মাসরুর আরেফিন এর উপন্যাস ‘আলথুসার’- রাষ্ট্র ক্ষমতা ও জটিল জীবনের শ্বাসরুদ্ধকর বয়ান।। আশানুর রহমান

ভূমিকা।

একটা কাকতালীয় ঘটনা ঘটে গেছে, কেউ কেউ হয়তো সেটা খেয়ালও করেছেন–একই নামে দু’জন লেখকের দু’টো বই বের হলো এবারের মেলায়। একটি প্রবন্ধের, অন্যটি উপন্যাস। দু’টো লেখার বিষয়বস্তু প্রায় একই–রাষ্ট্র, ক্ষমতা; আর ব্যক্তির সঙ্গে সেই রাষ্ট্র ও ক্ষমতার সম্পর্ক। প্রবন্ধের বইটি বের হয়েছে সংহতি প্রকাশনী থেকে–লেখক আলতাফ পারভেজ। উপন্যাসটি বের করেছে ‘প্রথমা’–লেখক মাসরুর আরেফিন। বই দু’টোর নামরকরণ একজনকে নিয়েই–‘আলথুসার’। যদিও আলতাফ পারভেজের লেখায় নামের বানানটি করা হয়েছে ‘আলথুসের’। আলতাফ পারভেজের লেখাটি পড়েছিলাম প্রকাশের আগে আর মাসরুর আরেফিনের উপন্যাসটির প্রথম দু’টি অধ্যায় পড়েছিলাম গত বছর প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায়। দু’টো লেখাই আবার নতুন করে পড়লাম। মাসরুর আরেফিনের ৩৪৪ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি পড়ে বইটির একটি পূর্নাঙ্গ পর্যালোচনা করা জরুরী মনে হলো।

এক।

উপন্যাসের শুরু লন্ডনের বেকনট্রি স্টেশন থেকে লেখক, লেখকের শ্যালিকা ফারজানা এবং তার স্বামী জোসেফের ট্রেন যাত্রা দিয়ে। তাদের গন্তব্য অক্সফোর্ড সার্কাস স্টেশন হয়ে লন্ডনের হারলি স্ট্রীটের একটি বাড়ি, যেখানে লুই আলথুসার নামের একজন দার্শনিক ও অধ্যাপক মানুষটি একসময় বাস করতেন।

স্টেশনে দেখা ‘সাকুরা গাছ’ যাকে অনেকে বলেন ‘ওরিয়েন্টাল চেরি’, সেই ‘চেরি ব্লসম’ এর সৌন্দর্য এবং কয়েকদিনের ব্যবধানে সেই সৌন্দর্যের পরিণতির বর্ণনা দিয়ে উপন্যাসের ন্যারেটিভটি এক কথায় দুর্দান্ত এবং বিস্ময়কর। মানুষের জীবনের চরম সত্যটি কি তাহলে এমনই? মানুষের সৌন্দর্য, ক্ষমতা সব কি ঐ ‘চেরী ব্লসমে’র মতোই-আজ যার সৌন্দর্যে আমরা মাতাল, দু’দিন পরই সেটাই যেন সাদা ও গোলাপি রঙের এক মৃত্যু আতঙ্ক? স্টেশনের সেই ‘সাকুরা’ গাছগুলোই লেখকের মনে এক অজানা আতংক তৈরী করে–কেননা ‘সাকুরা গাছ’কেই আবার মহা পবিত্র জ্ঞান করে জাপানিরা, আর সেই মনে করাটা এমনই যে সেটার জন্য তারা মানুষ পর্যন্ত বলি দিয়ে থাকে! মানুষের কোন কোন ভালবাসাও যেন এমনই ভয়ংকর রকম যে সেই ‘ভালবাসা’– তা সে ব্যক্তিক হোক, ধর্ম হোক, বা কোন আদর্শের প্রতিই হোক–কী অবলীলায় না মানুষকে খুনী বানিয়ে ফেলতে পারে? তাই ‘সাকুরা গাছ’ দেখে, আর স্টেশনে স্টেশনে অগণিত মানুষকে ট্রেনে উঠতে দেখে, তাদের ভিড়ে-ঠাসাঠাসিতে লেখকের মধ্যে একটা ভয়ের জন্ম হতে থাকে– বিশেষত ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে, যেখানে কয়েকদিন আগেই নিউজিল্যান্ডে ক্রাইষ্টচার্চে জঘন্য হত্যকান্ড ঘটে গেছে; আর সে কথাগুলোই লেখক যখন জোসেফকে বলতে শুরু করে, তখন লেখকের মুখে বোমা, নাশকতা শব্দগুলো শুনে জোসেফ অস্বস্তি সহকারে সেসব নিয়ে আলোচনা করতে নিষেধ করে ভয়ে–লন্ডন পুলিশ যদি তাদেরকেও সন্দেহ করে বসে! মানুষ যখন একটা ভয়ের মধ্যে বসবাস করে, একটা ভয়ের চাপ যখন তাকে ক্রমাগত গ্রাস করতে থাকে, তখন মানুষের সেই অভিজ্ঞতাটুকু যেন লেখকের বর্ণনায় ভীষণরকম ব্যঞ্জনাময়, অর্থবহ ও বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে। ভয় শুধু পুলিশ, আদালত, বা সেনাবাহিনী দিয়ে নয়– ভয়ের একটা সংস্কৃতি যেন মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া আছে। আর সেটার জন্য পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেমা-নাটক, সিভিল সোসাইটি, কত কিছু দিয়েই না রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনরা ভয়ের একটি সংস্কৃতি তৈরী করেন, কেননা তাতে যেন শাসন করা, ক্ষমতায় টিকে থাকাটা নিশ্চিত করা করা যায়! আর এখানেই যেন অনিবার্যভাবে এসে পড়েন ‘আলথুসার’ এবং রাষ্ট্র নিয়ে তাঁর দার্শনিক ভাবনাগুলো। ফলে অক্সফোর্ড স্টেশন থেকে লেখককে যখন লন্ডন পুলিশ সন্দেহজনকভাবে ধরে নিয়ে যায়, তার মোবাইলে তোলা অসংখ্য গাছের ছবি দেখে পুলিশ কর্মকর্তা আইজ্যাক ও মার্ক যখন লেখককে হঠাৎ করে গড়ে ওঠা, গোটা লন্ডন শহর অচল করা ‘Extinction Rebellion’ এর পরিবেশবাদী আন্দোলনের  সমর্থক ধরে নিয়ে তাকে জেরা করতে থাকে, তখন দার্শনিক আলথুসার যেন ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে পড়েন এবং আর লেখককে একসময় বলতেই হয় তার লন্ডনের অক্সফোর্ড স্টেশনে আসার সত্যিকারের কারণ।

