গুচ্ছ কবিতা ।। ভাঁটফুলের গোপন গন্ধে শোধ হয় কৃতঋণ ।। নিষাদ নয়ন

♦ পুরনো মুদ্রা
সত্য অথবা স্বপ্ন ছাড়াও যাপিত প্রাণের রোদ্দুর নিয়ে
আমরা, চলেছি অহরহ ভিড় আর গুঞ্জন ছেড়ে দূরে

আলোর আভাসে ভাসে আমাদের মুখ, তবু কারুকাজের
কাছে প্রতিভাসের সুখ খুঁজে খুঁজে, আসি অসুখে ফিরে

প্রতিদিনই কত কী ভাবি আর ভুলে যাই, আসলে মনের
দায় নিতে আসে নি কেউই, হাওয়ায় যে ওড়ে,সে ডানা উড়াক

আমরা দেয়ালের কাছে বড় প্রিয় হয়ে উঠছি, আর তার কাছেই
গিয়ে মুখ লুকাই, যেন মসী ঘন হয়ে হৃদয়ের তাপাঙ্ক জুড়াক

জলপাই গাছের পাতাও জানে অন্যান্য পাতারা বেদনায় কথা কয়
তার থেকে ছায়া আর স্বপ্ন নেমে আসে প্রতিদিন ভাবনার অবসরে

যেমন সমুদ্রের বুকের ’পর দিয়ে ফেনিল হাওয়া মাতম আর ঢেউ
বয়ে যায়, তবু্ও জলের মতোই মহাকালের রথ ভেঙে ভেঙে ওড়ে…

♦ পরিযায়ী কাহিনি
এই সময়ের আড়ত-ঘর থেকে মুছে যায় চেনাচেনা মুখ
কী এক অশেষ যুগের মুহূর্তের মতো জার্নালের লেখা
হঠাৎই থেমে যায়, পড়ে থাকে ডিমের খোলা-ভাঙা বুক
কুসুমেরা রোদের দাগের কাছাকাছি দাঁড়ায় এসে একা

মা আর মাটির মায়ার মতো গর্ভলোকে ছিলাম একদিন
তবে শবাসন মুদ্রা শেষ করে কবর বা আগুনের শিখার
গহ্বরে, যদি ভাঁটফুলের গোপন গন্ধে শোধ হয় কৃতঋণ
এ পৃথিবীর হারানো গ্রাম ক্রমে সরে যায় ডান বা বাঁয়ের

দিকে, দূরগামী হলে পাল্টায় পরিযায়ীর ঈশান-নৈঋত
কোণ, স্বপ্নের বাজারে দয়িতার দৃষ্টিতে ফোঁটে সফেদ
ফুল, কেবল প্রকৃত পাগলই তার বোনা অন্তর্জালে মৃত
ও প্রজাপতি, এসে নিয়ে যাও অভিমানী দুপুরের জেদ

♦ দিঙনাগের দিন
এই জীবন আর বসন্ত এক মায়াবী নেশার
হাওয়া থেকে জন্ম নে’য়া রাতের রঙমহল

শুধু অগুনতি খোলস থেকে খোলস খুলে এগিয়ে চলে
কত প্রজাতির অন্তরাল থেকে চূর্ণ হ’ল তাদের মওসুম

অথচ অন্তহীন খোলা সমুদ্রের বুকে বয়ে যাচ্ছে
প্রতিমুহূর্তের অবলুপ্তি, ফেনিল বাতাসের ভেলা

চলছে এক অদ্ভুত ঋতু, এ যেন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই
ছায়া থেকে নেমে আসা আমাদেরই কবন্ধ, ছায়াবৃক্ষ…

♦ অলৌকিক
এক অশরীর হাত, রঙের প্যালেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
সূর্যঘড়ির বারান্দায়,আমাদের ইশারায় পেন্ডুলাম নড়ে না,
তবুও ইশকুলের ঘন্টা আগেই বাজিয়ে দেয় কেউ, তাই
বলি, ’বেদনা তুমি আর কেঁদো না, মিছেমিছি আর কেঁদো না’

অপেক্ষায় আমাদের আয়ু হারানো মন্ত্রগুলো রচিত হয়
ভুল ভুলিয়া গান গাইতে গাইতে ভুলে যেতে হয় প্রিয়তান,
কোনো ক্যাম্বিসের বুকে আঁকা যাপনের যাত্রীরাও ভ্রমণের
আনন্দ ফুরিয়ে গেলে আততায়ী হয়ে উঠবে একদিন

