একটি বন্য স্বপ্নের অন্ধ যাত্রা ( ১১ম পর্ব) // নীলিম কুমার II অসমিয়া থেকে অনুবাদ: বাসুদেব দাস

(২৩)

কী আশ্চর্য গজেন্দ্রনাথ প্রবেশ করছে অঙ্কোলজি ওয়ার্ডে! ধবধবে সাদা ধুতি, সাদা পাঞ্জাবি, এন্ডির একটা  চাদর কাঁধে ফেলে পায়ে মুগা রংয়ের চামড়ার জুতো( বিহারি মুচিটা যা পালিশ করার আগে একবার প্রণাম করে নেয়) পরে প্রবেশ করছে গজেন্দ্রনাথ। মাড়োয়ারি মহিলার কোনো গোপন অসুখ থাকলে বা খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পেলে গজেন্দ্রনাথ  ঠাকুরকে যখন সেই রোগির বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন গজেন্দ্রনাথ ঠিক এভাবে সাজসজ্জা করে যায়। একটি রিক্সা আসে গজেন্দ্রনাথকে নিয়ে যাবার জন্য। রিক্সাটা গজেন্দ্রনাথকে  নিয়ে যায় এবং রেখে যায়। ফিরে আসার সময় গজেন্দ্রনাথের ঠোঁটে থাকে বিড়ির পরিবর্তে জ্বলন্ত পানামা সিগারেট।

শশী দেখল গজেন্দ্রনাথের পেছন পেছন ওটা দেখছি তজো। তার হাতে একটি পুঁটলি। পুঁটলির ভেতরে কী আছে শশী বুঝতে পারছে না। শশীর ইচ্ছে হয়েছিল সেই বিখ্যাত লবঙ্গ একটা খেতে। সেই পুঁটলিতাতে যদি কয়েকটি লবঙ্গ থাকত।

কিন্তু তজো শশীর বিছানায় পুঁটলিটা ঢেলে দিল। অজস্র কমলায় সাদা বিছানাটা রঙ্গিণ হয়ে উঠল।

‘ এত কমলা কেন এনেছেন বাবা?’– শশী শ্বশুর গজেন্দ্রনাথকে  উদ্দেশ্য করে বলল।

‘ তোদের ওয়ার্ডে থাকা প্রত্যেকের জন্য এনেছি। সবাইকে তুই যাবার আগে বিলিয়ে দিবি। আমরা আজ তোকে নিয়ে যাব যে।’– গজেন্দ্রনাথ বলল।

বন্ধ দরজাটা  যেন খুলে গেল। আর শশী সেই দরজা দিয়ে দেখতে পেল পাঠশালার ঘরটা– উঠোনে হাসতে  থাকা রাহুল, নীপা, রিকিরা– গোয়ালঘরটা– কাজলী, মুগী, গোবর, গোয়াল ঘরের সামনে ঝুলতে থাকা কাছিমের বুকের হাড়– নীল অপরাজিতা ফুলগুলি, প্রকাণ্ড গোলাপ গাছে বাইতে থাকা ডোরা গেছো সাপগুলি, শালগ্রাম থাকা ঠাকুর ঘরটা– তরুণী পিসি, অমৃতপ্রভা, রাষ্ট্রভাষা প্রচার সমিতির অধ্যক্ষ বরুণ…

আনন্দে শশির চোখ থেকে টপটপ করে গরম আর লবণাক্ত জল ঝরে পড়তে লাগল।

গজেন্দ্রনাথ বলল,’ কাঁদিস না শশী, তোর এগুলি চোখের জল নয়, মুক্তোর মণি।দেখ, নোংরা পাকা মেঝেতে পড়ে মুক্তার মণিগুলি কীভাবে ছিটকে গেছে। এই মুক্তা চিনতে পারার মতো এখানে কেউ নেই।

শশীর বুকটা গজেন্দ্রনাথের কথায় মোচড় খেয়ে উঠল। তজোরও চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। সে তার চোখের জল মুছতে মুছতে শশীকে বলল খুড়ি কাপড়চোপড় সামলে নে, কোথায় কী আছে সুটকেসটাতে ভরে নে….’