দুই।

ঠিক সেই নাটকীয় মুহূর্তে পাঠকও একটু একটু করে জানতে পারে লুই আলথুসারকে, যিনি একাধারে ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁক দেরিদা ও মিশেল ফুঁকোর শিক্ষক, চে গুয়েভারার সাথে বলিভিয়ার জঙ্গলে যুদ্ধ করেছিলেন যে রেজি দেব্রে, তাঁরও শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছিলেন স্ট্রাকচারাল মার্কসিস্ট। তার বিখ্যাত বই ‘For Marx’। আলথুসার বললেন, রাষ্ট্র দু’ভাবে তার নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করে–‘রিপ্রেসিভ স্টেট এ্যাপারেটাস (নিয়ন্ত্রণমূলক রাষ্ট্রযন্ত্র)’ এবং ‘আইডিওলজিক্যাল স্টেট এ্যাপারেটাস (আদর্শিক রাষ্ট্রযন্ত্র)’ দিয়ে। যারা গ্রামসিকে জানেন তাদের কাছে আলথুসারের উপরের কথাগুলো গ্রামসির মত শোনালেও তাঁর এবং গ্রামসির মধ্যে পার্থক্য আছে বিস্তর। গ্রামসি এবং আলথুসার দু’জনেই মার্ক্সিস্ট, আবার একই সাথে মার্ক্সের তত্ত্বের অসম্পূর্ণতারও আবিস্কারক। গ্রামসির যেমন হেজিমনি তত্ত্ব, আলথুসারের তেমনি ‘রিপ্রেসিভ স্টেট এ্যাপারেটাস’ এবং ‘আইডিওলজিক্যাল স্টেট এ্যাপারেটাস’ তত্ত্ব। লেখক একটা রাষ্ট্রের টিকে থাকা, থাকার পদ্ধতি এবং তার উৎসগুলো চিহ্নিত করতে গিয়ে, ক্ষমতার কাঠামো-রূপরেখা, আর রাষ্ট্র ও ক্ষমতার সাথে ব্যক্তির সম্পর্কটি বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে তাঁর উপন্যাসে এনেছেন খুব সাবলীলভাবে, এতটাই দক্ষতার সাথে যা বিস্ময়কর মনে হয়।

তিন।

পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে রাস্তায় নামতেই লেখক দেখতে পেলেন গোটা লন্ডন শহর অচল করে দিয়ে ‘Extinction Rebellion’ আন্দোলনের কর্মীরা রাস্তা দখল করে বসে আছে। তাদের মুল মঞ্চটি তৈরী করা হয়েছে নুহের নৌকার মতো করে যেন এটা বোঝাতেই যে, নুহের নৌকায় না উঠে যেমন সেদিন ভয়াবহ প্লাবন কেউ বাঁচতে পারেনি,  ঠিক তেমনি আজকের এই সময়ে পরিবেশ বাঁচানো ছাড়া, এই আন্দোলনে শরিক হওয়া ছাড়া পৃথিবীকে বাঁচানো যাবে না।

আর সেই ভিড়ের মধ্যেই লেখকের পরিচয় হয় মেগান নামের এক সুন্দরী তরুনী, স্যামুয়েল নামের এক অধ্যাপকের সাথে, যে কিনা তিমি প্রেমিক এবং একই সাথে মার্কস ও আলথুসার পড়ান তাঁর ছাত্রদের, আর আলথুসার উপন্যাসে এই দু’জনই হয়ে ওঠেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।

পরিবেশ নিয়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন এজেন্ডা নিয়েও তারা এখানে একত্রিত হয়ে অচল করে দিয়েছে লন্ডন শহর। তারা পরিসংখ্যান দিয়ে জানাচ্ছে, যেভাবে পৃথিবী চলছে, এভাবে চলতে থাকলে সেটা টিকবে মাত্র আর ১২ বছর। তাদের এই সব তথ্য-বক্তব্য লেখকের কাছে বড্ড বাড়াবাড়ি লাগে, পরিবেশবাদী আন্দোলনের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল হয়েও, প্রকৃতির প্রতি তার নিজের প্রচন্ড ভালবাসা সত্ত্বেও লেখক ভাবেন, লাখ লাখ বছরের পৃথিবী মাত্র ১২ বছরে ধবংস হয়ে যাবে? গ্রিনপিসের মত সংগঠন তিমি শিকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে, আর সেটার জন্য টাকা দেয় আমেরিকা, আবার সেই গ্রিনপিস নামক সংগঠনটিই আবার হাঙর হত্যার বিরুদ্ধে টু-শব্দটি করে না–আমেরিকা হাঙর পছন্দ করে না বলে। তাহলে পরিবেশবাদী আন্দোলনের পেছনে কি কোনো বিশেষ মোটিভ থাকে? সেটা কি শুধুই প্রকৃতি বা পৃথিবী নামক এই গ্রহের প্রতি ভালবাসা? নাকি অন্য কিছু? ‘ডিপ ইকোলজিস্টরা’ একদিকে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে বর্ডার পার হয়ে আসা গরীব মানুষকে ঠেকাতে চায় আমেরিকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কথা বলে; অন্যদিকে তারাই যখন ফড়িং হত্যার বিরোধিতায় নামে–তখন তাদের কার্যকলাপের নৈতিক দিকটি ঠিক কোথায় থাকে? মানুষের থেকেও কি পরিবেশ বড়? প্রশ্নটি লেখকের মতো আমারও মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তর মেলা ভার–কেন একটা ‘থানকুনি’ পাতা মানুষের জীবনের চেয়েও মুল্যবান হবে?

পক্ষে-বিপক্ষে যু্ক্তি-তর্কের মধ্যেই লেখকের কথোপকথন চলে মেগান ও স্যামুয়েলদের সাথে। লেখকের দেশ বাংলাদেশ জেনে পরিবেশবাদীরা আরও উৎসাহিত হয়ে পড়ে, কেননা বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেশি, বিশেষত সেখানকার গার্মেন্টস্ শিল্পের কাঁচামাল, বর্জ্য সব কিছু নিয়ে এক বিরাট ঝুঁকির মুখে দেশটি। কিন্তু লেখক যখন পরিবেশবাদী আন্দোলনের অন্তঃসারশূন্যতার কথা বলে তাদের সাথে তর্ক করেন এবং সেখান থেকে উঠে পড়েন তখন স্যামুয়েল লেখক সম্পর্কে বলে বসে যে, “সে (লেখক) আসলে আলথুসারের প্রতি আগ্রহী না। সে আসলে আমাদের ঘৃণা করে। সে এই সমাবেশকেও ঘৃণা করে কারণ এর মধ্যে সে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের মৃত্যু দেখছে”। আর এভাবেই উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দ্বন্দ্ব-টানাপোড়েন, পুব-পশ্চিমের দ্বন্দ্ব, পরিবেশবাদীদের বয়ানের বাইরে সরকারী উন্নয়নের পাল্টা বয়ানের বিষয়টি উঠে আসে স্যামুয়েলের ঐ সব মন্তব্যে।

