সাধুভাষার কবিতারা // তৈমুর খান

রাজবসন্ত

বাঁচিবার ইচ্ছাগুলি কি আর বাঁচিয়া আছে?
মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শুনিতে শুনিতে তাহারা
স্তব্ধ হইয়া পড়িয়াছে।
এখন কসাইখানায় কত আলো জ্বলিতেছে।
ধর্ম আসিয়া সাম্রাজ্য বিস্তার করিতেছে।
মনুষ্যত্ব তাহাদের হাতেই জবাই হইবে ।

আমি কীরূপে নিজেকে গোপন করিব?
কথা কহিতে গিয়া কথা হারাইলাম।
রাস্তা খুঁজিতে গিয়া রাস্তা হারাইলাম ।
সম্মুখে গর্জন আসিয়া চোখ রাঙাইল।
তাণ্ডব বহুমুখী সর্বনাশের ক্রিয়া জন্মাইল।

খবর হইল ধর্মের ষাঁড়ও আসিয়াছে।
কী তাহার কেরামতি ! কী তাহার আস্ফালন!
পৃথিবী ধর্মশালা হইয়া উঠিবে।

রাজপুরুষরা ফুল ছড়াইয়া, পতাকা নাড়াইয়া
দলে দলে জয়ধ্বনি তুলিতেছে।
রাজকন্যারা উলুধ্বনি দিয়া শঙ্খ বাজাইতেছে।

দেখিলাম, হাততালির ফোয়ারায় আজ রাজবসন্ত।
দেবীরা নাচিতেছে। দেবীরা গাহিতেছে।
সভ্যতার মঞ্চ ভরিয়া মাজা দুলিতেছে।

আমি এই বসন্তের কেহ হইলাম না।
আমি এই ধর্মের কেহ হইলাম না।
দূরে একাকী দাঁড়াইয়া রহিলাম।

তবে কেন আমি বরাহ হইলাম না?
তবে কেন আমি ভল্লুক হইলাম না?
তবে কেন আমি মনুষ্য হইতে চাহিলাম?

আকুতি

ধর্ম লইয়া কী করিব?

যে ধর্ম মানুষ করিতে পারিল না
প্রেম শিখাইল না
খুন করিবার উৎসাহ প্রদান করিল
সেই ধর্মে আমার কী কাজ?

স্বর্গ চাহিলাম না, অমৃত চাহিলাম না
মানুষের দুঃখের পাশে দাঁড়াইয়া
অশ্রু মুছাইতে চাহিলাম

এত রক্তপাত, এত নিষ্ঠুরতা
এত অন্ধকার!
পথ রুদ্ধ হইয়া আসিল

হায়! হায়! কবে আলো ফুটিবে?
ভোরের অপেক্ষা করিতেছি
আমাকে মানুষ হইতে দাও
আমি ধার্মিক নয়, মানুষ হইব।

আমার কামনা জাগিয়া উঠিতেছে

আমার মাথার দোষ হইল
সারাদিন পাথরের কাছে বসিয়া আছি
সারাদিন গাছের সাথে কথা কহিতেছি
সারাদিন নদীকে নারী ভাবিয়া তার জলকে আদর করিতেছি

আমারও কামনা জাগিয়া উঠিতেছে
মহাশূন্যে ঘর বাঁধিব
উড়িয়া উড়িয়া ঘুরিব
চাঁদ-সুরুজের আলো লইয়া ঘর সাজাইব

বাতাসকে বলিতেছি কেমন হইবে?
গাছগাছালি শাখাপ্রশাখা নাড়াইয়া সম্মতি জানাইতেছে
নদীও ঢেউ তুলিয়া দুলিতে দুলিতে বলিতেছে:
ভালো হইবে!

আমার মাথার দোষ সেকথা বুঝিলাম না
কাহার অদৃশ্য হাতে কাতুকুতু খাইয়া
হিঃ হিঃ হিঃ হাসিয়া ফেলিলাম…

 আরোগ্য

সারারাত্রি লন্ঠন জ্বালাইয়া বাঁশঝাড়ে বসিয়া আছি
আমার কী অসুখ করিয়াছে?
নিজেও কিছুই বুঝিতে পারি না।

বর্ষার মেঘ গম্ভীর হইতেছে
বজ্রবিদ্যুৎ এর ধমকানি আসিতেছে
আজও আমাকে কেহ ডাকিল না!

