পরীক্ষাগুলোয় অভূতপূর্ব রেজাল্ট করে রুরু চমকে দিয়েছিল ইশকুল এন্ড কলেজসহ সবাইকে। ওদের স্বপ্নটা তাই আরো মজবুত হয়েছিল। অই সময়েই কেমন গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে থাকে মেয়ে। অবশ্য বুদ্ধিতে, কথায়, চলাফেরায় আত্মসম্মানে তুখোড় ছিল তাদের বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন মেয়ে।
দুজনেই সার্জন। মেয়ে যাতে ডাক্তারি পড়তে ভয় না পায় সে কারণে প্রতিটি অপারেশনের বিষয় মেয়ের সামনেই আলোচনা করত ওরা । রুরুও অংশ নিত কোন কোন আলোচনায়। সেই মেয়ে ডাক্তারি ছেড়ে ফ্যাশন ডিজাইন বেছে নেওয়ায় ধাক্কা খেলেও ওরা বাঁধা দেয়নি। এখন রুরুর গল্পগুলোই ওরা শোনে। শুনে শুনে প্যারিস, লন্ডন, দিল্লির অনেক ডিজাইনার আর মডেলকে তারা ঘরের মানুষের মতই জানে।
কিন্তু ফ্যাশন ডিজাইনের সাথে নাঙ্গেলি কি করে মেলে? নাঙ্গেলি ত কেরালার এক গরীব ছোটজাতের গৃহবধু। রাজার আদেশ ছিল, গরীব নীচুজাতের মেয়েরা বুক ঢাকতে পারবে না। ঢাকতে চাইলে ট্যাক্স দিতে হবে।
রাহি বারবার মেলাতে চেষ্টা করে, একটা আলট্রা মডার্ন সুপার এট্রাক্টিভ ড্রেসের নাম কি করে নাঙ্গেলি হওয়া সম্ভব?
লম্বা হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে রুরু, কি ভাবছ মা?
রাহি চমকে ওঠে না। তার মেয়ে এরকমই। বারমুডা আর গেঞ্জিতে ছিপছিপে কিশোরীর মত লাগছে এখন। মায়ের হাত থেকে কাপ নিয়ে দুচুমুক খেয়ে চোখ পাকায়, আবার চিনি খাচ্ছ মা! দাঁড়াও পাপাকে রিপোর্ট করছি।
তারপর রাহির দু হাঁটু জড়িয়ে ধরে, জানো মা এবারের অনুষ্ঠানটা হচ্ছে ব্রেস্ট ক্যান্সারের উপর। একটা শর্ট ডিসকাশনও আছে। তোমার মনে আছে মা নাঙ্গেলির কথা ? সেই যে কেরালার ট্রাভাংক রাজ্যে মুলাক্কাবম বা ব্রেস্ট ট্যাক্স দিতে নাঙ্গেলি নামের মেয়েটি নিজের ব্রেস্ট কেটে দিয়েছিল রাজাকে!
রাহি অবাক হয়ে মেয়েকে দেখে। ফ্যাশন জগতে থেকে মেয়ে ভুলে যায়নি ওর পাঠক জীবনকে। কেমন আত্মবিশ্বাসে বলে চলেছে, আমি ডিসিশন নিয়েছি অইদিন নাঙ্গেলির কথা বলব। নারীর শরীর ত রাজনৈতিক ক্ষমতার শিকার হতে পারে না। নারীই তার শরীরের মালিক তাই না মা? তারাই ঠিক করবে তাদের এই দেহ, মন নিয়ে তারা কি করবে না করব। আর সে জন্যে নারীদের আর্জেন্টলি জানতে হবে কি করে এই শরীরকে সুস্থ রাখা যায় সে সম্পর্কে। হাউ এবাউট দ্যাট মাম?
রাহির হাতের কাপে চে গুভ্যেরার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রাস্তার আলোতে ।

কুকুরের লেজ

ট্রিং ট্রিং !
