গীতাঞ্জলি শ্রী’র সাক্ষাৎকার ।। হিন্দি থেকে অনুবাদ- অজিত দাশ

আপনার অনুভূতি জানতে চাই। আপনি প্রথম হিন্দি লেখক যিনি বুকার পুরস্কার পেয়েছেন।

গীতাঞ্জলি শ্রী
আমি আনন্দিত যে, আমি এমন একটা স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা একটা বড় স্বীকৃতি। এর মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে যে স্বীকৃতি এবং পরিচয় তৈরি হয় তাতে ব্যক্তির কৃতিত্ব এবং কাজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। অনেকগুলো কারণই আছে এই পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত হওয়ার। আমার জন্য আরেকটা গৌরবের বিষয় হিন্দি সাহিত্যের একটি রচনা এই পুরস্কারটি অর্জন করেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এই হিন্দি সাহিত্যের যে আলাদা একটা সংসার আছে এটা বিশ্বের মানুষ জানতে পারলো। এতে করে মানুষজনের ভেতর হিন্দি সাহিত্যের আনন্দ উপভোগ করার আগ্রহ তৈরি হবে। শুধু হিন্দি সাহিত্যই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য নিয়ে মানুষজনের আগ্রহ তৈরি হবে।

আপনি কখনো কি ভেবেছেন বুকার পুরস্কারের সম্মান অর্জন করবেন?

গীতাঞ্জলি শ্রী
না, কখনোই না। তাছাড়া আমার মনে হয় না, লেখককে বসে বসে এটা ভাবা উচিৎ সে হয়ত কোনো না কোনো পুরস্কার পাবে। একজন লেখকের জীবনে কোনো পুরস্কার অর্জন করা তার লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি না। লেখকদের জীবনে পুরস্কার একটা আলাদা বিষয়, অন্যরকম একটা পরিচয় তৈরি করে। আপনি বিনয়ের সঙ্গে সেটা গ্রহণ করুন। কিন্তু শুধু পুরস্কার পাওয়ার বাসনা রাখা ঠিক না।

এই উপন্যাসের অনুপ্রেরণা আপনি কোথা থেকে পেয়েছিলেন?

গীতাঞ্জলি শ্রী
আমার এই উপন্যাসের অনুপ্রেরণা আমাদের ‘জীবন’। জীবন যেমন নানা ভাবে নানা মাত্রায় এগুতে থাকে সেটি থেকেই মূলত এই উপন্যাসের প্রেরণা। আমরা প্রতিদিন যে জীবন যাপন করি তা আমাদের কাছে সাধারণ মনে হয়। আমাদের একটা সাধারণ পরিচিতি থাকে সেখানে। আমরা হয়তো কোনো একটা সাধারণ চাকরি করছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেজন্য হয়তো ব্যস্ত থাকতে হয়। ঘরে আমাদের পরিবারে মা,সন্তানসহ অন্য সদস্যরা থাকেন। এই সাধারণ জীবনযাপনে আমাদের সবার ভেতর একটা মানুষের বাইরেও আরও ভিন্নরকম মানুষের উপস্থিতি থাকে, ভিন্নরকমের জীবনবোধ থাকে। এই সাধারণ যাপনের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে অনেক অসাধারণ কিছুও থাকে। আমাদের ব্যক্তিজীবনই শুধু নয় সেখানে আমাদের সমাজ, ইতিহাস ইত্যাদিও আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এই কারণেই একটা সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যেও অনেকসময় অসাধারণ কিছু চলে আসে। এবং জীবন কখনো কখনো সোজাসাপ্টার বাইরে নানা মোড় নিয়ে সামনের দিকে চলতে থাকে। আর এইভাবেই এই উপন্যাসটি তৈরি।

লেখক হিসেবে আপনার জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে একটু জানতে চাই?

