কবি ‘নওশাদ নূরী’ প্রসঙ্গে কবি আসাদ চৌধুরী ।। আলাপেঃ মাজহার জীবন ।। জাভেদ হুসেন

“আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসের নামকরণের পরামর্শটাও ওর”
[বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী। বাংলা- উর্দু সাহিত্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি। কবি নওশাদ নূরী প্রসঙ্গে তিনি গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তাঁর বাসায় মননরেখার জন্য এই সাক্ষাৎকারটি দেন। এই সাক্ষাৎকারে কবি আসাদ চৌধুরী বন্ধু কবি নওশাদ নূরী সম্পর্কে যেমন অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন, তেমনি প্রাসঙ্গিকভাবে সাহিত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও খোলামেলা আলোচনা করেছেন। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মাজহার জীবনজাভেদ হুসেন।]
———-
আপনার সাথে নওশাদ নূরীর প্রথম কবে দেখা হয়?
আমার সাথে নওশাদ নূরীর খুব যে একটা যোগাযোগ ছিলো, তা না। পাকিস্তান আমলে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন আমাদের একমাত্র আড্ডার জায়গা ছিলো নিউমার্কেট। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিলো না, তাই আমরা সেখানে নিয়মিত যেতাম। এই নিউমার্কেটে একজন লোক খুব কমন ছিলো- পাজামা, পাঞ্জাবি, একটা কোট। তখন তো জওহর কোট, মুজিব কোট বলতো না। দেখতাম, ঐ লোকটা পান খেতে খেতে হাঁটছেন।

এটা কত সালের কথা ?
১৯৬৩ -’৬৪ এর কথা। ৬৩’র ডিসেম্বর বা ৬৪’র জানুয়ারির দিকে সৈয়দপুরে একটা অনুষ্ঠান হলো। আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো, আমি গিয়েছিলাম। তখন ছাত্র ইউনিয়নের দু’জন নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও রাশেদ খান মেনন আমাকে বললেন, ‘সৈয়দপুরে মুশায়েরা হবে। তুমি চলো।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, তাহলে যাই।’ ওখানে গেছি, যেয়ে দেখি যে বিশাল আয়োজন। মাঠে ত্রিশ-চল্লিশ হাজার লোক। আমি কোনো কবিতা নিয়ে যাইনি। তখন সালাউদ্দিন মাহমুদ বলে ওদের একজন কবি আমাকে বললেন, ‘কবিতা বানা লো’। আমি তখন কোনোমতে চার লাইন কি ছয় লাইনের একটি কবিতা লিখলাম। সালাউদ্দিন মাহমুদ ছিলেন ভুট্টোর খুব কাছের লোক। কিন্তু অসম্ভব প্রগতিশীল চিন্তার এবং চিন্তার দিক দিয়ে নওশাদের সাথে তাঁর মিল ছিলো। নওশাদ তাকে বললেন, ‘গমের ক্ষেত ও ভুট্টার ক্ষেতের কথা ভুলে এখন ধানক্ষেতের চিন্তাটা কর, মাথায় নাও।’ দু’জনেরই একই চিন্তা এবং দু’জনেই বোধহয় তখন একটু পিকিংপন্থী রাজনীতি যাকে বলি তাঁর সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে তখনও বামপন্থায় অতটা বিভাজন হয়নি। মাও সে তুঙ এর প্রতি এদের দুর্বলতা ছিলো। সালাউদ্দিনের দুর্বলতার একটা প্রধান ব্যাপার পরে ভুট্টোর সাথে যোগাযোগের কারণে। তবে নওশাদের সাথে তা ছিলো না। তো নওশাদকে আমি ঐ প্রথম বোধহয় দেখি। ওরা দু’জনে আমাকে চা দিলো, তারপর আমার ৫৫৫ সিগারেট দিলো, ম্যাচ দিলো একটা। বানালো দোস্ত। এবং সেখানে সাদীরা তখন বসে আছেন।

আহমেদ সাদী?
হ্যাঁ। আমি কবিতা লিখবো, আহমেদ সাদী উর্দুতে অনুবাদ করে দিবে। আমি লিখলাম, সাদী উর্দুতে ট্রানস্লেট করলেন। তারপর কবিতা পাঠের আসর যখন শুরু হলো, আমরা যখন গেলাম, প্রথমদিকে তো জুনিয়ররা আগে পড়ে, তাই আমার পর্ব। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার লোকের সামনে কোনোদিন কবিতা পড়িনি। বলতে কি, এর আগে আমি কবিতাই কোথাও পড়িনি। জীবনে প্রথম কবিতা পড়লাম বাইরে। যে কারণে সৈয়দপুরের প্রতি আমার অসম্ভব দুর্বলতা।

ওখানে বাঙালি আপনারা কে কে গেলেন?
ফয়েজ ভাই- ছড়াকার ফয়েজ আহমেদ, কবি সুফিয়া কামাল, তারপরে আরও কে কে মনে নেই ঠিক এবং আমি। ওখানকার হাসান সাঈদ, মার্গুব আমার বন্ধু ছিলো। একসঙ্গে আড্ডা মারতাম আমরা। মার্গুব তো আমার ক্লাসমেট ছিলো। যাক, ঐ সময় নওশাদ নূরীর সাথে আমার একটু কথাবার্তা হয়। তারপর তো আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে গেলাম। আমার সাথে যোগাযোগ নাই। ’৭৩-এ একটি মুশায়েরা হলো মিরপুরে। আমি আর আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সেখানে গেলাম। সবাই যেতে মানা করলো। কেউ যেতে দিবে না আমাদেরকে। বুঝালো, ‘আসাদ ওরা মেরে ফেলবে, আসাদ ওরা মেরে ফেলবে।’ কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, যাবোই। আমরা দু’জনে গেলাম। সেখানে প্রথম হাফেজ দেহলভীকে দেখলাম। আরও অনেকে, যারা খ্যাতিমান ছিলেন। ভাবি নাই ওদের সাথে দেখা হবে। কবিতা শুনলাম; না বুঝেও বাহ্ বাহ্ করলাম। তারপরে’৭৫ এর দিকে বোধহয় টমাস হ্যান্স এবং নওশাদকে ধরলাম টেলিভিশনে উর্দু কবিতা পড়ার জন্য- প্রচ্ছদ নামের অনুষ্ঠানে। উর্দু বললে লোকজন চেঁচাবে সেজন্য টমাস হ্যান্সকে বললাম ব্যালান্স করার জন্য। টমাস ইংরেজি কবিতা বলবে। হ্যান্সের কবিতাগুলো আমি যেগুলো সে সময় পেয়েছি পরে অনুবাদ করেছিলাম। যাক, নওশাদ কেনো ঢুকলো বিটিভিতে সেজন্য গালাগাল শুনলাম। পাকিস্তানের দালাল ইত্যাদি।