মা চলিয়া গেলে

এই শূন্য বাতাসে আমার সম্মোহন জাগিয়া উঠিল
রাত্রির স্তন পান করিয়া আরোগ্য খুঁজিতেছি

এত উদাসীনতার মাঝেও দেখি
দু-একটা জোনাক জ্বলিতেছে
দু-একটা নক্ষত্র ফুটিতেছে
অন্ধকারে ফেরেশতারা আসিয়া
আমার চারিপাশ ঘিরিয়া আছে।

 কথার দোকান

সব কাঁচা কাঁচা কথায় ঝুড়ি ভর্তি হইতেছে
ঝুড়িগুলি বাজারে আসিতেছে
দোকানদার খদ্দরের পাঞ্জাবি পরিয়া
তাহার মালের গুণাগুণ বুঝাইতেছে।

এক একবার উঁকি মারিয়া দেখিতেছি
কাঁচাকথা বড় পাকা হইয়া উঠিতেছে।

আমার হতাশ বাড়িতেছে
একটা কথাও কিনিতে পারিলাম না।
পুরাতুন দোকানগুলিতে তেমন খরিদ্দার নাই
সেই সুযোগে বসিতেছি। উঠিতেছি।

চারিদিকে ধোঁয়া আর হট্টগোল উঠিতেছে
কে কী বলিতেছে, কে কাকে ডাকিতেছে
কিছুই বুঝিবার যো নাই।

এই শহর নাকি কথার পীঠস্থান শুনিয়াছি
আসিয়া বিশ্বাস হইল না
যাহারা বাজার বসাইয়া রাখিয়াছে
তাহারা কিছু দালালও পুষিয়াছে।
তাহাদের তোষামোদ না করিলে
খালি হাতে ফিরতে হইবে

কাঁচাকথারাই বড় কথা হইয়া যাইবে।

আমি ফুল কুড়াইলাম না

ঝড়ে এত ফুল ঝরিল
আমি ফুল কুড়াইলাম না।
একটা পাখির ডাক শুনিয়া
সারাদিন উদাসীন রহিলাম।

আমার বিনম্র কোলাহল করিবার ইচ্ছাগুলি
বাহির হইতে চাহিল
আমি নিষেধ করিলাম না।
আমার মন কাঁদিতে চাহিল
আমি আদেশ দিলাম না।
আমার অবসন্ন স্বপ্নগুলি
রাত্রির দিকে হাঁটিয়া চলিয়া গেল
আমি জোর করিয়া থামাইলাম না।

পৃথিবীর ফুলগুলি ঈশ্বরকে পাইবার জন্য
সকলেই আত্মবিসর্জন করিয়াছে
আমি আত্মবিসর্জন করিলাম না।
একাকী এক করুণ পাহাড়ে দাঁড়াইয়া রহিলাম চির নিরুত্তর…

মহামূর্খ 

নিজেকে মহামূর্খ ভাবিলাম
কোনও আন্দোলনেই সামিল হইলাম না
কোনও দলেই নাম লেখাইলাম না
অন্ধকারেই রহিয়া গেলাম
আমার ব্যক্তিত্ব ফুটিল না

পৃথিবীতে কত হাওয়া উঠিল
কত ধার্মিক হাওয়ায় ভাসিল
কত বিজ্ঞানী হাওয়ায় উড়িল
আমি মাটির ঘরে চাটাই পাতিয়া
মায়ের একখানা তেলচিটা বালিশে ঘুমাইলাম

ঈশ্বর লইয়া ভাবিলাম না
দেশ লইয়া ভাবিলাম না
মানুষের কথা কী করিয়া বলিতে হয়
জানিলাম না

আমার ঘরে বৃষ্টি পড়িল
বিদ্যুৎ চমকাইল
রাজনীতির লোকেরা আসিয়া হম্বিতম্বি করিল
আমি কিছুই বলিলাম না

একাকী নদীতীরে আসিয়া নদীকে ডাকিলাম
মৃত মাকে ডাকিলাম
নতুন চপ্পল জোড়া খুলিয়া রাখিয়া
বাবাকে চেঁচাইয়া বলিলাম:
দ্যাখো, আমার কত উন্নতি হইয়াছে!