তখনই দেখা গেল, সেই ছোট্ট ছেলের মুখের ডানা থাকা দেবদূতটা ভেতরে প্রবেশ করছে। পড়ে থাকা কমলালেবু গুলির দিকে প্রলুদ্ধ দৃষ্টিতে চাইতে লাগল।

ভিখারীকে তাড়িয়ে দেওয়ার মতো গজেন্দ্রনাথ  তাকে তাড়িয়ে দিল–’ যা যা সরে যা এখান থেকে…

আপনি সবসময় বাড়াবাড়ি করেন– এরকম একটা দৃষ্টিতে সে গজেন্দ্রনাথের দিকে তাকাতে তাকাতে পিছিয়ে পিছিয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেল।

শশী কমলা লেবুগুলি পুঁটলিতে ভরিয়ে নিয়ে ওয়ার্ডের অন্য রোগিদের কাছে গেল । প্রত্যেকের সঙ্গে এসে কথা বলে তিনটি করে কমলালেবু দিয়ে এল।

শশী প্রত্যেকের অন্তর জয় করেছিল। শশী ওদেরকে কমলালেবু দিল আর বিনিময়ে ওরা চোখের জল ফেলল। এভাবে অঙ্কোলজি ওয়ার্ডের ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কার করা পাকা মেঝেতে একসঙ্গে অনেকের চোখের জল খসে পড়ল । তার কোনগুলি মুক্তো ছিল শশী জানেনা।

তজো সুটকেসটা হাতে তুলে নিল।

গজেন্দ্রনাথ বলল,’ শশী চল।’

দুজন নার্স– তারই একজন শশীকে একটু বেশি ভালোবাসত, আর দুজন রোগি, রোগির সঙ্গে চারজন আত্মীয় শশী- গজেন্দ্রনাথ- তজোর গায়ে গায় ওয়ার্ডের বারান্দা পর্যন্ত বেরিয়ে এসে সিঁড়ির কাছটায় এগিয়ে এসেছিল।

স্নেহময়ী নার্সটি সিঁড়ি দিয়ে নেমে শশীর হাত ধরে কিছুটা এগিয়ে গেল। গেটের সামনে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল। তজো এবং গজেন্দ্রনাথ সেই দৃশ্য দেখতে থাকল।

তখন গেটটার কাছে দুটো সাধারণ মাছি পড়েছিল, ফড়িং ছিল না। মাছি দুটি কিন্তু এই করুণ দৃশ্যের সাক্ষী হতে চাইছিল না।

শশীর গায়ে ধাক্কা দিয়ে নার্সটা ডাকল,’ দিদি উঠুন উঠুন, লোক এসেছে।’

তন্দ্রার ঘোরে থাকা  শশী ধড়মড় করে জেগে উঠে দেখে তার সামনে বরুণ।

বরুণ জিজ্ঞেস করল,’ ঘুমিয়ে পড়েছিলে?’

‘ এমনিই বিছানায় পড়ে থাকতে থাকতে কখন যেন চোখটা লেগে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি ।’– শশী বলল।

গজেন্দ্রনাথ এবং তজোর সঙ্গে শশী স্বপ্নেও যেতে পারল না। স্বপ্নে যদি আরও কিছুটা যেতে পারত!

কিন্তু শশী ভাবার মতো রাষ্ট্রভাষা প্রচার সমিতির সমস্ত কাজকর্ম নাকি সুরে কথা বলা জগদীশ মাস্টারের হাতে অর্পণ করে রাহুলের পিতা বরুণ এসেছে।

শশী জিজ্ঞেস করল,’ বাসে এসেছ কি ?’