এটা কী পনেরই আগস্টের আগের কথা?
না। পনেরই আগস্টের পরে। তখনই নওশাদ আমাকে বলেছিলো বঙ্গবন্ধু তাকে ধরেছিলেন জারিদা বের করার জন্য। জারিদা পত্রিকার কথাটি আমি নওশাদের কাছ থেকেই শুনেছিলাম। ঐ পত্রিকার নব্বই ভাগ লেখা ছিলো বাংলাদেশের, উর্দুতে অনুবাদ। নিজে অনুবাদ করেছেন অথবা আহমেদ সাদীকে দিয়ে করিয়েছেন। অন্যান্য আরও কিছু লোককে দিয়ে করিয়েছেন। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, নওশাদ তখন বাংলাদেশে উর্দু সাহিত্যের অঘোষিত অভিভাবক। হাফেজ দেহলভী ছিলেন, কিন্তু তিনি যেহেতু ইসলামী ওরিয়েন্টেড সেজন্য সবার কাছে এক্সেস ছিলো না। কিন্তু শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে ফজল শাহাবুদ্দীন, সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ শামসুল হক এরা সবাই নওশাদ নূরীকে পছন্দ করতেন। কিন্তু কেউ সামনে আসতেন না।

তার মানে তাঁর সাথে পাবলিক প্লেসে কেউ এক সাথে যাননি? এ সুযোগ তাকে কেউ দেয়নি?
নো। নেভার।

আখতারুজ্জমান ইলিয়াসের সাথে তাঁর সম্পর্কটা কেমন ছিলো?
খুবই ভালো। যেমন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসের নামকরণের পরামর্শটাও ওর। ইলিয়াস বললেন, ‘খোয়াবনামার যুক্তিটা কী’? নওশাদ বললেন যে,‘এদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। তারা খোয়াব দেখছে সুন্দর জীবনের। যেমন পাকিস্তান, এরপর পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ। ঐ একই খোয়াব’। ইলিয়াস বললেন, ‘তো কি হবে নাম?’ নওশাদ বললেন, ‘খোয়াবনামা; ইরানে যেমন শাহনামা।’ তবে নওশাদ যে তাঁর ওখানে খুব গেছেন তা না। সেই সময় আমি নওশাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে জানতে পারি। তিনি মওলানা ভাসানীর খুব ভক্ত ছিলেন। তারপর আব্দুল হক, মার্কবাদী-লেনিনবাদী। আব্দুল হকের মৃত্যুতে তিনি খুবই কেঁদেছেন। কবিতা লিখেছেন। সেই কবিতা আমি অনুবাদ করেছি।

উনি কি ডিরেক্ট কোন পলিটিক্যাল পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন?
পলিটিক্যাল পার্টির সাথে ঐভাবে যুক্ত ছিলেন না। উনার সঙ্গে বরং বঙ্গবন্ধুর কাছের

ঢাকা থেকে আপনারা অনেকে যেতেন?
হ্যাঁ, শামীম (কবি শামীম জামানভি) ভালো বলতে পারবে এটা।

ওটা নিয়ে একটা অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
আমরা যাচ্ছি। প্রথমত ট্রেনে আমরা দেখলাম নূরীকে, তাঁর সঙ্গে একটা বিশেষ বালিশ। কোথাও গেলে ওটা নিয়ে যান তিনি- সব সময়। পাতলা চিকন, এই বালিশ ছাড়া তিনি ঘুমাতে পারেন না। জামা-কাপড় নিক বা না নিক ঐ বালিশটা সাথে নিবেনই। তো চট্টগ্রামে হোটেলে উঠলাম আমরা। হোটেলের বালিশ আলাদা, তাঁর বালিশ আলাদা। যাহোক, তারপর ওখানে নাঈম ভাই ছিলেন (নাঈম আহমেদ মারা গেছেন), অনুষ্ঠানে উনার নিজামত মানে উপস্থাপনাটা খুব চমৎকার ছিলো। চমৎকার! শুনে কোনো বিরক্তি লাগতো না। আর কি পাগল প্রেমিক একেবারে! উর্দু কবিতার পাগলা প্রেমিক। ওর মাত্র একটি কবিতা আমি অনুবাদ করলাম। আর পাওয়াই গেলো না।

চট্টগ্রামের কি বাঙালি কবিরাও থাকতো ওখানে? ঢাকা থেকে কি আপনিই যেতেন?
জাহিদ ছিলো। ও তখন চট্টগ্রাম রেডিওতে চাকরি করতো। জাহিদ যেতো। আর,কী.. আজহার বলে এক মহিলা। নিউজ পড়তেন রেডিওতে। তিনি থাকতেন। বাঙালিদের মধ্যে এ ক’জনই থাকতেন। আর ওখানে বাঙালি বলতে যেতেন যারা চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ে তাঁরা উর্দু পড়াতেন। চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ে একজন অনুবাদ করতেন। তাকে আমি দেখিনি। হয়তো নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, তাকে আসতে দেয়নি। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাকে দিয়ে অনুবাদ করাচ্ছে, যে ডিকশনারি এখানে করাচ্ছে, তাকে আমি নিয়ে এসেছিলাম এখানে, আমাদের বাংলা- উর্দু সাহিত্য ফাউন্ডেশনে। ড. সৈয়দ ইউসুফ হাসান আরেক জন। ইউসুফ হাসান হচ্ছে যেই লোক, আহা রে! ২২ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সন তুলারাম কলেজের মিছিল নিয়ে আসতে গিয়ে উনি এরেস্ট হলেন। অথচ নিজে উর্দুভাষী। ইউসুফ হাসানকে ছাড়া বঙ্গবন্ধু পিকিং যাবেন না। প্লেন ছাড়ার চার ঘন্টা আগে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি যাবো না, যদি ইউসুফ হাসান না যায়।’ তখন ঐ অবস্থায় তাঁর পাসপোর্ট বানিয়ে, (ভিসা ওখানে গিয়ে করানো হয়), পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে হাতে নিয়ে, টিকিট করে তারপর বঙ্গবন্ধু তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। মাও-সে-তুঙ এর সাথে বঙ্গবন্ধুর যে ছবিটা, তার মধ্যে ড. ইউসুফ হাসানের ছবিও আছে।

নওশাদ নূরীর সাথে কি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি যোগাযোগ ছিলো?
ঐ পত্রিকার সুবাদে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন নওশাদ তুমি পত্রিকাটি বের কর। উনি বললেন, বঙ্গবন্ধু এখনও সময় আসেনি, লোকে সহজভাবে নিবে না। একটু অপেক্ষা করা উচিৎ আমাদের। পরিস্থিতি একটু শান্ত হোক, তারপর বের করা যাবে।