চার।

সেই ভিড় ঠেলে, মেগান ও স্যামুয়েলদের রেখে লেখক এগিয়ে যান একটা বড় ‘ক্যান্ডি এন্ড কনফেকশনারী’র দোকানের দিকে। সে দোকান চালায় করিম ও কাহহার নামের দুই আফগান ভাই। গত কয়েকদিনের অচল করা আন্দোলনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত, আর সেই কারণেই করিম ও কাহহার ক্ষিপ্ত আন্দোলনকারীদের উপর। তারা তীব্র সমালোচনা করে এই সব ‘গাঁজা খাওয়া’, দুনিয়ার তাবৎ নেশায় আসক্ত পরিবেশবাদীদের। একে তো আন্দোলনের কারণে বিক্রি-বাটা বন্ধ, অন্যদিকে আন্দোলনের এক তরুণী কিছুক্ষণ আগে তাদের বুঝিয়েছে যে লন্ডন থেকে আফগানিস্তান যেতে বিমানে যে পরিমাণ তেল পোড়ে তার বিনিময়ে তাদের উচিত ৬০,০০০ গাছ লাগানো। অথচ সেই আফগান দুই ভাইয়ের মনে হয়, এত সব নীতি কথার পরে, বড়লোকের এই সব ছেলেমেয়েরা বিমানে করে ছুটি কাটাতে যাবে আল্পসে, আর সেখান থেকে ইনষ্টাগ্রামে ছবি আপলোড করবে, এমনই সব ভন্ড এরা! সেই আফগান ভাইদের দোকানে কিছুটা নাটকীয়ভাবে পুলিশ মার্ক, কয়েকজন পরিবেশবাদী এবং আফগান ভাইদের মারামারির মাঝে, মার্কের ঘুষিতে আহত করিমের নির্দেশে লেখক পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে একটু ঘুরে ‘শেফ একাডেমির’ সামনে এসে ভাবেন–এই ভবনের ভিতরে মন খারাপ করে এক মাষ্টার শেফ হয়তো নিয়ম ভেঙে নাক মুছতে মুছতে অন্যদেরকে শেফ হওয়া শেখাচ্ছে। আর ঠিক তখনি সেই বাড়ির ভিতর থেকে কে যেন চিৎকার করে বলতে থাকে,

“ডোন্ট বদার, জাষ্ট ডোন্ট বদার!  ওরা কখনোই ব্রিটিশ ফুড হবে না। ব্যবসা আর রন্ধন শিল্প এক জিনিস না, কুকুরের বাচ্চারা”।

আর ঠিক ওই মূহুর্তে পাঠক হিসাবে একটা ধাক্কা লাগে এই ভেবে যে ‘প্যাশন’ ছাড়া, ভালবাসা ছাড়া, ভাল কিছু নির্মাণ করা যায় কি? ব্যবসা আর শিল্প কি কখনও এক জিনিস হতে পারে? লেখকের উপরের ঐ শেষ বাক্যটি, ঐ স্ল্যাঙটি যেন তখন মগজে গেঁথে যায়।

পাঁচ।

আবার সেই মঞ্চের কাছে ফিরে গেলে লেখকের পরিচয় হয় চার্লস বেরেসফোর্ড নামের চুরুট টানা এক লোকের সাথে যে কিনা মনে করে ব্রেক্সিটের লজ্জা এড়াতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবাদীদের দিয়ে এই সব নাটক করাচ্ছেন। তার সেই কথায় লেখক কিছুটা বিস্মিত হলেও পরের দিন লেখক যখন কি-নোট স্পীকার হিসাবে ‘Extinction Rebellion’ এর মঞ্চে ওঠেন এবং তাঁর অসাধারণ বক্তব্য শুনে শ্রোতারা যখন মুহুর্মুহু করতালি ও উল্লাসধ্বনি দিতে থাকেন, তখন উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখা ও আগে থেকে লেখককে সন্দেহের মধ্যে রাখা পুলিশ কর্মকর্তা আইজ্যাক লেখককে থানায় নিতে চায়। আর তখন পরিবেশ আন্দোলনের বড় নেতা সাইমন ব্রামওয়েল লেখককে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশ প্রধান ক্রেসিডা ডিকের শরণাপন্ন হন এবং আইজ্যাককে এই বলে হুমকি দেয় যে প্রয়োজনে তিনি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাবার ক্ষমতা রাখেন। আর তখনই যেন চার্লস বেরেসফোর্ড নামের চুরুট টানা লোকটার কথার সত্যতা ফুটে ওঠে। তাহলে এই যে আন্দোলন আন্দোলন খেলা (?) সেটাও কি কোনো পূর্বপরিকল্পিত সমঝোতার ফসল? সত্যিই কি ব্রেক্সিটের লজ্জা ঢাকতে সরকার ও পরিবেশবাদীদের এটা কোন গোপন সমঝোতা? আবার আফগান ভ্রাতাগণ করিম, কাহহার বা তাদের বাবা কেনই বা মনে করেন পরিবেশ আন্দোলন নিছক খ্রিস্টান, ইহুদি ও নাস্তিকদের আন্দোলন? তাদের কেন মনে হয় কঙ্গো বেসিনের জন্য, আমাজনের জন্য পরিবেশ পরিবেশ করে মায়াকান্না যারা করছে, তারা কেন টু শব্দটি করে না যখন আফগানিস্তানে বোমা পড়ে, পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চলে, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনে সমানে মানুষ মরে? তারা কেন তুলনা করে কঙ্গো জঙ্গল কাটার কারণে মৃত মানুষের সংখ্যার সাথে কাবুল-কান্দাহার, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনিদের হত্যার সংখ্যাকে? একি শুধুই মুসলিম বনাম খ্রিস্টান-ইহুদিদের দ্বন্দ্ব নাকি অন্যকিছু?