হ্যাঁ, ট্রান্সপোর্টে (পরিবহন নিগমের বাস)এসেছি।– বরুণ উত্তর দিল এবং শশীকে জিজ্ঞেস করল,’ ‘খাওয়া দাওয়া করেছ কি? ‘

‘ হ্যাঁ ,খেয়েছি।’– শশী বলল।

বরুণের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না শশী। সেই চোখ দুটির কোনো অভিব‍্যক্তি বুঝতে পারে না শশী, সেই জন্য। জানালার সবুজ পর্দার নড়তে থাকা একটা অংশের দিকে তাকিয়ে শশী জিজ্ঞেস করল,’ বাবা এবং মা ভালো আছে তো? রাহুল- নীপাদের স্কুল চলছে কি? তরুণী? ভানু?’

‘ হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই ভালো আছে। ওদের স্কুল চলছে। তরুণী একবার খারাপ ভাবে পড়ে গিয়েছিল, মাথা ফেটেছে। বাকি সবাই ঠিক আছে…’

‘ নিরোদ পাঠশালায় গিয়েছিল কি?’- শশী জিজ্ঞেস করল।

‘ যায় নি।অচ‍্যুতের  চিঠি থেকে জানতে পারলাম যে সে তোমাকে এভাবে ফেলে রেখে চলে গেছে। বাবা ভীষণ রেগে গেছেন। বাবা তাকে চিঠি দিয়ে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছেন। সে এই ধরনের অন্যায় করা ঠিক হয়নি। যা হয়েছে, হয়েছে। হয়ে যাবে, কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমি আজ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলব। যদি হয়, আগামীকাল বা পরশু তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাব।’– বরুণ বলল।

বরুণের কথা শুনে শশীর মুখে নয়, বুকের ভেতরে বিদ্যুতের মতো ঝলসে উঠা আলোর রেখা বরুণ দেখতে পেল না। সেই রেখা গজেন্দ্রনাথ, রাহুল– নীপারা অমৃত প্রভা এবং তরুণীদের জন্য উৎসর্গিত ।

(২৪)

অসম রাজ্যিক পরিবহন নিগমের লাল বাসটি যেন পুনরায় শশীকে ফিরিয়ে দিল- এরকম মনে হচ্ছিল রাহুল-নীপাদের। কারণ ওরা লালবাসটাকে শশীকে ওদের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে দেখেছিল। আজ ওরা দেখছে লাল বাসটা পাঠশালার সেই পরিবহন নিগমের বাস আড্ডাতে  শশীকে নামিয়ে দেওয়ার পরেও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিল।

শশীকে ফিরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে যেন বাসটা কিছুটা প্রায়শ্চিত্তও করছে।

শশীর ডিব্রুগড়ে যাবার সময় তাকে বিদায় দিতে যতগুলি মানুষ জমা হয়েছিল, আজ সেই সব মানুষগুলি ছিল না।

আজকের বাস আড্ডায়  যন্ত্রণা ছিল না। আজ সেখানে ছিল স্বস্তি এবং আশার আলো। সেই দুজন ক্যান্সার রোগী আজও ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে– গজেন্দ্রনাথ এবং রাহুল।

শশী কিছুটা সামলে উঠেছে– গজেন্দ্রনাথ ভাবল। কে কী ভেবেছিল তা জানা যায় না। কিন্তু এতদিন ঠাকুর ঘরে শালগ্রাম ধুয়ে পাদোদক খাবার সময় গজেন্দ্রনাথ সব সময় শশীর কথা ভাবত। গজেন্দ্রনাথ দুবার পাদোদক খেত– তার মধ্যে একবার ছিল শশীর জন্য।

আগের চেয়ে সামান্য ভালো হয়ে উঠা চেহারাটা দেখতে পেয়ে গজেন্দ্রনাথের সেই পাদোদকের কথা মনে পড়ে গেল।