তার মানে রাজনৈতিক কারণে উনার সাথে আগে থেকেই একটা সম্পর্ক ছিলো?
এটাও হতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর সাথে কি উনি যোগাযোগ রাখতেন? যেমন আপনি বললেন ভাসানী বা আব্দুল হকের প্রসঙ্গে।
আব্দুল হককে নিয়ে তো উনার কবিতাই আছে? নওশাদের সাথে তাঁরা যোগাযোগ রাখতেন। উনার পক্ষে যোগাযোগ রাখা সম্ভব ছিলে না। কারণ নওশাদের ফেমিলি মেম্বার বেশি ছিলো। আর চাকরি ছিলো না।

স্বাধীনতার পরেও কি তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিলো?
উনি রেলওয়ের চাকরি ছেড়ে দিলেন। অডিট ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে পাকিস্তান থেকে চলে আসলেন।

উনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসলেন কেন?
এটা উনার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। মনে পড়ে, তাঁর স্ত্রীকে আমি আমার একটি কবিতার বই দিলাম। উর্দুতে লিখলাম- ‘কোনো কোনো ভাবী মা হয়ে যায়।’ তাঁর স্ত্রীর অসম্ভব উইট, হিউমার সেন্স অসম্ভব ছিলো। একদিনের কথা, আমি তাঁর বাসায় পান খাচ্ছি তো। পানে দিচ্ছি একটু এলাচ, একটু দারুচিনি, একটু জর্দা। তো উনি দেখে বললেন- পান মে ইতনা মাসালা তো গোশত কিধার হ্যায়? মানে, এতো মসলা যখন আছে, মাংস কোথায়? আর অসম্ভব সহ্যশক্তি।

এটা না থাকলে তো ঐ লোকের ঘর করাই অসম্ভব ছিলো?
হ্যাঁ অসম্ভব সহ্যশক্তি। অসম্ভব ।

উনার বাড়িতে আপনার যাওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলবেন।
আমি যখন তাঁর বাসায় যাই প্রথম যে কবিতাটি পড়তে নিয়ে গেলাম সেদিন উনার প্রচণ্ড জ্বর ছিলো। কিন্তু কবিতা শুনানোর কথা বলতেই তাঁর আর জ্বর থাকলো না। ওই অবস্থাতে ওখানে বসে বসে আমি উনার কবিতা অনুবাদ করলাম। তিনটি কি চারটি কবিতা অনুবাদ করেছিলাম। শুনে বলেছিলেন, বাহ বাহ। ওরা আড্ডা মারতেন দৈনিক বাংলার আশপাশকে ঘিরে। আমি ওদিকে যেতাম না। আমি থাকতাম চিরকাল এদিকে। আর আমি ঢাকায় আসি ’৭৩ এ।

তারপর তো আপনি দীর্ঘ সময় তাকে পেয়েছেন?
হ্যাঁ। যেমন পাকিস্তান থেকে ভালো কোন লেখক আসলে ওর বাসায় আসতো এবং তিনি আমাকে খবর দিতেন। আমার মনে আছে, নাজমুন নেছা আসছে জার্মানি থেকে। ও তখন ডয়েৎসে ভেলেতে কাজ করে। তো উর্দু ডিপার্টমেন্টের জন্য সে একটা সাক্ষাৎকার নিবে। আমি তাকে বললাম নওশাদের সাক্ষাৎকার নাও- ইলিয়াস, শামীম জামানভি আর কার কথা বলেছি মনে নেই এখন।

ভারত থেকে কবিরা এলেও তো উনার খোঁজ করতেন?
যেমন কলিম..কি জানি কলিম ওয়াজিবুল্লাহ..ভুলে গেলাম।

কবি?
না। ও হচ্ছে কিতাবাৎ (স্ক্রিপ্ট রাইটার)। নামকরা কিতাবাৎ। কলকাতার দিদার বখশ লেনের। ওর ছেলেও কিন্তু নামকরা- কিতাত করে। বোম্বের ফিল্ম ইত্যাদি অনেক কিছুর কাজ করে সে। তো তাকে বাসায় নিয়ে চলে গেলেন নওশাদ। তখন তিনি ছোট্ট বাসায় থাকেন। কলিম সাহেব বড়লোক মানুষ, অমন বাসায় তো থাকেন না। তো তাকে তাঁর সেই ছোট্ট বাসায়ই নিয়ে চলে গেলেন নওশাদ। আর একটা ব্যাপার, আজকাল কম্পিউটারের কাজ হয়। কিন্তু এখনও কিতাত এর অনেক দাম আছে ওখানে।

প্রেস্টিজিয়াস উর্দু পাবলিকেশনের মানেই তো হচ্ছে ওটা?
হ্যাঁ। কিতাবাৎ। আমাদের দেশে আমার দু’জন বন্ধু ছিলেন- আব্দুল আহাদ আর…। বোধহয় আহাদ এখনও বেঁচে আছেন। উনি ছিলেন টেলিভিশনের উর্দু স্ক্রিপ্ট রাইটার।

পরবর্তীতে কলকাতার সাথে নওশাদ নূরীর সম্পর্ক ছিলো?
হ্যাঁ। কলকাতার লোকেরা ওকে সত্যিই পছন্দ করে। আমি যে গেলাম আমার সঙ্গে ওদের সম্পর্ক হলো। এ ব্যাপারে নওশাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাকে কলকাতায় নিমন্ত্রণ করা হলো নওশাদের কবিতার বইটি বেরোবে- এই উপলক্ষে আমি যেনো যাই। আর নওশাদ সেই কবিতার বইটি উৎসর্গ করেছিলেন আমাকে।

তাঁর সেই প্রথম কবিতার বইটি?
হ্যাঁ। ধরেছেন আমাকে যাওয়ার জন্য। আমি গেলাম। দিস ইজ মাই ফার্স্ট জার্নি টু কলকাতা। যাক, সেখানে তিনি অসম্ভব পপুলার। ওখানে অনুষ্ঠান হলো, টেলিভিশনে যারা এনাউন্স করে তাঁরা এসে এনাউন্স করলো অনুষ্ঠানটি। দুই মহিলা রেডিওর এনাউন্সার- তাদের কাছে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকেরা এ বই নিয়ে আলোচনা করলেন। একমাত্র বক্তা বাংলায় আমি। আমি যখন উঠলাম ভাবা যায় না কী খুশি হলো ওরা- যে বাঙালি আসছে শেষ পর্যন্ত! আমি বললাম যে আমার উর্দু এতো টুটাফাটা যে উর্দু বললে আপনারা রাগ করবেন, আমি বরং বাংলায় বলি। বাংলায় বললাম, তবে একটু উর্দু মেশানো বাংলা ছিলো।

হা হা হা। চাটগেঁয়ে সেই উর্দুর মতো!
হা হা হা। হ্যাঁ। অলমোস্ট।

চট্টগ্রামের সাথে উনার সম্পর্কটা গাঢ় ছিলো, এর কারণ কী?
উর্দু, উর্দু ভাষাভাষীরা ছিলো।

তাহলে সৈয়দপুরের সাথে না কেন?
আরে! সৈয়দপুরের সাথে না কে বললো? আহমেদ সাদী ঢাকায় এলে পরে তাঁর ওখানে উঠবে, ফাহমী ঢাকায় আসলে উঠবে। আর কোন চুলোয় যাবে?

