নয়টি তাও ।। তাও তে চিং ।। অনুবাদঃ দুলু সরকার

০১
যে তাও নিয়ে কথা বলা যায়
শাশ্বত তাও সেটি নয়
যে নাম দিয়ে নামকরণ হয়
আসল নাম সেটি নয়

উৎস তো নামহীন আকাশ-পৃথিবীর
নামকরণে উদ্ভব সকল বস্তুরাজির

যারা বাসনামুক্ত
তারাই রহস্যের নিরীক্ষক
যারা বাসনাযুক্ত
তারা প্রকাশ্যের পর্যবেক্ষক

অথচ রহস্য আর প্রকাশ্য –
উভয়ের একই তো উৎস
একত্ব মূলত এক রহস্য

রহস্য কেবল রহস্যের
দুয়ার সকল বিস্ময়ের

০২
কোনোকিছু কেবল তখনই কুৎসিত
লোকে যখন অন্য কিছুকে সুন্দর মনে করে
কোনোকিছু কেবল তখনই খারাপ
লোকে যখন অন্য কিছুকে ভালো মনে করে

অস্তিত্ব আর অনস্তিত্ব পরস্পরকে সৃষ্টি করে
কঠিন আর সহজ করে পরস্পরকে সমর্থন
উচ্চতা আর গভীরতা পরস্পরকে নির্ভর করে
লম্বা আর খাটো করে পরস্পরকে নির্ধারণ
আগে আর পরে পরস্পরকে করে অনুসরণ

তাই গুরু কাজ করেন কিছু না করেই
আর তিনি শিক্ষা দেন কিছু না বলেই
কিছু উত্থিত হলে তিনি তা হতে দেন
কিছু বিলুপ্ত হলে তিনি তা-ও হতে দেন
তাঁর কাছে যা আছে তিনি তা অধিকার করেন না
তিনি কাজ করেন তবে কোনো প্রত্যাশা রাখেন না
যখন তাঁর কাজ শেষ হয় তিনি তা ভুলে যান
তাই চিরকাল টিকে থাকে তাঁর অবদান

০৩
যদি মহামানবদের অতি বড় করা হয়
সাধারণ মানুষ অতি ছোটো হয়ে রয়
যদি করা হয় সম্পদের অতি মূল্যায়ন
চুরি করতে প্রলুব্ধ হয় মানুষের মন

তাই গুরু –
লোকেদের মন মোহমুক্ত ক’রে
তৃপ্ত করেন অন্তর
তাদের আকাঙ্ক্ষা দুর্বল ক’রে
সংকল্প করেন দৃঢ়
তিনি লোকেদের সমস্ত জ্ঞান আর
আসক্তি খোয়াতে সাহায্য করেন
আর যারা নিজেদের জ্ঞানী ভাবে
তাদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন

হে প্রজ্ঞাবান
নিষ্কাম কর্মেই তো থাকে কল্যাণ

০৪
তাও –
সমগ্রতার উৎস
অনন্ত মহাশূন্য
সমগ্রতার ধারক
সম্ভাবনায় পূর্ণ

তাও –
বন্ধন আলগা করে
ভোঁতা করে তীক্ষ্ণতা
সব ধূলিতে মেশায়
ম্লান করে উজ্জ্বলতা

তাও –
মহাজগতের মহারহস্য
কেউ জানে না তার উৎস

তাও কারো পক্ষ নেয় না
তাও করে ভালো আর মন্দ উভয়েরই জন্মদান
গুরুও কোনো পক্ষ নেন না
তিনি সাধু আর পাপীদের সমভাবে স্বাগত জানান

আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে যে শূন্যতা
তা কি নয় হাপড়ের মতো
ফাঁপা অথচ কখনো হয় না নিঃশেষ
যা কিনা সৃষ্টিশীল প্রতিনিয়ত

অতিরিক্ত আরোপণ আনে শুধু ব্যর্থতা
যা হবার তা হবেই, সার করো নীরবতা

০৬
তাও সেই মহামাতা –
করে সমগ্রতার জন্মদান
তাও এই মহানদী
যার স্রোতধারা অফুরান

০৭
তাও অসীম, তাও অমর
কারণ তাও নয় স্বার্থপর

গুরু থাকেন পশ্চাতে
তাই তিনি অগ্রবর্তী সবার
তিনি নিস্পৃহ সবকিছুর প্রতি
তাই সবকিছুতেই তাঁর অধিকার
তিনি সকল বাসনা থেকে মুক্ত
তাই কোনোকিছুর অভাব নেই তাঁর

০৮
‘সবচেয়ে ভালো’ তো জলের মতো
যা হিত করে সবার হয়ে নিঃস্বার্থ
নিম্নগামিতা লোকেদের অপছন্দ
অথচ জল নিম্নভূমিতেই স্বচ্ছন্দ

তাও জলের সমধর্মী

ভূমির নিকটে বাস করো
সদা সবিনয়ে বলো সত্য কথা
সদয়চিত্তে দান করো
সম্পর্কে থাকে যেন প্রগাঢ়তা
আধিপত্য ছাড়া করো শাসন
সময়মতো করো পদক্ষেপণ

জলের মতো হও
কারো সাথে প্রতিযোগিতা ক’রো না
নয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাও
জগতে কেউ তোমার নিন্দা করবে না

০৯
পাত্রে জল বেশি ভরা হলে
উপচে পড়ে যায়
তলোয়ারে ধার বেশি দিলে
ভোঁতা হয়ে যায়

সোনা-দানা বেশি হয়ে গেলে
তা কি আর রক্ষা করা যায়
ধন ও পদমর্যাদা আনে ঔদ্ধত্য
আর ঔদ্ধত্য আনে বিপর্যয়

নিষ্কাম হয়ে কর্তব্য পালন করো
প্রশান্তি লাভের এই তরিকা ধরো

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top