একটা সময় চরিত্র হিসাবে মেলিন্ডার আবির্ভাব ঘটে, যে কিনা মেগানের আপন বোন অথচ একই বাড়িতে থেকেও সেই বোনের সাথে মেগানের দু’বছর কথা হয় না; তাদের বাবা তাদের কোন খোঁজও নেয় না। আর সেসব কথা ভেবেই মেগান কাঁদতে শুরু করলে তার প্রতি স্যামুয়েলের মধ্যে একটা পিতৃস্নেহ তৈরী হয়। স্যামুয়েলের প্রতি লেখকের পূর্বে ক্ষোভ থাকার পরও লেখকের এই জিনিসটা ভাল লাগে এবং তাঁর মনে হয় স্যামুয়েল যতই নিজেকে মার্কসিষ্ট বলে দাবী করুক না কেন, সে আসলে হিউম্যানিষ্ট। আর আলথুসার যেহেতু এন্টি-হিউম্যানিষ্ট মার্কসিষ্ট, ঠিক সে কারণেই স্যামুয়েল না তাকে, না আলথুসারকে পছন্দ করে। আর এভাবেই মাত্র কয়েকটা লাইনে লেখক মার্কস পরবর্তী মার্কসীয় চিন্তার দুনিয়ায় হিউম্যানিস্ট ও এন্টি-হিউম্যানিস্ট বিতর্কটি আবার উস্কে দেন।

পরিবেশবাদীদের আন্দোলন মোকাবেলায় লন্ডন পুলিশের প্রস্তুতি ও যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখে লেখকের মনে হয় দুনিয়াটা ভায়োলেন্সে ভরা কেননা রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হয় ‘রিপ্রেসিভ ষ্টেট এ্যাপারেটাস (নিয়ন্ত্রণমূলক রাষ্ট্রযন্ত্র)’ ব্যবহার করে। সেই কারণেই লন্ডন পুলিশ পরিবেশবাদীদের রুখতে রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আসে। আর একই কারণে কি রাষ্ট্র উচ্ছেদের লড়াইটাও সশস্ত্র হয়ে পড়ে? আর এই জিনিষটা লেনিন খুব ভাল করে জানতেন বলেই কি ১৯০৫ সালের ব্যর্থ বিপ্লবের পর মজবুত সংগঠন ও অস্ত্র সংগ্রহের দিকে মনোযোগী হয়ে ওঠেন? সেটাই। আর একারণে ১৯০৭ সালে স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ৫ম কংগ্রেসে সশস্ত্র লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি ও অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনে সরকারী কোষাগার ও ব্যাংক ডাকাতি বিষয়ক বিতর্ক শেষে সরকারী টাকা লুট না করার বিষয়ে জুলিয়াস মার্তভের প্রস্তাব কংগ্রেসে পাশ হলে, বিরক্ত লেনিন হলরুম থেকে বের হবার সময় মার্তভকে বলেছিলেন,

‘তোমাকে দিয়ে কখনো বিপ্লব হবে না।’

উত্তরে মার্তভ জানতে চেয়েছিল, ‘কেন?’।

লেনিন বলেছিলেন, ‘বাচ্চাদের হাতমোজা পরে কখনো বিপ্লব করা যায় না’।

এরকম অসংখ্য কারণেই তাই নিউ মার্ক্সিস্টরা বিশেষত আলথুসার লেনিনকে একজন ‘এন্টি-হিউম্যানিষ্ট মার্ক্সিস্ট’ মনে করতেন। আর এই উপন্যাসে স্যামুয়েল ও লেখকের কয়েকটা মাত্র বাক্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে লেখক তাঁর পাঠকদের পরিচয় করাতে থাকেন কয়েক দশক ধরে চলা মার্কসবাদ ও পরিবর্তনকামী রাজনীতি নিয়ে বিতর্কের মূল সূত্রগুলোতে। একজন পাঠক হিসাবে নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় অভিজ্ঞতা।

ছয়।

মেগান নামক মেয়েটিকে লেখক তুলে ধরেন দুঃখী হিসাবে আর সেই মেগানের প্রতি লেখক ও প্রফেসর স্যামুয়েলের সহানুভূতির আড়ালেও যেন কাজ করে জটিল সব ভাবনা। দু’জনই তরুনী মেগানের দিকে হাত বাড়ায় পিতৃসূলভ স্নেহ নিয়ে কিন্তু সেই আপাত স্নেহের আড়ালে দু’জনের ভিতরেই মেগানকে নিয়ে আছে একধরণের যৌন ইচ্ছা। লেখক যে তরুনী মেগানের প্রতি এক ধরণের সুক্ষ যৌন টান অনুভব করেন সেটা তিনি তাঁর পাঠকদের কাছে লুকাতে চেষ্টা করেননি। আর তাই মেগানের প্রতি লেখকের আপাত মায়া-মমতাটুকুও যেন সরল না হয়ে জটিল আকার নিতে থাকে। তাই দেখি পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে সংশয়গ্রস্ত লেখককে স্যামুয়েল একরকম জোর করেই পরিবেশ দূষণজনিত কারণে মৃত্যুবরণকারী এক তিমি দেখাতে নিয়ে যায়। সেইখানে, সেই পরিবেশে মৃত তিমি’র শরীরের নানা দাগ দেখতে দেখতে মেগান লেখকের বাহু জড়িয়ে ধরে, তার বাবার সাথে নিজের ও তার বোন মেলিন্ডার স্মৃতি মনে করে কাঁদতে থাকলে ‘পরিবার বড় আদর্শিক রাষ্ট্রযন্ত্র’- আলথুসারের এই কথাটা যেন লেখকের কাছে অনেক বড় সত্য বলে মনে হয়। মানসিকভাবে বিপর্যন্ত মেগান লেখক থেকে কিছুটা দূরে, তিমিটার লেজের দিকে চলে গেলে, মেগানের প্রতি সহানুভূতিশীল লেখক যখন মৃত তিমির চোখের দিকে চেয়ে থাকেন, তখনই লেখক শুনতে পেলেনঃ “ক্ষীণবল ও কিছুটা মন-কষাকষি ভরা কন্ঠে তিমিটা বলছে, ‘মেয়েটার জন্য তো দেখি তোমার ভারি কুটিল মায়া। সব তাহলে একই রকম”।

আর সেই চরম মূহুর্তে লেখক সমগ্র পরিবেশবাদী আন্দোলনকে একটা বিশাল প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে যেন বললেন, তাদের এই পরিবেশ প্রেমও কুটিল কোন মায়া নয়তো? তিমির প্রতি, বৃক্ষের প্রতি, থানকুনি পাতার প্রতি পরিবেশবাদীদের ভালবাসা ও মায়াটাও কি তাহলে এমনই কুটিল? একুশ শতকের জটিল রাজনীতির সমীকরণের সাথে মানুষে মানুষে সম্পর্কও কি এমনই জটিল?