পাকিস্তান থেকে?
পাকিস্তান থেকে এলে ওরাও ওখানে উঠবে। আহমদ ফারাজ তাঁর বাসায় উঠেছিলেন। ফারাজ যেহেতু গিয়েছিলেন সেহেতু আমাদের অধ্যাপক কবির চৌধুরীও তাঁর বাসায় গেছেন। কলু সমু আবলু বাশার গেছে। বাঙালি টিচাররা যায় নাই, উর্দুর টিচাররা যায় নাই। এরা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকতে চায়, প্রসারিত হতে চায় না। উর্দু ডিপার্টমেন্টের তো পৃথিবীর সব দেশের উর্দু ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ থাকবে, এদের এটা নেই কেন? তবে বাংলাদেশে এ ব্যাপারে আহমেদ ইলিয়াস ছিলেন শার্প। তিনি যোগাযোগ রাখতেন। তো একবার আমাকে হায়দারাবাদে আমন্ত্রণ করলো, আমি যখনই যাবো ওরা রাজি। কিন্তু দেড় বছরের মধ্যে আমি যেতে পারলাম না। এর মধ্যে ভারত সরকারের পরিবর্তন হলো। গুজরাল চলে গেলেন, এলেন মোদি। এখন ঐখানে যেটা ছিলো উর্দু আদাব, সেটা হয়ে গেলো উর্দু মঞ্চ। ওরা আর আমাকে ইনভাইট করেনি।

নওশাদ কি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কলকাতা বা লাহোর গেছেন?
কলকাতা গেছেন, বহুবার গেছেন।

উনার ছেড়ে আসা বাড়ির সঙ্গে কি যোগাযোগ হতো?
নওশাদের এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো, উনি নিজেও কবিতা লেখেন।

কবি হিসেবে নওশাদ নূরীকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
সেটা হচ্ছে গোটা পৃথিবীতে, এজন্য আমি মার্কসবাদকে প্রশংসা করবো, উর্দুর ব্রডনেসের কথা বলবো। যেমন ইকবালের কথা বলি। ইকবাল ইসলামী ভাবধারার কবি কিন্তু তিনি আধুনিক জীবনের এমন কোনো বিষয় নেই যেটা টাচ করে যাননি- যেমন হেগেল হোক, নিৎসে হোক, বা লেনিন হোক। ফয়েজ আহমেদ ফয়েজও তাই করেছেন। ফয়েজের ‘রিশতাদরি’- সে একই কাজ করতো। কৃতিত্ব হচ্ছে ফয়েজ, নেভার কেয়ার ফর হিজ আইডেনটিটি। কিন্তু নওশাদ আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ছিলেন। এখানে বুঝতে পারতেন যে, আমি এখানে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মধ্যে আছি। কিন্তু এই দ্বীপ আমার দ্বীপ, এই বোধটাও তাঁর ছিলো। এটা আমি তাঁর বড় কাজ বলে মনে করি।

কি কি কারণে আপনার তা মনে হয়েছে?
বাঙালি সংস্কৃতি, বাঙালি চেতনা- যা তিনি ধারণ করতেন। যেমন জারিদায় যে লেখা বেরোতো, সেখানে বাংলাদেশের টপমোস্ট নভেলের অনুবাদ বেরিয়েছে, টপমোস্ট কবিদের কবিতার অনুবাদ হয়েছে। এমনকি তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র- মুহম্মদ নূরুল হুদা, ওর কবিতা ছাপা হয়েছে। মারা গেলো যে, শান্তনু কায়সার, ঢাকা কলেজের তখন সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র, তার লেখাও ছাপা হয়েছে।

পত্রিকাটি কি তিনি একাই চালাতেন?
এটা আমি বলতে পারবো না। আমি পত্রিকাটি দেখিনি। এ সম্পর্কে ইলিয়াস বলতে পারবেন।

উর্দু কবি না, একজন কবি হিসেবে আপনি তাঁর সম্পর্কে কি মূল্যায়ন করবেন?
কবিতায়, আসলে কবিতা হয়ে ওঠার মতো একটা ব্যাপার আছে। কবিতায় নওশাদের উপমা, উৎপ্রেক্ষা, তাঁর চিত্রকল্প অসাধারণ- তুলনাহীন। কোথাও বাড়াবাড়ি নেই। উর্দু কবিতার বেলায় একটা প্রবণতা আছে- একটু বাড়তি এক্সাজারেশন, বাড়িয়ে বলা, মধ্যযুগের সাহিত্য যেমন, একটু অতিরিক্ত অতিরিক্ত বলা- ওর কবিতায় তা নেই। টুঙ্গিপাড়া সম্পর্কে লিখেছেন যে, সাবধান, এখানে ভূমিকম্প শুয়ে আছে।

উনার এই পরিমিতিবোধটা কোত্থেকে এসেছে বলে আপনার কাছে মনে হয়? এখানে আসার সঙ্গে কি উনার রাজনৈতিক চিন্তা গড়ে উঠেছে?
ছোটবেলা থেকেই। নওশাদের সাথে কথা বলে যেটুকু জেনেছি, উনি ছোটবেলা থেকেই বামদের সঙ্গে মিশতেন বেশি বেশি। বামদের কবিতা পাঠের আসরে যেতেন। যেমন আহমেদ ইলিয়াস, পড়াশুনা তো তেমন ছিলো না, তিনি একদম ছোটবেলা থেকেই বাম কবিদের মুশায়েরায় যেতেন এবং তাঁরাও উৎসাহ দিতেন- ‘একটা বাচ্চাও আছে, বাহ্!’ একসময় আসরে কবিতা পড়েছেন। এগুলো কাজে লাগে তো! নওশাদের কখনই ভারতে যাওয়া সম্ভব ছিলো না। জওয়াহারলাল নেহেরু যখন আমেরিকায় গেলো তখন নওশাদের বিখ্যাত কবিতা ‘ভিখারি’ বেরিয়েছিলো। ‘দে দে রাম, দিলা দে রাম, দেনে ওয়ালে সীতারাম’- এটা নিয়ে আবার রাস্তায় রাস্তায়, ট্রেনে ভিক্ষা করতো ভিক্ষুকেরা।