মেসেজ এসেছে। মুরাদ। শামিমার বাল্যবন্ধু। একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। ভয়াবহ নারীলিপ্সু। কিন্তু বউয়ের দাপটে বেশি দূর আগাতে পারে না। বউ সরকারি কর্মকর্তা। প্রায় সময় বিভিন্ন হোটেল, রেস্ট হাউস, ঢাকার কাছাকাছির বাগানবাড়ি থেকে হাতেনাতে ধরে নিয়ে আসে। রাহানের সাথে ওর সঙ্গিনীও বেধড়ক মার খায় জুতা স্যান্ডেলের। বউয়ের ভয়ে অনেকেই ওর সঙ্গী হতে আপত্তি জানিয়ে চলে যাচ্ছিল অন্যের সাথে।
মাঝেমাঝে তীব্র অসন্তোষ নিয়ে পুরুষ বাল্যবন্ধুদের কাছে ভেঙ্গে পড়ে রাহান। আর বাল্য কালের মেয়ে বন্ধুদের সাথে বেফাঁস কথাবার্তা বলে ধাওয়া খায়।
–কেমন আছ ?
শামিমা সময় দেখে। রাত এগারোটা চল্লিশ মিনিট। এ সময় এরকম আলুনি প্রশ্ন করার বন্ধু রাহান নয়! অনেকদিন রাহানের খোঁজ খবর জানে না। শেষবার ওর বউ জানিয়েছিল হজ্জ্বে যাওয়ার কথা আছে। বন্ধুরা সোৎসাহে উৎসাহ দিয়েছিল, দেখো ভাবি হজ্জ্বে গিয়ে ওর মন পাল্টাতেও পারে।
রাহানের বউ গলায় বিষ ঢেলে বলেছিল, সেই চেষ্টাই করছি। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে। কি আর বলব আপনাদের, মেয়ের বান্ধবীকে নিয়েও ঘুরে এসেছে আশুলিয়া। সেই বান্ধবী মেয়েকে বলেছে, তোর পাপা ভেরি হট এন্ড দিলদরিয়া। মেয়ে ক্ষেপে গেছে। দেখি আল্লাহর ইচ্ছায় যদি কুত্তার স্বভাব বদল হয়। আশা তেমন করি না। ডিভোর্সও দেবো না। থাকুক গলায় কাঁটা নিয়ে।
সামান্য একটু শয়তানি করতে ইচ্ছা করে শামিমার। হজ্জ্বের পর সত্যি সত্যি রাহানের স্বভাব বদলেছে কিনা সেটা পরখ করতে ও বলে, আহারে আমার জন্যে কত ভাবনা আমার বাল্যবন্ধুর! ভাল আছি রে দোস্ত। তুই? তোরা?
প্রশ্নটি করেই শামিমা বুঝল এবার মরেছি। ছিপি খুলে সাত কাহন শুরু করার চান্স পেয়ে গেল রাহান। এখন বউ থেকে বিছানা কিচ্ছু বাদ যাবে না।
তুমি তো আমার খোঁজ রাখো না। কেমন আছি কখনো জানতেও চাও না! দাড়ি রেখেছি বুঝলে। সবাই হ্যান্ডসাম বলছে। সুফি কবিদের মত লাগছে নাকি। রাহানের গলায় শিশুকালের ন্যাকামি।
ন্যাকা! নেকুমি শুরু করবে বুঝেই শামিমা আগে ভাগেই বলে দেয়, শরীর ভাল নেই রে। ছেলেমেয়ে নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। কারও খোঁজখবর নিতে পারছি না।
এবার স্বাভাবিক আন্তরিক গলায় জানতে চায় রাহান, কি হয়েছে তোর? ভাল ডাক্তার দেখাচ্ছিস ত? তোর কর্তা কোন নেগ্লেক্ট করলে জানাবি। মাথা ভেঙ্গে দিয়ে আসবো শালার।
শামিমা আঁতকে ওঠে, আরে কি বলিস কি তুই! চিন্তা করিস না। রেস্ট করতে বলেছে। তাই নিচ্ছি। তা তোর ছেলেমেয়ে কেমন আছে? মেয়ে ফিরেছে ইউএস থেকে?
নাহ! ফিরবে বলে মনে হয় না। বুঝলি শাম্মু, ভেবেছিলাম মেয়ে বড় হলে আমাকে বুঝবে। আমার ভাগ্যটাই খারাপ। মেয়েও ওর মার মত। আমার অসীম ক্ষুধা তৃষ্ণা। তার ত যোগান চাই। জীবন ভর সংসারে তেজপাতা হয়ে থাকলাম। তা তুমি কি কর এত রাতে?