ভ্রমর সমীপে 

পথ ভুল করিয়াছি ভ্রমর
তোমার দরজায় আসিয়াছি
এখন আমার কী বিধান হইবে?

জীবন এত শূন্য মনে হইয়াছিল
তাহা পূর্ণ করিবার অভিলাষ জাগিয়াছিল
তোমাকেই তখন কাঙ্ক্ষিত মনে হইয়াছিল

রসের কলসি উল্টাইয়া গেলে
যেমন খালি পাত্র লইয়া থাকিতে হয়
আমারও সেই দশা হইয়াছে
এখন রসের পাত্রে নীরস ভরিতেছি

সমস্ত ৠতু একে একে চলিয়া গেল
আমি জীবন সেঁকিতে লাগিলাম
জীবন রুটির মতো ফুলিতে লাগিল

ভ্রমর, আমাকে ভাসাইয়া দাও
আমি যুগস্রোতে ভাসিয়া যাইব…

ভল্লুক 

ভল্লুকের খেলা দেখিতেছি
আর ভাবিতেছি, আমাদের দেশে এত ভল্লুক কীভাবে জন্মাইল?

ভল্লুকের পিঠে চড়িতে চাহি নাই
ভল্লুকের সঙ্গে বন্ধুত্বও করিতে চাহি নাই
শুধু ভাবিতেছি, রাত্রির অন্ধকারে আমাদের দরজাবিহীন ঘরে
যদি ভল্লুকেরা ঢুকিয়া পড়ে!

তাহাদের বিশাল হা মুখে এক একটা পৃথিবী
অনায়াসে প্রবেশ করিতে পারিবে।
আমাদের বাজার দোকান হাট
সুন্দরী কন্যারাও তাহাদের পেঠে চলিয়া যাইতে পারে।

ভল্লুকের খেলা দেখিতে দেখিতে সাম্রাজ্যবাদের
হাততালিরও শব্দ পাইতেছি —
ওহে ঈশ্বর, এই যুগ কি ভল্লুকের যুগ হইল?

উহারা থাবা তুলিয়া নাচ দেখাইতেছে
আলিঙ্গন করিতে করিতে, আদর করিতে করিতে
কখন হৃৎপিণ্ড ছিদ্র করিয়া দিয়া যাইবে

ওহে ঈশ্বর, ভল্লুকে ভল্লুকে দেশ ভরিয়া যাইতেছে!

সিংহ 

সিংহাসন হইতে সিংহ নামিয়া আসিতেছে
আমরা দেখিতেছি, অরণ্যময় কী দারুণ সংকট

সকলেই বাঁচিবার জন্য পলায়ন করিতেছে
কিন্তু আশ্চর্য, কেহ বাঁচিবে না।
সকলেই এখন লোকালয় খুঁজিতেছে
কিন্তু কোথাও নিরাপদ লোকালয় নাই।
সকলেই নিশ্ছিদ্র অরণ্য খুঁজিতেছে
কিন্তু সর্বত্রই আলোকময় সভ্যতা গর্জন করিতেছে।

মায়ের নিকানো উঠানটুকুতেই উন্মুখ হইয়া চাহিয়া আছি
বাবা চলিয়া গেলে এখনও তাহার পদশব্দ শুনিতেছি

রাত্রি নামিবার আগে কী এক বিষণ্ণ নামিতেছে

সিংহ আমার কাছে আসিলে কী বলিব?
সিংহ বিনয় বোঝে না, সৌজন্য বোঝে না
সিংহ পড়াশোনা করিয়া মানুষ হইতে চাহে না!