এই কবিতা বলে ভিক্ষা করতো ভিক্ষুকেরা!
হ্যাঁ। কবিতাটি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছিলো ভয়ে সেজন্যেই তাকে তাড়িয়েছে, নইলে তাড়াতো না।

পালিয়ে আসেন একেবারে!
ঠিক তাই। পলিটিক্যাল কনভিক্ট।

নওশাদ নূরীর কাছ থেকে শোনা উনার ছোটবেলার কি কোন স্মৃতির কথা আপনার জানা আছে?
নাহ, না। এগুলো তোমরা জানো না বোধহয়, উর্দুওয়ালারা কিন্তু ব্যক্তিগত কথা কম বলে। নাগরিকতার কিছু লক্ষণ আছে না, এটা ওদের নাগরিক বৈশিষ্ট্যের একটি বড় লক্ষণ। নিজেকে নিয়ে বলবে না। খুব কম।

মানে ক্রাইসিসগুলো সহজে বলতে চাইবে না।
না। আমার সঙ্গে তাঁর প্রধানত সম্পর্ক ছিলো আমার আগ্রহের জন্য এবং এক্ষেত্রে আমি যেহেতু রেসিপ্রোকাল সেজন্য হয়তো কনটিনিউ করেছে, নইলে করতো না। কিন্তু তাঁর ওয়াইফ ডিডন্ট ডু ইট। আমার বাসায় আম্মা হয়তো উর্দুওয়ালাকে পছন্দ করতেন- আব্বা জায়গা দিয়েছেন অনেককে। সেজন্যে আম্মা পছন্দ করতেন। আইয়ুব কাওয়াল আমাদের বাসায় ছিলো, দিনের পর দিন, একাত্তরের আগ পর্যন্ত। এ রকম বহু আছে। পাঞ্জাবের এক লোক আমাদের বাসায় ছিলো। আব্বা বলতেন, ‘ঠিক আছে ভাড়া দিতে হবে না। আমার বেটাকে তুমি দেখবা।’ আমি যখন ক্লাস নাইনে তখন থেকেই উর্দুর প্রতি আমার টান। কচুর মুখি যে মসুরের ডাল দিয়ে রান্না করা যায় এটা আমরা জানতাম না। ওরাই শিখিয়েছে। আমরা বাঙালিরা আটা সেদ্ধ করে রুটি করি, ওরা কাঁচা আটার রুটি করে। এজন্যে কাঁচা আটার রুটি আমার খুব প্রিয়।

আপনি যে পরিবার থেকে এসেছেন তা খুবই সম্ভ্রান্ত ও রক্ষণশীল। সেখান থেকে আপনি ডাউনট্রোডেন হলেন কি করে?
এটি আমার নিজের অভিজ্ঞতা আর একটি হলো আমার আম্মা। আমার আম্মা যদিও সৈয়দ, শায়েস্তবাদের নবাব তাঁর রিলেটিভ। সেই আম্মার জন্য বাসার কাজের লোকদের সাথে আমাদেরকে মাঝেমধ্যে একসাথে থাকতে হতো, খেতে হতো। আব্বা সবসময় প্রকৃত রাজনীতি করেছেন। আব্বা যখন মুসলিম লীগ করেন, তখন অনেক কম্যুনিস্টকে পাসপোর্ট দিয়ে ভারতে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাদের সময় একটা কম্যুনিস্ট ধরা পড়লো- প্রফুল্ল বলে নাম। হ্যান্ডসাম একটা ছেলে – হাফশার্ট পরা। মুসলিম লীগ অফিসে ওকে বেঁধে রাখা হলো। লোকজন জানালা দিয়ে থু থু দেয়। আব্বা ঠিকই রাতের বেলা তাকে পার করে দিলেন ইন্ডিয়াতে। আমাদের বাসায় একটা কবিতা আছে-উর্দুভাষী বাংলাভাষী, কবিতা হলো ঠাসাঠাসি। আব্বা কাওয়ালী খুব পছন্দ করতেন। এবং তিনি ভুল সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। এ রকম ভুল সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত আব্বার মতো কনফিডেন্টলি কেউ গায়নি।

আপনার পরিবারের মধ্যে এই পরিবেশটা ছিলো।

আমরা কোনদিন চিন্তা করিনি কে হিন্দু না মুসলমান না কিছু- নেভার।

নওশাদ নূরীকে কোন লেভেলের কবি বলে আপনি মনে করেন?
এই প্রশ্নটা করার জন্য আমি প্রচণ্ড কৃতজ্ঞ, অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমি নওশাদ নূরীর কবিতা অনুবাদ করেছিলাম একটি কারণে যে, বাঙালি পাঠক অন্তত মেসেজটা যেন পায় নওশাদ কী! স্বাভাবিকভাবে যদি নওশাদ ভারতে থাকতো তাহলে তাঁর অনেক কবিতার বই বেরোতো- প্রকাশকরা চাপ দিতো, সংবাদপত্রের সম্পাদকরা চাপ দিতো। সংকলকরা চাপ দিতো। মুশায়েরায় গেলে কী পরিমাণে টাকা দেয়- জানিতো আমি!

হয়তো মেহেদী হাসান, জগজিৎ তাঁর গজল গাইতেন?
হ্যাঁ। সে অবস্থায় এখানে এসে উনি নিজের প্রাণের তাগিদে যা লিখেছেন, ওটুকুই। কেউ বলতে পারবে না যে, এই কবিতাটি আমি নওশাদকে দিয়ে লিখিয়েছি।