শামিমা জানায়, এক বন্ধুর লেখা পড়ছিলাম।
ভাল ভাল। তোমার ভাবি ত খালি ঘুমায়। পাশে যে একটি পুরুষ মানুষ জেগে আছে তা যদি বুঝত মহিলা। নিজে পারে না। আবার অন্যকেও খেতে দেবে না।
রাহানের হঠাৎ তুমি বলা শুনেই শামিমা বোঝে এবার নীল গলিতে ঢুকতে চাইছে শয়তানটা। ও বকা দেয়, তুই ঘুমাস না ক্যান।
দোস্তো ঘুম যে আসে না। খালি তোমার কথা মনে পড়ে ময়না। তোমার জন্যে কেন যে এত মন পোড়ে তুমি কি তা জানো সোনা?
কেস ওয়ান, জাপানি তেল বেশি নিয়ে ফেলেছে রাহান, তুই মনে হয় চৌকিদার বংশের লোক। এক কাজ কর হাফ প্যান্ট পইরা বাঁশি হাতে নাইমা পড়। পাড়ার চোর পালাক।
গভীর দুঃখ নিয়ে রাহান বলে, পাড়ার চোর পালালে কি শরীরের চোর পালায় ডার্লিং? আমার ঘুম তো তোমার কাছে। এই এই শাম্মু, একটি সত্যি কথা বলবে মনা? তোমার পেটে কি দাগ আছে? মানে প্রেগন্যান্সি স্টার্চ মার্ক?
একেবারে মধ্য প্রদেশ থেকে শুরু করেছে। এরপর নিচে নামতে শুরু করবে রাহান! কেস টু, এতক্ষণে জাপানি তেল কাজ করতে শুরু করেছে। আস্ত শুয়োরের বাচ্চা। সাহস নেই সানি লিওনদের দেখার। বউয়ের ভয়ে মেয়েও তুলতে পারছে না। হজ্জ্ব করে কি নিজের স্বভাব বদলানো যায়! তাই মেয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলে সস্তায় গরম হতে চাইছে।
শামিমা এবার কড়া গলায় ধমক দেয়, তোর না সোসিওলোজি ছিল? একটু পড়াশুনা ত করতে পারিস! আর এগুলো যদি ভালই বাসিস তো বাৎস্যায়নের কামসূত্র পড়ে দেখ। শোন রাহান রাখছিরে। জরুরি ফোন এসেছে। বাই বাই ভাল থাকিস।
মেসেঞ্জার থেকে বেরিয়ে এসে হাসে শামিমা। রাহানের সাথে এই করে ওরা বন্ধুরা। না করে উপায় নেই। কতবার ওরা বুঝিয়েছে, সব অনুরোধ উপদেশ বৃথা করে রাহান যে লাউ, সেই কদু। আদতে এটা ত স্বভাব নয়। এক ধরণের অসুখ। রাহানের বউ ঠিকই বলে, ঘি দিয়ে টানলেও কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না !

মাতালের সাম্য ভাবনা

চম্পা মিশন ইশকুলে আমাদের সাথে পড়ত। আমাদের মতই ঝুঁটি বেঁধে কপালে কালো টিপ পরে আসত। আমরা এক সাথে বসেছি। গল্প করেছি,খেলেছি,পেন্সিল কাড়াকাড়ি করে শাস্তি খেয়ে আড়ি দিয়েছি। আবার মেম মিসের দেওয়া চকোলেট খেয়ে হেসে হেসে যিশুর নামকীর্তন গেয়েছি।
একদিন বড় সিস্টার এসে ক্লাশমিসকে কি যেন বলে গেলো। ক্লাশমিস চম্পাকে নিয়ে বারান্দায় বসিয়ে দিলো। চম্পা বসল আর বারান্দা থেকেই আমাদের সাথে চেঁচিয়ে পড়তে থাকলো, ফর্টিনাইন মানে উনো-প—ন—চা—শ্‌ !
চম্পাকে খেলতে নিলে শামিমা রেগে যেত। তোরাও মেথর মেথর— বলে আমাদের ক্ষেপাতো। তাই নিয়ে প্রায়ই গালাগালি হত। এরপর কয়েকদিন মারামারিও হয়ে গেলো আমাদের মধ্যে। আস্তে আস্তে চম্পা খেলা থেকেও সরে গেলো। তারপর একদিন ইশকুলে আসা বন্ধ করে দিলো ।
চম্পার বাপু দুখিরাম রোজ সন্ধ্যায় মদ খেয়ে চৌরঙ্গিতে নাচে গায় তামাসা করে। লোকেরা ভিড় করে দেখে। হাসে। আরো উসকে দেয়। চম্পার মা টেনে তোলে, ই মরদ ঘরকে চল্‌ না কেনে!