আক্রোশ 

আক্রোশের মেঘলা সীমানায় দাঁড়াইয়া আছি
বৃষ্টির বিলম্ব হইবে না

আমরা ভিজিব
ক্রোধের বজ্রে পুড়িব
আমাদের পলায়ন করিবার পথ নাই

অপরাহ্ন গড়াইয়া যাইতেছে
শহরের হ্রদে পুঁটিমাছগুলি লাফাইতেছে
প্রেমের আলোর মহিমা কিছুই বুঝিতে পারিলাম না

কেহ কেহ দীক্ষা লইবার জন্য গুরু খুঁজিতেছে
কেহ কেহ সস্তায় মোক্ষ কিনিতেছে
আমরা হরিতকি বনের লাল ঠোঁট পাখির দিকে চাহিয়া আছি

বিপন্ন কাছাকাছি আসিতেছে বুঝিয়া
আধখাওয়া দু একটা পাকা ফলের ঘ্রাণ শুঁকিয়া লইতেছি

আহা শূন্যতায়ও সুন্দর মিশিয়া আছে

আক্রোশ গান শুনিবে না, সৌন্দর্য সহ্য করিবে না
চোখরাঙানির পর বৃষ্টি নামাইবে…..

 ভালবাসা মেরামত

ভালবাসা মেরামত করিতেছি
কিন্তু কিছুতেই মেরামত হইতেছে না
ভালবাসার কলোনিতে একটা সাইকেল ঢুকিয়া যাইতেছে
সাইকেলটি কিছুতেই দৌড়াইতে পারিতেছে না
হৃদয় আর কত রাত জাগিয়া বসিয়া থাকিবে?
এইবার সে ঘুমাইতে চাহে

বাগানে রক্তজবা ফুটিয়াছে
কেহ কেহ শ্রীরামকৃষ্ণ হইয়া গেল
আমি ফুল তুলিলাম না
দীক্ষা লইলাম না
হাসিকান্নার পাঠ চুকাইয়া আজও ভালবাসা মেরামত করিতে লাগিলাম

একজন রমণী আলোর সেঁক পাইয়া নারী হইল
বয়ঃসন্ধির সাঁকো পার হইয়া মহুল কুড়াইতে গেল
দিঘিতে কলস ভাসাইল
আমি গ্রাম্য আটচালার ভাঙা হাটে
আজও ভালবাসা মেরামত করিতেছি…

 আমাদের কষ্টগুলি জিরাফ হইয়া যাইতেছে

আমাদের কষ্টগুলি জিরাফ হইয়া যাইতেছে
আকাশের উচ্চতায় মুখ তুলিয়া দাঁড়াইয়া কাহাকে দেখিতে চায়?
কোথাও ঈশ্বর নাই
সমস্ত আকাশ জুড়িয়া শুধু বিষাদময়ী মেঘ ভাসিতেছে
মাঝে মাঝে গর্জন করিয়া উঠিতেছে
সেকী বজ্রগর্ভ গর্জন!

বৃষ্টি ঝরিবার আগে আমাদের অশ্রু ঝরিতেছে
দাঁড়াইয়া থাকিবার মুহূর্তগুলি অশ্রুলিপ্ত হইয়া যাইতেছে

আমাদের জগৎ শূন্য
আমাদের প্রার্থনা অসহায়
আমাদের ঈশ্বর বড় বিস্ময়কর

আত্মবাচক কথা বলিতে বলিতে আমরা কাহার রমণগন্ধ পাইতেছি?
অন্ধকার আসিয়া আমাদের গলা ধরিয়া দুলিতেছে…

সংশয় নির্বাহ

খুব গর্জন হইতে লাগিল
আমরা গর্জন ভালবাসিলাম না।
আলোর তীক্ষ্ণ তেজ আমাদের অন্ধ করিয়া দিতে চাহিল
আমরা চোখ বন্ধ রাখিলাম।
বিবেকানন্দের দেশে আমাদের তৃষ্ণা পাইল
সব নদীর জলে রক্তের মিশ্রণ ঘটিয়াছে বলিয়া
আমরা জল পানও করিলাম না।
এখানে রাস্তার দুপাশে মানবিকবোধের দোকান বসিয়াছে
এক-আধ্ ছটাক কিনিব ভাবিতেছি।
দেখিলাম বহুবর্ণ পতাকা উড়িতেছে দোকানে দোকানে
কেহ কেহ বলিতেছে: মানবিকবোধ কিনিতে হইলে রং চিনতে হইবে।
কোন্ রঙের কী কেরামতি আমরা বুঝিতে পারিলাম না
রাস্তা রাস্তা বাতাস খাইয়া জীবন কাটাইতে লাগিলাম
এ যুগের দূষিত বাতাস….

