গুচ্ছ কবিতা // মানিক বৈরাগী

উত্তরের জলপাই বনে

পচন ধরেছে ডাইনে আর বামে
পচন ধরেছে চেতনাদর্শের আস্তাবলে
পচন ধরেছে ক্ষমতার খোয়াড়ে, অলি – গলির অলিন্দে
ক্লীব কর্তার ধ্বজভঙ্গ শিবদন্ডও খাঁড়ায় কামজ্বরে
বাৎস্যায়নের দ্যাশে দ্রুত বীর্যপতন রোগের উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে
আগাম বসন্ত বাতাস বইছে উত্তরের জলপাই বনে
মালী – মালীপ্রধানেরা উফশী অগ্নিবীজ শুকাচ্ছে রোদে
বহুদিন নাড়াচাড়া হয়নি, মরচে পড়েছে জলপাই লাঠিতে
কতোদিন তারা শীতঘুমে ছিলো, খায় আর ঘুমায় কর্তার আদেশে
এভাবে অলস দেহে মেদ জমেছে, জং পড়েছে লৌহ- দেহের কলকব্জায়।

জলপাই চাষা, মজুর, মালিদের দক্ষতা – সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে
পূর্ব-উত্তর মেঘনা – গোমতীর চরে নয়া – উপনিবেশিক চাষাবাদের কর্ম – কৌশলের
অতিব গোপনীয় উচ্চতর বৈজ্ঞানিক গবেষণা, কর্মশালা, ফিসফাস, চুপচাপ বৈঠক চলছে
সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক জমিনে গবেষণালব্ধ জলপাই অগ্নিবীজের ফুলকি ফুটবে ।
সংঘবদ্ধ জলপাই অগ্নির সমুখে পুড়ে যায় সংবিধান, আইন, আদালত, বিচারক।

জলের কুচকাওয়াজ

খিড়কির ফাঁকগলে বৃষ্টিভেজা কিরণ
আসে শ্রাবণ মুখর প্রভাতে
মেঘাশ্রিত ধোঁয়াশে আলোয় আকাশ যেন কাঁদছে
কবিতার খাতারা আজ বড় বিষন্ন
মধ্য শ্রাবণের মেঘে ঢাকা পূর্ণিমা চাঁদের কিরণও ভূতুড়ে বিবর্ণ
কান্নারত বৃষ্টিরা প্রভাতের আলোয় খুব ক্লান্ত অবসাদগ্রস্ত

বিষন্ন – বিষাদ ধীরেধীরে ঘুণপোকার মতো
চুষে নিচ্ছে উচ্ছ্বাসের অনুরণন
কোথাও কারা কোনো কোনো খোয়াড়ে পদধ্বনি শোনা যায়
জলের কুচকাওয়াজ
সারারাত তাদের উপর খুব দখল গেছে
মেঘনা-গোমতির খরস্রোত আজ থেকে গতিহারা।

বেদনার জার্নাল

শীতের দাপট জানে হাঁড়ের আয়ুর খবর।

ব্যথার গুঙানিতে যদি ভেঙে যায় তার ঘুম
দাঁতে দাঁত চেপে বেদনা বলে কুসুম কুসুম।

তিলে তিলে ক্ষয়ে যাওয়ার উৎসবে
জীবনের রূঢ় বাস্তবতার ক্ষরণ কালে
জন্মান্ধ মোহ মায়ায় মন এখন টলে না
বুকের মাজারে রক্তক্ষরণ হয় দেখো না।
কলিজার ঘুর্ণি মোচড় যায় না দেখা
তোমার দেয়া জ্বলন খলা যায় না সহা।

অনিশ্চিত আকাঙ্ক্ষার মোহমায়া ছেড়ে যেতে
ডাকছে নিশ্চিন্তপুরের কৃষ্ণগহ্বর আলোকায়নে।