কিন্তু পরক্ষণেই লেখকের মনে হয় যে এটাও তো সত্য যে, তিমি হত্যা, হাঙর হত্যা চলছে দেশে দেশে। লেখকের জন্মস্থান বরিশালের ধানসিড়ি নদী, কালিজিরা নদী, হলুদ ডানার শালিকেরা, ঘুঘু, সুন্দরবনের বাঘ, বেজী, খরগোশ, শেয়াল, পশুর-রুপসা নদীর শুশুক কত কিছুই তো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সেও তো সেই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণেই। আর তাই মৃত তিমি দর্শনের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় এবং ‘Extinction Rebellion’ আন্দোলনের কর্মীদের প্রভাবে লেখকের মধ্যে জন্ম নেয় এক ‘পারহেসিয়া’র। মিশেল ফুকো যাকে সঙ্গায়িত করেছেনঃ

“কোন বক্তা যখন ‘সত্য’র সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কী তা বর্ণনা করেন এবং সত্যকথনকে দায়িত্ব হিসাবে গণ্য করে তার নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেন…”।

লেখক সেই পারহেসিয়া থেকে সিদ্ধান্ত নেন তিনিও ‘Extinction Rebellion’ এর সদস্য হবেন, ব্যাংকের চাকরীটি ছেড়ে দেবেন এবং তাঁর জন্মভূমি বরিশালের, জীবনানন্দের ধানসিড়ি নদীকে তিনি বাঁচাবেন।

আর সেখান থেকে বের হয়ে তারা যখন সেই রাতে ‘Extinction Rebellion’ এর মূল আন্দোলন মঞ্চের দিকে ফিরছিল, গাড়িতে অন্যরা যখন ‘ব্যাড কিডস্’ গানটি গাচ্ছিল তখন সেই গান শুনে লেখকের মনে পড়ে বাবা-মার শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্কুল জীবনে, সে তাঁর বন্ধুদের সাথে একদিন ধানসিড়ি নদী, জীবনানন্দ দাশের ধানসিড়ি দেখতে গিয়েছিল। আর উপন্যাসের এইখানে, উপন্যাসের ১২৮ পৃষ্ঠায় এসে লেখক পাঠককে নিয়ে যান লন্ডন থেকে বরিশালে। পাঠক হিসাবে আমিও তখন লেখক ও তাঁর কিশোর বন্ধুদের সাথে কালিজিরা নদী পার হই দড়িটানা ফেরিতে করে। আর সেই ফেরিতেই লেখকের বস্তির বন্ধু শাহজাদের কাছে শুনি লেখকের বাবার বন্ধু-ফেরির ড্রাইভার সিদ্দিকুর চাচার কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার সংবাদ। সেসময় লেখকের চোখ ভিজে আসে। সেটা যতটা না সিদ্দিকুর চাচার মৃত্যু সংবাদে, তার চেয়ে লেখকের প্রিয় কবি, জীবনানন্দ দাশের ট্রাম দুর্ঘটনায় নিহত হবার ঘটনাটি স্মরণ করে। তার প্রিয় সিদ্দিকুর চাচার মৃত্যু ও প্রিয় কবির মৃত্যুর শোক যেন কিশোর লেখকের কাছে তখন একাকার হয়ে ওঠে। সেদিনের সেই বাড়ির শাসন না মানা দূরন্ত কিশোরেরা যেন ‘ধানসিড়ি বেয়ে বেয়ে, সোনার সিঁড়ি মতো ধানে ধানে’ জীবনানন্দ দাশকে খুঁজতে থাকে ধানসিড়ি নামক নদীটির তীরে। উপন্যাসের এইখানে এসে লেখকের দুর্দান্ত বর্ণনায় উঠে আসে কবির ট্রাম দুর্ঘটনার করুণ চিত্র। ধানসিড়ি নদী তীরে দূরন্ত কিশোরদের সাথে পাঠক হিসাবে আমিও দেখতে থাকি চালতা, শেয়ালকাঁটা, মাদার ও রক্তদ্রোণ। বাড়ির শাসন থেকে বেরিয়ে পড়া কিশোরদের দিনটি শেষ হয় এক করুণ ঘটনায়। বস্তির ছেলে শাহজাদকে ‘পোলাও খাওয়া’ নিয়ে খোটা দেয়ায় ক্ষুব্ধ শাহজাদ সেই মেঘলা দুপুরে অন্যদের চোখের আড়ালে সাকলাইনকে ধানসিঁড়ি নদীর পানিতে চুবিয়ে ধরে এবং মৃত ভেবে দলছুট হয়ে পালিয়ে যায়। আর তখন, সেই মুহূর্তে শোকার্ত লেখকের বন্ধু রিয়াজ তাঁর পিঠে হাত রাখলে লেখকের ভিতরে জীবনানন্দ এসে যেন বলতে থাকেনঃ

‘হায় চিল, সোনালী ডানার চিল,

এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে

ধানসিড়ি নদীটির পাশে।’

সাত।

উপন্যাসটিতে আরেকটি ছোট্ট ঘটনার বর্ণনা ও ছোট একটি চরিত্র দিয়ে আমাদের কর্পোরেট সংস্কৃতি, চাকুরীজীবি ও চাকরিদাতার মানসিকতাকে লেখক তুলে ধরেছেন নিপুণ দক্ষতায় এবং অসাধারণ গদ্যে। পার্কে বেড়াতে আসা কিছু মানুষকে একই পরিবারের এবং তাদের মধ্যে বয়স্ক লোকটির মাথায় পাগড়ি দেখে তাদের বাড়ি পান্জাব অনুমান করে লেখক এক যুবককে ভারতের ‘ক্যানসার ট্রেন’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে যুবকটি পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চায়–লেখকের কেন মনে হলো যে তার বাড়ি পান্জাবে? উত্তরে লেখক বলেন, আপনার বাবার মাথার পাগড়ি দেখে। যুবকটি উত্তরে বলে, লোকটা তার বাবা নয়, তার বস। উপন্যাসে লেখক তখন বলছেনঃ

“তো, এই তুমি করছ তাহলে লন্ডনে এসে? নিজের বাবা-মাকে বিহারের ধানবাদে কি ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে ফেলে রেখে এই তোমার লন্ডনের চাকরি–বসের পরিবার নিয়ে হাইড পার্কে প্রিন্সেস ডায়ানা মেমোরিয়াল ফাউন্টেন দেখতে আসা? … ভালই জীবনে উন্নতি হবে তোমার খোকা, … তুমি চালিয়ে যাও এবং অবশ্যই বসের জুতোর মাপটা জীবনভর মনে রেখো।”

কয়েকটা লাইনে লেখক কত সাবলীলভাবেই না তুলে ধরলেন আমাদের চাকরি জীবনের উন্নতির মূল সূত্রটি! মনে পড়লো চল্লিশের দশকে লেখা একটা উপন্যাস ‘আবহমানকাল’–এর একটা অংশ। ছেলে আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গর্বে, আনন্দে বাবাকে চিঠি লেখে। পড়ন্ত জমিদার বাবা উত্তরে ছেলেকে লিখলেন, ‘but remember my son, all service is servitude’। চাকরি মানেই দাসত্ব, তা সে যে স্তরের চাকরিই হোক না কেন। কী নির্মম সত্য মূহুর্তের মধ্যে লেখক তুলে ধরলেন আমাদের সামনে!