একটা রিক্সায় শশীকে উঠিয়ে দেওয়া হল। সঙ্গে সুটকেসটা এবং রাহুল নীপাও উঠল। রিক্সাওয়ালা টেনে টেনে রিক্সাটা নিতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে এগোতে লাগল গজেন্দ্রনাথ, বরুণ এবং ক্লাস নাইনে পড়া রাহুলের পিসির বড়ো ছেলে– চন্দন দাদা। প্রত্যেকের মনে কিছু স্বস্তি এবং কিছু কৌতূহল।

প্রায়শ্চিত্ত করার পরে বাসটা স্টার্ট দিল। বাসটা পুনরায় রক্তিম এবং কঠিন হয়ে উঠল।

কেবল বাস আড্ডার বারান্দায় থাকা বেঞ্চটার তেলের দাগ লেগে থাকা হ্যান্ডেলটাতে ধরে বসে রইল এক ধরনের নামহীন যন্ত্রনা, যে যন্ত্রণার এভাবে বসে থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে।

অমৃতপ্রভা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। মালিনী উঠোনে বেরিয়ে এল। ভানু এসে নতুন বাড়ির বারান্দায় দাঁড়াল।’ মা এসেছে ,বড়মা এসেছে’ বলে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে বাড়ির সামনে অমৃতপ্রভার আঁচল ধরে থাকা ছেলেমেয়েরা বাড়ির সামনে থেকে শশীর পেছন পেছন বাড়ি ঢুকল।

মূল ঘরের সেই খাটটাতে এসে শশী বসল। শশীকে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের বাড়িতে আগত একজন অতিথি বলে মনে হল । ওদের মুখে এটা লজ্জা লজ্জা ভাব ছড়িয়ে পড়ল।

শশীর চেয়েও ক্লান্ত দেখাচ্ছিল বরুণকে।

তরুণী পিসি বারান্দার চেয়ার থেকে উঠে বারান্দায় এ পাশ থেকে ওপাশে আসা যাওয়া করতে লাগল। তরুণীরও আজ বড়ো আনন্দ। সে পি পি পি পি …বো বো বো বলে চিৎকার করতে লাগল। অর্থাৎ সে গজেন্দ্রকে জানাতে চাইছিল বাবা বাবা ….বউ এসেছে, বউ এসেছে। শশী উঠে গিয়ে তরুণীর কাঁধে পড়ে থাকা কাপড়টা দিয়ে মুখের লালা মুছে দিল।

মুছে দেওয়ার আরও অনেক কিছু ছিল শশীর । শশী  দেখল ভানুর মুখে নারিকেল গাছের ছায়া, মালিনীর মুখে অহেতুক কিছু আলো, অমৃতপ্রভার দুশ্চিন্তা, বরুণের ক্লান্তি। কিন্তু এইসব মুছে দেবার জন্য শশীর হাতে কোনো কাপড় ছিল না । শশীর আঁচল দিয়ে এইসব মুছে ফেলতে পারত! ওহো। গজেন্দ্রনাথের উঠোনে বাগানে ঝুলে থাকা ছেলে মেয়েদের নাকের শিকনি মোছা ছাড়া সেই আঁচল দিয়ে আর কিছুই মুছতে পারবে না শশী।

ডিব্রুগড় থেকে আসার পরে শশী যেন একটা চাঁদ হয়ে গেল। সেই চাঁদের আশেপাশে রাহুলরা এক ঝাঁক তারার মতো গায়ে  গা লাগিয়ে তার আঁচল কামড়াতে কামড়াতে শশীর সঙ্গ না ছাড়া হল। শশী আগেই প্রায়ই ওদের ছোট্ট হাতগুলি তুলে নিয়ে একটা জাদু দেখাত। আর সেই ছেলেমেয়েরা সেই জাদু দেখে শশীকে এক অলৌকিক শক্তির অধিকারিনী বলে ভেবেছিল।