শ্রোতা নেই, পাঠক নেই, প্রকাশক নেই!
হ্যাঁ। তবে একটা কবিতা সম্পর্কে বলতে পারি, এটা বোধহয় আমার জন্য হয়েছে, নজরুলকে নিয়ে লেখা কবিতাটি। আমি নজরুল জয়ন্তীতে যখন ওর সাথে বসে গল্প করছি, তখন সে আমাকে বললো বিহারে আমাদের শ্রমিক সম্মেলন হলো, তো, সেখানে আমরা নজরুল ইসলামের কবিতা দিয়ে শুরু করেছিলাম অনুষ্ঠান। তখন আমি ভাবলাম ও নজরুল জয়ন্তীতে নজরুলকে নিয়ে বলুক। ওকে বললাম, কবির চৌধুরীকে বললাম। স্যার নওশাদ নূরীর ঐ ঘটনার কথা শুনে ও তাকে আমন্ত্রণ জানানোয় খুব খুশি হলেন। তবে তিনি বললেন, প্রথমত বিটিভিতে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। আমি গেলে ওরা খুশি হবে না। আর দ্বিতীয়ত আমি যেতে পারি আসাদ কিন্তু শেখ মুজিবের কথা বলবোই। দেখ তুমি নিতে পারবে কি-না। আমি দেখলাম যে, পারবো না। কাজেই আমি নওশাদকে ধরলাম। আর রফিকুল ইসলামকে বললাম। যেহেতু নজরুলকে নিয়ে উনি কাজ করেছেন। তাই এই কবিতাটি আমি বলার পর হয়তো লিখেছেন। আর নওশাদ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতাটি হয়তো নানা কারণে লিখেছেন। আমি নানা কারণে কথাটি বললাম। কারণ আওয়ামী লীগের প্রতি আমার কোন প্রীতি নেই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি পারসোনালি একটা প্রীতি আছে, দুর্বলতা আছে এবং এটা উনি জানতেন। আব্বা যখন অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, জিন্নার পরেই তিনি ছিলেন। একজন ব্যক্তি তাকে বলা হয় আল্লামা রাবী, আমি তাঁর বাসায় ছিলাম এক বছরের মতো। লক্ষীবাজারে বাসা। পঁয়তাল্লিশ- এ সুভাষ বসু এসেছিলেন সেখানে। যাক, ’৫৪ এর ইলেকশনে দাঁড়াবেন তিনি। আর ওদিকে হাশিম সাহেবও দাঁড়াবেনই। আব্বা পই পই করে তাকে মানা করলেন, হাশিম এটা করো না তুমি।

মুসলিম লীগের ভরাডুবি হলো? অলরেডি সয়েল তিনি বুঝে ফেলেছিলেন?
হ্যাঁ। আব্বা তখন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। শেখ মুজিবের সঙ্গে আমি একবেলা দু’বেলা ভাত খেয়েছি। আমাদের বাসায় যেতেন তো- রাজনৈতিক কারণে তাকে সরে থাকতে হতো। আব্বা জায়গা দিতেন। উনি আনোয়ার হোসেন, আব্দুল হামিদ চৌধুরী আর মোল্লা জালালউদ্দিন আমাদের বাসায় যেতেন। তিনজনই আমাদের বাসায় ছিলেন।

শেখ মুজিবের সাথে নওশাদ নূরীর সম্পর্কটা তাহলে কি একাত্তরের অনেক আগে থেকেই? ছয় দফা আন্দোলনের সময় থেকে?
ছয় দফার অনুবাদ তো নওশাদ করেছেন- ‘তেরি নাজাত মেরি নাজাত..’। তাঁর আগে থেকেই উনি চিনতেন। তার কারণ হচ্ছে পাকিস্তানের অনেক নেতা ছিলো, অল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ- এদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর থিওরিটিক্যাল সম্পর্ক। ভাষাগত সমস্যাটি ছিলো। যদিও বঙ্গবন্ধু উর্দু জানতেন, বলতে পারতেন। কলকাতায় মুসলিম ইনস্টিটিউটের উল্টোদিকে সেই ছাত্রাবাস যেখানে তিনি থাকতেন, আমি গিয়েছিলাম সেখানে। উর্দুভাষীদের সাথে চা খেয়েছেন, নাস্তা খেয়েছেন, আড্ডা দিয়েছেন- তিনি উর্দু জানতেন ভালো। নওশাদের সাথে যোগাযোগ সম্ভবত এই কারণে হতে পারে। আর এখানকার উর্দু কমিউনিটি সেভেনটির আগেই বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগ রাখতেন। জহিরুদ্দিন যিনি আওয়ামী লীগ থেকে মোহাম্মদপুর এলাকার এমপি হয়েছিলেন, উর্দুভাষী। তিনি সেভেনটি ওয়ানের অক্টোবর মাসে ক্লেইম করলেন, জিন্নাহ ফান্ডে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যত টাকা গেছে, সে টাকা ফেরৎ দেয়া হোক। বিষয়টি আমি খবরের কাগজ থেকে জেনেছি। আওয়ামী লীগের একজন এমপি হয়ে তিনি একথা বলেছিলেন। তো একটা সম্পর্ক তো ছিলোই। বঙ্গবন্ধুকে যতই দোষারোপ করা হোক না কেন- তিনি ওআইসিতে গেছেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা
করেছেন ইত্যাদি একাধিক কারণে তাকে একটু কম্যুনাল করার চেষ্টা বামওয়ালারা করে। কিন্তু এটা হচ্ছে জঘন্য মিথ্যাচার। বাট হি ওয়াজ নেভার এ কম্যুনাল ম্যান। হিন্দু-মুসলিম কম্যুনাল তো ছিলোই না, এমনকি আদিবাসীদের বিষয়েও তিনি কম্যুনাল ছিলেন না।

আধুনিক মানুষ ছিলেন তিনি।
শুধু আধুনিক না, অনেক বেশি প্রাকটিক্যাল।

ঐ সময়টায় নওশাদ নূরীর সাথে তাঁর একটা প্রাথমিক সম্পর্ক শুরু হয়।
আমার মনে হয় এটি পরবর্তীকালে। ’৬৪-র যে কম্যুনাল রায়টটি হয়, যেখানে আমির হোসেন চৌধুরী মারা গেলেন, তখন বঙ্গবন্ধুর ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’- কথাটি একটি বিখ্যাত উক্তি। আমার মনে হয় তার পরপরই নওশাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে। সালাউদ্দিন মাহমুদ প্রোটেস্টের সময় আমাদের সাথে ছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, তিনি উর্দুতে স্লোগান দিয়েছিলেন- ‘ইয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা বনদ করো বনদ করো। হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই।’ সালাউদ্দিন মাহমুদ সম্পর্কে অনেক কথা বলা যায়-পাকিস্তানের দালাল, ঐটা ঐটা..। এই অভিযোগ ভুল হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু আমাদের এখানে তখন চীনপন্থী লোকজন এমনকি চীনপন্থীর বাইরেও নন-কম্যুনাল লোকজনের কাছাকাছি ছিলেন তিনি। তাঁর সাথে কামাল লোহানীর দেখা হয়েছে। আমার মনে আছে আমি এবং কবি জসিম উদ্দিনের ছেলে কামাল ছিলাম সেই প্রোটেস্ট মিছিলে। আমরা দু’জন খুব দ্রুত স্লোগান বানাতে পারতাম। আর রাশেদ খান মেনন।