আট।

অনেক নাটকীয়তা শেষে লেখক মেগান ও স্যামুয়েলকে নিয়ে আলথুসারের বাড়িটা দেখতে যান–সেখানেই তারা আবিস্কার করেন বাড়ির কেয়ারটেকার, অদ্ভুত এক চরিত্র বৃদ্ধ ক্লেইজকে, যে কিনা আলথুসারকে মনে করতে পারে শুধু একজন দক্ষ ফরাসী প্লামার বা পানির মিস্ত্রি  হিসাবেই, যিনি কিনা এই বাড়িতে এসেছিলেন বাড়িটির পানির লাইনের জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য। আলথুসার, যিনি দিনের পর দিন স্লিপওয়াক করতেন, সেই বিষয়ে ক্লেইজের ভাষ্য হলোঃ রাত জেগে জেগে আলথুসার সেই বাড়ির পানির লাইনের সমস্যাগুলো ঠিক করতেন।

উপন্যাস থেকেই আমরা জানতে পারি মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আলথুসার বালিশচাপা দিয়ে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন ১৯৮০ সালে। হত্যার কারণ হিসাবে তিনি বলেছিলেন–স্ত্রীকে ভালবেসে, নরক যন্ত্রণা থেকে তাকে মুক্তি দিতেই তিনি কাজটি করেছেন। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা আলথুসারকেও অবশেষে খুনী বানিয়ে ফেলে? সাকুরা গাছের প্রতি ভালবাসা জাপানিদেরকেও তো খুনী করে তোলে! থানকুনি বা তিমিকে ভালবেসেও তৃতীয় বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাপনের উপায়-অবলম্বনটুকু পরিবেশবাদীরাও বন্ধ করে দিতে চায় পরিবেশের দোহাই দিয়ে! এত সব জটিল বিষয়, তত্ত্ব এবং তার নানাদিক, সেগুলোকে একটা নিটোল গল্পে, অসাধারণ দক্ষতায় এই উপন্যাসে লেখক তুলে এনেছেন। তাই আলথুসারের বাড়ি থেকে ফেরার পথে স্যামুয়েল যখন কার্ল মার্কস যে বাড়িটিতে থাকতেন সেখানে যাবার প্রস্তাব করে, তখন লেখক প্লেনের সময় হয়ে যাবার দোহাই দিলে স্যামুয়েল বলেন, সেখানে গেলে হয়তো তারা দেখবেন কোন এক বৃদ্ধ বলছেন যে কার্ল মার্কস একজন জার্মান ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন।

সেই একই স্যামুয়েল এটাও বললেন যে, ‘মার্কস নিজে বলে গেছেন সবকিছু সন্দেহের চোখে দেখতে, অথচ লেনিন ও স্টালিন তাঁর নামের উপর দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গেল। … আর মার্ক্স যদি ১৯৩০-এর দশকে রাশিয়াতে ধরো কার্ল মার্ক্স হিসেবেই থাকতেন তো নিশ্চিত থাকো যে, স্টালিন তার ওই শুদ্ধি অভিযানে সবচেয়ে আগে মেরে ফেলতো মার্ক্সকেই’।

কথাটা ভয়ানক এবং অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু নিঃসন্দেহে স্ট্যালিনের বিতর্কিত ‘গ্রেট পার্জ’। এরকম একটি কথা ট্রটস্কিও তাঁর ‘মাই লাইফ’ বইয়ে লেনিনের স্ত্রী নাদেজদা ক্রুপস্কায়ার রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন যে, ১৯২৯ সালে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় সময়ে নাদেজদা তাঁকে বলেছিলেন যে, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আজ লেনিন বেঁচে থাকলে তাঁকেও স্টালিন ফাঁসিতে ঝুলাতেন!’

কী ভয়ংকর অভিযোগ! ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে স্যামুয়েলের ঐ কয়েকটা বাক্যে গোটা স্টালিন জমানার চিত্রটি লেখক তুলে আনলেন অবলীলায়। স্যামুয়েলের কাছ থেকে বিদায় নেবার মূহুর্তে চিৎকার করে স্যামুয়েল লেখককে বলেঃ

‘তোমাকে বলি যে, কেন আলথুসার তার বউকে খুন করেছিলেন। তিনি কাজটি করেছিলেন পুঁজিবাদের বিরোধিতা করার জন্য। পুঁজিবাদের পতন ঘটানোর জন্যই আলথুসার পুঁজিবাদের ভিত্তি যে পরিবার, মার্কসের বলা ব্যক্তিমালিকানার গোড়ার কথা যে পরিবার,  যা তার হিসাবে এক প্রধান আদর্শিক রাষ্ট্রযন্ত্র, আইএসএ, আইডিওলজিক্যাল ষ্টেট অ্যাপারেটাস, অর্থাৎ রাষ্ট্রের একটা ডিপার্টমেন্ট যে পরিবার, সেই পরিবারকেই তিনি চরম ঘৃণায় একটা বড় ধাক্কা দিতে চাইলেন তার নিজের বউকে গলা টিপে মেরে’।

স্যামুয়েলের ওপরের ব্যাখ্যা নিঃসন্দেহে একটা সরলীকরণ তবে আলথুসারের চিন্তা-কাঠামো ও তত্ত্বে ‘পরিবার’কে তিনি যেভাবে দেখতেন, স্যামুয়েল যেন লেখকের সঙ্গে তার ঐ শেষ কথায় সেটাই আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলেন।

নয়।

লেখক দেশে ফেরেন। স্ত্রীকে তার ব্যাংকিং চাকরি ছেড়ে দেবার ব্যপারটা বোঝাতে ব্যর্থ হলেন। আলথুসার তাঁর স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়েছিলেন, সেই ভয়ে লেখকের স্ত্রী একসময় বাবার বাড়ি চলে গেলেন। ‘ধানসিড়ি বাঁচাও’ আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে স্থানীয় এমপি তাঁকে শাসালেন। লন্ডনের পরিবেশবাদী নেতারা লেখককে যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেখান থেকে তারা সরে গেলেন। সচিবের সাথে মিটিং করতে গেলে তিনি লেখককে উল্টো দোষারোপ করতে থাকলেন এই বলে যে, সব কিছু ঠিকঠাক মতো চলছে, পরিবেশের নামে লেখক আসলে উন্নয়ন বিরোধিতায় নেমেছে। পরিবেশ নিয়ে দেশে যে কোন সমস্যা আছে সচিব সেটা সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন, যেমনটা সব দেশে সব আমলারাই করে থাকেন। আলবেয়্যার কাম্যুর ‘প্লেগ’ উপন্যাসে যেমন শাসকরা শহরের প্লেগের কথা প্রথমে অস্বীকার করেছিল, আমরা জানি চীনের করোনাভাইরাসের কথাও সেখানকার শাসকরা প্রথমে চেপে গিয়েছিলেন! দুনিয়া জুড়েই তো এই চিত্র। লেখক তাই হয়ে পড়েন একা–তাঁর ‘পারহেসিয়া’ নিয়ে।