এতদিন না শেখানো সেই জাদুটা ডিব্রুগড় থেকে আসার কিছুদিন পরে একদিন দুপুরবেলা রাহুলকে কাছে ডেকে নিয়ে শশী শিখিয়ে দিল। একটা অতি সাধারণ জাদু! সেই জাদু শিখিয়ে শশী সেদিন থেকে রাহুলের সাধারণ মা হয়ে উঠতে চাইছিল।

(২৫)

গজেন্দ্রনাথ যেভাবে চাইছিল না সেভাবে কেউ চাইছিল না যন্ত্রণায় দুলতে থাকা একটি বাড়ি। গজেন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বাড়ির সবার থেকে ছোটো এক বছরের বুলবুলিটা পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিল শশীর যন্ত্রণার কণিকাগুলি। রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঘরটিও যন্ত্রণায় দুলিয়ে রাখছিল সকাল পর্যন্ত। কখনও কখনও রাহুলের ঘুমের মধ্যেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে আভাস নেয়– বন্ধ হয়ে গেল নাকি সেই দোলানি, না দোল খেয়ে চলছে। তথাপি সে উঠে যেতে চায়, সেই দোলার উৎসে এবং দোলার রশিটা টেনে থাকতে চায়। বাড়ির প্রত্যেকেই স্বীকার করে নেওয়া একটা যন্ত্রণার দোলা। এমনকি তরুণী পিসি – সেও তার অনুর্বর মস্তিষ্কে অনুভব করে সেই দোলা। সেই দোলা খেতে খেতে ঘরের দরজা দিয়ে সবাই আসা- যাওয়া করে, মেঝেতে ভাত খায়, বারান্দায় বসে, উঠোনে ধান মেলে দেয়…। কেবল একটা অন্যমনস্ক জন্তুর মতো রাহুল মাঝেমধ্যে সেই দোলায় পাক খেয়ে পড়ে যায়।

তার খেলতে ইচ্ছা করে না, স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে না। স্কুলের সবচেয়ে চঞ্চল ছেলেটিকে যখন থুতনিতে হাত রেখে বসে থাকতে দেখে, সঙ্গের ছেলেরা, সবাই তাকে হাসাতে চায়। কেউ ব্ল্যাকবোর্ডে কিছু একটা এঁকে তাকে হাসাতে চায়, কৌতুক বলে, আবার কেউ গুণামস্তির এক্টিং করে দেখায়। গুণামস্তির নাম নিলেই সে বলে–’ চুপ কর। কারণ গুণামস্তি তার দুঃখ বাড়িয়ে দেয়! কেননা গুণামস্তি একটা কৌতুকের নাম নয়, একটা দুঃখের নাম!

বরুণের মনোজগতে কী চলছিল বোঝা যায় না। কিন্তু প্রত্যেকেই জানত মৃত্যুই এই যন্ত্রণার সমাধান। কিন্তু মৃত্যুকে সময় নিভিয়ে দেওয়া লাইটের আলোর মতো ফ্যাকাসে  অন্ধকারে প্রার্থনা করেছিল। মৃত্যুর ঈশ্বরকে। মৃত্যুর আলাদা কোনো ঈশ্বর থাকে কি থাকেনা না জেনেই।

শশীর বিছানার ওপরে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না। একটু দূরে প্রকাণ্ড ট্রাংক দুটির ওপারে বরুনের বিছানার ওপরে ৪০ পাওয়ারের একটা বাল্ব জ্বলছিল রাতের বেলা। বাল্বের আলোটা এখন শশীর মৃত মানুষের ঘরে জ্বলতে থাকা প্রদীপের আলোর মতো বলে মনে হচ্ছিল….।

একটি বন্য স্বপ্নের অন্ধ যাত্রা ( ১০ম পর্ব) // নীলিম কুমার II অসমিয়া থেকে অনুবাদ: বাসুদেব দাস

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top