ছয় দফা আন্দোলনের সাথে নওশাদের সংশ্লিষ্টতা কিভাবে গড়ে উঠলো?
এটা আমি জানি না। ছহি উর্দুতে তিনি ছয়দফার কথা লিখেছিলেন।

উনি মারা যাওয়ার সময়কার কোন স্মৃতি আপনার মনে আছে কি-না?
আমার একটা স্মৃতি মনে আছে যে, বিভাস নামে একটি পত্রিকা বের করতেন সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত। এটা একটি বেস্ট লিটলম্যাগ হিসেবে পাঠকদের দৃষ্টি পেতো। এই পত্রিকায় আমার অনুবাদে নওশাদের কয়েকটি কবিতা ছাপা হয়। পাঁচটা কি ছয়টা কবিতা অনুবাদ করার জন্য দিয়েছিলো পঞ্চাশ টাকা। আমি যখন এনে পত্রিকাটা দিলাম, নওশাদ তখন হাসপাতালে, যায় যায় অবস্থা, বারবার উল্টিয়ে দেখলেন তিনি।

বাংলাতে তাঁর কবিতা মনে হয় তেমন কেউ পড়েনি?
শুনো, এটা লজ্জা পাবে বললে, আমারও বলতে খুব লজ্জা লাগবে, পাকিস্তানি আমলে পাকিস্তান সরকারের উৎসাহে ইকবালের কিছু কবিতা বাংলায় অনূদিত হয়েছিলো, হালীর কবিতা হয়েছিলো। ইকবালের কবিতা আহসান হাবীব অনুবাদ করেছেন। আবুল হোসেন, আলী আহসান, মান্নান সৈয়দও করেছেন। সৈয়দ আতিকুল্লাহও করেছেন। এসব হয়েছে কিন্তু ভালোবেসে- আমার চোখে তো পড়ে না আর কেউ। এমনকি রণেশ দাসগুপ্ত যখন অনুবাদ করছেন, তখন ফয়েজ কেমন পাজেলড্ হয়ে বাংলাদেশের জন্য একটা আলাদা ভূমিকা লিখে দিলেন। কারণ রণেশদা তো একজন হিন্দু- নামকরা একজন কমিউনিস্ট। রণেশদার নাম তো তখন গোটা সাব-কন্টিনেন্টে আলোচিত নাম। উনি অনুবাদ করবেন কারণ ইকবাল পড়ে হি ওয়াজ টু একসাইটেড। উর্দু অনুবাদ করতে চাচ্ছেন। ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ সম্পর্কে একটা কথা বলি, লাস্টের দিকে এসে তিনি নিজামুদ্দিনের কবর, গালিবের কবর, আমীর খসরুর কবরের পাশে শুয়ে থাকতেন। ওখানকার যে খাদিম, তিনি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ সম্পর্কে বলছেন, ‘উনি তো সুফিদের সুফি।’ ফয়েজ তো গর্বের সাথে বলতেন যে তিনি মুসলিম। কিন্তু আমি যদি বলি তো এটা উল্টো হয়ে যায়। ফয়েজ বললে ঠিক আছে কিন্তু আমি আসাদ চৌধুরী বললে এটা কম্যুনাল হয়ে যায়।
ফয়েজকেও তো অনেকে বলতেন ঐসব সুফি-কাওয়ালিদের সঙ্গে আপনার এতো ঘোরাঘুরি কেন? উনি বলতেন, ‘এয়ি তো হামারি আসলি কমরেড হ্যায়।’ আসলেই তো। আমরা কম্যুনিস্টরাতো এই জিনিসটাই ধরতে পারি না।
মুনীর চৌধুরীর মুখে প্রথম আমি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের নাম শুনি। এটা হচ্ছে সিক্সটি টু র কথা বোধহয়। বাষট্টিতে স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। বোধহয় করাচি-টরাচি ঘুরে আসছেন, একসঙ্গে বুঝি তাসটাস খেলতে গেছেন কি-না আমি জানি না। মুনীর চৌধুরী বলছেন যে, হঠাৎ করে দেখলাম, এয়ারপোর্টে উনি আসলেন। একটা চেয়ার-টেয়ার কে নিয়ে আসলো। ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে চেয়ারের উপর তুলে দেওয়া হলো, লোকজন বললো ‘সনু আইয়ে, আপকো শের সনু আইয়ে।’ বোডিং পাস হয়ে গছে অলরেডি, সে অবস্থায়ই ওখানে উনি চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কবিতা পড়লেন।
কবিরা কত জনপ্রিয় হতে পারে! এটা বিশ্বাস করাও তো একটা কঠিন ব্যাপার। চিন্তা করা যায় না, উনি কি ভাবে রেসপেকটেড! উনাকে একটা চেয়ার দেয়া হলো। পুলিশ দেখে দেখে চলে গেলো।

প্লেনে উঠার আগে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আর কী!
‘কালাম শুনাইয়ে!’ আমার খুব দুঃখ যে, আমি মিস করেছি। আমার উচিত ছিলো ফয়েজের সঙ্গে দেখা করা।

ফিফটিতে তো উনি বাংলাদেশে এসেছিলেন, বড় সংবর্ধনা দেয়া হলো লেনিন পিস প্রাইজ পাওয়ার পরে, এটা নিয়ে কোথাও কোন সংবাদ পাই না। ঐটা একটা, পরে তো চুয়াত্তরেও এসেছিলেন। ওর মাঝেও কয়েকবার এসেছিলেন।
আমাদের এখানে মুশকিলটা হয়েছে কি, বলাও যায় না, বদরুদ্দিন উমর, কামাল লোহানী একেবারে লেফট ওরিয়েন্ট ছাড়া এখানে কেউ উর্দুয়ালাকে সহ্য করেন নাই। নওশাদ খুব উইক ফিল করেছিলো লাস্টের দিকে। এখানে যখন ১৯৮৭ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ হয়, একই সময় এশীয় কবিতা উৎসব করেছিলো এরশাদ। সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন, ফার্সী কবি তাহেরে জাফর সাদী তিনি এসেছিলেন। জাফর সাদী এসে রাতে শামসুর রাহমানের সাথে দেখা করে বলেছিলেন- ‘তো তুমি তো এই উৎসবে যাচ্ছো না। তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’ কবি তাহেরে জাফর সাদী পরে কবিতায় কোরান শরীফ অনুবাদ করা শুরু করেছিলেন। কতটা করেছেন আমি জানি না। আমি যখন গেছি ইরানে তখন তিনি মারা গেছেন। তো পাকিস্তান থেকে যারা এসেছিলেন, ভারত থেকে উর্দু কবি যারা এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে নওশাদই লিয়াজোঁ মেনটেন করেছেন। কবিকণ্ঠ বা কবিতা কেন্দ্র বোধহয়- তা নিয়ে নওশাদের একটা দুর্বলতা ছিলো। আমি যখন বললাম, কবিতা উৎসবে যাই, বাড়িতে কবিতা উৎসবের পোস্টার দেখালাম, উনি যেতে পারলেন না। ইলিয়াসও যাননি। গেছে শামীম আর মোহাম্মদ আসাদ। জাতীয় কবিতা পরিষদে আমি উর্দুওয়ালাদের নিয়ে গেছি, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে উর্দু কবিদেরকে আমি নিয়ে গেছি।

ফররুখ আহমেদের সাথে গভর্নমেন্টের ঝামেলাটা কি হয়েছিলো?
ফররুখ আহমেদ ছিলো কি রকম, তখন উনি অসুস্থ্য যায় যায় অবস্থা। একটা ওষুধ খাবে। মেড ইন বাংলাদেশ দেখার পর উনি খাননি সেটা। কি বলবো তাঁর সম্পর্কে?