অভিমানের রাগে কেন বাড়িয়ে দিস বেদনা
স্যাঁতসেঁতে বালিশের তুলাগুলো পাথরকণা
শুকনো রোদের অনার্দ্র হাওয়ায় অশ্রু ওড়ে না
মিহিন ওড়নাও লাজুক, ফুটে না ফুল বৃষ্টি আসুক।

চলো সখি বিরহ উদযাপন করি বেদনা তলে
হাঁড় কাঁপানো শীতে ঠনঠনে যন্ত্রণার কোরাসে
মহুয়া পানে জুমঘরে ওম নিই পৌরাণিক নিয়মে
আমাদের সবুজ শীৎকার মুখরিত হোক শ্লোগানে।

মানেনি হুকুম বুঝেছে আজাজিল আত্মমর্যাদা
ঈশ্বরের মতো আদমও পেল ফেরেস্তাদের সেজদা।

তুমি কি অগ্নিদেবী ? ভালোবেসে বিষে পোড়াও সখি।
তোমাকে পূজার ছলে এখন আমি ঈশ্বরকে খুঁজি
অগ্নিশিখা তুমি বহ্নিদেবী নিজে পুড়ে পোড়াও সবি।

প্রেম -ভালোবাসার কাছে ঈশ্বরও নত হয়
তোমার প্রেমে নেই অভিলাষ
রুদ্রমূর্তি রুশে ইন্দ্ররাজ্য থেকে খসে উল্কাপিণ্ড
বায়ুমণ্ডলে পুড়ে পুড়ে মর্ত্যে সে কালোপাথর
তবুও
জীবন ফুরায় ধীরে ধীরে
তামাক ফুরায় দ্রুতবেগে।

পুষ্পিত অন্ধকার

উজ্জ্বল উচ্ছল উৎসবের বিজয় কেতন
আমাকে আর টানে না
শুধু শবযাত্রা দেখি, বিষাদের চোখে।

নীলাম্বরী সড়কে প্রস্ফুটিত রক্তজবার মতো
তুমি দাঁড়িয়ে থেকো, উন্নয়নের শাদা অন্ধকারে।

সন্ধ্যার সোড়িয়ামের ভুতুড়ে আলোয়
আমি
ল্যাম্পপোস্ট
হবো।

বিষাদের ভিড়ে যদি দাও ভালোবাসা
সহজেই দ্রবীভুত হবো নুনজলে।

অতঃপর
পুষ্পিত অন্ধকার থেকে ধবধবে শাদা রজনীগন্ধার সুভাষ ছড়াবেই।

আত্মদর্শন

অবহেলা – ঈর্ষা, নেহায়েত করুণাও খুব ভালো লাগে
শব্দ ত্রয়ীর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া প্রেরণার উৎস-আবেগে
মনে পড়ে শেখ সাদি’র কথা—

আজ যারা জন্মান্ধ, জ্বরা-জড়, খ্যাতির মোহান্ধ
আমায় দেখে ক্ষমতান্ধ হয়ে শীৎকার ছুঁড়ছো উপহাসের
তোমাদেরও পূর্ব-প্রজন্ম এমনি করে ছুঁড়েছে শরবিদ্ধ তীর
মদ- মাগী – মাদুলি’র প্রলোভনে টলেনি যার মন
মৃত্যুভয়ে নত করেনা সে শির!

ডগডগে পান করে হেমলক, পীর সক্রেটিস
আমি জানি , কি আমার চাওয়া – সাধনা
কিসে আমার সুখ; কোথায় তাড়না – প্রেরণা
কলবের আরশিতে জিকির চলে নীতি-নৈতিকতার
জ্বলন যাতনায় দীপ জ্বেলে সত্যরে করি সাধনা
রুমি- খৈয়ামের প্রেমে যার দেহ-মন মাস্কানা।

তোমরা যারা খাই খাই করো, বাঁচার তাগিদে
আর আমি
কলবে – রিপুতে লড়াই করি, মরনের পর বাঁচতে।

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top