অশোক বাজপেয়ির কয়েকটি কবিতা ।। হিন্দি থেকে অনুবাদঃ অজিত দাশ


রূপক
::
তুমিই আমার রূপক
সেই শব্দ
যে শব্দ আমাকে মুক্ত করে
জন্ম থেকে, মৃত্যু থেকে—
দেবতারা কাঁধে নেয়
যতসব রূপকের ভার আর
নিয়ে যায় তাদের দিব্য শব্দকোষে।
অথচ আমাদের পৃথিবীতে
আমরা বেঁচে থাকি
অর্থের মত দগ্ধ ও দীপ্ত
আর ভাষার বিন্যাসে
একা।
→→→→→→→→


পরের বার
::
পরের বার আমি কিনব
হতাশায় নুইয়ে পড়া সেই দেবতার দোকান থেকে
কিছু পুরানো বই, ওষুধ আর হাঁড়িপাতিল।

পরের বার আমি জিজ্ঞেস করবো,
সেই শহরের কোনো মুরুব্বিকে
সংকীর্ণ গলিতে হারিয়ে যাওয়া কোনো বৃদ্ধের ঠিকানা
অথবা শৈশবে অসাবধানে খুলে রাখা
কোনো একটা জানালা বন্ধ করার উপায়।

পরের বার আমি
অপরিচিত কোনো দরজায় দেব কড়া
যদি বন্ধ থাকে? তাহলে সেই চৌকাঠে
রেখে আসবো আমার কিছু শব্দ, ইচ্ছা আর প্রেমের পুঁটলি

পরের বার আমার সঙ্গে বাজারে কিংবা, এলাকায়
হৃদয়ের ভেতরে অথবা বাহিরে, শূন্য পথে
যার সঙ্গেই দেখা হবে আমি দেব তাকে উপহার—
অনন্তের, নিরক্ষরতার
পূর্ব জন্মের গুঞ্জনে ভবিষ্যতের।
→→→→→→→→


মৃত্যু
::
একটা পাখির মতো
সহজে উড়ে চলে আসবে
অদেখা একটা দিন—আমার যমদূত!
আর জানালা দিয়ে
আমাকে উঁকি দিয়ে চলে যাবে

আমি জানতেও পারবো না
শুধু এইটুকু জানবো— অদৃশ্য পাখির মতো
আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে
আমার পূর্ব পুরুষের মৃত আত্মা

তারপর একদিন চুপ করে সে আসবে
গ্রীষ্মের উষ্ণতার মতো শরীরে ছেঁয়ে যাবে
একটা শিশুর আঙ্গুল ধরে যেমন সকালে হাঁটতে
নিয়ে যায় তার পিতা
ঠিক তেমন করে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবে।
→→→→→→→→


জন্মান্তর পার করে
::
সন্ধ্যা হলেই
নীড়ে ফিরে পাখি
কিন্তু যে পাখিটি গিয়েছে সকালে
সেটি আর ফেরেনি

সন্ধ্যা হলেই
জ্বলে উঠে প্রদীপ
কিন্তু যে প্রদীপটি নিভেছিল গতকাল
সেটি আর জ্বলেনি

শুকিয়ে যাওয়া নদী পূর্ণ হয়
তীরের দু’পাশে দুলতে থাকে জল
কিন্তু সে সেই জল নয়
যে জল মেঘ হয়ে গিয়েছিল নদী থেকে

আমিও ফিরবো
প্রেমে, কবিতায়, গৃহে
জন্মান্তর পার করে
কিন্তু সেখানে নয় যেখান থেকে আমার
যাত্রা শুরু হয়েছিল।
→→→→→→→→


আমি
::
আমি সেই মন্দিরে যাব
শতাব্দী পূর্বে যে মন্দির কেউ প্রতিষ্ঠা করেনি
আমি প্রণাম করবো সেই দেবতাকে
যে একটু আগে আমাদের সঙ্গে
চায়ের দোকানে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল

আমি অরণ্যের নিস্তব্ধতা অক্ষুন্ন রেখে
ঝরনার পাশে বসে শুনবো-
পাখি, গাছ আর ফুলের প্রার্থনা
তারপর ধীরে ধীরে আকাশ পথে
এমনভাবে ফিরে যাব
যেনো কারো কিছু মনেই থাকবে না

আমি ছিলাম, অরণ্য ছিলো
মন্দির আর সেই দেবতা ছিলো
প্রণতি ছিলো।

কেউ দেখতে পাবে না আমার অনুপস্থিতি
যেমন প্রার্থনার ভীড়ে ঢুকে পড়া কোনো
শিশুকে কেউ দেখতে পায় না!


অশোক বাজপেয়ি হিন্দি ভাষার ভারতীয় কবি, সাহিত্য সমালোচক। জন্ম ১৬ জানুয়ারি, ১৯৪১। তিনি একজন শিল্প প্রশাসক, সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও ভারতের জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির চেয়ারম্যান ছিলেন। হিন্দি ভাষায় এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৩টি। ১৯৯৪ সালে ‘কাহি নেহি বহি’ কাব্য গ্রন্থের জন্য অর্জন করেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড।
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো— শেহের আব ভি সম্ভাবনা হে (১৯৬৬), তৎপুরুষ (১৯৮৬), বহুরি আকেলা(১৯৯২), উমিদ কা দুসরা নাম (২০০৪), বুভুক্ষ(২০০৬)। কবিতা ছাড়াও সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক গ্রন্থগুলো হলো- ফিলহাল, কোছ পূর্বাগ্র, সময় সে বাহার, কবিতা কা গল্প। অনূদিত কবিতাগুলো পুরস্কার প্রাপ্ত কাব্যগ্রন্থ ‘কাহি নেহি বহি’ থেকে চয়ন ও অনুবাদ করা হয়েছে।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top