গীতাঞ্জলি শ্রী
লেখকদের জন্য প্রধান যে চ্যালেঞ্জ নিতে হয় সেটা মূলত নিজের সঙ্গেই । বাইরের কোনো কিছুর সঙ্গে নয়। বাইরে থেকে একজন লেখকের স্বীকৃতি, সম্মান বা অর্জন হয়তো তাকে কিছুটা খুশি অথবা দুঃখ দেয় কিন্তু মূল চ্যালেঞ্জটা তার নিজের সঙ্গেই। এবং সেখানে তাকে উত্তীর্ণ হতে হয়। তাকে বলতে হয়, যে তুমি চেষ্টা করেছ, তুমি সেটার যোগ্য। নিজের সফলতা কিংবা অসফলতার উত্তরটাও তাঁর নিজের কাছেই থাকে। ফলে আমার নিজের চ্যালেঞ্জটাও আমার নিজের সঙ্গে। বাইরের কোনোকিছুর সঙ্গে আমার কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বাইরের মানুষজনের পছন্দ কিংবা অপছন্দের উপর ভিত্তি করে আমি কোনো কিছু লিখি না।
আর এই কারণে আমি নিজেকে একজন স্বাধীন লেখক বলে মনে করি। আমি যেভাবে লিখি সেখানে আমার নিজের মতো করে একটা আকাঙ্ক্ষা এবং চেষ্টা থাকে। ফলে সেই চেষ্টা বা আকাঙ্ক্ষায় সফলতা কিংবা অসফলতা যাই আসুক না কেন সেটির জন্য আমি নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখি।

আপনি অনুবাদক ডেইজিকে কিভাবে পেলেন এবং উনার সঙ্গে কাজ করে আপনার কি অনুভূতি?

গীতাঞ্জলি শ্রী
তারকাদের মিলন এমনভাবেই হয় আচমকা। ডেইজি নিজেই এখানে চলে এসেছেন। আমি উনাকে নির্বাচন করিনি। আমার ভাগ্য ভাল। অরুণাভ সিনহা একজন আছেন, যাকে ডেইজি বলেন, ম্যাচ মেকার। অরুণাভ সিনহা অনুবাদক। সম্ভবত বাংলা থেকে ইংরেজী অথবা ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। উনি বেশ পরিচিত একটা নাম। উনার কাছে কেন জানি আমার এই উপন্যাসটিকে সম্ভাবনাময় মনে হয়েছিল। তিনিই আমার বইটির ইংরেজী প্রকাশক Tilted Axis, ডেইজি রকওয়েল এবং আমাকে একত্রিত করেছিলেন। আর ডেইজি বইটি অনুবাদে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ডেইজি ভাল হিন্দি পারেন ফলে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি অবশ্যাই ভাল অনুবাদ করবেন।

আপনার এই সাক্ষাৎকারটি অনেক লেখকই দেখবেন। তাঁদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

গীতাঞ্জলি শ্রী
আপনারা যদি লিখতে চান একাগ্র চিত্তে লিখতে থাকুন। লিখুন, লিখুন এবং লিখুন এই চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এবং লেখার আনন্দ উপভোগ করুন।

আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

গীতাঞ্জলি শ্রী
আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো লিখে যাওয়া। ভবিষ্যত কেন বলি, বর্তমান, ভবিষ্যত মিলিয়ে পরিকল্পনা হলো লিখে যাওয়া এবং লেখার আনন্দে ডুবে থাকা।


হিন্দি উপন্যাস ‘রেত সমাধি’র ইংরেজী অনুবাদ Tomb of Sand এর জন্য সদ্য বুকার পুরস্কার ২০২২ পাওয়ার পর এই সাক্ষাৎকারটি বিবিসি হিন্দিতে দেন লেখক গীতাঞ্জলি শ্রী। উপন্যাস এবং সাহিত্য কর্ম নিয়ে লেখকের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার পড়তে চোখ রাখুন উঠান অনলাইনে। 

 

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top