উপন্যাসটি পড়ে একটি বিষয় দেখে বিস্মিত হলাম যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে ছোট আকারে হলেও যে আন্দোলন হয়েছে বা হচ্ছে তার কোন উল্লেখ নেই। দিনাজপুরে উন্মুক্ত কয়লাখনির প্রতিবাদে মানুষের আন্দোলন, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু, সুন্দরবন রক্ষায় দুর্বল হলেও ধারাবাহিক আন্দোলন এবং আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জেল-জুলুম ভোগ, সেসবের কোন উল্লেখই নেই। লেখক যেন এড়িয়ে গেছেন সচেতনভাবে অথবা লেখক হয়তো বিষয়টি ভালভাবে নোটিশই করেননি, অথবা এমনও হতে পারে এসব আন্দোলন বৃহত্তর জনগণের মনে রেখাপাত করতে যে ব্যর্থ হয়েছে, লেখক এই নীরবতা অবলম্বন করে সেই সত্যটিই কি তুলে ধরলেন? আর তাই লেখকের ‘পারহেসিয়া’ নিয়ে তিনি একা হয়ে পড়লেন।

বাড়ির দারোয়ান আখতার তার বৃদ্ধা মা’কে মারধোর করে, গরুর গোয়ালে থাকতে দেয়, সেই ঘটনাও আমরা জানতে পারি লেখকের বয়ানে। অসহায়, ক্ষুব্ধ দারোয়ানটিকেও খুশী করতে হয় তার বউকে, আর সে তার নিজের অক্ষমতাটুকুু ঢাকে দুর্বল মায়ের ওপর অত্যাচার করে। উপন্যাস শেষ হয় যখন লেখক কল্পনা করেন পথের বিড়ালটি বলছেঃ ‘ চিন্তা নেই, পারহেসিয়ার নামে যা মনে চায় তা-ই বলতে পারো। তুমি ও তোমরা যা বলো তা মিথ্যাই তো বলো’। আর তখন পাঠক হিসাবে আমার মনে হলো আলথুসারের ঘাড়ের ওপর মিশেল ফুকো যেন নিঃশ্বাস ফেলছেন!

দশ।

লেখক এই উপন্যাসে দক্ষতার সঙ্গে জটিল রাজনৈতিক ও দার্শনিক প্রশ্নগুলো অবলীলায় তুলে এনেছেন অসাধারণ চরিত্র চিত্রনের মাধ্যমে। উপন্যাসের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখকের সঙ্গে মেগানের সম্পর্ককে ডিফাইন করা হয়েছিল ‘পিতা-কন্যা’র সম্পর্ক হিসাবে কিন্তু মার্কের বাসায় রাত কাটাতে যাওয়া লেখক অন্যমনস্কতায় যখন কমন বাথরুমে ঢুকে শুধুমাত্র নীচের অন্তর্বাস পরা মেগানের দুর্দান্ত শরীর দেখতে পান এবং মেগান ঐসময় লেখকের অভিপ্রায় সম্পর্কে সন্দেহ করে লেখককে এক দুঃসাহসিক প্রস্তাব করে বলেঃ

‘ইউ হ্যাভ ডিফাইনড দিস রিলেশনশিপ। ইউ হ্যাভ গিভেন ইট এ নেম। হোয়াট ক্যান আই ডু? ইফ ইউ ওয়ান্ট, ইউ ক্যান চেন্জ দ্য নেম এন্ড দ্য টার্মস’।

তো, তখন মনে হয় মানুষে মানুষে আপাত, বাহ্যিক সম্পর্কগুলোকে আমরা যতটা সরল ও স্বাভাবিক মনে করি, আসলে সেই সম্পর্কগুলো এতটা সরল ও সাধারণ নয়। মেগানের প্রতি লেখকের মায়াও কুটিল ও জটিল হতে পারে, আবার মেগানেরও তাই। আর তাই শর্ত মোতাবেক করিমকে মারধোর করলে মার্কের স্ত্রী জেসিকা তাকে ছেড়ে করিমের কাছে চলে যাওয়ার আপাত সরল ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাও প্রশ্নবিদ্ধ হয় যখন দু’দিনের পরিচয়ের পর একই বিছানায় মার্ক ও মেগানের শীৎকার শুনতে হয় লেখককে। তাহলে মার্ক জেনে বুঝেই এই ঝুঁকি নিয়েছে? মার্ক জানে করিমকে আঘাত করলে করিমের পুরাতন প্রেমিকা জেসিকা তাকে ছেড়ে যাবে আর তাহলেই সে মেগানকে পাবে? এসবই তাহলে তার একটা পরিকল্পনারই অংশ? আর ‘বোকা’ মেগান সেই ফাঁদেই পা দিল?

উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখক যেমন আলথুসারের রাষ্ট্রচিন্তা ও ভাবাদর্শ দ্বারা তাড়িত হয়েছেন, পাঠকের মগজে যখন সেই চিন্তা জায়গা নিতে শুরু করেছে তখনই লেখক স্যামুয়েলের মুখ দিয়ে আলথুসারের চিন্তাকে চ্যালেন্জ ছুড়ে দিচ্ছেন, কারণ স্যামুয়েল মার্ক্সের উদ্বৃতি দিয়ে লেখককে বলছেন, ‘সব কিছুকে সন্দেহ করো’। মার্ক্সের ‘থিসিস-এন্টিথিসিস-সিনথিসিসের’ এটাই তো প্রাথমিক পাঠ। আর এভাবেই পাঠকের মগজে বাসা বাঁধতে থাকা চিন্তাটুকু লেখক নিজেও যেন আবার সজোরে আঘাত করছেন, আর মার্ক্সের সেই কথারই প্রতিধ্বনি করে বলছেন–‘সব কিছুকে সন্দেহ করো’। মাসরুর আরেফিনের এই উপন্যাসটি পড়ে তাই মনে হলো যে তিনি পাঠকের মগজে পেরেক ঠোকার ক্ষমতা রাখেন।