যুদ্ধের জন্য

স্বপ্নগুলি কোথায় চলিয়া যাইতেছে?
ধরিব বলিয়া চুপ করিয়া আছি,
একটাও ধরিতে পারি নাই।
অন্ধকারে রাত্রি জাগিতেছি
মনে মনে ফুল ফুটাইতেছি
কল্পনার লালডানা নীলডানা পরিদের নামাইতেছি
তাহারা অলৌকিক নূপুর পরিয়া ঘুরিতেছে…

তবু দেশটা মরার মাথার খুলি হইয়া ভয় দেখাইতেছে
হাঃ হাঃ হাসিতেছে
নরমুণ্ড গড়াইয়া দিতেছে
আর্তনাদকে ডাকিয়া প্রেমের শয্যায় বসাইতেছে
চাঁদের মতন মুখ ভাসাইয়া দিতেছে
এই ফাঁকে স্বপ্নগুলি পলায়ন করিতেছে
কল্পনারা নিরর্থক খণ্ড খণ্ড হইয়া ভাঙিয়া পড়িতেছে ধূলায়

তবু আমরা যুদ্ধ করিবার কৌশল আয়ত্ত করিতেছি
অন্ধকারকে ফুঁ দিয়া উড়াইবার সামর্থ্য অর্জন করিতেছি

শব্দে শব্দে তরবারি বানাইতেছি….

 আমার রামজন্ম

রসুলপুর আসিয়াছি
আকাশ মেঘে মুখ ঢাকিয়াছে

নবনীতাকে আমি কোনোদিন দেখি নাই
উহার নাম শুনিয়াছি
এখানে যাহাকেই দেখিতেছি
নবনীতা বলিয়া বোধ হইতেছে
চেঁচাইয়া ডাকিবার ইচ্ছা জাগিতেছে

আমি কী উদ্দেশ্যে এখানে আসিয়াছি
তাহা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হইয়াছি
এখন বৃষ্টি হইলে জলকপোতের মতো ভিজিতে হইবে
ওপারে কি চাঁদিয়ালের মাঠ?
ঝুড়ি ঝুড়ি আলো নামিতেছে
দু’একটি চাঁদিয়াল উড়িতেছে

আমি রসুলপুর কেন আসিয়াছি
নবনীতা কে হয় আমার
এখন কোথায় যাইব
কিছুই ভাবিতে পারিতেছি না

কেবল মনে হইতেছে আমার সীতাকে রাবণ হরণ করিয়া লইয়াছে

ব্রাত্য

আমি কাহারও পছন্দের পাত্র হইলাম না
আমি স্রোতে ভাসিয়া আসিয়া
কিনারায় লাগিয়াছি
আমাকে কেহ অনুগ্রহ করিল না

কোনো কোনো ধনীর ভিতর কাঙাল বসবাস করে
কোনো কোনো কাঙালের ভিতর ধনীকেও থাকিতে দেখিয়াছি
সকলে একে একে পার হইয়া চলিয়া গেল
কেহই তেমন উৎসাহ দেখাইল না

আমি দুঃখের সমুদ্রে পড়িয়া আপন মনে কাঁদিলাম
কিন্তু কাহাকেও শুনাইলাম না
একটা প্রবল ঝড় আসিয়া
আমাকে পুনরায় যুগস্রোতে ঠেলিয়া দিল
আমি হাত-পা আছড়াইতে আছড়াইতে চলিতে লাগিলাম

কেহ আমাকে চিনিল না
কেহ আমাকে থামাইল না

সবারই বড়ো তাড়া রহিয়াছে
গৃহে উৎসব
বহু লোকজন আসিয়াছে
দ্রুত যাইতে হইবে
আমার দিকে চাহিবার কারও সময় হইল না

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top