কোনো সমুজ্জ্বল দিনে চোখে ভিড় করে থাকা স্বপ্ন বা
ফুলের সম্ভারও দিগন্তের কাছে গেলে মুছে যায় গোধূলির
আলোরণ, অথচ প্রতিদিনই ঝুপ করে নেমে আসে
কালো নদের মোহনায় মৃত্যু, এক দেহ থেকে দেহান্তর

আচানক ছায়া আর মায়ার শিহরণ মুচে গেলে, শুধু
বেঁচে থাকে আমাদের গাম্ভীর্যের সুখ আর অসুখময়
দিন-রাত্রির, এখন ঘোড়ার ঘুম নিয়ে জেগে থাকে শহর,
তবু ঘুমের নিদানে মিশিয়ে নিই বেমালুম মূকাভিনয়

♦ আমাদের পরিবেদনা
অশেষ মোহ নিয়ে আমরা খুঁজছি নতুন অভিমুখ,
প্রাচীন জানলার
স্বপ্ন আর আবলুসী ভাবনার কর্ণকুহরে ঢুকে যায়
বেজান মথের দিন,

বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন রোগ, শীত পেরনো
শিমুল তুলোর হিমঘুম, ক্রমে
বাড়ছে বরফগলা নদীর উষ্ণতা, যেন বিগত শীত
থেকে ভেসে আসে কথার কার্পাস

কেবলই গর্ভদানের সম্ভাবনা বা মৃত্যুর দূত, এই
দেহ আর দেয়ালের ম্যুরালে
ভেসে ওঠে রঙিন মুখের অবাক অবয়ব, শুধু সবুজ
রঙই চিত্রীত ব্যথার প্রলেপ

তুমি মেঁখে নেও, রোদের মতোই অদৃশ্য মৃত্যু,
অহেতুক বুদবুদ কিঙবা প্রিজম
পেয়ে হারানোর অসুখ অনবরত মাথার ভিতর
থেকে নবগুলো ঢিলা করে দেয়

তবু নাভিকূপ থেকে শ্বাস টেনে নিই, আরও দীর্ঘ
করে ফুলিয়ে ছেড়ে দিই,
নাভির নিচে নেমে গেছে আমার ব্যক্তিগত দুঃখ,
ভেসেছে নদী ও নৌকার কথা…

♦ প্রিয় হারানোর লিবিডো
এই শরীরের শীষমহলে লুকানো থাকে
ঘাম আর হাওয়ার রমণ,
জানি না, কেন ফোঁটে এতসব কামনার
ফুল, একই ভাসান-উড়ান

এই হাঁ-মুখ অতি জাগতিক বেঁচে বা জেগে
থাকার কী মানে আছে,
জানি, এই বেঁচে থাকাও এক ধরনের অভ্যাস,
কৌশলে করে সবাই বাঁচে

তোমার গর্ভের ভিতর পুড়ে যাচ্ছে ভালোবাসা,
ভ্রূণ ফুলের কেশর,
এই সময়ের সার্কিট থেকে খোসে যাচ্ছে স্মৃতি,
মুছছে যাপন-মুহূর্তের

হয়তো একদিন তোমার কাছেই ভুল করে
চেয়েছিলাম বাদামের বন,
ঘরের বাইরে ঘন-বিকেল বয়ে যায়, অনুভবের
অনুবাদ হ’লো অবসেশন

কখনও কখনও কাছে কিঙবা দূরের প্রান্তিক
সীমানায় দাঁড়িয়ে, বোঝা যায়
ছায়ার মতোই আমরাও অশীরর, মৃতডানা
ভাঙার গান গাই চড়ুইয়ের ভাষায়

একই গ্রহ বা ঘরে ভিতরে থেকেও যার দূরত্বের
শেষ নেই, অভিন্ন পরিস্থানে লীন,
তার তাবৎ ভৌগোলিক পরিসীমাকে মনে হয়
প্রমিত প্রজ্ঞানের, উড়াল অন্তহীন…

Facebook Comments

comments

১ Reply to “গুচ্ছ কবিতা ।। ভাঁটফুলের গোপন গন্ধে শোধ হয় কৃতঋণ ।। নিষাদ নয়ন”

  1. শ্যামলকুমার সরকার বলেছেন:

    সুপ্রিয়,
    কবিতা পাঠাতে চাচ্ছি, ইমেইল ঠিকানা জানাবেন।

    ~শ্যামলকুমার সরকার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top