দুখিরাম তখন গান গায়, পৃথিবী আমাকে চায়, আমার বউকে কেউ চায় না।
ভিড় ভারে ভিড়াক্কার। সেই ভিড় থেকে অশ্লীল হাসি ছুটে আসে। মফঃস্বল শহরের বিকেল বিনোদনে ভরপুর হয়ে যায়। মাঝে মাঝে চম্পাও নিতে আসে। দুখিরাম তখন ভয়ে একদম চুপ থাকে। জনতা বিনোদন পায় না বলে ব্যাজার মুখে চলে যায়।
আমরা এখন বড় হয়ে গেছি। চম্পার সাথে দেখা হলে কথা বলি না, খেলি না। চম্পাও কথা বলে না, দেখেও না দেখে চলে যায় নিজের কাজে।
সরকারি ইশকুলে চান্স পেয়ে আমরা দল বেঁধে ইশকুলে যাই। একসাথে চীৎকার করে কবিতা পড়ি, গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান —
চম্পা ইশকুলের বারান্দা, মাঠ, বাথরুম পরিষ্কার করে। জংলিছাপা শাড়ি আর রুপোর গহনায় চম্পাকে নায়িকা নায়িকা লাগে দেখতে। কাজ শেষ হলে বাথরুমের কাছে বড় বড় বালতি,ইয়া লম্বা ডাইনি ঝাড়ুর পাশে মেঝেতে বসে থাকে। আমরা পাশ দিয়ে যাই। ওর চুলের সোনালী ক্লিপ ঝলকে ওঠে। আমাদের ইশকুল ড্রেস পরা টোম্যাটো চেহারার পাশে চম্পাকে অনেক অনেক সুন্দর লাগে। পৃথিবীর সবচে সুন্দর মেয়ের মত। আমাদের কথা হয় না। চম্পাও তাকায় না।
আমরা বড় ক্লাশে উঠতে থাকি। পড়ার চাপে দমবন্ধ। এ কোচিং সে কোচিং। একদিন সিঁথিতে সিঁদুর দেখে বুঝি চম্পার বিয়ে হয়ে গেছে।
সুইপার কলোনির কাছে শামিমাদের বাসা। নাক সিঁটকে ঘেন্না ঘেন্না মুখ করে ও জানায়, জানিস চম্পাও মদ খায়। বলেছিলাম না মেথররা সবাই মদ খায়। ছোটজাত ছোটলোকের দল। ওয়াক থুঃ। ঘেন্না ঘেন্না!
দুই যুগ পরের কথা। পহেলা বৈশাখের এক পার্টি। থ্রো করেছে শামিমার স্বামী আদিলের বস্‌ মোল্লা সাদেকুল্লা। ভদকা মার্টিনির আদরে গলে যাচ্ছে শামিমা। উদ্দাম নাচছে। আসর গমগমাগম। নাতাশা গাইছে,একদিন বাঙ্গালী ছিলাম রে –
আমরা গ্লাস হাতে দুলতে দুলতে তাল দিচ্ছি। লুটিয়ে পড়ছি সোফায়, ডিভানে, আরেকজনের গায়ে। সাদেকুল্লা ধনী। সরকারি আমলা। ক্ষমতার দানাদার। শামিমাকে ছুঁতে চেয়ে ছোঁক ছোঁক করছে। তাই নিয়ে ওপেনলি শয়তানি করছি আমরা।
কেউ একজন সাদেকুল্লার কোলে শামিমাকে বসিয়ে দিতেই হাততালি দিই সবাই। মানিক কপালের উপর গ্লাস রেখে ক্যারিক্যাচার দেখাচ্ছে। আরেক ধনকুবের মানিকের বউ তুলিকার সাথে নাচছে। মানিকের চোখে প্রশ্রয়। উল্টাপাল্টা গাইছে, পৃথিবী আমারে চায় না, শালা আমার বউকে সবাই চায়-
আমি শামিমাকে দেখি শামিমা আমাকে। বেহেশতি তরলে ভাসছি দুজন। হঠাৎ গড়িয়ে পড়ি ইশকুলের বারান্দায়। বড় বড় বালতি আর ডাইনি ঝাড়ুর পাশে থেবড়ে বসে শামিমা আয়না বের করে। ঠোঁট বেন্ট করে সেলফি তুলে বলে, মদের কোন ক্লাশ ফ্লাস নাই বুঝলি! আর অই জাতপাত? সব ওই চুতিয়া শালাগো বানানো!
এই তুই দেখ্‌ তো আমার লুকটা চম্পা চম্পা লাগছে কিনা!

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top