এগার।

লেখকের প্রথম উপন্যাস ‘আগষ্ট আবছায়া’ পড়ে প্রতিক্রিয়ায় লেখকের গদ্যশৈলী নিয়ে বলেছিলামঃ “লেখকের এই উপন্যাসটি টুক করে গিলে ফেলার নয়, উপন্যাসটি পাঠ করতে পাঠককে হয়তো চিবানোর প্রস্তুতি লাগতে পারে–চোয়াল ব্যথা হতে পারে তবে পাঠ শেষে পাঠক ডালিম খাওয়ার পরিপূর্ণ আনন্দ পাবেন বলেই বিশ্বাস করি।”

কিন্তু তাঁর এই দ্বিতীয় উপন্যাসটি পড়ে মনে হলো লেখকের গদ্যরীতি যেন তাঁর একান্ত নিজস্বতা নিয়েই আরো সাবলীল, মজবুত এবং শক্তিশালী একটি ধারা হয়ে উঠেছে। এই উপন্যাসেও সেই একই দীর্ঘ লাইনে, কমা, সেমিকোলন যোগে অসাধারণ সব উপমায় লেখক ভাষার ওপর মুন্সিয়ানা দেখাতে পেরেছেন। তাঁর ভাষা এখানে আরো সংহত এবং গল্পের ঠাসবুননে অনন্য হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো জায়গায় ‘কবি’ এবং ‘ঔপন্যাসিক’ মাসরুর আরেফিন যেন এক সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছেন এক নতুন এবং চমকানো গদ্যরীতির দিকে। উপন্যাসের ১৪৭ পৃষ্ঠায় প্রথম ও শেষ প্যারায় এক নতুন ভঙ্গিতে লেখককে ব্যাক্য শেষ করতে দেখি। লেখক এক জায়গায় বলছেনঃ ‘এমন সময় মার্ক এসে হাত ধরল আমার, মার্ক।’ ঐ একই পৃষ্ঠার শেষ লাইনে এসে লেখক বর্ণনা করছেনঃ ‘-মানে ভুবন (উপন্যাসের একটি চরিত্র) দেয়ালে পিঠ রেখে, আর রুবি (আরেকটি নারী চরিত্র), শ্যামলা রঙের হাফ ব্রিটিশ হাফ তানজানিয়ান সুন্দরী রুবি, রাস্তার দিকে মুখ করে শুন্যে ভেসে তার মুখ ও শরীর নীচের দিকে ভাসিয়ে দিয়ে উড়ন্ত পাখির মতো হয়ে, রুবি!’

ওপরের দু’টো বাক্যের শেষে দু’টো চরিত্র যাদের সম্পর্কে কিছু বলা হচ্ছে তাদের নাম উল্লেখ করে বাক্য শেষ করাটা অভিনব মনে হয়েছে। আবার উপন্যাসের ২৩৯ পৃষ্ঠায় লেখক বরিশালের আমানতগন্জের এক পুকুরপাড়ে তাঁর শ্যালিকাকে দাঁড় করিয়ে বর্ণনা করছেনঃ

“…বড় মাঠের পুকুরের পাশে সে আটকে গেছে বড় বড় পদ্মপাতার ওপরে বসে থাকা বেশকটা বহুবর্ণ গুইসাপ দেখার মধ্যে, যারা কিনা বহুবর্ণ ওই সন্ধার কারণে, মারাত্মক সে সন্ধা, যা আকাশে দিগন্তরেখার সমান্তরালে কমলা ও কমলা-হলুদ রঙের অসংখ্য ছোট ছোট টান ছড়িয়ে রেখেছে কোনো সূর্যমুখী ফুলের কেন্দ্র ও তার পাপড়িদের মতো করে, আর সেই টানগুলোর মাঝখান দিয়ে যেন একটু পরপর গড়িয়ে যাচ্ছে আগ্নেয়গিরির তাজা লাল-বর্ণ আভা, আর গুইসাপগুলো সে লালের ঔজ্জ্বল্য তাদের চামড়ায় ধরে কেমন রংবাহারি এবং ফারজানা, এমন কিছু আগে কখনো দেখেনি বলে, পাথর।”

আমি উপন্যাসের এই জায়গায় এসে চমকে উঠি, কয়েকবার লেখাটুকু পড়ি। শব্দ চয়নে, বাক্য গঠনে, উপমা ব্যবহারে এবং গোটা বাক্যের অন্তর্নিহিত ভাবকে ঐ শেষের একটি মাত্র শব্দ ‘পাথর’ দিয়ে যেভাবে তিনি প্রকাশ করলেন সেটা এক কথায় অনবদ্য, অসাধারণ!

উপসংহার।

উপন্যাসটিতে লেখক এমন এক প্রশ্নের সামনে এনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন যার উত্তর ছাড়া, যার মীমাংসা ছাড়া আজকে আমাদের সামনে এগোনো বোধ করি বন্ধ। রাষ্ট্র, ক্ষমতা এবং তার সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক না বুঝলে কী পরিবেশ আন্দোলন, কী রাষ্ট্র বিপ্লব কোন কিছুই সম্ভব নয়। উপন্যাসে বর্ণিত লন্ডনের বন্ধ রাস্তা-ঘাট যেন আমাদেরকেও বলছে –Tell the truth, অন্যথায় রাস্তা বন্ধ, এগোনো যাবে না।

মাসরুর আরেফিন তাঁর নিজস্ব গদ্যশৈলী, ভাষার কারুকাজ এবং শ্বাসরুদ্ধকর গল্প বয়ানে পরিবেশবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক, পূর্ব-পশ্চিমের দ্বন্দ্ব এবং অর্থনৈতিক দিকগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্র ও ক্ষমতার প্রশ্ন, যে প্রশ্নের উত্তর ছাড়া লেনিনের ভাষায় ‘রাষ্ট্র প্রশ্নে বোঝাপড়া ছাড়া রাজনৈতিক সাবালকত্ব দৃঢ়তা পায় না’ এবং সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে, ক্ষমতার সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কসূত্রটি, লেখার ভাষা, কাহিনীর ঠাসবুনট ও নাটকীয়তা, বিষয়ের গভীরতা, চরিত্র চিত্রনে মুন্সিয়ানা এবং সর্বোপরি এরকম জটিল বিষয়কে উপন্যাসের বিষয় করে যে চ্যালেন্জ লেখক নিয়েছেন, তার সব কটা পরীক্ষায় উপন্যাস হিসেবে আলথুসার সফল হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।

লেখকের জন্য শুভকামনা! উপন্যাসটি পাঠকপ্রিয় হবে বলেই বিশ্বাস করি!!

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top