একেবারে মেনে নেয় নি, না?
তবে কি রকম অনেস্ট, তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছে শুধু চা দিয়ে!

শেষ জীবনে তো অনেক কষ্টও পেয়ে গেলেন?
আমি ফররুখ আহমেদ সম্পর্কে লিখেছি সেজন্য গালাগালি শুনেছি না, প্রচণ্ড গালাগালি শুনেছি।

প্যারানয়েডের পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন।
আমি তা জানি না। পাকিস্তানের পক্ষে কিন্তু একটি কবিতাও লেখেন নাই তিনি, আর্মিও পক্ষে লেখেন নাই। তিনি সে সময় অনুবাদ করেছেন ‘জাহানে নও’ এবং অন্যান্য পত্রিকায়। আমি দেখেছি কোরান শরীফের আয়াতের কিছু বাংলা অনুবাদ আছে তাঁর,আর হাদিস শরীফের অনুবাদ আছে।

কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষে বা এরকম কিচ্ছু নাই? একেবারে হিউজ ইসলামী!
নাথিং। রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য হি ইজ দ্য ফার্স্ট ম্যান যিনি কবিতা লেখেছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে যখন লেখা হয়, তখন মাহমুদুল হক চৌধুরীর কবিতার নাম আসে। কিন্তু তাঁর আগের কবিতা? উমরে দারাজ, দারাজ খান না কি নামে লিখতেন। যতগুলি কবিতা লিখেছেন, তারপর ব্যঙ্গ কবিতা- সবগুলো তো ফররুখ ভাইয়ের কবিতা। আমি পছন্দ করতাম তাঁর এই আদর্শবাদীতার জন্য। তাকে লাহোরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান সরকার, ‘আপনি লাহোরে যান, শিয়ালকোটে যান, আপনার প্রিয় কবি ইকবালের জায়গা দেখে আসেন। বলেছেন, ‘আল্লা যদি তৌফিক দেয় তো আমি নিজেই যাবো।’ হজ্ব করতে বলেছে, কিন্তু পাকিস্তান সরকারের পয়সায় তিনি যাবেন না।

খুব সৎ মানুষ ছিলেন।
এজন্যে তাকে খুব সম্মান করি। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী উনার সঙ্গে ছিলেন যেহেতু আত্মীয়, সৈয়দ আলী আহসানও তাই। কাছাকাছি বাড়ি, একই রকম মানসিকতা। বাট, কোথায় ফররুখ আর কোথায় এরা! ফররুখ আহমেদ বুঝতে পারেন নাই যে, কাব্যভাষা যিনিই লিখুক কবিতা, তার সমকালীন ভাষাকে আরও এগিয়ে যাওয়া অবস্থায় নিতে হবে। উনি যেটা করেছেন, সমকালীন ভাষা থেকে আরও দেড়শ বছর পিছনের ভাষা দিয়ে কবিতা লিখেছেন। পার্থক্য ছিলো এটা। তাঁর কবিতা পাঠ্যবইয়ে ছিলো,আমি আরবির স্যারকে ধরে দাগ দিয়ে দাগ দিয়ে অর্থ বের করে নিয়েছি। এতো আরবি ভাষার শব্দ। ভাষাকে যদি আমরা আর্কিওলজিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখি, সোসাইটির অভিজ্ঞতার সোসাল ট্রাডিশনকে কমিউনিকেট করে ভাষা।

মহেঞ্জোদারো কোন সময়ে লেখা হয়েছিলো?
ফিফটি টু তে। ফিফটি টু নিয়ে লেখা।

বায়ান্ন নিয়ে লেখা কিন্তু নাম মহেঞ্জোদারো।
কবিতাটা পড়লে বুঝবেন কেমন। উনি বলছেন যে, মহেঞ্জোদারোর দিকে তাকিয়ে দেখো। ওদের নিশ্চয় ভাষা ছিলো, লেখা ছিলো, ওগুলো সব মাটিতে ধুলোয় মিশে গেছে। তোমরা যারা এখন কথা বলছো তোমার প্রস্তুত হও তোমাদের ভাষাও হারিয়ে যাওয়ার, নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কথাগুলো লিখে রাখো। আবার ঝড় আসছে। তোমাদের ভাষাকে বাঁচাতে হবে। উনি বললেন না যে, সো প্রিসাইজ, সো প্রিসাইজ, সো ফোকাসড। বাঙালি উর্দু কবিদের মধ্যে থেকে উনি খুব পছন্দ করতেন শামীমকে। শামীম ঐ অর্থে কিছু লিখলো না। আমি তো আর শামীমের মতো কবিতাকে অত ভিতর থেকে বুঝবো না। উনি হয়তো মীর থেকে একটু নিয়েছেন বা হয়তো গালিব থেকে একটা শব্দ নিয়েছেন, আমাকে পিটালেও বুঝবো না। আমি যেগুলো পড়েছি তার বাইরে ওগুলো আমি পারবো না। উর্দু সাহিত্য পছন্দ করে বা উর্দু সাহিত্যিক কিন্তু গালিবকে পছন্দ করে না এটা হতেই পারে না। আই এম দি লাস্ট ম্যান টু বিলিভ। মীরের কিছু অভিমান আছে। যারা অভিমান টভিমান পছন্দ করে না তারা হয়তো মীরকে পছন্দ করবে না। তবু মীর মীরই। মীরের কোনো তুলনা হয় না।

[এই সাক্ষাৎকারটি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ষান্মাসিক ‘মননরেখা’র নওশাদ নূরীকে নিয়ে প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যায় (ডিসেম্বর, ২০১৮) প্রকাশিত হয়েছিলো। সংক্ষেপিত] 

Facebook Comments

comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

scroll to top